শীতে বাচ্চাদের পুষ্টিকর খাবারের তালিকা
আসসালামু আলাইকুম, পিতা মাতারা বাচ্চার শরীর সুস্থ সবল রাখার জন্য কি কি পুষ্টিকর খাবার খাওয়াবো তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় থাকে। আশা করি আপনি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে বাচ্চার পুষ্টিকর খাবারের তালিকা নিয়ে আপনার আর দুশ্চিন্তা থাকবেনা। এজন্য অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো।
শীতকালীন পুষ্টিকর খাবার বাচ্চাদের শরীরকে বিভিন্ন রকমের রোগ জীবাণু ব্যাকটেরিয়া থেকে সংক্রমিত হতে রক্ষা করে বাচ্চাকে সুস্থ-সবল ও প্রানোবন্ধক রাখতে সাহায্য করে।
ভূমিকা
বাচ্চাদের শরীর সুস্থ সবল নির্ভর করে পুষ্টিকর খাবারের উপরে। শীতে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবনের সহজে আক্রমণ করতে পারে যেমন ঠান্ডা জনিত রোগ সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া , শ্বাসকষ্ট, বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সহজেই বাচ্চাকে সংক্রমিত করতে পারে।
এ সকল ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস থেকে বাচ্চাকে সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই খাদ্য তালিকায় এমন উপাদান রাখতে হবে যেন খুব সহজে এ সকল সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকি।এর জন্য শীতে আপনার বাচ্চার খাদ্য তালিকায় কি কি পুষ্টিকর খাদ্য রাখবেন, কখন কি খাবার খাওয়াবেন এটাতে সম্পর্কে
শীতের শিশুর খাদ্য তালিকায় অবশ্যই রাখুন এই খাবার
শীতে শিশুর খাদ্য তালিকা নিয়ে আমরা অনেকেই অনেক দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকি। বাচ্চারা যেহেতু বেশি পরিমাণে খাবার খেতে পারে না বা চাই না সুতরাং আমরা অনেকেই চাই যেন অল্প খাবারে বাচ্চা বেশি পুষ্টি গুনাগুন পাই। তাই অবশ্যই শীতে শিশুর খাদ্য তালিকায় এই পাঁচটি খাবার রাখুন নিম্নে তা দেয়া হলো-
দুধ
দুধ একটি শিশু শরীরে যেসব পুষ্টি উপাদান দরকার তার সবগুলোই রয়েছে দুধে। দুধ শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, হাড় শক্ত, মস্তিষ্কের বিকাশ, দৃষ্টি শক্তি ,দাঁত শক্ত ,ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে ইত্যাদি আরো অনেক ধরনের শিশুর বিকাশ বৃদ্ধির পুষ্টি উপাদান ও গুণাগুণ রয়েছে। তাই অবশ্যই আমাদের বাচ্চার খাদ্য তালিকায় দুধ রাখা বাধ্যতামূলক।
ডিম
ডিম ও দুধকে শিশুদের জন্য আদর্শ সুষম ও পুষ্টিগুণের আধার বলা হয়। ডিমে যে সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে তার সকল উপাদান একটি বাচ্চার জন্য দৈনিক প্রয়োজন। বাড়ন্ত অবস্থায় বাচ্চাদের কোন পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হলে বাচ্চা দ্রুত অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়ে।এতে সহজে কোন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া খুব সহজে বাচ্চাকে আক্রমণ করতে পারে। তাই অবশ্যই আমরা প্রতিদিন বাচ্চাকে একটি বা দুইটি করে সিদ্ধ ডিম খাদ্য তালিকায় রাখবো।
মৌসুমী ফল
মৌসুমী ফল রয়েছে সেই মৌসুমের সকল রোগের সমাধান। বিশেষ করে শীতের মৌসুমে বাচ্চাদের ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন প্রকার রোগ হয়ে থাকে যা থেকে সমাধানের খুব সহজ উপায় হল সে মৌসুমের ফল। শীতের মৌসুমী ফল যেমন-
কমলা বাচ্চাদের শরীরের জন্য ভিটামিন সি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা কমলা লেবুতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এছাড়াও মিনারেল ফাইবার ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কমলার লেবুতে ভরপুর রয়েছে।
জলপাই
জলপাই ভিটামিন সি এ ভরপুর শীতকালীন ফল হল জলপাই। ভিটামিন সি বাচ্চাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ আমরা সকলেই জানি। বাচ্চারা টক জাতীয় খাবার খেতে অনেক বেশি ভালোবাসে এজন্য বাচ্চাদের খাওয়াতে অসুবিধা হয় না।
আমলকি
আমলকি ভিটামিন সি জনিত যত রোগ রয়েছে তা সমাধানের সবচেয়ে বেশি কার্যকারী ফল হলো আমলকি। ভিটামিন সি এ ভরপুর ফল হিসেবে সর্বপ্রথম স্থান রয়েছে আমলকির। বাচ্চাদের শীতে ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন রোগ,পেটের বিভিন্ন সমস্যা,ত্বক ও চুলের সমস্যা এবং প্রাণঘাতী রোগ ক্যান্সার প্রতিরোধে আমলকির কোন জুড়ি নেই।
ডালিম
ডালিম বাচ্চাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার। ডালিমে যা উচ্চ মাত্রায় রয়েছে। অতএব বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় আমরা অবশ্যই ডালিম রাখবো।এছাড়াও সবেদা, কেশর আলু, বরই ইত্যাদিতে বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে।
বাচ্চাদের শরীর সুস্থ সবল রোগমুক্ত ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মৌসুমী ফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য অবশ্যই বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন একটি করে যে কোন ফল রাখতে হবে।
মৌসুমী শাকসবজি
মৌসুমী শাকসবজি বাচ্চাদের শরীরকে সুস্থ সবল প্রানো বন্ধক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য শাকসবজি অন্তত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞ ও ডক্টরের মতে বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন একটি করে যেকোনো শাকসবজি রাখা অত্যন্ত জরুরী। নিচে শীতকালীন বিভিন্ন শাকসবজির গুণাবলী দেয়া হলো
পালং শাক
পালং শাক বাচ্চাদের হাড় মজবুত ও শরীর সুস্থ রাখার জন্য আয়রন ও ক্যালসিয়ামের অত্যন্ত প্রয়োজন যা অন্যের শাকের তুলনায় পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এছাড়াও বাচ্চাদের পেটের বিভিন্ন সমস্যা ,ত্বক ও চুল সতেজ ও ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বেশ কার্যকারী।
লালশাক
লালশাক রক্তশূন্যতা দূর করতে দাঁতের মাড়ি মজবুত দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি হার মজবুত হজম শক্তি বৃদ্ধি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় বিভিন্ন প্রদাহ ইত্যাদি আরো অনেক পুষ্টিগুণের অধিকারী এই শাক। রঙিন কালার হওয়ায় বাচ্চারা এই শাক খেতে অনেক পছন্দ করে।
বাঁধাকপি ও ফুলকপি
বাঁধাকপি ও ফুলকপি আমরা অনেকেই বাচ্চাকে প্রথমে ফুলকপি ও বাঁধাকপি জাতীয় সবজি খাইয়ে থাকি কারণ এতে রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন ,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেল ,আন্টি ইনফ্লামেন্টরি ও নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান।যা বাচ্চাদের স্মৃতিসক্তি, হাড় মজবুত পানির ঘাটতি ও নানা রকম পেটের সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকারী।
শিম
শিম বাচ্চাদের জন্য প্রোটিন জাতীয় খাবার অত্যন্ত প্রয়োজন। বাচ্চার ভেতরে প্রোটিনের অনেক সময় ঘাটতি দেখা যায়। এই ঘাটতি আমরা খুব সহজেই সিমের বিচি দিয়ে মেটাতে পারি।সিমের চাইতে সিমের বিচিতে রয়েছে বেশি প্রোটিন।
মটরশুটি
মটরশুটি বাচ্চাদের আমরা বিভিন্নভাবে মটরশুঁটি খাইয়ে থাকি বাচ্চারা অনেক বেশি পছন্দ করে বাচ্চাদের জন্য পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি।যা খুব সহজে বাচ্চাদের হজম শক্তি হাড় মজবুত স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে বেশ কার্যকারী ।
উপরোক্ত সবজিগুলো আমরা বাচ্চাদের জন্য পিউরি হিসাবে বা সবগুলো সবজি দিয়ে খিচুড়ি তৈরি করে বাচ্চাকে খাওয়াতে পারে। এতে বাচ্চা এক সাথে সকল সবজির পুষ্টি গুনাগুন পাবে।
ড্রাই ফ্রট বাচ্চাদের শরীরের জন্য এসেনশিয়াল অয়েল, ক্যালসিয়াম,আয়রন, জিংক,প্রোটিন ও ভিটামিন ইত্যাদি অত্যন্ত প্রয়োজন, ড্রাই ফুড এগুলোর পুষ্টির উপাদানের ভান্ডার। বাচ্চাদের এগুলো পুষ্টি উপাদানে ভরপুর রাখতে খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ড্রাই ফুড রাখবো। ড্রাই ফুড হিসেবে আমরা নিম্নোক্ত ড্রাই ফুড গুলো রাখতে পারি যেমন-
আমান্ড
আমান্ড বাচ্চাদের ছোট অবস্থায় হাড়ের জোর মজবুত করতে ,ব্রেনের কার্যকারিতা বাড়াতে ফসফরাস ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন অত্যন্ত প্রয়োজন আমান্ডে যা প্রচুর পরিমাণে রয়েছ। প্রতিদিন সকালে নাস্তা সময় বা বিকালে দুই থেকে তিনটা করে খাওয়াতে পারেন। এতে অনেক সময় বাচ্চাদের বাইরের খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে আসে। তাই অবশ্যই আমরা বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় আমান্ড রাখবে।
ওয়ালনাট
ওয়ালনাট বাচ্চাদের মস্তিষ্কের বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি,হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু বিকাশে অত্যন্ত প্রয়োজন ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, জিংগ, ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,আয়রন ফসফরাস এর মত আরো অনেক উপকারী উপাদান যা ওয়ালনাটে ভরপুর বা ভান্ডার বলাই যায়। তাই অবশ্যই আপনার সন্তানের খাদ্য তালিকায় অন্তত দুই থেকে তিনটি প্রতিদিন ওয়ালনাট রাখবেন।
কিসমিস
কিসমিস হাড় শক্ত,দাঁত মজবুত,শারীরিকভাবে দ্রুত বৃদ্ধি,মস্তিষ্কের বিকাশ,ঠান্ডা জড়িত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কিসমিস অত্যান্ত বেশি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।কিসমিস মিষ্টি হওয়ায় বাঁচারা খেতে অনেক পছন্দ করে এতে রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার না কোন সুযোগ থাকে না।ফলে খুব সহজে বাচ্চাদের খাদ্য তালিকা আমরা রাখতে পারি।
পেস্তা বাদাম
পেস্তা বাদাম বাচ্চাদের অসুখ-বিসুখ সব সময় লেগেই থাকে অসুখ থেকে ওঠার পর বাচ্চারা অনেক বেশি দুর্বল হয়ে যায় এই দুর্বলতা তাৎক্ষণিক দূর করার জন্য পেস্তা বাদাম অত্যন্ত কার্যকারী। পেস্তা বাদামে আরো অনেক রকমের গুরুত্বপূর্ণ গুন রয়েছে এর জন্য অবশ্যই আমরা বাচ্চাদের খাদ্য তালিকা পেস্তা বাদাম যুক্ত করব।
খেজুর
খেজুর বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত একটি বা দুটি করে খেজুর খাওয়ালে বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি বৃদ্ধি পায় এছাড়াও শীতকালীন বিভিন্ন রোগ যেমন সর্দি কাশি জ্বর ইত্যাদি ভাইরাস জনিত রোগের সাথে খুব সহজভাবে মোকাবেলা করা যায়।
কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, ফাইবার, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, ক্যালসিয়াম,আয়রনের মত উপাদানে ভরপুর। তাই অবশ্যই আমরা বাচ্চাদের খাবতালিকায় খেজুর রাখবো।
চিনাবাদাম
চিনাবাদাম এই বাদাম আমাদের দেশীয় বাদাম হওয়ায় অনেক সস্তা ও সহজলভ্য। দেশও বাদাম হওয়ায় এতে পুষ্টি উপাদান ও অনেক বেশি।হাড় মজবুত,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ,মস্তিষ্কের বিকাশ ও অপুষ্টি দূরীকরণ ইত্যাদি আরো অনেক গুনে গুণান্বিত এই বাদাম। তাই অবশ্যই আমরা বাচ্চাদের খাদ্য তালিকা এই বাদাম রাখতে ভুলবো না।
উপরোক্ত বাদাম গুলো আমরা বাচ্চাদের জন্য পিউরি করে খাওয়াতে পারি বা পাউডার তৈরি করে দুধের সাথে মিশিয়ে ও খাওয়াতে পারি। ফলে বাচ্চাদের এগুলো খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং বাইরের খাবারের প্রতি আগ্রহ অনেক আংশে কমে আসবে।
শীতে শিশুদের সুস্থ রাখবে যেসব খাবার
অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীতে বাচ্চারা বেশি অসুস্থ হয়। শীতে বাচ্চারা সর্দি,কাশি, জ্বর,শ্বাসকষ্ট,হাঁপানি,দুর্বলতা,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ইত্যাদি রোগ বেশি হয়। শীতকালীন সকল রোগ থেকে বাচ্চাকে সুস্থ রাখার জন্য শীতে প্রচুর পরিমানে শীতকালীন খাবার পাওয়া যায় যা নিম্নে দেয়া হলো-
শীতকালীন শাকসবজিতে রয়েছে শীতে বাচ্চাদের যত প্রকারের শীতকালীন রোগ রয়েছে তার সকল রোগের সমাধান যেমন সর্দি-কাশি জ্বর হাঁপানি শ্বাসকষ্ট দূর্বলতা ইত্যাদি।শীতের সকল শাক সবজিতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিকর উপাদান যেমন ভিটামিন সি, প্রোটিন, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেল ইত্যাদি আরও অনেক বেশি পুষ্টিকর উপাদান।
শীতকালীন শাকসবজি হিসেবে আমরা বাচ্চাকে পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক, ফুলকপি,বাঁ ধাকপি, শিম, ফুলকো, বেগুন, ওলকপি, মুলা, শালগম ইত্যাদি খাওয়াতে পারি।
প্রোটিন জাতীয় খাবার
প্রোটিন জাতীয় খাবার এই শীতে শিশুকে সুস্থ রাখতে বেশ ভূমিকা পালন করে। বাচ্চাদের শরীরকে পুষ্ট রাখতে অ্যালাইনো এসিড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যা নিয়মিত প্রাণিজ প্রোটিন জাতীয় খাবার খেয়ে খুব সহজেই এই ঘাটতি মেটানো যায়। প্রাণিজ প্রোটিন হিসেবে আমরা বাচ্চাদেরকে মাছ মাংস চিজ ইত্যাদি খাওয়াতে পারি।
টক দই বা দই
টক দই বা দই বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দাঁত ও হাড় মজবুত রাখতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এই টক দই। এছাড়াও টকদইয়ে থাকা অ্যান্টি ফাঙ্গাস বাচ্চাদের শীতকালীন রোগ সর্দি কাশি জ্বর সংক্রমণ হতে প্রতিরোধ করে এবং খুব সহজে বাচ্চাদের পেটের সমস্যা দূর করে।
দেশীও মসলা
দেশীও মসলা আমাদের দেশীয় মসলাতে রয়েছে বাচ্চাদের ভেতর থেকে জীবাণুমুক্ত,সবল করার ও বিভিন্ন প্রকার রোগ এর সাথে লড়াই করার ক্ষমতা। যেসব মসলাতে প্রাকৃতিকভাবে মজুদ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা বাচ্চাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। দেশীয় মসলা হিসেবে আমরা বাচ্চাদেরকে আদা,রসুন,হলুদ ও জিরা যা বাচ্চাদের পেটের সমস্যা সহজে দূর করে ইত্যাদি। আরও অনেক।
দেশীয় ফল বা মৌসুমি ফল
দেশীয় ফল বা মৌসুমি ফল শীত আগমনের সাথে সাথে আমাদের দেশীয় নানা রকমের ফল বাজারে দেখা যায়। যা খেতে সুস্বাদু,জীবাণুমুক্ত,সহজলভ্য ও নানা রকম পুষ্টিগুণে ভরপুর। দেশীয় কমলা,বড়ই,আমলকি,জলপাই,সবেদা,পানি ফল, কলা ইত্যাদি আরও অনেক এই ফলগুলোর পুষ্টিগুণ বলে শেষ করা যাবে না।
বিশেষজ্ঞ ও বড় বড় ডাক্তারদের মধ্যে বাচ্চাদের প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় একটি করে দেশীয় ফল রাখা আবশ্যক। এতে বাচ্চাদের শরীর সুস্থ সবল রোগমুক্ত সকল রোগের সাথে লড়াই করার ক্ষমতা ব্রেনের বিকাশ বয়স অনুযায়ী বাড়ত্তব হাড় ও দাঁত ইত্যাদি আরো অনেক ভাবে বাচ্চাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। এর জন্য অবশ্যই আমরা বাচ্চাদের খাওয়ার তালিকায় যেকোনো একটি ফল রাখবো।
আঁশযুক্ত খাবার
আঁশযুক্ত খাবার বাচ্চাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ আঁশযুক্ত খাবার বাচ্চাদের পাকস্থলী সকল সমস্যা দূর করে বাচ্চাকে সুস্থ, সবল, শক্তিশালী ও রোগমুক্ত রেখে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।আঁশযুক্ত খাবার হিসেবে আমরা বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন প্রকারের ডাল, ভুট্টা, গম, ওটস বিভিন্ন প্রকার শাক, সবজির বিচি, লাল আটা ইত্যাদি খাওয়াতে পারি।
টমেটো
টমেটো শীতে প্রচুর পরিমাণে তরতাজা পাওয়া যায় কারণ এটি একটি শীতকালীন সবজি।এক কথায় বলা যায় যে একটি আপেলে যে পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পুষ্টি উপাদান রয়েছে টমেটোতে।
আমরা জানি প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে ডক্টরের কাছে থেকে দূরে থাকা যায় তাহলে আপনি বলুন যেহেতু টমেটোতে আপেলের যে পুষ্টি গুনাগুন বেশি রয়েছে সুতরাং আপনার বাচ্চাকে প্রতিদিন একটি করে টমেটো খাওয়ালে রোগ জীবাণু সহজে আক্রমণ করতে পারবে না ও সব সময় সুস্থ সবল ও রোগমুক্ত রাখবে।
শীতে বাচ্চাদের পুষ্টিকর খাবারের তালিকা
শীত বা অন্যান্য যে কোন ঋতু হোক না কেন আমাদের অবশ্যই বাচ্চাদের খাবারের পুষ্টির তালিকা অনুযায়ী বাচ্চাদেরকে খাওয়াতে হবে। এতে বাচ্চার শরীরে কোন পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হবে না। এছাড়াও বাচ্চাদের প্রতিদিন একই জাতীয় খাবার খেলে বাচ্চারা অনেক সময় খেতে চায় না।
অবশ্যই আমাদের প্রথমে বাচ্চাদের খাবারের পুষ্টির মান ও পরিমাণ অনুযায়ী খাবারের তালিকা তৈরি করে নিতে হবে। নিম্নে দেয়া হলো কিভাবে প্রতিদিন বিভিন্ন বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দিয়ে তালিকা তৈরি করা যায়-
সকালে
সকালে প্রথমত আমরা বাচ্চাকে এক গ্লাস দুধ এবং একটি দেশি ডিম সেদ্ধ বা পোচ করে দিতে পারি। অন্য একদিন সকালে দুধের সাথে ড্রাই ফুড গুঁড়ো করে দিতে পারি এবং সেদ্ধ ডিম বা পোজ যে কোন একটি দিতে পারি। এভাবে প্রতিদিন সকালে খাবারের পরিবর্তন করতে পারি এতে বাচ্চা প্রতিদিন নতুন নতুন খাবার খেলে খাওয়ার প্রতি আগ্রহ ও রুচি বাড়বে এবং পুষ্টিকর খাবারের পরিমাণও ঠিক থাকবে।
ড্রাই ফুডে যেহেতু অনেক বেশি পুষ্টিকর উপাদান ও প্রোটিন রয়েছে। এইজন্য সকালে বাচ্চাদের আমরা বিভিন্ন প্রকার ড্রাই ফুড দিতে পারে। ড্রাই ফুড হিসেবে বিভিন্ন প্রকারের বাদাম যেমন আমন্ড,পেস্তা বাদাম,কাজু বাদাম,চিনা বাদাম,খেজুর,কিসমিস ইত্যাদি তিন থেকে চারটা করে প্রতিদিন যে কোন একটি ড্রাই ফুড খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি।
এছাড়াও বাচ্চাকে সকালে প্রথমে যেকোনো ধরনের দেশীয় ফল বা ফলের রস খাওয়াতে পারি। আমরা জানি ফল সব সময় সকালে খেতে হয় এতে শরীরের বেশ উপকার হয়। ফলের রস বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী যা বাচ্চাকে সারাদিন উচ্ছাসিত ও প্রাণবন্তক রাখতে সহায়তা করে। ফলের রস হিসেবে আমরা কমলার রস,বেদানার রস,আঙ্গুরের রস ইত্যাদি খাওয়াতে পারি।
বাচ্চাদের যেহেতু একটু পর পর ক্ষুধা লাগে এর জন্য সকালের নাস্তার কিছুক্ষণ পরে বাচ্চাকে আমরা আঁশযুক্ত খাবার যেমন গম বা ভুট্টার তৈরি আটা দিয়ে রুটি এর সাথে বিভিন্ন প্রকার ডালের পাতলা বা গারো ঝোল দিতে পারি। আঁশযুক্ত খাবারে ফাইবারে ভরপুর।যা বাচ্চার শরীরকে শক্তিশালী সবল ও বিভিন্ন প্রকার ঋতু পরিবর্তনের সময় বিভিন্ন প্রকার রোগ জীবাণু সংক্রমণ হতে রক্ষা করে।
এছাড়াও সকালে নাস্তার কিছুক্ষণ পরে আমরা বাচ্চাকে খিচুড়ি দিতে পারি যা বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি দিয়ে তৈরি করা। শাকসবজি বাচ্চার শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।এরজন্য আমরা সকল শাকসবজি অল্প অল্প করে খিচুড়ির ভিতরে দিয়ে খাওয়াতে পারি।এতে বাচ্চার প্রতিদিনের পুষ্টির ঘাটতি কখনোই হবে না।
দুপুর
দুপুরের খাবার বাচ্চাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যেখানে সকল পুষ্টি গুণের আঁধার হওয়া উচিত। যেমন দুপুরে সামান্য ভাতের সাথে যে কোন প্রকারের শাক,যে কোন প্রকারের ডাল,কোন একটি সবজি,মাছ অথবা মাংস এগুলো উপাদান অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। এতে বাচ্চার বিকাশ বৃদ্ধি ও সকল পুষ্টি গুনাগুনের ভারসাম্যতা সব সময় বজায় থাকবে।
বিকেল
বিকেলের খাবার হিসেবে আমরা বাচ্চাকে বিভিন্ন প্রকার ড্রাই ফুড দিতে পারি বা ঘরে তৈরি বিভিন্ন প্রকার স্ন্যাকস বা ঘরোয়া ভাবে তৈরি বিভিন্ন প্রকার সবজি ও মাংস দিয়ে তৈরি নুডুলস দিতে পারি। ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার ফল বা ফলের রস ও দিতে পারে। আমরা কখনোই বাচ্চাদের বিকেলের নাস্তা হিসেবে বাইরের খাবার দেবো না এতে বাচ্চার স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
রাত
রাতের খাবার বাচ্চাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাত্রে খাওয়ার পর বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়ে, এতে অনেকটা সময় পর্যন্ত বাচ্চারা কিছু খায় না। অনেক সময় রাত্রে বাচ্চারা ওঠে কান্না করে। এজন্য অবশ্যই বাচ্চাদেরকে রাত্রে খাবার ভালো ও পুষ্টিকর খাওয়াতে হবে। রাতের খাবার হিসেবে আমরা বাচ্চাকে ভাতের সাথে সামান্য পরিমাণ যেকোনো একটি সবজি বা পাতলা ডাল ও মাছ অথবা মাংস দিতে পারি।
ঘুমানোর আগে অবশ্যই আমাদের বাচ্চাকে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ খাওয়াতে হবে। কারণ দুধে রয়েছে সকল পুষ্টি উপাদান। সারাদিনে আমাদের যদি কোন পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থেকে যায় তাহলে, সেই পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি মিটিয়ে দেবে।
এছাড়াও ঘুমোনোর আগে বাচ্চাকে কখনো কখনো বাচ্চাদেরকে দুধের সাথে সামান্য পরিমাণে ড্রাইফুট গুরো, হলুদের পুরো ঘরে তৈরি সেরেলাক্স দিতে পারি এতে বাচ্চাকে খাওয়াতে বেশি সমস্যা হবে না ও পুষ্টির গুনাগুন ও বজায় থাকবে।
এছাড়া আমরা কখনোই বাচ্চাকে বাইরের কোন খাবার যেমন চিপস,কেক এখানে আরো অনেক কিছু খাইয়ে বাচ্চার ছোট পেটটিকে ভরাবোনা।এতে বাচ্চার অনেক বেশি শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়। খাওয়ার প্রতি রুচি হারিয়ে যায়, অল্পতে পেট ভরে যায়, পেটের নানাবিধ সমস্যা হয়, শরীর স্বাস্থ্যের অনেক বেশি ক্ষতি হয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ইত্যাদি আর ওড়না নাপিত সমস্যা।
এজন্য আমরা অবশ্যই এই বিষয়ে সতর্ক খেয়াল ও অটল থাকব যেন আমার বাচ্চা কখনো বাইরের খাবার না খায়।যা বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত জরুরী একটি বিশেষণ ও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাইরের বাচ্চাদের খাবারের প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকর পদার্থ মেশানো হচ্ছে যা বাচ্চার প্রাণঘাতী ও হতে পারে এজন্য অবশ্যই আমরা সতর্ক থাকব।
বয়স অনুযায়ী শিশুর খাবার তালিকা
- বয়স অনুযায়ী বাচ্চার খাদ্য তালিকা তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী একটি কাজ। কারণ বাচ্চা যখন ছয় মাসের পর থেকে খাবার খাওয়া শিখে তার আগ পর্যন্ত বাচ্চা শুধু মায়ের তরল দুধ পান করে থাকে। হঠাৎ করে বাচ্চা যখন ঘরোয়া তৈরি খাবার খায় তখন বাচ্চার পেটের অনেক সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য অবশ্যই আমাদের বাচ্চাদের বয়স অনুযায়ী খাদ্য তালিকা তৈরি করে নিতে হবে উক্ত সম্পর্কে জানার জন্য অবশ্যই নিম্ন বিষয়গুলো পড়ার অনুরোধ রইল-
- ছয় মাস আগ পর্যন্ত যে কোন বাচ্চার জন্য তার মায়ের তরল দুধই যথেষ্ট। কিন্তু ৬ মাস বয়স পর থেকে আমরা বাচ্চাকে প্রথমত অল্প অল্প করে ঘরোয়া তৈরি খাবার খাব। খাবারটি যেন অল্প পরিমাণে হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। অল্প কিন্তু কিছুক্ষণ পরপর খাওয়াতে হবে।
- খাবারটি অবশ্যই পাতলা বা পিওরি করে নিতে হবে। প্রথম অবস্থায় বাচ্চার খাবার কখনোই গাঢ় বা শক্ত করা যাবে না। যেমন কোন ফলের রস। আমরা প্রথম অবস্থায় বাচ্চাকে সুজি ও দুধ বা সাবু ও দুধ খাইয়ে থাকি। এজন্য অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন দুধ পাতলা থাকে।
- ভাত বা খিচুড়ি বা কোন সবজি বা মাছ বা মাংস খাওয়ালে অবশ্যই তা ভালো করে পেস্ট আকারের তৈরি করে নিতে হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন প্রকার দানা আকারে না থাকে। কারণ প্রথম অবস্থায় বাচ্চার হজম শক্তি অনেক বেশি কম থাকে দানা জাতীয় খাবার বাচ্চা পেটের জন্য কষ্টকর হয়। অনেক সময় তা পেটের অনেক বেশিসমস্যা ও তৈরি করে।
- বাচ্চার বয়স ৮ থেকে ৯ মাস হলে বাচ্চাকে আস্তে আস্তে সামান্য গাঢ় খাবার খাওয়াতে শুরু করতে হবে। কারণ আস্তে আস্তে বাচ্চার পেট খাদ্য হজম করার প্রক্রিয়া বাড়তে থাকে। কিন্তু অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন তা হঠাৎ করে গাঢ় বা শক্ত খাবার শুরু করা না হয়। খাবার অবশ্যই আস্তে আস্তে শুরু করতে হবে।
- ৮ থেকে নয় মাসের বাচ্চাকে আমরা সব রকমের সবজি দিয়ে তৈরি পাতলা খিচুড়ি খাওয়াতে পারি।মাছ বা মাংস ভালো করে পেস্ট তৈরি করে খাওয়াতে পারি। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার সবজি দিয়ে তৈরি সুপ বা মাংস দিয়ে তৈরি সুপ বাচ্চাকে খাওয়াতে পারি।
- আট থেকে নয়মাসের বাচ্চাকে আমরা প্রতিদিন একটি করে সেদ্ধ বা পোচ ডিম খাওয়াতে পারি। পাতলা দুধ ও খাওয়াতে পারি। কিন্তু অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার বাচ্চার পেটে কোন খাবার খেলে সমস্যা হচ্ছে আর কোন খাবার খেলে সমস্যা হচ্ছে না।
- বাচ্চাকে অবশ্যই প্রতিদিন একটি ফলের রস করে খাওয়াবেন। বাচ্চার জন্য প্রতিদিন কোন একটি ফল তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীর সুস্থ বেড়ে ওঠা ও ও সবল রাখতে সহায়তা করবে। ফলের রস হিসেবে আমরা প্রতিদিন যে কোন একটি ফল যেমন কমলার রস বেদানার রস আঙ্গুরের রস আমের রস।
- ৮ থেকে ৯মাসের বাচ্চাকে অবশ্যই প্রতিদিন একটি করে কলা খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন কারণ কলা একটি বাচ্চার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।কলা বাচ্চাকে দুর্বল হওয়া থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষমতা বৃদ্ধি বেড়ে ওঠা ও পেটের সকল রকমের প্রদাহ দূর করতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
- বাচ্চার বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের খাবারের তালিকায় সকল খাবার যুক্ত করতে থাকতে হবে যেমন কিছু দানাদার,কিছু আঁশযুক্ত খাবার,বিভিন্ন প্রকারের ড্রাই ফুড,সকল শাকসবজি ও ফল,দুধের পরিমাণ, বিভিন্ন প্রকার মাংস ও মাছ, সকল কিছু।
- এভাবে অবশ্যই আমাদের বাচ্চাদের বয়সের সাথে তার খাবারের তালিকা তৈরি করতে হবে যখন যে বয়সে যে খাবার দরকার বা যেভাবে দরকার আমাদের অবশ্যই বাচ্চাদেরকে সেভাবে এবং সে পরিমাণে তখন সেই খাবার সরবরাহ করতে হবে এর বিপরীতে হলে বাচ্চার শরীর স্বাস্থ্য ও মনের দিক দিয়ে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর জন্য অবশ্যই খেয়াল রেখে বাচ্চাদেরকে খাবার খাওয়াতে হবে।
শীতে শিশুর জন্য বিপজ্জনক ৫ খাবার
অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীতে বাচ্চারা বেশি অসুস্থ হয়।আমাদের বাচ্চাদের শীতে বেশি যত্নও দেখভাল রাখার প্রয়োজন হয়। এর সামান্য পরিমাণ কমতি দেখা দিলে বাচ্চারা বিভিন্ন প্রকার রোগ যেমন সর্দি কাশি জ্বর গলা ব্যথা কানের ও পেটের সমস্যায় মিতালী আরো অনেক রোগের দেখা দেয়।
এজন্য আমাদের অবশ্যই বাচ্চাদের শীতে অতান্ত যত্নবান হতে হবে এর সাথে সাথে বিশেষ করে বেশি খাবারের প্রতি বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে কারণ বর্তমানে অনেক খাবার রয়েছে যা বাচ্চাদের জন্য বিপজ্জনক বা বাচ্চাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এর জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পড়ার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ রইল-
মৌসুমী নয় এমন শাকসবজি বা ফল
মৌসুমী নয় এমন শাকসবজি বা ফল বাচ্চাদের না খাওয়ানো কারণ ফল বা শাকসবজি যেকোনো মৌসুম বা ঋতুর হোক না কেন তা যদি সেই মৌসুমীরই হয় তাহলে তা টাটকা ও তরতাজা থাকবে। ও তার পুষ্টি উপাদান ও গুনাগুন ও কখনো অক্ষত থাকবে আর তা যদি সে মৌসুমে না হয়।
তাহলে অবশ্যই সেটা তে ক্ষতিকারক বা বিপদজনক কোন কেমিক্যাল বা মেডিসিন মিশিয়ে সেই শাকসবজি কে বা ফল খেয়ে তরতাজা করে রাখা হয়েছে। এজন্য অবশ্যই আমাদের উক্ত বিষয়ক বিশেষভাবে খেয়াল ও সতর্ক থাকতে হবে।
দুগ্ধ জাত পণ্য
দুগ্ধ জাত পণ্য বিশেষ করে শীতে বাচ্চাদের জন্য দুগ্ধ জাত বা প্রক্রিয়াজাতকৃত দুধ খাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জন বিশেষ করে চিজ ক্রিম ইত্যাদি যা বাচ্চাদের শরীরের পেটের অনেক বেশি প্রতিসোধন করে।
কোল্ড রিং বা কোমল পানি
কোল্ড রিং বা কোমল পানি শীত বা অন্যান্য যেকোনো হৃদয় হোক না কেন কোল্ড রিং বা কোমর পানি বাচ্চাদের শরীর স্বাস্থ্য ও দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক ও বিপদজনক একটি পানীয়। যা বাচ্চাদের খুদা কমে দেয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে দেয় শরীর দুর্বল করে ফেলে এজন্য আমরা অবশ্যই বাচ্চাদের এগুলো থেকে ধরে রাখবো।
বাইরের খাবার ও ফ্রিজের খাবার
বাইরের খাবার ও ফ্রিজের খাবার বাচ্চাদের জন্য বাইরের ভাজাপোড়া খাবার তাদের শরীর স্বাস্থ্য ও দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে বাচ্চাদের পেটের অনেক বেশি সমস্যা সৃষ্টি করে ঠিক যেমন ফ্রিজের খাবার ফ্রিজের কোন খাবাররে কোন প্রকার গুনাগুন বজায় থাকে না যা বাচ্চা স্বাস্থ্যের জন্য আরও বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার বাচ্চারা অনেক সময় ফ্রিজের পানি বা আইসক্রিম খেয়ে থাকে যা বাচ্চাদের গলা ও ঠান্ডা গলা ব্যথা ও ঠান্ডা লাগার বিশেষ কারণ।
আমরা উপরোক্ত খাবারগুলো বাচ্চাদের ছোট থাকা অবস্থায় খাওয়ানো থেকে বিরত রাখলে বড় হলে এসব খাবার থেকে বিরত রাখতে আমাদের বেশি ঝামেলা ও কষ্ট পোহাতে হবে না এজন্য অবশ্যই আমরা পিতা-মাতারা বাচ্চারা ছোট থাকা অবস্থায় ঘরোয়া ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানোর প্রতি বেশি জোরদার ও সতর্ক থাকব।
উপরোক্ত বিষয়গুলো আমরা অবশ্যই খেয়াল রাখব কারণ বাচ্চাদের শরীর স্বাস্থ্য আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা সুস্থ সবল ও সুন্দর রাখা আমাদের পিতা মাতার কর্তব্য। এজন্য আমরা অবশ্যই উক্ত বিষয়ে সতর্ক ও খেয়াল রাখবো।
বাড়ন্ত বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় রাখুন এই খাবারগুলি
বাড়ন্ত অবস্থায় অবশ্যই শিশুর সঠিক খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে। বাড়ন্ত অবস্থায় বাচ্চার খাদ্য ও পুষ্টি উপাদান যথেষ্ট পরিমাণে বা সঠিক পরিমাণে না হলে বাচ্চার বয়স অনুসারে ওজন বৃদ্ধি পায় না। পিতা মাতার জন্য যা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াই।
সুষম ও পুষ্টিকর খাবার বাচ্চার বয়স অনুযায়ী ওজন ও উচ্চতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি করে।এজন্য অবশ্যই বাচ্চার খাদ্য তালিকাটি তে সুষম ও পুষ্টিকর খাবারের পরিমাণ সঠিক পরিমাণে রয়েছে কি না এবং যেসব খাবার খাওয়ালে বাচ্চার বাড়ন্তও ওজন সঠিক থাকবে সেসব খাবারের নিয়ে নিম্নে কিছু আলোচনার মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করলাম
আপনি আপনার বাচ্চার জন্য একটি খাবারের চাট তৈরি করতে পারেন যেখানে আপনার বাচ্চা কোন খাবারটি খেতে বেশি ভালোবাসে কোন খাবারটি খেতে চায় না কোনটিতে এলার্জি রয়েছে কোন খাবারটি কবে কখন ও কোন খাবারটিতে বেশি পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আপনার বাচ্চার জন্য বেশি প্রয়োজন এভাবে ঝামেলা মুক্ত একটি সাপ্তাহিক চার্ট তৈরি করতে পারেন।
এতে করে আপনি আপনার বাচ্চার খাবারের জন্য মেনু তৈরি করা সহজ হবে এবংকোন প্রকার খাবারের পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেবে না। ফলে আপনার বাচ্চা সঠিকভাবে বয়স অনুযায়ী বাড়বে এবং সুস্থ সবল ও প্রফুল্লময় সবসময় থাকবে। নিম্নে বাড়ন্ত বাচ্চার খাদ্যের নাম যা আপনার বাচ্চার খাদ্য তালিকা অবশ্যই রাখবেন দেওয়া হল
আপনার বাচ্চার বাড়ন্ত অবস্থায় কখনো দুধ ও ডিম খাদ্য তালিকা থেকে সরাবেন না। বাড়ন্ত অবস্থায় বাচ্চাদের সকল ধরনের পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয় যা একমাত্র দুধ ও ডিম তা খুব সহজেই পূরণ করতে পারে।
বাচ্চাদের ওজন ও স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে ভিটামিন বি ৬ কপার পটাশিয়াম ফসফরাস ম্যাঙ্গানিজ ভিটামিন সি ভিটামিন এ ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা আলু ও মিষ্টি আলুতে ভরপুর রয়েছে। আমরা বাচ্চাকে বিভিন্নভাবে আলু ও মিষ্টি আলু খাওয়াতে পারি যেমন সিদ্ধ করে পিউরি তৈরি করে অথবা সুপ তৈরি করেও খাওয়াতে পারি।
এমন বাচ্চা খোঁজা খুব মুশকিল যে বাচ্চা আলু পছন্দ করে না। সকল বাচ্চায় আলু খেতে খুব পছন্দ করে এজন্য এটা খাওয়াতেও বেশি কষ্ট হয় না। এজন্য অবশ্যই আমরা বাচ্চাদের ভারত তো অবস্থায় সেদ্ধ করা সেদ্ধ করে মেসকৃত আলু ও মিষ্টি আলু বাচ্চাকে অবশ্যই খাওয়াবো
কলা বাচ্চাদের জন্য সুপার ফুড বলা হয়। বাঁচার ওজন বৃদ্ধি করা পেটের সমস্যা দূর করা উচ্চতা বৃদ্ধিতে শরীর সুস্থ ও সকল রাখতে ইত্যাদি আরও অনেক গুণের অধিকারী এই কলা। আমরা বাচ্চাদেরকে কলার স্মুথি বা ম্যাশ করে খাওয়াতে পারি।
বিভিন্ন প্রকারের ডালে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি গুণে ভরপুর উপাদান। যাকে বলা যেতে পারে বাচ্চাদের জন্য ওজন বৃদ্ধিকারী একটি পানীয়। ডাল বাচ্চাদের মারাত্ম অবস্থায় অবশ্যই খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হাড় মজবুত ও ভারত্ত অবস্থায় গ্রোথ ঠিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে সকল প্রকারের ডাল।
বাচ্চাদের আমরা গারো বা পাতলা আকারে ডাল তৈরি করে খাওয়াতে পারি এছাড়া খিচুড়ির সাথে অল্প অল্প করে সকল ডাল দিয়ে পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খিচুড়ি তৈরি করে খাওয়াতে পারি।
আমরা বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধি ও বাড়ন্ত অবস্থায় ঘি জাতীয় যেমন মালাই মাখন ইত্যাদি খাওয়াতে পারি। কিন্তু অবশ্যই তা যেন 8 থেকে 10 মাস পূর্ণ হওয়ার পর আস্তে আস্তে অল্প অল্প করে যে কোন খাবারের সাথে দিয়ে বাচ্চাদের সাথে পরিচয় করাতে পারি। ঘি জাতীয় খাবার বাচ্চাদের অতিরিক্ত খাওয়ালে বা পরিমানে বেশি হলে অনেক সময় পেটের সমস্যা সৃষ্ট করে। অবশ্যই এই বিষয়ে খেয়াল রাখবো।
ড্রাই ফুড এবং বীজ জাতীয় খাবার বাচ্চার ওজন ও ভারক্ত অবস্থা ঠিক রাখতে রাখার সবচেয়ে সহজ সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই খাবার । ড্রাই ফ্রুট ও বিজ জাতীয় খাবার হিসেবে আমরা বাচ্চাদেরকে আমান্ড পেস্তা বাদাম আখরোট খেজুর কাজুবাদাম কিসমিস তিন কুমড়ো সিমের বিচি পিনার্ট চিনা বাদাম ইত্যাদির বীজ বা বাদাম খাওয়াতে পারি।
এগুলো আমরা পেস্ট বা গুঁড়ো করে দুধের সাথে মিশিয়ে বাচ্চাদের দুধ কে সুস্বাদু তৈরি করার সাথে সাথে পুষ্টিগুণে ভরপুর করতে পারি ,যা বাচ্চার ওজন ও স্বাস্থ্য রক্ষায় এর চেয়ে ভালো কোন বিকল্প উপায় হতে পারে না।
মুরগির মাংস প্রোটিনের প্রধান উৎস হিসেবে যাকে ধরা হয়। যা বাচ্চাদের সামনে বিভিন্ন রূপে পরিবেশন করা যায় সুপ তরকারি রূপে রান্না করে বিভিন্ন প্রকার কাবাব ইত্যাদি নানা ভাবে পরিবেশন করা যায়। যা অনেক সুস্বাদু সহজ ও বিভিন্ন প্রকার প্রোটিনের ভরপুর হয়ে থাকে।
মাছ বাচ্চার ভারতবর্ষ অবস্থায় মাংসের চাইতে মাছের গুরুত্ব ও ভূমিকা বেশি। বাচ্চার ওজন স্বাস্থ্য ও ভারাত্য ও বিকাশে বিশেষ বিশেষ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন প্রকার মাছ। বাচ্চাদের শরীরের জন্য ফাইবার ও প্রোটিন জাতীয় খাবার অত্যন্ত প্রয়োজন যা মাছে ভরপুর রয়েছে এজন্য আমরা অবশ্য অবস্থায় বাচ্চা খাদ্য তালিকায় মাছ অন্তর্ভুক্ত রাখবো।
শীতে শিশুর ওজন বৃদ্ধির খাবারের তালিকা
পিতামারা পিতা মাতারা বাচ্চাদের ওজন নিয়ে সবসময় একটু বেশি চিন্তায় থাকি। বাচ্চাদের ওজন বিভিন্ন কারণে বাড়তে চায় না তার ভেতরে একটি কারণ হলো পিতা-মাতার জেনেটিক কারণে পিতা-মাতা যদি রোগা হয় তাহলে বাচ্চার ওজনও সহজে বাড়তে চায় না।
এছাড়াও বাচ্চার খাদ্য তালিকা সঠিক নয় পুষ্টি উপাদান সঠিক পরিমাণে না খাওয়া পেটের সমস্যা বিভিন্ন কারণে ও বাচ্চাদের ওজন বাড়তে চায় না নিম্নে বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি হয় এমন কিছু খাবারের নাম ও টিপস দেওয়া হলো-
- ডিম
- দুধ
- মৌসুমী ফল
- মৌসুমী শাক-সবজি
- কলা
- আলু ও মিষ্টি আলু
- ড্রাই ফুড
- বিভিন্ন প্রকার সবজির বীজ
- ঘি ও মাখন
- টক দই বা দই
- মাছ ও মাংস
- বিভিন্ন প্রকারের ডাল
উপরোক্ত খাবারগুলোতে সকল প্রকারের পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা একটি বাচ্চার দেহের সুস্বাস্থ্য ও ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। এগুলো খাওয়া খাবারের পাশাপাশি আমাদের অবশ্যই বাচ্চাদের যথেষ্ট ব্যায়াম ও বিভিন্ন প্রকার শারীরিক ক্রিয়াকলাপের ভেতরে সংযুক্ত রাখুন। যেমন সাইকেলিং সাঁতার দৌড় বিভিন্ন প্রকার শারীরিক ব্যায়াম ইত্যাদি।
এছাড়া আমাদের পিতা-মাতার অবশ্যই একটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যা বললেই নয় আমাদের বাচ্চাদের সুষম খাবার পুষ্টিকর খাবার ও সুস্বাস্থ্যের দিকে বেশি যত্নবান হতে হবে নয় বেশি ওজন বৃদ্ধির দিকে। ওজন বৃদ্ধির জন্য আমরা বাচ্চাকে বেশি করে খাবার বা কম খাবার এমন মনোভাব কখনো রাখবো না। এতে বাচ্চার সঠিক বিকাশে ও মনোভাবের প্রতি আঘাত আনে।
লেখকের মন্তব্য
রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে শীতে আপনার বাচ্চার খাদ্য তালিকায় কি কি পুষ্টিকর খাবার রাখে বাচ্চাকে রোগমুক্ত সুস্থ ও সবল রাখবেন তা নিয়ে কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি।আশা করি উপরোক্ত সম্পন্ন পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন।
আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করে শীতে তাদের বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় কি কি পুষ্টি উপাদান রাখবে তা জানিয়ে সহায়তা করুন। এমন আরও তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন, আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url