ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা
আজকের আলোচ্য বিষয় ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা, ছাগলের পিপিআর রোগের ভ্যাকসিন, পিপিআর ভ্যাকসিন দেয়ার নিয়ম ইত্যাদি আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো।
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে ছাগলের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ,প্রতিকার,প্রতিরোধ সম্পর্কে আপনার যে সকল প্রশ্ন রয়েছে তার উত্তর ও সমাধান পাবেন এবং ছাগলকে কিভাবে সুস্থ সবল রাখবেন তা জানতে পারবেন। আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে অনেক বেশি উপকৃত হবেন।
ভূমিকা
আমাদের দেশে অনেক গৃহপালিত পশু রয়েছে এবং এদের বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে। বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে না জানার কারণে আমাদের গৃহপালিত পশু মারা যায়। এজন্য আজ আমি আপনাদের জন্য ছাগলের বিভিন্ন রোগ এর লক্ষণসমূহ,প্রতিকা,প্রতিরো,ভ্যাকসিনেশন ও চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
কিভাবে বুঝবেন ছাগলের পিপিআর রোগ হয়েছে তার লক্ষণ ও চিকিৎসা, ছাগলের পিপিআর রোগের ভ্যাকসিন,ভ্যাকসিনের দাম কত,দেওয়ার নিয়ম এছাড়া ছাগলের পাতলা পায়খানা হলে লক্ষণ সমূহ,প্রতিকার,প্রতিরোধ এবং আরও বিভিন্ন ধরনের রোগের নাম ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে নিম্ন বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে ছাগল এর বিভিন্ন রোগ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে আপনি সঠিক তথ্য জানতে পারবেন।
ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা
পিপিআর হল ছাগলের জন্য মারাত্মক ও প্রাণঘাতী ভাইরাসজনিত রোগ। সকল বয়সের ছাগল এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে ছাগল আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার ৬০ থেকে ৯০% পর্যন্ত হয়।। যেহেতু এটা একটি ভাইরাসজনিত রোগ তাই একটি ছাগলের হলে আস্তে আস্তে সকল ছাগলের হতে থাকে। দ্রুত চিকিৎসা বা ব্যবস্থা না নিলে একসঙ্গে থাকা সকল ছাগল মারা যেতে পারে। নিম্নে ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
আরো পড়ুনঃপোকা দাঁতের ব্যথা কমানোর উপায়
ছাগলের পিপি আর রোগের লক্ষণ
- পিপিআর রোগের ভাইরাস ছাগলের শরীরে প্রবেশের ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ।
- ছাগল এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রচুর জ্বর আসে, তাপমাত্রা ১০৬ থেকে ১০৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- এ রোগে আক্রান্তের প্রথম লক্ষণ ছাগলের নাক চোখ মুখ দিয়ে সবসময় পানি জাতীয় তরল পদার্থ বের হওয়া এবং আস্তে আস্তে তা গারো হয়ে হলুদ রং ধারণ করে।
- নাক, চোখ, মুখ দিয়ে সব সময় তরল পদার্থ বের হওয়ার কারণে আস্তে আস্তে ছাগলের চোখ, নাক বন্ধ হয়ে যায় ফলে শ্বাসকষ্ট নিতে কষ্ট হয়।
- ছাগলের মুখের ভেতরে , জিব্বা মাড়ি ও চোয়ালে ঘা হয়।
- খাবারের রুচি থাকে না এবং খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেওয়া।
- দাঁতের গোড়ার মাংস পেশীতে ও দাঁতের ফাঁকে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
- আক্রান্ত ছাগলের চোখের পাতা ফুলে যাওয়া, চোখে ও নাকে ঘা হয়।
- ছাগলের ওজন ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং শুকিয়ে যায়
- আক্রান্ত ছাগল যদি গর্ভ অবস্থায় থাকে তাহলে তার গর্ভপাত হয়ে যায়।
- অনেক সময় আক্রান্ত ছাগলের মারাত্মক ও প্রচুর পরিমাণে ডায়রিয়া হয়। ফলে শরীরে পানির পরিমাণ কমে গিয়ে মারা যাওয়া সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
- পিপিআর রোগে আক্রান্ত ছাগল সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিনের ভিতরেই মারা যায়।
- এই রোগ সাধারণত বাচ্চা ছাগল গুলোকে বেশি আক্রান্ত হয়।
- ছাগলের পিপিআর রোগ সংক্রমণের মাধ্যম
- আক্রান্ত ছাগলের সংস্পর্শে আসলে।
- মুখ নাক চোখ দিয়ে আক্রান্ত ছাগলের নিঃসরিত তরল পদার্থ বা পায়খানার মাধ্যমে ছড়াই।
- সুস্থ ছাগল যদি আক্রান্ত ছাগলের হাঁচি কাশি সংস্পর্শে আসে তাহলে খুব দ্রুত সংক্রমিত হয়।
- আক্রান্ত ছাগলের পাত্রে খাবার খেলে।
- পিপিআর রোগের নির্দিষ্ট এখনোও কোন চিকিৎসা বের হয়নি। তবে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে মৃত্যুর ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
- শ্বাসতন্ত্রে যদি দ্বিতীয় পর্যায়ের পরজীবী বা ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হয় তার রোধে ক্লোরো টেট্রাসাইক্লিন অক্সিটেট্রাসাইক্লিন কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- পশু বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে জীবাণুরোধী ও ফুট থেরাপি ঔষধ যেমন সেফটিফোর ইনরোফ্লক্সাইড নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রয়োগে বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়।
- মুখের ঘা বা ক্ষত দূর করার জন্য ৫% বড় গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারেন।
- চোখ, মুখ ও নাক সব সময় পরিষ্কার কাপড় ও কটন দিয়ে তিন থেকে চার বার পরিস্কার করে দিতে হবে।
- লক্ষণ দেখা মাত্রই পানি সম্পদ অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন চিকিৎসা ও পরামর্শ নিতে হবে।
- পিপিআর রোগে আক্রান্ত ছাগল মারা গেলে তা অবশ্যই দূরে পুতে দিতে হবে।
- আক্রান্ত ছাগল অবশ্যই অন্য ছাগলে থেকে বা আলাদা একা রাখতে হবে।
- আক্রান্ত ছাগল যে ঘরে রাখা হয়েছিল সে ঘর অবশ্যই জীবাণুনাশক পদার্থ দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
আরো পড়ুনঃতল পেটের চর্বি কমানোর উপায়
- এন্টিবায়োটিক ঔষধ হিসেবেঃএসিসেফ ৩, ট্রাইজেক্ট ভেট, ট্রাইজেন ভেট।
- ব্যথা ও জ্বর কমানোর ঔষধঃ ফাস্ট ভেট, কিটো এ ভেট, টাফনিল ভেট ইত্যাদি
- ইলেক্ট্রোলাইট বা স্যালাইনঃ রিনা লাইট ইলেকট্রমিন
- ডায়রিয়া বন্ধ করার জন্য ঔষধঃ অ্যাস্টিনজেন্ট মিকচার
- পানি শূন্য বা ডিহাইড্রেশন এর জন্য শীরায় ডেক্সট্রোজ স্যালাইন বা স্যালাইন।
ছাগলের পিপিআর রোগের ভ্যাকসিন
ছাগলের অন্যান্য রোগের তুলনায় পিপিআর রোগ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতী। এ রোগে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি এবং এ রোগ কোন ঔষধ এখনো বের হয়নি। সুতরাং এর জন্য অবশ্য পূর্ব সতর্ক থাকতে হবে। নিম্নে ছাগলের পিপিআর রোগের ভ্যাকসিন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
পিপিআর ভেকসিন
পিপিআর ভ্যাকসিন সাধারণত কোন ছাগলের বয়স যখন দুই থেকে তিন মাস তখন এক ডোজ দেয়া হয়। এটা তিন বছরে একবার দেয়া হয়। এ ভ্যাকসিন ছাগলের মৃত্যুর হার অনেকটা কমিয়ে দেয়। এজন্য আমরা অবশ্যই ছাগলের দুই থেকে তিন মাস বয়স হলে প্রিপার ভ্যাকসিন প্রয়োগ করব। এছাড়া অন্যান্য কিছু ছাগলের ভ্যাকসিন রয়েছে যেমন-
রোগের নাম-টিকা দেওয়ার সময়-মাত্রা
- গোটপক্স-৪র্থ মাসে ১ডোজ-প্রতিবছরে ডিসেম্বর মাসে।
- খুড়া রোগ বা এফএমডি-২ থেকে তিন মাসে ১ ডোজ-বছরে ২বার মার্চ ও সেপ্টেম্বর মাসে।
- এ্যাথ্রাক্র বা তড়কা-ছয় মাসে ১ ডোজ-বছরে ১ বার মে জুন মাসে।
- এন্টারআটক্সিমিয়া-১ম সপ্তাহে ও ২ থেকে তিন মাসে ১ নাম্বার ডোজ যদি মায়ের ভ্যাকসিন না দেওয়া থাকে তাহলে দিতে হবে-উভয় ক্ষেত্রে ১৫ দিন পর পর বুঝতে ডোজ দিতে হবে।
পিপিআর ভ্যাকসিন দেয়ার নিয়ম
পিপিআর রোগ যেহেতু ছাগলের একটি মারাত্মক রোগ সুতরাং এ বিষয়ে বিশেষ সচেতন থাকতে হবে এবং সময়মতো ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। পিপিআর ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম অবশ্যই জানতে হবে নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- প্রাণিসম্পদ কেন্দ্র থেকে ভ্যাকসিন অবশ্যই ফ্ল্যাক্রে বা কূল ভ্যানে অধিক পরিমাণে বরফ নিয়ে, টিকা বা ভ্যাকসিন এর ভেতরে রেখে আনতে হবে।
- যে সিরিজ দিয়ে টিকা প্রদান করবেন তা অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
- ডাইলুয়েন্টের এর ১০০ মিলি বোতল অবশ্যই ৪ ডিগ্রি+ ১২ ঘণ্টা থেকে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অবশ্যই রাখতে হবে টিকা দেয়ার পূর্বে।
- এক থেকে দুই ঘন্টার মধ্যে অবশ্যইডাইলুয়েন্টের এ মিশ্রণ টিকা ব্যবহার করতে হবে।
- পিপিআর ভ্যাকসিন এর মাত্রা অবশ্যই প্রতিটি ছাগলের জন্য এক মিলি করে প্রয়োগ করতে হবে।
- এই ভ্যাকসিন অবশ্যই ছাগলের চামড়ার নিচে প্রয়োগ করতে হবে।
- পিপিআরভ্যাকসিন অবশ্যই ছাগলের বয়স দুই থেকে চার মাস হলে প্রয়োগ করবেন।
- যে সকল এলাকায় ছাগলের বেশি পিপিআর রোগ হয় সে সকল এলাকায় এক বছর পর পর বুস্টার টিকা প্রয়োগ করতে হবে।
- গর্ভবতী ছাগলের গর্ভ অবস্থায় ১৫ দিন আগে কখনোই এ টিকা প্রয়োগ করবেন না।
- পুষ্টিহীন বা অসুস্থ অবস্থায় কখনো ছাগলকে এটিকা প্রয়োগ করবেন না।
- এই টিকা দেওয়ার ১৫ দিন পরে অবশ্যই ক্রিমিনাস হোক ঔষধ খাওয়াবেন এতে কার্যকারী ফলাফল বেশি পাবেন।
- কোন স্থান হতে ছাগল কেনার পর ১০ থেকে ১৫ দিনের ভেতরে এটি কাপ প্রয়োগ করবেন।
- কোন ছাগল যদি পিপিআর রোগে আগে থেকে আক্রান্ত থাকে তাহলে সেটা কখনো এটিকে প্রয়োগ করবেন না।
- টিকা দেওয়ার পর অবশিষ্ট থাকা ঔষধ অবশ্যই নষ্ট করে ফেলবেন।
ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন এর দাম কত
পিপিআর রোগ ভাইরাসজনিত মারাত্মক রোগ। যেহেতু এটি ভাইরাস সুতরাং এটি ছোঁয়াচে, একটি ছাগলের হলে তা সকল ছাগলে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য আমাদের অবশ্যই ছাগলকে পিপিআর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। আমরা অনেকেই ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন এর দাম কত জানতে চাই নিম্নে তা দেয়া হল-
পিপিআর ভ্যাকসিন সাধারণত বিভিন্ন পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে বা প্রাণী বিশেষজ্ঞ কেন্দ্রে পাওয়া যায়। এর মূল্য সাধারণত ৫০ টাকা হয়ে থাকে। কখনো প্রাণী বিশেষজ্ঞ অধিদপ্তরে এটা ফ্রি দেওয়া। যে সকল এলাকায় পিপিআর ভাইরাসের অধিক প্রাদুর্ভাব রয়েছে প্রাণী বিশেষজ্ঞ অধিদপ্তর থেকে উক্ত এলাকায় গিয়ে ছাগলের ফ্রি ভ্যাকেশন করা হয়।
ছাগলের পাতলা পায়খানা হলে কি করা উচিত?
ছোট বড় সকল বয়সের ছাগলের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হতে পারে তবে বাচ্চা ছাগলের তুলনামূলকভাবে পাতলা পায়খানা হলে বেশি ক্ষতি হয়। ছাগলের পাতলা পায়খানা হলে কি করা উচিত? কি করা উচিত নয় তা জানতে হবে।
প্রথমত কি কারণে ছাগলের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয়েছে তা খুঁজে বের করতে হবে এবং ডায়রিয়া রোগের লক্ষণগুলো বুঝতে হবে নিম্নে উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- ছাগলের পাতলা পায়খানা রোগের কারণ
- পাতলা পায়খানার সাধারণত ছত্রাক ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয় ছাগল আক্রান্ত হলে হয়।
- ছাগলের পেটে কৃমি থাকলে অনেক সময় ডায়রিয়া হয়।
- পানি পানের পাত্রটি দূষিত বা পানি দূষিত হলে হয়।
- বাসি বা পচা খাবার খাওয়ানোর কারণে ছাগলের বেশি ডায়রিয়া হয়।
- বাজার থেকে আনা ঘাস বা পাতা যেখানে কোন প্রকার ভাইরাস, ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া ছিল তা খাওয়ার ফলে।
- ছাগলের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া রোগের কারণ
- কিছুক্ষণ পরপর পাতলা পায়খানা করবে এবং ধীরে ধীরে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিবে।
- পায়খানার রং হলুদ বা সবুজ হবে।
- পায়খানায় অনেক বেশি দুর্গন্ধ বের হবে।
- মাঝে মাঝে পায়খানার সাথে রক্ত ভাব দেখা দেবে।
- পায়খানার সাথে না হজমকৃত খাবারগুলো বেরিয়ে আসবে।
- ছাগল ঠিকমতো খাবার খাবে না।
- ছাগলের পেট ফেপে থাকবে।
- ছাগল বেশি নড়াচড়া করবে না বা ঝিম ধরে থাকবে।
- ছাগল জাবর কাটা বন্ধ করে দেবে।
ছাগলের পাতলা পায়খানা হলে কি করা উচিত?
ছাগলের পাতলা পায়খানা হলে কি করা উচিত? জানতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইল-
- ডায়রিয়া হলে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায় এজন্য প্রথমে পানি শূন্যতা দূর করার ব্যবস্থা নেব।
- দুই মাসের কম বয়সের ছাগলের বাচ্চার জন্য মেট্রিল সিরাপ ও ডিডিনীল পাউডার খাওয়াতে হবে।
- ২ মাসের বেশি বয়সে ছাগলের বাচ্চার জন্য বায়োগ্রাড পাউডার ও সালফন ট্যাবলেট এর সাথে রেণামেন্ট ভেট এবং স্যালাইন বা ডাবের পানি খাওয়াতে হবে।
- গর্ভবতী ছাগলের ডায়রিয়া হলে ই সালফা ট্যাবলেট বা সালফা৩ ও ইঞ্জেকশন সেলুডন প্রয়োগ করতে হবে পাশাপাশি অবশ্যই ডাবের পানি বা স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
- অতিরিক্ত ছাগলের পাতলা পায়খানা হলে জিগা ঘাসে গাছের রস খাওয়াতে পারেন এতে ছাগলের পেট ঠান্ডা থাকবে এবং দ্রুত পায়খানা বন্ধ হয়ে যাবে।
- এছাড়া বাঁশ পাতা খাওয়াতে পারেন এটাও দ্রুত ছাগলের বাচ্চা পায়খানা বা ডায়রিয়া ভালো করে।
- ছাগলের খাবার পাত্র ও পানির পাত্র অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- বাসি বা পচা খাবার কখনোই ছাগলকে খাওয়াবো না।
- পানির পাত্র এবং পানি অবশ্যই পরিষ্কার বা বিশুদ্ধ হতে হবে।
- ঘাস দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই খেয়াল রাখবো ঘাসে কোন প্রকার পলিথিন বা ব্যাকটেরিয়া রয়েছে কিনা।
- বাজার থেকে কিনে আনা ঘাস বা পাতা অবশ্যই সরাসরি না দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে দেব।
- অসুস্থ ছাগলগুলো অবশ্যই আলাদা রাখবো।
- ছাগলের ঘর অবশ্যই মাঝে মাঝে জীবাণুনাশক পদার্থ দিয়ে জীবাণুমুক্ত করব।
ছাগলের বিভিন্ন রোগ ও এর প্রতিকার
বিভিন্ন গৃহপালিত পশুর মত ছাগলেরও বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে। এরূপ গুলো সাধারণত বিভিন্ন ধরনের জীবাণু যেমন মাইক্রোপ্লাজমা ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া কৃমি উকুন প্রোটোজোয়া আঠালি অপুষ্টি বিপাকীয় সমস্যা বংশগত অস্বাভাবিকতা ও বিষাক্ত বিভিন্ন পদার্থের কারণে হয়ে থাকে। নিম্নে ছাগলের বিভিন্ন রোগ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
তড়কা বা অ্যানথাক্স
তড়কা বা অ্যানথাক্স রোগটি সাধারণত ব্যাসিলাস অ্যানথাক্সিস নামক জীবাণু থেকে হয়ে থাকে। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ বা জায়গার কারণে এ রোগটি বেশি হয়ে থাকে। এ রোগটা এত বেশি মারাত্মক যে এর জীবাণু ছাগলে শরীরে প্রবেশের ১২ থেকে ২০ ঘন্টার মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয় এমন কি লক্ষণ না দেখা দেওয়ার আগেই মারা যায়।
লক্ষণ সমূহ
- ছাগলের এ রোগ হলে প্রচুর পরিমাণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় বা জ্বর হয়।
- খাওয়ার প্রতি রুচি থাকে না বা খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয়।
- জাবর কাটা বন্ধ করে দেয়।
- ছাগল অনেক বেশি ছটফট করে
- পেটে প্রচুর ব্যথা করে
- বারেবারে রক্ত মিশ্রিত পাতলা পায়খানা করে।
- রোগটি আক্রান্ত হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ছাগল অজ্ঞান হয়ে যায় এবং মারা যায়
প্রতিরোধ
হঠাৎ কোনো ছাগল মারা গেলে বুঝতে হবে তা তড়কা রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং অন্যান্য ছাগল গুলোকে অবশ্যই শুষ্ক স্থানে সরাতে হবে। মৃত ছাগলটিকে অবশ্যই দূরে মাটি চাপা দিতে হবে এবং মাটির গভীরতা অবশ্যই ছয় থেকে সাত ফুট গর্ত করতে হবে। ছাগলটির যে পাত্রে খাবার খেতো এবং গলায় যে দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকতো সব কিছু মাটিতে চাপা দিতে হবে।
প্রতিকার
এ রোগে আক্রান্ত ছাগল আক্রান্ত হয়েছে বুঝতে পারলে সাথে সাথে পাঁচ মিলিলিটার টেরামাইসিন বা ৫ লাখ প্রোকেইন পেনিসিলিন ছাগলের মাংসপেশিতে ইনজেকশন করতে হবে। এতে ছাগল অনেক বেশি উপকৃত হবে।
আরো পড়ুনঃপ্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত
ওলান পাকা বা ম্যাসটাইটিস
বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে সংক্রমিত হয়ে বা বাচ্চা দেওয়ার আগে বা পরে এ রোগ ছাগলের ভেতরে বেশি দেখা দেয়। অনেক সময় ছোটখাটো ক্ষত হতেউক্ত স্থান থেকেসংক্রমিত হয়ে এ রোগ হয়ে থাকে।
লক্ষণসমূহ
- ছাগলের শরীরে জ্বর হয়
- ওলহান অনেক বেশি শক্ত হয়ে যায়
- বাট ফুলে যায়
- বাট দিয়ে হঠাৎ কখনো পাতলা কখনো গাড় দুধ বেরিয়ে আসে।
- কখনো কখনো দুধ দিয়ে রক্ত বের হয়।
প্রতিরোধ
বাচ্চা দুধ খাওয়ার সময় বা দুধ দোহনের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন কোন প্রকার ক্ষত সৃষ্টি না হয়। কোনো কারণবশত ক্ষত হয়ে গেলে অবশ্যই সাথে সাথে উক্ত স্থান পরিষ্কার করে ঔষধ প্রয়োগ করবেন এবং বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত রাখবেন।
প্রতিকার
এ রোগে আক্রান্ত ছাগলকে অবশ্যই দ্রুত আলাদা করতে হবে। যে ওলান্টি সংক্রমিত হয়েছে সেখান থেকে দিনে দুই থেকে তিন বার ধুয়ে ফেলতে হবে এবং আয়োডিন দ্রবণ দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সম্ভব হলে ইনজেকশন দিয়ে ওখানে আয়োডিন দ্রবণ ঢোকাতে হবে।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়াতে পারে। তিন মিলিগ্রাম এমপিসিলিন ৮ পর পর ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হবে এর সঙ্গে ৩৬ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর ১.৪ মিলিগ্রাম কিটোপ্রোফেন ইনজেকশন প্রয়োগ করতে পারেন এতে দ্রুত ক্ষতস্থান সেরে যাবে।
এন্টোরোটক্রিমিয়া বা পাল্পি কিডনি ডিজিজ
কিডনি অনেক বেশি ফুলে ও নরম হয়ে যাওয়ার কারণে এ রোগকে এন্টোরোটক্রিমিয়া বা পাল্পি কিডনি ডিজিজ বলা হয়। এ রোগ একটি কোল্ডসট্রিডিসিয়াম পারফ্রিনজেন্স টাইপ ডি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। ছাগলকে অতিরিক্ত পরিমাণে দানাদার খাদ্য দেওয়ার কারণে ক্ষুদ্রান্তে বিদ্যমান কোল্ডসট্রিডিয়াম জীবাণু অনেক বেশি বেড়ে যায় এবং বিষের উৎপাদন হয়। ফলে দ্রুত ছাগল মারা যায়। এ রোগ সাধারণত বাড়ন্ত স্বাস্থ্যবান ও বয়স্ক ছাগলে বেশি হয়।
লক্ষণ সমূহ
ছাগল এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা বোঝার মত তেমন লক্ষণ নেই। কারণ লক্ষণ দেখার সাথে সাথে ছাগল মারা যায়। ছাগল চারিদিকে গোল গোল ঘুরতে থাকে শরীরে তাপমাত্রা দ্রুত কমে যেতে থাকে পেট ফুলে যায় পাতলা পায়খানা করে চারদিকে ছোটাছুটি করে শরীর দুর্বল হয়ে যায় গায়ের চামড়ার রং বিবর্ণ হয়ে এবং অল্প সময়ের ভিতরে মারা যায়।
প্রতিরোধ
- ছাগলকে শুধুমাত্র দানাদার খাবার না দিয়ে দানাদার ও ঘাস মিশ্রিত খাবার দিতে হবে।
- যে ছাগলগুলো বেশি স্বাস্থ্যবান তাদেরকে অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার খাওয়ানো যাবে না
প্রতিকার
ছাগল যেহেতু কোন প্রকার লক্ষণ ছাড়া হঠাৎ মারা যায় সুতরাং চিকিৎসা করার কোন সময় পাওয়া যায় না। তবে প্রাথমিকভাবে রোগ শনাক্ত করতে পারলে ৩ মিলিলিটার ৬ ঘন্টা পর পর এট্রফিন সালফেট ইনজেকশন দিতে পারেন এছাড়া শেয়ার স্যালাইন খাওয়াতে পারেন।
ব্রুসেলোসিন
বেশিরভাগ সময় এ রোগ গর্ভবতী ছাগলের গর্ভের শেষ দিকে এ রোগ হয়ে থাকে এবং গর্ভপাত সময়ের আগে। এটা সাধারণত একটি ব্যাকটেরিয়া জ জনিত রোগ। তবে গর্ভাবস্থা বাদেও বিভিন্ন ছাগলেরও এর রোগ হয়ে থাকে।
লক্ষণ সমূহ
এ রোগের ব্যাকটেরিয়া গুলো সাধারণত গর্ভাবস্থায় ছাগলের জরায়ু ও গর্ভ ফুলকে আক্রান্ত করে এবং গর্ভপাত ঘটায়। যার ফলে ছাগল অনেকদিন পর্যন্ত গর্ভধারণ করতে পারে না। কোন ছাগলের এ রোগ হলে অন্ডকোষ ফুলে যায় এ ছাড়া অনেক সময় ছাগলের যৌন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
প্রতিকার
এ রোগে আক্রান্ত ছাগলকে অন্যান্য ছাগল থেকে দূরে রেখে চিকিৎসা করতে হবে। এর ওপর থেকে মুক্ত পাওয়ার জন্য আপনি বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক দীর্ঘ মেয়াদে খাওয়াতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য
রাইট বাটন আজকে এ পোস্টটির মাধ্যমে ছাগলের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা,প্রতিকার ও প্রতিরোধ দিয়ে ছাগলকে সুস্থ-সবল রাখার কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আশা করি উপরোক্ত সম্পন্ন পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করে তাদের ছাগলের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রেখে সুস্থ-সবল রাখতে সহায়তা করুন। এমন আরো তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন, আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url