তল পেটের চর্বি কমানোর উপায়
আসসালামু আলাইকুম, বর্তমানে মেদ বা চর্বি কিভাবে কমাবো এ নিয়ে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন? ব্যায়াম ছাড়া কিভাবে খুব সহজে মেদ কমাবো যাই, তলপেটে চর্বি কমানোর সহজ উপায়, পেটের মেদ কমানোর ডায়েট চার্ট ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন। উক্ত প্রশ্নগুলোর সমাধান নিয়ে উক্ত পোস্টটিতে আমি আলোচনা করেছি ।
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি আপনার শরীরের অবাঞ্ছিত মেদ বা চর্বি খুব সহজে দূর করে সুস্থ সবল ও প্রাণবন্তক জীবন উপভোগ করতে পারবে। এজন্য সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো।
ভূমিকা
যাদের অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি রয়েছে তাদের স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা বা জীবনযাপন করতে বেশ কষ্টদায়ক হয়ে পড়ে। অল্প হাঁটাচলা করতেই শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করে,অতিরিক্ত গরম অনুভুতি হয়,প্রশান্তি সহকারে খাবার খাওয়া যায় না,সঠিকভাবে সময় মত কাজ শেষ করা যায় না, হাঁটুর ব্যথা, ত্বক নষ্ট হয়ে যাওয়া, চুল উঠে যাওয়া এছাড়া বিভিন্ন ধরনের রোগ তো সবসময় লেগেই থাকে।
এই অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি থেকে আমরা সকলেই মুক্ত হতে চাই।কিন্তু সময় বের করতে না পারা বা অলসতার কারণে আমাদের ব্যায়াম করা হয় না। ঘরোয়া ও সাধারণ ন্যাচারাল উপাদান দিয়ে খুব সহজেই ব্যায়াম বা কোন প্রকার কষ্ট ছাড়াই তলপেটের চর্বি কমানোর উপায়, মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর উপায়, উপরের পেটের মেদ কমানোর উপায় ইত্যাদি সমস্যার সমাধান করার কিছু সহজ উপায় নিয়ে আমি আপনাদের জন্য এ আর্টিকেলটি লিখেছি।
আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি অবশ্যই জানতে পারবেন কিভাবে খুব সহজেই শুধুমাত্র ঘরোয়া সামান্য উপকরণ দিয়ে ঘরে বসেই পেটের অতিরিক্ত চর্বি,মেয়েদের অতিরিক্ত পেটে চর্বি,ওপরের পেট ও নিজের পেটের অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি কিভাবে সহজে ঝড়ানো যায়। আশাকরি সম্পন্ন পোস্ট পড়ে আপনি অনেক বেশি উপকৃত হবেন।
ব্যায়াম ছাড়া এক সপ্তাহে পেটের মেদ কমানোর খাবার
বর্তমান যুগে আমাদের খাদ্যাভাস সঠিক না হওয়ায় পেটে অতিরিক্ত পরিমাণে মেদ বা চর্বি জমে যায় । আমরা অনেকে আছি যারা এই মেদ দূর করার জন্য ব্যায়াম করতে অলস বোধ করি। তাদের জন্য আজ আমি ব্যায়াম ছাড়া এক সপ্তাহে কিভাবে মেদ কমাবেন তার খাবারের তালিকা দেয়া হলো-
প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গরম পানি ও লেবু
প্রতিদিন সকালে নিয়মিত খালি পেটে এক গ্লাস গরম পানির সাথে একটি লেবু ভালো করে চিপে নেবেন। এর ভেতরে এক চামচ মধুও নিতে পারেন। অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি থাকলে এভাবে দিনে দুইবার সকালে ও রাত্রে পান করতে পারেন এতে খুব দ্রুত আপনার শরীরের মেদ বা চর্বি কমে যাবে।
সাদা জাতীয় খাবার বাদ দেওয়া এবং লাল চালের ভাত খাওয়া
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য আমাদের শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর যা সাদা জাতীয় খাওয়ার প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। বিশেষ করে ভাত। কিন্তু বাঙালিরা ভাত খাওয়া ছাড়া থাকতে পারে না। অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি কমাতে চাইলে অবশ্যই এ খাবার বা সাদা জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এছাড়া আপনার কখনোই মেদ বা চর্বি কমাতে পারবেন না।
সাদা ভাতের পরিবর্তে আপনি লাল চালের ভাত,ব্রাউন ট্রেড বা গমের আটা খেতে পারেন। এতে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি বা চর্বি জমবে না এবং চর্বি বা মেদ সহজে কমতে থাকবে।
চিনিযুক্ত বা মিষ্টি জাতীয় খাবার
খাবারের তালিকা থেকে মিষ্টি জাতীয় বা চিনিযুক্ত খাবার একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে। মিষ্টি জাতীয় খাবার শরীরে বিভিন্ন অংশ চর্বি বা মেদ জমাতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। এ ছাড়া বাইরের ভাজাপোড়া তেলেভাজা স্নাক্স,গোল্ড রিং ও সফট ড্রিংকস খাওয়া একেবারে বাদ দিয়ে দিতে হবে।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান
ওজন কমাতে পানির বিকল্পে আর কোন কিছু নয়।পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে অবশ্যই আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেটাবলিজম, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি,শরীরের ভেতরের সকল ক্ষতিকর এবং রক্তের ক্ষতিকর উপাদান প্রসবের মাধ্যমে খুব সহজে বের করে দিয়ে আপনাকে চর্বি মুক্ত বা মেদ মুক্ত শরীর দেবে।
প্রতিদিন রসুন খাওয়া
রসুনে থাকা উপাদান খুব দ্রুত শরীর থেকে চর্বি বা মেদ কাটাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে উঠে অন্যান্য খাবার থেকে নিজেকে দূরে রেখে দুই থেকে তিনটি রসুনের কোয়া খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দেখবেন খুব দ্রুত তিনগুণ গতিতে আপনার শরীর থেকে চর্বি ঝরে গিয়েছে।
মসলা খাওয়া
আমরা সকলেই জানি অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি হলে মশলা জাতীয় খাবার খাওয়া মোটেও ঠিক নয়। কিন্তু আমরা কি এটা জানি মসলা আমাদের ওজন কমাতেও বেশ উপকারী এবং ম্যাজিক এর মত চর্বি বা মেদ ঝরাতে কাজ করে।
রান্না করার সময় ব্যবহার করতে পারেন দারচিনি,আদা,গোলমরিচ ও তেজপাতা। এগুলো রক্তে জমে থাকা অতিরিক্ত শর্করাকে কমাতে সাহায্য করে আপনাকে চর্বি মুক্ত শরীর দিতে সাহায্য করবে। এছাড়া এগুলো আপনি গরম পানিতে ভালো করে জাল দিয়ে পানি খেতে পারেন। এভাবে আপনি দ্রুত মেদ বা চর্বি কাটাতে পারবেন।
মৌসুমী সবজি ও ফল
মৌসুমীর শাকসবজি খুব সহজেই শরীরের অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি দূর করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক বাটি সকল রকমের ফল খেতে পারেন। বিভিন্ন রকম মৌসুমী ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,মিনারেল,বিভিন্ন প্রকারের ভিটামিন যা আমাদের শরীরে থাকা অতিরিক্ত মেদ কাটাতে সহায়তা করে।
মৌসুমী শাকসবজি
মৌসুমী শাকসবজি যেমন খেতে সুস্বাদু তেমনি উপকার ও পুষ্টি গুনাগুনও অনেক বেশি। মৌসুমী বিভিন্ন ধরনের শাকসবজিতে রয়েছে সকল পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের থাকা মেটাবলিজম কমাতে বেশ সাহায্য করে এবং দ্রুত সময়ের ভেতর মেদ বা চর্বি ঝরিয়ে ফেলে।এজন্য আমরা নিয়মিত শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবো।
অতিরিক্ত মাংস খাওয়া থেকে দূরে
চর্বি বা মাংস জাতীয় খাবার শরীরের চর্বি বা মেদকে দ্রুত বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।এজন্য আমরা সকলে যারা মেদ বা চর্বি কমাতে ইচ্ছুক তারা অবশ্যই খাদ্য তালিকা থেকে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
তল পেটের চর্বি কমানোর উপায়
অতিরিক্ত চর্বি বা মেদযুক্ত শরীর আমাদের সকলের জন্য বেশ অস্বস্তিকর। এ মেদ বা চর্বি আমাদের শরীরে একদিনে বা একবারে জমে না।এটা আমাদের বিভিন্ন অভ্যাস বা অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে আমাদের তলপেটে,ছোট ছোট অভ্যাসের কারণে অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি বা মেদ জমে যায়।যা ঝরাতে আমাদের বেশ কষ্ট হয়।চলুন দেখে নিই নিম্নে কিভাবে তল পেটের চর্বি কমানোর উপায় নিম্নে দেওয়া হলো-
তাড়াতাড়ি খাওয়া অভ্যাস বন্ধ করুন
দ্রুত বা তাড়াতাড়ি খাবার খাওয়া তলপেটে মেদ বা চর্বি জমার অন্যতম কারণ। দ্রুত খাবার খাওয়ার সময় আমরা অনেক সময় অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার খেয়ে ফেলি। যা আমাদের স্বাস্থ্য,শরীর এবং পেটের জন্য কিছুক্ষণ পরে বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এবং খুব দ্রুত তলপেটে চর্বি জমে যায়। এজন্য আমরা অবশ্যই খাওয়ার সময় তাড়াহুড়া বা দ্রুত খাবার কখনোই খাব না।
বেলায় খাবার খাওয়া বাদ না দেওয়া
যখন আমাদের শরীরে অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি জমে যায় তখন আমরা কোনো বেলা খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে দিই। এটা মোটেও শরীরের জন্য সঠিক নয়। কারণ যখন আমরা কোন বেলা খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিই।তখন খাবার খাওয়ার প্রতি আমাদের আগ্রহ আরো বেশি বেড়ে যায়। ফলে আমরা অতিরিক্ত পরিমাণে আবার খাবার খেতে থাকি এতে আমাদের শরীরে চর্বি দ্রুত জমে যায়।
বড় প্লেটের বদলে ছোট প্লেটে খাবার খান
এখানে বড় প্লেট বা ছোট প্লেটের কথা মূল বিষয় নয়।এক্ষেত্রে মূল বিষয় হলো বড় প্লেট হলে আমরা বেশি পরিমাণে খাবার নেই কিন্তু ছোট প্লেট হলে আমরা অল্প পরিমাণে খাবার নেই। আমরা খাবারের পরিমাণ কমাবো কিন্তু পুষ্টির গুনাগুন বা পুষ্টি উপাদান কখনোই কমাবো না। আপনি ঘনঘন খাবার খেতে পারেন কিন্তু অল্প পরিমানে সঠিক পুষ্টি উপাদান ঠিক রেখে।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেশি খাবেন না
আমরা অনেকেই আছি যারা পুরো সপ্তাহ জুড়ে সঠিক নিয়মে খাবার খেয়ে থাকে কিন্তু কোন প্রকার অনুষ্ঠান বা আয়োজন হলে আমরা অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার খেয়ে ফেলি যা আমাদের পুরো সপ্তাহের নিয়ম মেনে চলা তা আর কোন কাজে আসে না। এজন্য আমরা অবশ্যই এ বিষয়ে খেয়াল রাখবো, যখন আমরা মেদ বা চর্বি কমাবো তখন অতিরিক্ত পরিমাণে কখনোই খাবার খাব না।
আনমনে খাওয়া পরিহার করুন
আমরা অনেকেই আছি যারা খাবার খাওয়ার সময় বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যস্ত থেকে খাবার খায়।যেমন টিভি দেখে,ফোনে দেখ, বিভিন্ন নাটক বা বিভিন্ন ধরনের কাজরত অবস্থায় খাবার খেয়ে থাকি। আমাদের খাবার খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং আমরা খেতে থাকি যার ফলে আমাদের শরীরে মেদ বা চর্বি খুব সহজেই জমে যায়। এজন্য আমাদের অবশ্যই খাবার খাওয়ার সময় খাওয়ার প্রতি মনোযোগ রেখে খাবার খেতে হবে কোন ভাবে আনমনে অবস্থায় খাবার খাওয়া যাবেনা।
সঠিক সময় ঘুমানো
বিশেষজ্ঞদের মতে পর্যাপ্ত ঘুম যেমন শরীরকে সুস্থ সবল ও প্রাণবন্তক রাখে।তেমনি সঠিক সময়ে না ঘুমালে ওজন বেড়ে যাওয়া সম্ভব না অনেক বেশি। কারণ রাত বেশি জাগলে খাবার খাওয়ার প্রবণতা বা ইচ্ছা বেশি তৈরি হয়। ফলে খুব দ্রুত শরীরে মেদ জমে যায়।এজন্য আমরা অবশ্যই ওজন বা চর্বি কমাতে হলে সঠিক সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করব।
পেটের মেদ কমানোর ডায়েট চার্ট
মানুষের দেহের যেমন মেদ রাতারাতি বা একদিনে জমে না তেমনি তা দূর কখনোই রাতারাতি হয় না। কারো সামান্য হাঁটাচলা বা খাদ্য পরিবর্তন করলে তা কমে যায়।কারো আবার ডায়েট চাটের প্রয়োজন হয়। একজন পূর্ণ বয়স্ক নারীর দৈনিক দুই হাজার ক্যালোরি প্রয়োজন হয়। যা আমাদের অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
এর ব্যতিক্রম হলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের অসুখ ও রোগ জীবাণু আক্রমণ খুব সহজে করতে পারে। চার বেলা খাবার খেয়ে চলুন নিম্নে জেনে নিই কিভাবে পেটের মেদ কমানোর ডায়েট চার্ট তৈরি করব-
সকাল
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে খালি পেটে এক গ্লাস গরম পানির ভেতরে একটি লেবু ভাল করে চিপে খেয়ে নেবেন। এর সাথে সামান্য পরিমাণ বা এক চা চামচ মধু মেশাতে পারেন। এরপর দুইটি হাতে বানানো গমের বা ভুট্টার রুটি এর সাথে একটি সেদ্ধ করা ডিম বা টক দই খেতে পারেন। এছাড়া সাইট্রিক এসিড মুক্ত যেকোনো ধরনের একটি ফল ও খেতে পারেন।
কিন্তু একটা জিনিস অবশ্যই মনে রাখবেন মধু বা লেবু কখনোই ঠান্ডা পানি দিয়ে খাবেন না এতে আপনার চর্বি কমার বদলে চর্বি জমতে পারে।
দুপুর
দুপুরের খাবার আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।এজন্য দুপুরের ডায়েট চাটে আপনি এক কাপ ভাত,দুই পিস মাছ বা দুই পিস মাংস,এক বাটি ডাল,কোন প্রকার আলু ব্যতীত তরকারি অবশ্যই রাখবেন। এছাড়া কখনোই ভুলবেন না খাওয়ার সময় সালাত নিতে,সালাত হিসেবে আপনি বিভিন্ন ধরনের উপকরণ নিতে পারেন যেমন টমেটো গাজর শসা ইত্যাদি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করবেন।
বিকেল
যে সকল ব্যক্তি মেদ বা চর্বি কমানোর জন্য ডায়েট করেন তাদের বিকেল বেলা অনেক বেশি ক্ষুধা লাগে। এমন নয় যে আপনি বিকেল বেলা খেতে পারবেন না। অবশ্যই আপনি বিকেল বেলা মুড়ি,ছাতু,সল্ট বা চিনি মুক্ত বিস্কুট এবং বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরি চা খেতে পারেন। কিন্তু অবশ্যই চেষ্টা করবেন চা যেন চিনি মুক্ত হয়। চিনি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর যা শরীরে মেদ ও চর্বি জমাতে বেশ ভূমিকা রাখে।
রাত
রাতের খাবার হিসেবে আপনি আপনার ডায়েট চাটে যেকোনো ধরনের সুপ যেমন মুরগি বা সবজির সুপ রাখতে পারেন।এক গ্লাস লো ফ্যাট মিল্ক বা টক দই,যেকোনো ধরনের একটি ফল অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখবেন।
মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর উপায়
বর্তমান যুগে পুরুষের তুলনায় মেয়েদের অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি বা মেদ জনিত কারণে বেশি ভুগছেন। আমরা মেয়েরা প্রথমে অনেকেই এটা বেশি অবহেলা করে থাকি। যার ফল হিসেবে অনেক সময় মেয়েদের স্বাস্থ্য বা জীবন ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।এজন্য মেয়েদের অবশ্যই এ বিষয়ে সচেতন ও যত্নবান হয়ে,প্রথম থেকেই মেদ ও চর্বি কমানোর জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিম্নে খুব সহজে মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো-
ক্যালোরি
ক্যালোরি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যালরি আমাদের শরীরে মেদ বা চর্বি হিসাবে জমে থাকে। অল্প পরিমাণে চর্বি বিভিন্ন পরিশ্রম বা ব্যায়ামের মাধ্যমে সহজে ঝরিয়ে ফেলা যায় কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি কমানোর জন্য অবশ্যই আমাদের প্রথম থেকে অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
কিন্তু অবশ্যই মনে রাখবেন ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া একেবারে বন্ধ করবেন না এতে শরীরের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
প্রোটিন
মেদ বা চর্বি কমাতে প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশ কার্যকারী ভূমিকা রাখে। এজন্য আপনার খাদ্য তালিকায় বিশেষ করে প্রোটিনযুক্ত খাবার অবশ্যই যুক্ত করবেন। যেমন চর্বিবিহীন মাছ,চর্বি মুক্ত মাংস লো ফ্যাটি যুক্ত দুধ ইত্যাদি। প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন আপনার শরীরে শক্তি যোগাবে তেমনি মেদ দ্রুত কমায।
ফাইবার
দ্রুত মেদ কমাতে অবশ্যই খাদ্য তালিকায় ফাইবারযুক্ত খাবার যুক্ত করুন। খাইবার যুক্ত খাবার আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হজম ক্রিয়া সহজ করে এবং পাকস্থলীর সকল রকমের সমস্যা খুব সহজে দূর করে ফেলতে পারে। ফাইবারযুক্ত খাবার হিসেবে আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন বিভিন্ন রকমের ফল যেমন কমলা,কলা ইত্যাদি এবং শাকসবজি হিসেবে রাখতে পারেন বিভিন্ন প্রকারের শাক এবং মৌসুমী সবজি।
কার্বোহাইড্রেট
শরীরের মেদ ও চর্বি জমার অন্যতম কারণ হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়া। সাদা জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে,বিশেষ করে চাল,আটা,ময়দা,চিনি লবণ ইত্যাদি। এজন্য আমাদের অবশ্যই খাদ্য তালিকা থেকে এ সকল খাবার বাদ দিতে হবে এবং আপনি সাদা চালের পরিবর্তে লাল চাল আটার পরিবর্তন করে গম বা ভুট্টার আটা খেতে পারেন।
যা আপনার শরীরকে সুস্থ সবল রাখবে তার সাথে সাথে আপনার শরীরে সকল প্রকার মেদও ঝরাতে সাহায্য করবে।
প্রসেসকৃত খাদ্য বর্জন করা
প্রসেসকৃত খাদ্য হিসেবে আমরা সাধারণত বাইরের যেকোনো ধরনের খাবার কে বুঝে থাকি।এ সকল খাবার আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য যেমন বেশ ক্ষতিকর তেমনি আমাদের শরীরে চর্বি বা মেদ জানতেও বেশ কার্যকারী। মেদ বা চর্বি কমাতে প্রসেসৃত খাদ্য বর্জন করতে হবে।
অ্যালকোহল জাতীয় খাদ্য বর্জন
অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য বিশেষ করে ধূমপান আমাদের স্বাস্থ্য ও শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর।তেমনি মেদ বা চর্বি ও ওজন বৃদ্ধি করতে বেশ ভূমিকা রাখে। এর জন্য আমাদের সুস্বাস্থ্যের এবং সুস্থ শরীরের জন্য অবশ্যই অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য খাওয়া থেকে বিরত থাকবো।
মানসিক চাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন
মানসিকভাবে বিভিন্ন দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরে চর্বি জমাতে বেশ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে মহিলাদের দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপের কারণে অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি বা মেদ জমে। এজন্য অবশ্যই নিজেকে মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখুন এবং সব সময় হাসিখুশি থাকুন।
উপরের পেটের মেদ কমানোর উপায়
শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে যাওয়ার শুধু সমস্যা নয় এ থেকে আমাদের বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হয় যেমন ডায়বেটিস,হাড়ের সমস্যা,চুল ঝরে পড়া,চেহারা নষ্ট হয়ে যাওয়া,অল্প কাজে সহজে হাপিয়ে যাওয়া,হাটু এবং জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের।
এজন্য আমাদের অবশ্যই সময় থাকতেই অল্প অবস্থায় উপরের পেটের মেদ কমানোর উপায় সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
সোজা হয়ে বসা
সোজা হয়ে না বসা উপরের পেট বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। আমরা অনেকে সোজা হয়ে না বসে হেলান দিয়ে বা আঁকাবাঁকা হয়ে বসি।যার ফলে আমাদের উপরের পেটে খাবারগুলো সহজে হজম হয় না এবং চর্বি বা মেদ দ্রুত জমে যায়। এজন্য আমরা অবশ্যই বসার সময় সোজা হয়ে বসবো।
খাবার খাওয়ার পরে ঘুমানো
আমরা অনেকেই আছি যারা খাবার খাওয়ার সাথে সাথে শুয়ে যাই। এতে আমাদের খাবার হজম হতে সমস্যা হয়।ফলে পেটে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্ট,ফলশ্রুতিতে পেটে মেদ বা চর্বি জমে যায়। এজন্য আমরা অবশ্যই ভারী খাবার বা সামান্য খাবার খাওয়ার পরে একটু হাঁটাচলা করব।
নিয়মিত কালোজিরা খাওয়া
কালোজিরা খুব সহজে আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ দূর করতে পারে। এজন্য আমরা অবশ্যই মেদ বা চর্বি কমানোর জন্য নিয়মিত কালোজিরার সাথে এক চা চামচ মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবো।
অতিরিক্ত খাবার খাওয়া
বয়সের সাথে আমাদের খাবারের হজম ক্রিয়া বা পাকস্থলীর পাচন ক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। যার ফলে, খুব দ্রুতই আমাদের মেদ বা চর্বি জমে যায়। এজন্য বয়সের সাথে সাথে আমাদের চর্বি জাতীয় খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর ও ঘরোয়া খাবারের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।
সিঁড়ি ব্যবহার করা
আমরা অনেকে আছি যারা হাটা চলার জন্য সিঁড়ি ব্যবহার না করে লিফট ব্যবহার করে থাকি। যার ফলশ্রুতি হিসেবে আমরা পাই মেদ বা চর্বি। এজন্য আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব যেন সিঁড়ি ব্যবহার করার জন্য। এতে আমাদের হজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে দ্রুত মেদ ঝরে যাবে এতে অনেক উপকার আপনি পাবেন।
স্বাস্থ্যকর ডায়েট চার্ট তৈরি করুন
উপর পেটের চর্বি বা মেদ কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর ডায়েট চাটের কোন বিকল্প নেই। আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন কি পরিমানে খাবার খাবেন এবং কি কি খাবার খাবেন তার একটি স্বাস্থ্যকর তালিকা তৈরি করুন এবং সে নিয়ম অনুসারে বা চাট অনুসারে খাদ্য গ্রহণ করুন। এতে যেমন আপনার স্বাস্থ্য সুস্থ থাকবে তেমনি আপনার শরীরে মেদ চর্বি জমতে পারবে না।
৮ ঘন্টা ঘুম
পর্যাপ্ত ঘুম শরীর থেকে মেদ কমাতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত ঘুমালে আমাদের হজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায় ফলে মেদ বা চর্বি দ্রুত কমে যায়। পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে যেমন আপনার শরীর ভালো থাকবে তেমনি আপনার স্বাস্থ্যেও উন্নতি ঘটবে।
পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায়
পেটের মেদ বা চর্বি কমানোর জন্য আমরা অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ঔষধ বা মেডিসিন খেয়ে থাকে যা আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর। কখনো কখনো যা মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়। মেদ বা চর্বি কমানোর জন্য ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক কিছু উপাদান রয়েছে যা দিয়ে আপনি খুব সহজে ন্যাচারাল ভাবে আপনার মেদ বা ভুড়ি খুব সহজে কমাতে পারবেন নিম্নে পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
জিরা পানি
জিরা আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে ফেলতে সাহায্য করে এবং রক্তে মেটাবলিজম কমাতে সাহায্য করে। এজন্য আমরা নিয়মিত জিরা ভেজানো পানি খেতে পারি। সারারাত দুই চা চামচ জিরা এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন এবং সকালে খালি পেটে জিরা পানি পান করবেন।
আদা চা
এক টুকরো আদাকে কুচি কুচি করে কেটে এক গ্লাস গরম পানিতে ভালো করে সেদ্ধ করতে হবে কমপক্ষে ১০ মিনিট ধরে জাল দিতে হবে। এরপর কুসুম গরম অবস্থায় এক চা চামচ মধু দিয়ে খেয়ে ফেলুন এতে খুব সহজে আপনার মেদ বা চর্বি কেটে যাবে।
দারুচিনি
দারুচিনি আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী।দারুচিনি আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। একটি মাঝারি সাইজের দারুচিনিকে হালকা গরম করে গুঁড়ো করে নিতে হবে এর সাথে একটি তেজপাতা দিয়ে ভালো করে ১০ মিনিট পর্যন্ত ফোটাতে হবে। কুসুম গরম অবস্থায় এক চা চামচ মধু দিয়ে খেয়ে ফেলুন এতে আপনি খুব দ্রুত ফল পাবেন।
লেবু
লেবু আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট বা চর্বি কাটাতে বেশ কার্যকরী। লেবু আপনি যেভাবেই খান না কেন তা আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত ফ্যাট বা চর্বি কাটাবে। তবে আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানিতে এক চা চামচ মধু দিয়ে একটা লেবু ভালো করে চিপে খান তাহলে দ্রুত ফলাফল পাবেন।
ছিয়াবিচ
ছিয়াবিচ ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ এটি আমাদের শরীরে পানির ঘাটতি মেটায়। আমাদের শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে চর্বি বা ফ্যাট দ্রুত জন্মায়। ফলে আমরা যদি নিয়মিত ছিয়াবিচ খায় তাহলে শরীরের থেকে দ্রুত চর্বি দূর হবে। আমরা ছিয়াবিচ ১ ঘণ্টা আগে এক গ্লাস পানিতে ভালো করে ভিজিয়ে খেতে পারি।
আরো পড়ুনঃ মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও এর অপকারিতা
মেথি
মেদ বা ওজন কমাতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে মেথি।মেথি ভেজানো পানি নিয়মিত খালি পেটে খেলে খুব সহজেই শরীরের ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে দিয়ে মেদ বা চর্বি মুক্ত সুস্থ ও সফল শরীর পাওয়া যায়।
লেখক এর মন্তব্য
রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার শরীরকে সুস্থ সবল রাখার জন্য ব্যয়াম ছাড়া খুবই সহজে পেটের মেদ কমানোর কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।আশা করি উপরোক্ত পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন।আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করে তাদেরকে ব্যায়াম ছাড়া খুব সহজেই পেটের মেদ কমিয়ে শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে সহায়তা করুন।এমন আরো তথ্য জানতে আমাদের ওয়েব সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।আসসালামু আলাইকুম।
অনেক সুন্দর হয়েছে