খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান ও খাওয়ার নিয়ম
আসসালামু আলাইকুম, আজকের আলোচ্য বিষয় খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান ও খাওয়ার নিয়ম, খেজুরের গুড়ে কি ওজন বাড়ে? ইত্যাদি আরও
বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার বিশেষ
অনুরোধ রইলো।
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে খেজুরের গুড় সম্পর্কে আপনার মনে যত প্রশ্ন ও
সমস্যা রয়েছে তার অবশ্যই সঠিক সমাধান ও উত্তর পাবেন এবং খেজুরের গুড় খেয়ে
আপনার শরীরকে সুস্থ সবল ও প্রাণবন্তক রাখতে সক্ষম হবেন।
ভূমিকা
শীত আগমনের সাথে আমাদের সকলের ঘরে খেজুরের গুড় দিয়ে বিভিন্ন রকম পদের মিষ্টান্ন
তৈরি শুরু হয়ে যায়। তবে আমরা কি জানি খেজুরের কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে,
খাওয়ার নিয়ম কোন জেলায় এবং কোথায় এটি বেশি বিখ্যাত কোন দেশে সবচেয়ে বেশি
গুড় তৈরি করা হয় খেজুরের গুড়ের
উপকারিতা ও অপকারিতা চিনি ও খেজুরের গুড়ের মধ্যে পার্থক্য এবং কোনটি উপকারী,
বর্তমানে খেজুরের গুড়ের দাম, কত প্রকারের খেজুর গুড় পাওয়া যায় ভালো ও খাঁটি
গুড় চেনার উপায়, গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে না কমে ইত্যাদি আরও বিভিন্ন বিষয়ে
উক্ত পোস্টে বিস্তারিত নিম্নে আলোচনা করেছি।
আরো পড়ুনঃ
খালি পেটে খেজুরের রস খেলে কি হয়?
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে আপনি খুব সহজে আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন
গ্যাস্ট্রিক, বদহজম, লিভারের সমস্যা, ক্যান্সার জনিত রোগ, হাড়ের ব্যথা, উচ্চ
রক্তচাপ কমানো, শরীরের ক্লান্তি দূর ও দ্রুত এনার্জি ফিরে আনা, নারীদের বিভিন্ন
ধরনের হরমোনাল সমস্যা এছাড়াও মাসিকের সময় অবাঞ্ছিত ব্যথা ইত্যাদি আরও উপকারিতা
পেতে কিভাবে গুড় খাবেন তা সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
খেজুরের গুড় কোথায় বিখ্যাত কোন জেলা?
খেজুরের গুড় কোথায় বিখ্যাত কোন জেলা? জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন। বাংলাদেশের
প্রায়ই সকল অঞ্চলে খেজুরের গুড় তৈরি করা হয়। তবে ফরিদপুর মাদারীপুর যশোর
চব্বিশ পরগনা সাতক্ষীরা মহকুমার ও বাঁশেরহাট জেলায় ব্যাপকভাবে খেজুরের গুড় তৈরি
করা হয়। এ সকল এলাকায় প্রচুর পরিমাণে খেজুরের গাছ রয়েছে।
প্রথম দিকে এ সকল এলাকায় খেজুর রস দিয়ে চিনি তৈরি করা হতো। ১৯৪০ দশকের সময়
ব্যাপকভাবে মাদারীপুর ২৪ পরগনার হাওর এলাকা ও ফরিদপুর ইত্যাদি জেলাগুলোর খেজুরের
গুড় বিভিন্ন দেশে নাম ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এ সকল অঞ্চল থেকে প্রতিবছর প্রায়
এক কোটি টন খেজুরের গুড় উৎপাদিত হয়।
খেজুরের গাছ এক বিঘা জমিতে প্রায় ১০০ থেকে ১২০ টি লাগানো যায়। গাছ লাগানোর সাত
বছরের মধ্যেই ফলো রস সংরক্ষণ করা যায় এবং এই গাছগুলো থেকে ৩০ থেকে ৪০ বছর
পর্যন্ত ফলন ও রস পাওয়া যায়।
কোন দেশে সবচেয়ে বেশি গুড় তৈরি হয়
কোন দেশে সবচেয়ে বেশি গুড় তৈরি হয় জানতে সম্পন্ন পোস্টে পড়ুন। বর্তমানে
বিভিন্ন দেশের প্রচুর পরিমাণে খেজুরের গুড় তৈরি হচ্ছে। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড়
খেজুরের গুড়ের বাজার হলো ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগর। এরপর রয়েছে
অন্ধ্রপ্রদেশে। এছাড়া ভারতের পশ্চিম মহারাষ্ট্রের কোলাপুর জেলা ও গুজরাট গুড়ের
জন্য বেশ খ্যাতি রয়েছে।
খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
শীত আগমনের সাথে খেজুরের গুড়ের সাদ ও মিষ্টি গন্ধ ভরপুর হয়ে যায় পুরো এলাকা।
শীতের বিভিন্ন রকমের পিঠাপুলি পায়েস ক্ষীর ইত্যাদি এ গুড়ের স্বাদে অনেক বেশি
সুস্বাদু হয়ে ওঠে।খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন নিম্নে বিস্তারিত
জানতে সম্পন্ন পোস্টে পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো-
খেজুরের গুড়ের উপকারিতা
হজমের সমস্যা দূরীকরণঃ যে সকল ব্যক্তি গ্যাস্ট্রিকজনিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন- আমাশয়, বদহজম, বুক জ্বালাপোড়া, পেটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি ভুগছেন তাদের
জন্য খেজুরের গুড় অত্যন্ত কার্যকারী ভূমিকা রাখে। নিয়মিত অল্প পরিমাণে খেজুরের
গুড় খেলে খুব সহজেই খাবার হজম ও পাকস্থলীর হজম ক্রিয়া বৃদ্ধি পায়।
আয়রনের ঘাটতি মেটানোর জন্যঃ খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা
আমাদের শরীরের রক্তশূন্যতা রক্ত সঞ্চালন ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে। যে সকল ব্যক্তির
শরীরে আয়রনের অভাব রয়েছে তারা নিয়মিত খেজুরের গুড় খেতে পারেন ফলে খুব সহজেই
এবং দ্রুত সময়ের ভেতরে আপনার শরীরে আয়রনের অভাব পূরণ হয়ে আসবে।
ত্বকে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেঃ ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নিয়মিত খেজুরের
গুড় খান। শুনে হয়তো অবাক হবেন কিন্তু নিয়মিত খেজুরের গুড় খেলে আপনার ত্বকে
বয়সের ছাপ মেস্তা ব্রণ কালচে ভাব ইত্যাদি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা কখনোই দেখা দেবে
না এবং আপনার তখন হয়ে উঠবে মসৃণ উজ্জ্বল লাবণ্যময় ও প্রানোবন্ধক।
নারীদের জন্য উপকারিতাঃ নারীদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের
প্রয়োজন পড়ে যা খুব সহজে নিয়মিত খেজুরের গুড় খাওয়ার ফলে মেটাতে পারেন।
মেয়েদের শরীরের জন্য কিছু কিছু পুষ্টি উপাদান অত্যন্ত প্রয়োজন যা সকল খাবারে
বিদ্যমান থাকে না। এ সকল পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি মেটানোর জন্য নিয়মিত খেজুরের
গুড় খান এবং পিএমএস ও হরমোনার বিভিন্ন সমস্যা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
লিভার সুস্থ রাখতেঃ লিভার সুস্থ রাখতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি
উপাদান হচ্ছে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম। যা খেজুরের গুড়ে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান
রয়েছে। এজন্য লিভারকে সুস্থ সবল রাখতে নিয়মিত খেজুরের গুড় খাওয়ার অভ্যাস গড়ে
তুলুন।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ যে সকল ব্যক্তির অতিরিক্ত পরিমাণে উচ্চ
রক্ত চাপ রয়েছে সে সকল ব্যক্তি তাদের খাদ্য তালিকায় খেজুরের গুড় রাখতে পারেন।
খেজুর গুড়ে থাকা পুষ্টি উপাদান খুব দ্রুত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে রক্ত
চলাচল স্বাভাবিক করে।
বেশি শক্তিশালী করতেঃ বেশি শক্তিশালী করতে আমাদের শরীরে সোডিয়াম ও
পটাশিয়াম নামক পুষ্টি উপাদান সঠিক মাত্রায় থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। যা ঘুরে
প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। এজন্য বেশি শক্তিশালী করতে নিয়মিতগুড় খান।
সর্দি কাশি জনিত রোগঃ সর্দি-কাশি জনিত বিভিন্ন সংক্রমিত রোগ থেকে
নিস্তার পেতে নিয়মিত খেজুরের গুড় খান। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এ সকল উপকারিতা আপনি
তখনই পাবেন যখন গুটি ভেজালমুক্ত খাঁটি হবে।
ক্লান্তি দূরীকরণঃ আমাদের শরীরের ক্রান্তি দূর করার জন্য
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য অত্যন্ত প্রয়োজন। চিনি দিয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
কার্বোহাইড্রেট কিন্তু চিনি আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের
রোগের সৃষ্টি করে। তবে ঘুরে এর উল্টো কাজ করে এটি রক্তের সাথে মিশে শরীরের
ক্লান্তি দূর করে এনার্জি বৃদ্ধি করে এবং শরীরের কোন প্রকার ক্ষতি হয় না।
ক্যান্সার প্রতিরোধকারীঃ খেজুরের গুড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
এন্টিকারসিনোজেনিক যা আমাদের শরীরকে ক্যান্সার প্রতিরোধই করে তোলে। নিয়মিত খেজুর
খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলে খুব সহজেই শরীরকে ক্যান্সার প্রতিরোধই করে তোলা যায়।
খেজুরের গুড়ের অপকারিতা
রক্তের শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধিঃ চিনি খাওয়ার চাইতে গুড় খাওয়া অনেক বেশি ভালো।
তবে গুড় ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য এজন্য অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে রক্তে শর্করার
পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যায়। ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও রোগের সৃষ্টি
হয়। এজন্য অবশ্যই অতিরিক্ত পরিমাণে গুড় খাওয়া থেকে বিরত থাকবো।
হজম ক্রিয়ায় সমস্যাঃ গুড় আমাদের পাকস্থলীর হজম ক্রিয়া ঠিক রাখতে
অত্যন্ত প্রয়োজন। তবে টাটকা গুড় খেলে অনেক সময় ডায়রিয়া জনিত বিভিন্ন রোগ
হয়ে থাকে। অতিরিক্ত পরিমাণে বা সব সময় টাটকা গুড় খাওয়ার অভ্যাস থাকলে
কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত রোগ হতে পারে।
ওজন বৃদ্ধিতেঃ যে সকল ব্যক্তির অতিরিক্ত পরিমাণে ওজন বা ওজন
নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছেন তাদের জন্য গুড় খাওয়া মোটেও সঠিক নয়। ৫০ গ্রাম
গুড়ে রয়েছে ১৯২ ক্যালোরি যা দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। তবে অল্প পরিমাণে গুড়
স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
জীবাণু সংক্রমণঃ গুড় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী হলেও
বেশিরভাগ গুড় গ্রাম অঞ্চলে তৈরি করা হয় যা অনেক সময় স্বাস্থ্যবিধি বা পরিষ্কার
পরিচ্ছন্নতা না মেনে তৈরি করে। ফলে গুড়ে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু সংক্রমিত থেকে
আমাদের শরীরে আক্রমণ করে। এজন্য অবশ্যই গুড় খাওয়ার সময় তা কোথা থেকে আনা হচ্ছে
এবং কেমন স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে উক্ত বিষয়ে তথ্য জানবেন।
রোগের তীব্রতা বাড়ানোঃ গুড় বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে
তৈরি হয় না ফলে এতে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া থাকার সম্ভাবনা
থেকেই যায়। কখনো কখনো এ ব্যাকটেরিয়া গুলো আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের
তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দেয়। যে সকল ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ জনিত সমস্যা বা
রোগ রয়েছে তাদের গুড় সামান্য পরিমাণে খাবেন।
নাকের রক্তক্ষরণঃ গরমে ক্লান্তি দূরীকরণ ও এনার্জি ফিরিয়ে আনতে
খেজুরের গুড়ের রস খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই তেমন ভালো নয় তেমনি
প্রচণ্ড গরমে অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুরের গুড়ের রস খেলে অনেক সময় নাক দিয়ে
রক্তক্ষরণ হতে পারে। এজন্য অবশ্যই উক্ত বিষয়ে লক্ষ্য রেখে গুড় খাবেন।
হাঁপানি ও অ্যাজমা রোগ বৃদ্ধিঃ খেজুরের গুড় শরীরকে ঠান্ডা রাখতে
সহায়তা করে। এর জন্য যে সকল ব্যক্তির ঠান্ডা জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের খেজুর রস
খাওয়া থেকে বিরত থাকায় উত্তম। অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুরের গুড় খেলে যে সকল
ব্যক্তির অ্যাজমা ও হাঁপানিজনিত রোগ রয়েছে তাদের এ সমস্যা বৃদ্ধি হতে পারে।
ডায়বেটিস বৃদ্ধিঃ খেজুরের গুড় একটি মিষ্টি জাতীয় খাদ্য। এর জন্য
যে সকল ব্যক্তির অতিরিক্ত পরিমাণে ডায়াবেটিস রয়েছে তারা খেজুরের গুড় খাওয়া
থেকে বিরত থাকুন কারণ এতে রয়েছে ৮৫% পর্যন্ত মিষ্টি জাতীয় উপাদান।
কিডনি সমস্যাঃ যে সকল ব্যক্তির কিডনিজনিত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা
রয়েছে তারা খেজুরের গুড় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ খেজুরের গুড়ে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা আমাদের কিডনির জন্য বেশ ক্ষতিকর।
দাঁতের ক্ষয়ঃ খেজুরের গুড়ে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি চিনির পরিমাণ
থাকায, অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে দাঁতে ক্ষয়,পোকা ও ফাঁকা হয়ে যা সম্ভাবনা থাকে।
এজন্য যাদের দাঁতের কোন প্রকার সমস্যা রয়েছে তারা এই গুড় খাওয়া থেকে বিরত
থাকুন।
চিনি ও গুড়ের মধ্যে পার্থক্য কি
দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির জাতীয় খাদ্য খেয়ে থাকি। কেউ ব্যবহার
করে মিষ্টি হিসেবে চিনি কেউ বা গুড় কিন্তু কোনটি আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তার
জন্য অবশ্যই আমাদের জানতে হবে চিনি ও গুড়ের মধ্যে পার্থক্য কি নিম্নে বিষয়ে
বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
চিনি
- চিনিতেই রয়েছে প্রচুর পরিমানে সুক্রোজ নামক এক ধরনের শর্করা। যা আমাদের শরীর ও স্বার্থের জন্য বেশ ক্ষতিকর।
- বাজারে যে সকল কোল্ড ড্রিংস বা কোমর পানিও পাওয়া যায় এ সকল কিছুই চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়। বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে সকল ব্যক্তির খাবার গুলো নিয়মিত খায় তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
- নিয়মিত চিনি খাওয়ার ফলে হৃদরোগ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার দেখা দেয়।
- যে সকল ব্যক্তি মাসে তিন থেকে চারবার এ জাতীয় পানি পান করে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বা অকাল মৃত্যু এক শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
- বিভিন্ন গবেষণা ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে ভাত চিনি ও লবণ এই তিন ধরনের খাদ্য আমাদের শরীরের জন্য সাদা বিষ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
- যে সকল ব্যক্তি অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ, চিনি ও ভাত খেয়ে থাকেন তাদের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তী সময়গুলোতে শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি বা রোগের সম্মুখীন হতে হয়।
- পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আখতারুণ বলেছেন ভাত চিনি ও লবণ এ তিনটি খাদ্যকে সাদা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা হয় যার ফলে খাদ্যের কোন প্রকার পুষ্ট গুণাগুণ থাকে না। এর জন্য যত দ্রুত সম্ভব এগুলো খাওয়া থেকে বেরিয়ে আসুন।
- আমরা যে সকল লবণ বা চিনি খেয়ে থাকি তা অনেক বেশি সাদা তবে প্রাকৃতিক ভাবে এগুলো মোটেও সাদা নয়। বিভিন্ন ধরনের কেমিকাল এগুলো সাদা করতে ব্যবহার করা হয় যেমন হাইড্রোজ। বিভিন্ন ধরনের খাদ্যে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে সাদা করে ফেলে। তবে এ হাইড্রোজ আমাদের শরীরের বিভিন্ন কোষে ঢুকিয়ে পানি পরিমান বাড়িয়ে শরীরকে মোটা ও বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে।
- আমরা সকলেই জানি চিনি বিভিন্ন ধরনের রস থেকে তৈরি করা হয়। যেমন আখের রস থেকে যখন চিনি তৈরি করা হয় তখন এটি বাদামী কালারের হয়ে থাকে এবং এতে অনেক বেশি আয়রন থাকে। যা পরবর্তীতে হাইড্রোজ ব্যবহার করে আয়রন দূর করে চিনিতে শুধুমাত্র কার্বন-ডাই-অক্সাইড রেখে দেয় যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকারক উপাদান।
- সাদা জাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে যা আমাদের পাকস্থলী দ্রুত হজম করে ফলে কিছুক্ষণ পরপর খোদা লাগে বা খোদার পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে মানুষ বেশি পরিমাণে খায় এবং দ্রুত মোটা হয়ে যায়।
খেজুরের গুড়
- গুড় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লোহা ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম ফসফরাস ও প্রোটিন। তবে সামান্য পরিমাণে সুক্রোজ ও রয়েছে যা আমাদের শরীরে বেশি ক্ষতি করতে পারে না।
- গুড় আমাদের শরীরের পাকস্থলীর হজম ক্রিয়ার এনজাইমের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে ফলে খুব সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম,পেট ফাঁপা, ইত্যাদি গ্যাস্ট্রিক জড়িত সকল সমস্যা খুব সহজে সমাধান দিতে পারে।
- দূরে থাকা আয়রন আমাদের শরীরে লিভারের জমে থাকা ক্ষতিকারক পদার্থ দূর করে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- গুড় খুব সহজে আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে দেয়।
- সংক্রমণ জড়িত বিভিন্ন রোগ সর্দি কাশি জ্বর মাইগ্রেনের মতো রোগ খুব সহজে নির্মূল করতে পারে। এর জন্য নিয়মিত চা খাওয়ার সময় চিনির পরিবর্তে গুড় ব্যবহার করুন।
- আমাদের শরীরকে অ্যান্টিবডি হিসেবে তৈরি করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে গুড়। এছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- আমার শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ছাত্ররা প্রবেশ করে থাকে তবে ঘরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেল ও জিংক এ সকল সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
- আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষত হয় এবং তা চিনি খাওয়ার ফলে দ্রুত শুকায় না তবে নিয়মিত গুড় খেলে আমাদের শরীরের ক্ষতস্থান দ্রুত শুকিয়ে যায়।
গুড়ের দাম কত?খেজুরের গুড় কত প্রকার?
আমাদের অনেকের মনে গুড়ের দাম কত?খেজুরের গুড় কত প্রকার? ইত্যাদি প্রশ্ন জাগে।
কারণ শীত আসার সাথে সাথে আমরা সকলে গুড় কেনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি বিভিন্ন
ধরনের পিটা ও পুলি তৈরি করার জন্য। এজন্যই আমি আপনাদের জন্য উক্ত বিষয়ে
বিস্তারিত আলোচনা করেছি-
গুড়ের দামঃ অঞ্চল ও এলাকার ভেদে বিভিন্ন জায়গায় গুড়ের দাম
বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এটা মূলত রস উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে দাম ওঠানামা করে। কম
পরিমাণে রস পাওয়া গেলে গুড়ের দাম বেড়ে যায় এবং বেশি পরিমাণে রস উৎপাদন হলে
গুড়ের দাম কমে যায়। তবে বর্তমানে ২০২৪সালের বাজারে গুড়ের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা
দরে কেনাবেচা চলছে।
খেজুরের গুড়ের প্রকারভেদঃ খেজুরের গুড়ের প্রকারভেদ মূলত এর ধরনের
ওপর করা হয়। কোনটি বেশি পাতলা কোনটি শক্ত কোনটি কম পাতলা কোনটি বেশি শক্ত কোনটি
দানা সকল বিষয়ের উপর নির্ভর করে প্রকারভেদ করা হয়। এভাবেই গুড়ের ধরন অনুসারে
খেজুরের গুড় কে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে যেমন-
- ভেরি গুড
- বালুয়া গুড়
- মিশ্রি গুড়
- নলেন গুড়
- পাটালিগুড়
- দানাদার গুড়
- ছোলা গুড়
- চিটাগুর
খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান ও খাওয়ার নিয়ম
শীতে আসলে আমরা সকলে খেজুরের গুড় খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি কিন্তু আমরা কি
জানি খেজুরের গুড়ে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে এবং কত উপায়ে খেজুরের গুড়
খাওয়া যায়। আশা করি সম্পূর্ণ পুষ্টি পরলে সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর ও সমাধান
পাবেন। চলুন জেনে নিই খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান ও খাওয়ার নিয়ম-
খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান প্রতি ১০০ গ্রামে নিম্নে দেয়া হলো-
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস
- শক্তি- ১৯০ ক্যালোরি
- ফ্যাট- ০ গ্রাম
- সেচুরেটেড ফ্যাট- ০ গ্রাম
- কোলেস্টেরল- ০ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট- ৪৯ গ্রাম
- ফাইবার- ০ গ্রাম
- সুগার- ১৯২.৫ গ্রাম
- প্রোটিন- ০.০৫ গ্রাম
ভিটামিন
- ভিটামিন এ- ০ গ্রাম
- ভিটামিন সি- ০ গ্রাম
- ভিটামিন ই- ০ গ্রাম
- ভিটামিন বি- ১২-০ গ্রাম
- ভিটামিন ডি- ০ গ্রাম
- ভিটামিন কে- ০ গ্রাম
পুষ্টি উপাদান
- নেট কার্বোহাইড্রেট- ১০০%
- ফাইবার- ০%
- প্রোটিন- ০%
- ফ্যাট- ০%
খনিজ
- ক্যালসিয়াম- ৪০ মিলিগ্রাম
- আয়রন- ২ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম- ১০ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম- ২০ মিলিগ্রাম
- জিংক- ৫ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম- ৬৪ মিলিগ্রাম
উপাদান
- পানি- ৫১%
- কার্বোহাইড্রেট- ৪৯%
- প্রোটিন-০%
- ফ্যাট - ০%
গ্লাইসেমিক তথ্য
- গ্লাইসেমিক ইনডেক্স- ৬০
- গ্লাইসিমিক লোড- ৩০
খেজুরের গুড় খাওয়ার নিয়ম
খেজুরের গুড় খাওয়ার নিয়ম চলুন জেনে নিই-
- অতিরিক্ত গরমে ছোট এক টুকরা গুড় ও মধু একসাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- বিভিন্ন ধরনের মিস্টে জাতীয় খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার করে খেতে পারেন।
- গুড় লবণ এক চামচ মধু ও সামান্য লেবু মিশিয়ে খেতে পারেন।
- খাবার খাওয়ার ২০ মিনিট পরে এক টুকরো গুড় খেতে পারেন।
- শুধুমাত্র গুড়ের রস তৈরি করে খেতে পারেন।
- গুড় ও রুটি একসাথে খেতে পারেন রুটি।
- গুড় ও দুধ একসাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
সকালে খালি পেটে গুড় খেলে কি হয়?
সকালের খাবারটা এমন হওয়া উচিত যাতে আমাদের শরীরে সারাদিন কোন প্রকার ক্লান্তি
দুর্বল ও অস্বস্তি বোধ না হয়। তাই আমাদের শরীরের জন্য সকলের নাস্তা অত্যন্ত
জরুরী। এজন্য আপনাদের অবশ্যই জানা দরকার সকালে খালি পেটে গুড় খেলে কি হয়? এটা
কি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর? না আমাদের জন্য অনেক উপকারী? জানতে সম্পন্ন
পোস্টটি করার বিশেষ অনুরোধ রইলো-
- সকালে খালি পেটে গুড় পানি খেলে দ্রুত ওজন ঝরে যায়।
- ঠান্ডা লাগার প্রবণতা কমে যায়।
- শরীরে থাকা সকল প্রকার টক্সিন বের করে দেয়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- খাবারের হজম ক্রিয়া বৃদ্ধি পায়।
- গ্যাস্ট্রিক জনিত সকল সমস্যার সমাধান হয়।
- কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত রোগ দূর হয়।
- মেয়েদের হরমোনের সমস্যা খুব সহজে দূর হয়।
- ঋতু কালীন বিভিন্ন ধরনের ব্যাথা থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।
- পেট ফাঁপা বমি বমি ভাব ডায়রিয়া জমিতে সকল সমস্যা খুব সহজেই সমাধান দেয়।
- ঘুরে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে এজন্য আয়রন জনিত কারণে হওয়া বিভিন্ন গ্রুপ থেকে খুব সহজে নিস্তার দেয়।
- গুড়রে থাকা আয়রন ও ফোলেটের উপাদান রক্তের হিমালয় মাত্রা বাড়ায়।
- গুড় থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
- চোখের দৃষ্টি শক্তি ও চোখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- হাড় মজবুত ও শক্ত করে।
- শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে।
- গরমে শরীর ঠান্ডা রাখে।
- শরীর থেকে ক্ষতিকর অনুজীব গুলো দূর করে।
- খনিজের ঘাটতি খুব সহজেই দূর করে।
- গলা ব্যথা ঘাড়ে ব্যথা ও ঠান্ডা জনিত রোগ সমাধান দেয়।
- শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- বুকে ব্যথা বুকে কফ জমা রক্ত প্রবাহের সমস্যা ইত্যাদি খুব সহজে দূর করে।
- রক্তের বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকার পদার্থ বের করতে ও রক্ত পরিষ্কার করতে বেশ কার্যকরী।
- লিভার কে সুস্থ সবল ও বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ বের করে লিভারকে পরিষ্কার রাখে।
- শরীরের ক্লান্তি দূর ও এনার্জি বৃদ্ধি করে।
- পেট ঠান্ডা রাখে।
- গাটের ব্যথা কমায়।
খেজুরের গুড়ে কি ওজন বাড়ে?খেজুরের গুড় চেনার উপায়
খেজুরের গুড়ে কি ওজন বাড়ে?খেজুরের গুড় চেনার উপায়জানতে সম্পূর্ণ
পোস্টটি পড়ুন নিম্নে উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-
ওজন কমাতে খেজুরের গুড়
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আয়রন ক্যালসিয়াম যা আমাদের শরীরের জন্য
অত্যন্ত প্রয়োজন ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। খেজুরের গুড় আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর
পদার্থগুলো খুব সহজে বের করে দেয় এ ছাড়া গ্যাস্ট্রিক জনিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন
ডায়রিয়া পেট ফাঁপা কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত রোগ বদহজম খুব সহজেই দূর করে দেয়। ফলে
খুব দ্রুত ওজন কমে। তবে নির্দিষ্ট মাত্রায় অবশ্যই খেতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে
গুড় খেলে ডায়াবেটিসের সমস্যা ওজন বেড়ে যেতে পারে।
খেজুরের গুড় চেনার উপায়
- খেজুরের গুড় কেনার সময় অবশ্যই প্রথমে একটু খেয়ে দেখবেন যদি নোনতা অনুভূতি হয় তাহলে তা ভেজাল যুক্ত
- গুড়ের এক কোনা ভাঙ্গার চেষ্টা করবেন যদি ভাঙতে কষ্ট হয় তাহলে গুড়টি ভেজাল এবং ভাঙতে সহজ হলে গুড়টি ভালো।
- গুড়ের রং দেখেও গুড় ভালো না খারাপ বুঝতে পারবেন। গুড়ের সাধারণত বাদামি কালারের হয়ে থাকে তবে অন্য কোন কালার হলে বুঝবেন এতে অনেক পরিমাণে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো রয়েছে।
- যে সকল গুড় গুলো দেখতে অনেক বেশি মসৃণ ও ঝকঝকে সেগুলো ভেজালযুক্ত গুড়।
লেখক এর মন্তব্য
রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে খেজুরের গুড় সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়ার
চেষ্টা করেছে। আশা করি উপরোক্ত সম্পন্ন পোস্টি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আমাদের
আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে
শেয়ার করে তাদেরকে খেজুরের গুড়ের উপকারিতা সম্পর্কে জানিয়ে দিন। এমন আরো তথ্য
জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন, আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url