খালি পেটে খেজুরের রস খেলে কি হয়?
আজকের আলোচ্য বিষয় খালি পেটে খেজুরের রস খেলে কি হয়? খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ
পদ্ধতি, খেজুরের রস খেলে কি রোগ হয়? খেজুরের রস কোথায় বেশি বিখ্যাত ইত্যাদি আরো
খেজুরের রস নিয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার বিশেষ
অনুরোধ রইলো।
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে খেজুরের রস সম্পর্কে আপনার যত প্রশ্ন ও ভুল ধারণা
রয়েছে তার অবসর সঠিক সমাধান ও উত্তর পাবেন এবং আপনার শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে
পারবেন।
ভূমিকা
সারাবছর জুড়ে এই শীতে শুধুমাত্র খেজুরের রস বা গুড় দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের
পিঠাপুলি খাওয়ার জন্য আমরা অনেকে অপেক্ষা করে থাকি। খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি
নানা পদের শীতকালীন নানা রকমের পিঠাপুলি সাধ ও গন্ধ অতুলনীয়।
তবে আমরা কি জানি খালি পেটে খেজুর রস খেলে কি হয়? খেজুরের রস খেলে কি রোগ হয়?
খেজুর রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, কিভাবে সংরক্ষণ করতে
হয়,কিভাবে সংগ্রহ করে গাছেরা এটাতে আরও বিভিন্ন বিষয় নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা
করা হয়েছে।
খেজুরের রস খেলে কি রোগ হয়?
শীত আসলে আমরা সকলে খেজুরের রস খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে যায়। তবে আমরা কি জানি
খেজুরের রস খেলে কি রোগ হয়? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন পোষ্টটি পড়ার
অনুরোধ রইল। নিম্নে উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
সরাসরি গাছ থেকে নামিয়ে খেজুরের রস খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে তার মধ্যে
অন্যতম ও সবচেয়ে বেশি বিপদজনক রোগ হচ্ছে নিপা ভাইরাস। জুনোটিক ভাইরাস থেকে রোগ
হয়ে থাকে। এ রোগটি ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ার কারণে মানুষ ও প্রাণী সকলের শরীরে্র
মধ্যে সংক্রমিত হয়ে যায়।
নিপা ভাইরাস যেভাবে মানুষের মাঝে ছড়ায়
- বিশ্বের বিভিন্ন ধরনের গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে এ রোগ প্রথম শনাক্ত করা হয় 1999 সালে মালয়েশিয়ার এক শুকুর খামারিদের মধ্যে। এরপর থেকে পুরো বিশ্বে এ রোগ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে।
- উক্ত খামারে বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণ করে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে এটি মূলত বাদুরের লালা ও মল থেকে এ ভাইরাস খেজুরের রসে ছড়িয়ে দিয়েছে।
- আইআইডিসিআর এর গবেষণা থেকে জানা যায় বাংলাদেশে এ রোগ ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিপা ভাইরাস জনিত রোগে ৩০৪ জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়ে ২১৮ জন ব্যাক্তি মৃত্যু বরণ করেছে। যা আক্রান্তর প্রায় ৭০% ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে।
- নিপা ভাইরাসের যে সকল জেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে রংপুর, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া টাঙ্গাইল মানিকগঞ্জ ইত্যাদি আরও ৩১টি জেলা এ রোগ সবচেয়ে বেশি সনাক্ত করা গিয়েছে।
- এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কে প্রচন্ড পরিমানে জ্বালা অনুভূত হয়।
- প্রচন্ড জ্বর ও মানসিকভাবে অনেক অস্থির হয়ে পড়ে।
- ধীরে ধীরে খিচুনি সৃষ্টি হয়
- যে সকল ব্যক্তি খেজুর রস সংরক্ষণ করে তারা মূলত সন্ধ্যার দিকে হারিয়ে গাছে ঝুলায় এবং সকালে। এতে বাদুর সারারাত সেই রস খাই এবং মলত্যাগ করে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ ও বিভিন্ন ধরনেরভাইরা এ রস খেয়ে থাকে।
- এই খেজুরের রস যখন সরাসরি খাওয়া হয় তখন এ বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও বাদুরের থেকে নিঃসরিত ভাইরাস নিপা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।
- এর রস খাওয়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে ডায়রিয়া কাশি দুর্বলতা বমি মাথা ব্যথা শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হয়এবং ধীরে ধীরে মানুষ মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে।
খেজুরের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন খেজুরের রস খাওয়া কি আমাদের জন্য উপকারী না ক্ষতিকর।
কারণ এতে বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও সমাধান জানতে
সম্পন্ন পোস্টটি পড়ুন। নিম্নে খেজুরের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন-
খেজুর রসের উপকারিতা
- খেজুরের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর উপাদান।
- খেজুরের রস থেকে বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি হয় যেমন গুড় চিনি ইত্যাদি। যা আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ব্যবহৃত হয়।
- খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড় আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ধরনের রোগ ও ভাইরাস থেকে রক্ষা করে।
- খেজুরের রস আমাদের অনিদ্রা দূর করে আরামদায়ক ঘুম আসতে সহায়তা করে।
- খেজুরের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আইরন যা আমাদের শরীরের দুর্বলতা দূর করে।
- শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্লান্তি দূরীকরণ ও এনার্জি দ্রুত ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে
- হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক রাখে।
- বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের অভাব যেমন ভিটামিন বি৩, সি, এ ইত্যাদি যা আমাদের শরীরে রক্ত উৎপাদন ও রক্ত সঞ্চালন সঠিক রাখি।
- খেজুর রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন সমস্যা থাকলে নিয়মিত খেজুরের রস খান।
- শরীরের বিভিন্ন বজ্রপত বা ক্ষতিকারক পদার্থ বের করতে সহায়তা করে।
- খেজুরের রসে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের শারীরিক গঠন হাড় মজবুত ও ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করতে সাহায্য করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত রোগ দূর করতে নিয়মিত খেজুরের রস খেতে পারেন।
- গ্যাস্ট্রিক জনিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন পেট ফাঁপা পেটে ব্যথা বুক জ্বালাপোড়া বদহজম দূর করতে নিয়মিত খেজুর রস খান। এটি আমাদের পাকস্থলির হজম ক্রিয়া বৃদ্ধি করে।
- ওজন কমাতে আমাদের শরীরে অত্যন্ত প্রয়োজন পটাশিয়াম। খেজুরের রসে থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে ফলে খুব সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে খেজুরের রস খেতে পারেন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে থাকা ইনসুলিন এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনে। এজন্য যে সকল ব্যক্তির ডায়াবেটিস রয়েছে সে সকল ব্যক্তি খেজুরের রস খেতে পারেন।
- হার্ট সুস্থ ও সবল রাখতে রাখতে খেজুরের রসের ভূমিকা অত্যন্ত বেশি। কারণ খেজুরের রস আমাদের শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্ট্রল বের করে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃদ্ধি করে। এতে আমাদের হাট সুস্থ সবল থাকে।
- শরীরের সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে খেজুরের রস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খেজুরের রসে রয়েছে গ্লাইসোমিক যা আমাদের শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনে।
- যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খেজুরের রস খেতে পারেন।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে প্রয়োজন ভিটামিন ডি ও ভিটামিন সি জাতীয় উপাদান যা আমাদের ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আমাদের শরীরের তারুন্যতা ধরে রাখে।
খেজুরের রসের অপকারিতা
- খেজুরের রসে তেমন কোন অপকারিতা নেই তবে অতিরিক্ত পরিমাণে যেমন কোন কিছুই আমাদের শরীরের জন্য সঠিক নয় তেমনি খেজুরের রস অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও ক্ষতি হতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে নিয়মিত খেজুরের রস খাওয়ার অভ্যাস থাকলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি হয়ে যাবে।
- যে সকল ব্যক্তির অতিরিক্ত কিডনিজনিত বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে তারা খেজুরের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন কারণ খেজুরের রসে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
- অতিরিক্ত পরিমাণে ঠান্ডা জনিত রোগ যেমন অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ রয়েছে তারা এ রস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন কারণ এটি একটি ঠান্ডা জাতীয় খাদ্য যা আমাদের শরীরের শ্বাসকষ্ট বাড়াতে পারে।
- যে সকল ব্যক্তির ডায়াবেটিস সবসময় ওঠানামা করে তাদের জন্য খেজুরের রস নয়। যত সম্ভব খেজুর রস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
খালি পেটে খেজুরের রস খেলে কি হয়?
খালি পেটে খেজুরের রস খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন ও
বিভ্রান্তি রয়েছে। তা দূর করার জন্য অবশ্য সম্পন্ন পোস্টটি পড়ুন। এ সম্পর্কে
নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
খালি পেটে খেজুরের রস খেলে আমরা অনেক বেশি উপকৃত হতে পারি কারণ এতে বিভিন্ন ধরনের
পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীর স্বাস্থ্য ও মনকে প্রাণবন্তক রাখতে বিশেষ
ভূমিকা রাখে চলুন দেখে নিই আমরা খালি পেটে খেজুরের রস খেলে কি কি পুষ্টি উপাদান ও
উপকার পাব
আইরনঃ খেজুরের রসে থাকা আইরন আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করে
রক্ত সঞ্চালন রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
শর্করাঃ খেজুরের রসে প্রাকৃতিকভাবে শর্করা থাকে যা আমাদের শরীরে
শক্তি ও মাংস পেশী শক্ত করতে সহায়তা করে
ফাইবারঃ ফাইবার আমাদের হজম ক্রিয়া ও পাকস্থলী সুস্থ রাখতে বিশেষ
ভূমিকা রাখে। যাদের গ্যাস্ট্রিকজনিত বিভিন্ন সমস্যা ও পাকস্থলী দুর্বল তারা খালি
পেটে খেজুরের রস খেতে পারেন।
ক্যালসিয়ামঃ ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হার মজবুত ও দাঁতের মাড়ি
শক্ত করতে সহায়তা করে। খালি পেটে নিয়মিত খেজুরের রস খেলে এতে থাকা ক্যালসিয়াম
আমাদের শরীরের হার ক্ষয় ও দাঁতের রক্ত পড়া মাড়ি শক্ত জনিত সমস্যা খুব সহজেই
দূর করতে পারবে।
প্রোটিনঃ শরীরের শারীরিক গঠন, মাংসপেশী ও শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে
খেজুরের রস খালি পেটে খেতে পারেন এটি আমাদের শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি খুব সহজে
মিটিয়ে দেবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত রোগঃ খেজুরে থাকা ফাইবার আমাদের পাকস্থলীকে সুস্থ
রাখে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের সকল ব্যক্তি ভুগছেন নিয়মিত খালি পেটে খেজুরের রস
খান।
চুলের যত্নেঃ চুলের সৌন্দর্যতা মসৃণতা ও গ্রোথ হচ্ছে না তাহলে খালি
পেটে খেজুরের রস খান। খেজুরের রস চুলের হারিয়ে যাওয়া উজ্জলতা রুক্ষতা শুষ্কতা
খুশি দূর করে চুলের সৌন্দর্যতা ফিরিয়ে আনে।
খুসখুসে কাশি দূরঃ যে সকল ব্যক্তির খুশখুসে খাসি বা কাশি সহজে ভালো
হচ্ছে না তারা সকালে খালি পেটে এক গ্লাস খেজুরের রসের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে
খেতে পারেন।
হার্টের সমস্যা দূরঃ হার্টের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে খেজুরের
রসের ভূমিকা অত্যন্ত বেশি। খেজুরের রস আমাদের হাটকে সুস্থ হাত মজবুত ও পরিষ্কার
রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এজন্য নিয়মিত খালি পেটে খেজুরের রস খাওয়ার অভ্যাস
গড়ে তুলুন।
ক্যান্সার প্রতিরোধকঃ খেজুরের রসে থাকা অ্যান্টিসেপটিক আমাদের শরীরকে
বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে লড়াইয়ের উপযোগী করে তোলে এবং শরীরকে অ্যান্টিবডি করে
তোলে। এর বিরুদ্ধে এ রস রস যুদ্ধ করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
ত্বকের সৌন্দর্যঃ আমাদের অনেকের বয়সের আগে ত্বক টানটান ভাব কালচে ভাব
রুক্ষ শুষ্ক প্রানহীন ত্বক হয়ে যায়। এগুলো সমস্যা থেকে দূর করতে পারে খেজুরে
থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন নিয়মিত খালি পেটে খেজুরের রস খেলে দেখবেন খুব সহজে
আপনার ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে এসেছে।
মস্তিষ্ক সচলঃ কাজ করার প্রতি অনীহা প্রচুর ক্লান্তি মানসিক বিকাশ না
ঘটা স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া দূর করতে নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন যা আমাদের
শরীরের সকল পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি মিটিয়ে শরীরকে সুস্থ সবল রাখে।
গর্ভবতী নারীর জন্যঃ একজন গর্ভবতী নারীর জন্য আয়রন ভিটামিন
ক্যালসিয়াম খনিজ জাতীয় খাদ্য অত্যন্ত প্রয়োজন এবং এগুলোর ঘাটতি একজন গর্ভবতী
নারীর জন্য অনেক বেশি হুমকি জনক। এই ঘাটতি মেটানোর জন্য গর্ভবতী নারীরা নিয়মিত
সকালে খালি পেটে বা যেকোনো সময় দুই থেকে তিনটি খেজুর খেতে পারেন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতেঃ ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আমরা নিয়মিত করে
খালি পেটে খেজুর খেতে পারি কারণ খেজুরে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের
খাওয়ার প্রতি অনীহা সৃষ্টি করে এবং নিজে শরীরের সকল পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি
মিটিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনে।
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধিঃ রক্ত স্বর্গ ঠিক রাখতে হিমোগ্লোবিনের
মাত্রা বৃদ্ধি করতে রক্ত সঞ্চালন ও রক্ত থাকা দূষিত পদার্থ বা টক্সিন বের করে
দিতে নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন।
খেজুরের রস দিয়ে কি কি বানানো যায়?
ঠিক আগমনের সাথে সাথে খেজুরের রস খাওয়া আমাদের জন্য মনে হয় বাধ্যতামূলক হয়ে
যায়। এছাড়া এ রস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পদের পিঠাপুলি তৈরি তো রয়েছে। চলুন জেনে
নিই খেজুরের রস দিয়ে কি কি বানানো যায়? নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা
হলো-
রস চিতই
উপকরণঃ
- তিন কাপ পরিমাণে চালের গুঁড়,
- গরম পানি পরিমাণ মতো
- লবণ আপনার স্বাদমতো
- খেজুরের ঘন টাটকা রস ২ থেকে ৩ কাপ
- তেজপাতা ২ থেকে ৩টি
- নারকেল আধাকাপ
তৈরির প্রণালীঃ চালের গুড়া পানি ও লবণ একত্রে ভালো করে মিশিয়ে
হালকা পাতলা বেটার তৈরি করে নিন। মাটির তৈরি খোলা বা যেকোনো লোহার করয়ে চিতই
তৈরি করে নিন। চিতই তৈরি করা হয়ে গেলে একটি পাত্রে খেজুরের রস নারকেলের পে স্ট ও
তেজপাতা দিয়ে ভালো করে জাল দিয়ে শিরা তৈরি করে নিন। উক্ত শিরায় গুলো দিয়ে
ভালো করে কয়েক মিনিট চুলার ওপর অল্প আছে রেখে দিন।
বিবিখানা পিঠা
উপকরণঃ
- চালের গুড়া তিন কাপ
- ঘন খেজুরের রস এক কাপ
- একটি বা দুইটি ডিম
- স্বাদ অনুসারে লবণ
- দুধ হাফ কাপ
- ঘি দুই থেকে তিন চামচ
তৈরি প্রণালীঃ সকল উপকরণগুলো একসাথে ভালো করে মিশ্রিত করে ব্যাটার
তৈরি করুন। একটি লোহার কড়াই এ অল্প করে এক থেকে দুই চামচ ঘি দিয়ে গোল চামচে করে
ব্যাটার চারিদিকে ছড়িয়ে দিন এবং চিরুনি বা পরিষ্কার ব্রাশ দিয়ে চারিদিকে
ছড়িয়ে দিন। তৈরি হয়ে গেলে গরম গরম পরিবেশন করুন ।
চাল কুমড়োর মিঠাই
উপকরণঃ
- ঘন খেজুরের রস এক লিটার
- দুধ ঘন ১ লিটার
- তেজপাতা তিন থেকে চারটি
- চালের কুমড়ো একটি
- ঘি এক থেকে দুই চামচ
- কিসমিস ১০ থেকে ১৫ টি
- দারচিনি দুই থেকে তিনটি
- নারকেল বাটা হাফ কাপ
তৈরি প্রণালীঃ খেজুরের রস কে জাল দিয়ে এক কাপ পরিমাণে করতে হবে।
একটি হাড়িতে ঘি, দারচিনি তেজপাতা বড় বড় করে টুকরো করা চাল কুমড়ো ভাজতে হবে।
চাল কুমড়ো ভাজার সময় দুধ ও খেজুরের রস একসাথে দিয়ে ঢেকে রাখুন। চুলার জাল
আস্তে করে দিয়ে কিছুক্ষণ সময় রাখুন যতক্ষণ না কুমড়ো সেদ্ধ হয়। সেদ্ধ হয়ে
গেলে বাকি উপকরণ মিশিয়ে দিন এবং গরম গরম পরিবেশন করুন।
খেজুরের রসের পায়েস
উপকরণঃ
- খেজুরের রস ঘন ০.৫ লিটার
- পোলাও চাল এক কাপ
- লবণ সাদ অনুসারে
- এলাট ও দারুচিনি দুই থেকে তিনটি
- নারকেলের পেস্ট এক কাপ
তৈরি প্রণালীঃ চুলায় খেজুরের রসকে জাল দিয়ে একটি বলক তুলে নিতে হবে
বলক উঠে আসলে পোলাও চাল ও বাকি সকল উপকরণ মিশিয়ে আস্তে চুলার জাল দিন। চাল সেদ্ধ
হয়ে আসলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
ছাড়া বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু পিঠা খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করতে পারেন যেমন-
- টাইটম্বুর রসের শুটকি
- ভাপা পিঠা
- দুধ লাউয়ের ককটেল
- রঙিন পুডিং
- খেজুরের রসের ভেলভেট কেক
- শাহি পিঠা
- মালাই চপ
খেজুরের রস কোথায় পাওয়া যায়
আমরা অনেকেই জানতে চাই খেজুরের রস কোথায় পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের
বিভিন্ন জেলায় খেজুরের রস পাওয়া যায়। তবে কিছু কিছু জেলা রয়েছে যে সকল স্থানে
প্রচুর পরিমাণে ব্যবসায়িকভাবে খেজুরের রস পাওয়া যায়। বিশেষ করে ফরিদপুর
মাদারীপুর যশোর চব্বিশ পরগনা সাতক্ষীরা মহকুমার ও বাঁশেরহাট জেলায় ব্যাপকভাবে
খেজুরের রস আহরণ করা হয়।
১৯৪০ দশকের সময় ব্যাপকভাবে মাদারীপুরস, চব্বিশ পরগনার, হাওর এলাকা ও ফরিদপুর
ইত্যাদি। জেলাগুলোর খেজুরের রস বিভিন্ন দেশে নাম ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এ সকল
অঞ্চল থেকে প্রতিবছর প্রায় এক কোটি টন খেজুরের গুড় উৎপাদিত হয়।
খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ পদ্ধতি
খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ পদ্ধতি সাধারণত দুইভাবে করা হয়ে থাকে একটি প্রচলিত
পদ্ধতি আরেকটি আধুনিক পদ্ধতি তবে বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে গাছ থেকে রস সংগ্রহ
অনেক সুবিধা। প্রথমত খেজুরের রস আহরণ করার জন্য সুস্থ সবল ৫-৭ বছরের গাছ নির্বাচন
করতে হবে। এ গাছ নির্বাচনে সঠিক হলে রস অধিক পরিমাণে পাওয়া যাবে।
আহরণের জন্য সঠিক গাছ নির্বাচনের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল গাছ কাটা দুই
ভাবে এই গাছ কাটা হয় আধুনিক ও প্রচলিত আধুনিক নিয়মে গাছ কাটা হলে রস আহরণের
পরিমাণ ও গাছের স্থায়িত্ব অনেক বেশি বেড়ে যায়।
অধিক পরিমাণে রস আহরণের জন্য সঠিক গাছ কিভাবে নির্বাচন করব কোন গাছে বেশি রস
পাওয়া যাবে কিভাবে গাছ কাটলে গাছের স্থায়িত্ব ও অনেক বছর ধরে রস পাওয়া যাবে তা
সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।
বিভিন্ন গবেষণা ও বন অধিদপ্তরের মতে গাছের লম্বা এক ১' থেকে ৩' পর্যন্ত ও ৭.৫
থেকে ১০ সেন্টিমিটার গভীরতায় গাছ কাটলে অধিক পরিমাণে রস পাওয়া যায়।
রস সংগ্রহ পদ্ধতিঃ ডিসেম্বর মাস থেকেই খেজুর গাছের বিভিন্ন পরিচর্যা
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা শুরু করতে হয়। গাছের বিভিন্ন পরিচর্যা ও
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে গেলে ১৫ থেকে ২০ দিনের পর গাছ কাটা শুরু করে দিতে হয়।
যে অংশ দিয়ে রস নির্গত হয় সেখানে বাসের কঞ্চি দিয়ে তৈরি ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা
"টি" আকৃতির চিকন হাফ ইঞ্চি পরিমাণে গাছের ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হবে।
এ "টি" আকৃতির কঞ্চি দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে রস পরে। টি আকৃতির কঞ্চির নিচে একটি
হাঁড়ি বাঁধা হয় এবং এই হাঁড়িতে রস গিয়ে জমা হয়।
একবার গাছ কাটা হলে সে স্থান হতে তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা করা
যায়। এবং তিন থেকে চার দিন রস সংগ্রহের পর তিনদিন আর রস নিতে হয় না। এভাবে বা
এই নিয়মে সংগ্রহ করলে রসের স্বাদ ও মিষ্টি বেশি হয়। এই নিয়মে ডিসেম্বর মাস
থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা হয়। যে হাড়িতে রস সংগ্রহ করবেন সেটা
অবশ্যই রোদে শুকাবেন বা আগুনে তাঁতিয়ে নেবেন।
খেজুর রস সংরক্ষণ পদ্ধতি কি
শীত আসলে আমরা সকলে খেজুরের রস খাই। তবে আমরা কি জানি খেজুর রস সংরক্ষণ পদ্ধতি কি
কিভাবে আমরা খেজুর রস সংরক্ষণ দীর্ঘ সময় ধরে করতে পারব। চলুন জেনে কিভাবে খেজুর
রস সংরক্ষণ করবেন-
খেজুরের রস আহরণের পর ভালো করে ছাকনি দিয়ে ছেকে নিতে হবে এবং একটি পাতিলে ঢেলে
চুলায় আস্তে আস্তে জাল করতে হবে। যখন আপনি রস জাল দেবেন উপরে ফেনা বা খাদ গুলো
ভেসে আসবে। অবশ্যই এ ফেনা বা খাদ গুলো ছাকনি দিয়ে তুলে ফেলে দেবেন এতে অনেকদিন
পর্যন্ত খেজুরের রস সংরক্ষণ করতে পারবেন। যতটুকু পর্যন্ত আপনি কারো রাখতে চান সে
পরিমাণে গাড়ো রেখে এয়ারটাইট যারে রেখে দেবেন।
লেখক এর মন্তব্য
রাইট বাটন আজকে এ পোষ্টের মাধ্যমে খেজুরের রস খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা, অপকারিতা,
সংরক্ষণ সংগ্রহ পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আশা করি
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে
অবশ্যই আপনার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সাথে শেয়ার করে তাদেরকে খেজুরের রস
সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করুন। এমন আরও তথ্য জানতে আমাদের ওয়েব সাইটটি
নিয়মিত ভিজিট করুন, আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url