শিশুর নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ
আসসালামু আলাইকুম, আজকের আলোচ্য বিষয় নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ করার উপায়, শিশুর নিউমোনিয়ার লক্ষণ কি কি? নিউমোনিয়া কাকে বলে? ইত্যাদি আরো বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার অনুরোধ রইল।
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে মনে আজনিত যত রকমের আপনার প্রশ্ন ও সমস্যা রয়েছে তার অবশ্যই সঠিক সমাধান ও উত্তর পাবেন এবং সুস্থ ও সরল জীবন যাপন করতে পারবেন।
ভূমিকা
নিউমোনিয়া এমন একটি রোগ যা আমাদের ফুসফুসে বেশি আক্রান্ত করে। এ রোগটি সাধারণত বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে। যে সকল ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি তাদের কম হয়। এ রোগটি অনেক সময় প্রাণঘাতী হয়ে যায়। এজন্যই আজ আমি আপনাদের জন্য নিমোনিয়া কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
নিমোনিয়া রোগের লক্ষণ গুলো কি কি, নিমোনিয়া রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ হলে কি খাবেন, নিউমোনিয়া থেকে সুস্থ হতে কত দিন সময় লাগে, নিউমোনিয়া রোগের ঘরোয়া কিছু কার্যকারী চিকিৎসা, নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া গুলোর নাম কি এবং নিউমোনিয়া রোগ হলে কি ভ্যাকসিন বা টিকা দিতে হবে ইত্যাদি আরো বিভিন্ন বিষয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লেন নিমোনিয়া সম্পর্কে আপনার যত ধরনের প্রশ্ন রয়েছে তার সকল উত্তর আপনি পাবেন এবং আপনার বাচ্চা ওবাড়ির বয়স্কদের এই প্রাণঘাতী রোগ থেকে পূর্ব সতর্ক হয়ে তাদের সুস্থ ও সবল রাখতে সক্ষম হবেন।
নিউমোনিয়া কাকে বলে?নিউমোনিয়া কত প্রকার?
নিউমোনিয়া কাকে বলে?নিউমোনিয়া কত প্রকার? আমরা অনেকেই জানি না।ফুসফুসের বিভিন্ন রকমের প্রদাহ ও সংক্রমণ জনিত রোগ হচ্ছে নিউমোনিয়া। বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ যেমন ব্যাকটেরিয়া ছত্রাক ও ভাইরাসের কারণে এনিমোনিয়া রোগ হয়ে থাকে। নিউমোনিয়া কখনো হালকা আবার কখনো অনেক বেশি হওয়ার কারণে মানুষের মৃত্যুর ঝুকিয়ে থাকে।
বিভিন্ন কারণে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এ রোগ বেশি হয় যেমন যে সকল ব্যক্তি বেশি পরিমাণে ধূমপান করে ফুসফুসের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে ক্যান্সারজনিত কারণে বিভিন্ন ধরনের কেমো থেরাপি দিচ্ছে ও শিশুদের এরও বেশি হয়ে থাকে। এ রোগ ওই সকল ব্যক্তির বেশি আক্রান্ত করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম তাই মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি।
তবে শিশুদের জন্য নিউমোনিয়া সবচেয়ে বেশি মারাত্মক। বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিশুর মৃত্যু এই নিউমোনিয়ার কারণে হয়ে থাকে।শীতের রোগের প্রকোপ অনেক বেশি বেড়ে যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। জ্বর ঘাম হওয়া কাশি শ্বাসকষ্ট মাংসপেশিতে অনেক বেশি ব্যথা মাথা ব্যথা ও বুকে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ এর রোগের দেখা দেয়।
নিউমোনিয়া কত প্রকার?
নিউমোনিয়া বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে প্রায় ৩০ টির ও বেশি ধরনের নিমোনিয়া রয়েছে। এগুলোকে প্রকারভেদ করা অনেক বেশি কষ্টসাধ্য। তবে চিকিৎসকের মতে নিম্নে ওই কয়টি নিউমোনিয়া মানুষের বেশি হয়ে থাকে যেমন-
ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়াঃ আমাদের ঠান্ডা জড়িত কারণে যে হাঁচি কাশি দিয়ে থাকি এটি ব্যাকটেরিয়াল নিমোনিয়া। আমরা যখন হাঁচি দি তখন আমাদের নিঃশ্বাসের সাথে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া নির্গত হয়। এই নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া হলো স্ট্রোপ্টোকক্কাস। এ নিউমোনিয়া যে সকল ব্যক্তির ফুসফুস জনিত বিভিন্ন রোগ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সবচেয়ে কম সেসকল ব্যক্তির এই মনের বেশি হয়ে থাকে।
হাটা নিউমোনিয়াঃ এটি একটি ছোঁয়াচে ধরনের নিউমোনিয়া। সাধারণ সর্দি-কাশি এই নিউমোনিয়ার প্রধান লক্ষণ। মাইক্রোপ্লাজমা জনিত ব্যাকটেরিয়ার কারণে এ নিউমোনিয়া হয়ে থাকি। হাঁচি কাজের কাশির মাধ্যমে একে অন্যের কাছে এবার চলে যায় এবং তাকে সংক্রমিত করে।
ছত্রাক নিউমোনিয়াঃ যে সকল ব্যক্তি অনেকদিন ধরে কোন রোগে ভুগছেন ফলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি কমে গিয়েছে তাদের এই ছত্রাক জনিত নিউমোনিয়া সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করে থাকে। এই নিউমোনিয়া সাধারণত কোন প্রাণীর বিশটা বা মল এ থাকা ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া, ধুলাবালিতে থাকা বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের কারণে নিউমোনিয়া হয়ে থাকে।
ভাইরাল নিউমোনিয়াঃ অন্যান্য ভাইরাসের তুলনায় এ নিমোনিয়া অনেক বেশি মারাত্মক। এর লক্ষণ কখনো কখনো হালকা কখনো কখনো বেশি দেখা দেয় তবে এর মৃত্যুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ভাইরাল নিউমোনিয়া যেমন কোভিড ১৯, RSV একটি ভাইরাল নিউমোনিয়া।
হাসপাতালে অর্জিত নিমোনিয়াঃ হাসপাতালে যে সকল রোগী বা কর্মচারীরা থাকে তাদের এনিমনিয়া বেশি হয়ে থাকে। কারণ তারা বিভিন্ন ধরনের মানুষের সংস্পর্শে আসে ফলে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া তাদেরকে আক্রান্ত করে। এবং এ নিউমোনিয়া হয়ে থাকে।
শিশুর নিউমোনিয়ার লক্ষণ কি কি?
আমরা অনেকেই জানিনা শিশুর নিউমোনিয়ার লক্ষণ কি কি? ফলে কখনো কখনো বাচ্চাদের অধিকতর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যায়। এজন্য আমাদের অবশ্যই নিউমোনিয়ার কি কি লক্ষণ রয়েছে তা জানতে হবে। নিম্নে উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- সাধারণ ফ্লু রোগের মত নিউমোনিয়া রোগেও সাধারণ জ্বর হয়ে থাকে। সেই সাথে অনেক বেশি ঘামা অসস্তিবোধ হয়ে থাকে।
- শিশু খাওয়া-দাওয়া করতে চাই না অস্বাভাবিক ভাবে কান্না করে ও হাত পা বেশি ছোটাছুটি করে।
- পুরো শরীর সাদা বা ফ্যাকাশে মনে হয়।
- অতিরিক্ত কাশি এবং কাশির সাথে প্রচুর পরিমাণে কফ বের হয়।
- কিছুক্ষণ পরপর বমি বা ডায়রিয়া হয়।
- খাবার খাওয়ার প্রতি ও পানি খাওয়ার প্রতি অনীহা দেখায়।
- কখনো কখনো অচেতন হাইপোথারমিয়া দেখা দেয়।
- শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশি বেড়ে যায় আবার কখনো কমে যায় এ তাপমাত্রা ৯৫° ফারেনহাইটের নিচে কমে যায়।
- বাচ্চার খিচুনি হতে পারে।
- বাচ্চার বুকের ভেতরে সব সময় ঘরঘর শব্দ করবে। অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে মাথা নড়াতে থাকবে।
- অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে বাচ্চা শরীর নীল হয়ে আসে।
- জোরে জোরে নিশ্বাস নেওয়ার কারণে বাচ্চার বুকের অংশটি অতিরিক্ত নিচে নেমে যেতে থাকে বা পাজরে ভেতরে ঢুকে বা চেপে যেতে থাকে।
- হৃদপিন্ডের গতি অনেক বেশি বেড়ে যায়।
- অনেক সময় কাশির সাথে রক্ত বের হয়।
- অতিরিক্ত পায়খানা করার ফলে পায়খানা দিয়েও রক্ত বের হতে পারে।
নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ করার উপায়
আমাদের দেশের প্রতিটি মা-বাবাকে নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ করার উপায় সম্পর্কে জানা উচিত। কারণ প্রতিবছর লাখ লাখ শিশু এ নিমোনিয়া রোগে মারা যায়। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে আপনি অবশ্যই এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাবেন। নিম্নে উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার
নিউমোনিয়া রোগ দেখা দিলেই বা কোন প্রকার লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে সাথে সাথে দ্রুত শিশুকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবেন। ডক্টরের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনে বাচ্চার রক্ত পরীক্ষা, বিভিন্ন প্রকার এক্সরে, কফ ইত্যাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিবেন। অবশ্যই সঠিক তথ্য ও বিস্তারিত তথ্য ডক্টরকে জানাবেন।
নিউমোনিয়ার সামান্য লক্ষণ দেখা দিলেও কখনো বাড়িতে বসে থাকবেন না কারণ বাচ্চাদের শরীর অনেক বেশি দুর্বল ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়ে থাকে। সামান্য লক্ষণ দেখা মাত্রই শিশুকে ডক্টরের শরণাপন্ন করবেন এবং বিশেষভাবে অনেক বেশি যত্ন নেবেন। নিমোনিয়া রোগে শিশুর মৃত্যুর হার অনেক বেশি। তাই অবশ্যই বিশেষ যত্ন ও কোন কিছু হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
নিউমোনিয়া রোগের প্রতিরোধ
- সকলকে নিয়মিত খাওয়ার আগে,বাইরে থেকে আসার পর,কোন কিছুতে হাত দেওয়ার পর ভালো করে হাত পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়ে তুলবেন বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য ক্ষেত্রে।
- যেসব নবজাত শিশুর এই রোগ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে এর জন্য অবশ্যই গর্ভ অবস্থায় মাকে সকল ধরনের পুষ্টি উপাদান খাওয়ার প্রতি বিশেষ যত্নবান থাকতে হবে। ফলে নবজাত শিশু সহজে কোন রোগে আক্রান্ত হবে না।
- কোন বাচ্চা যদি সময়ের আগে জন্ম নেয় তাহলে অবশ্যই সে বাঁচার প্রতি বিশেষ যত্নবান হবেন।
- বাচ্চা যেন কোন ভাবে অপুষ্টিতে না ভোগে এজন্য বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে ছয় মাসের আগ পর্যন্ত অবশ্যই বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ এবং ছয় মাসের পর থেকে যে সকল খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সে সকল পুষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে।
- অবশ্যই বাচ্চার সকল টিকা দেবেন।
- বাচ্চাকে অবশ্যই ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আনবেন না।
- বাড়িতে অবশ্যই আলো বাতাস যেন আসে এমন ব্যবস্থা রাখবেন।
- বাচ্চার সামনে কখনোই ধূমপান করবেন না।
- বাচ্চার অবশ্যই সুষম ও পুষ্টি খাবার নিশ্চিত করবেন।
- ঠান্ডা জড়িত কোন খাবার কখনোই বাচ্চাদের খাওয়াবেন না।
- অতিরিক্ত বায়ু দূষণ এলাকা বা ধুলাবালিজনিত এলাকায় কখনো বাচ্চাকে নিয়ে যাবেন না।
- শীতকালে বাচ্চাকে প্রয়োজন ছাড়া কখনো কোন যানবাহনে করে নিয়ে যাবেন না।
- বাচ্চাকে সব সময় কুসুম গরম জাতীয় খাবার বেশি খাওয়াবে।
- বাচ্চার বুকে সরাসরি বাতাস যেন না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- নিয়মিত মৌসুমী শাকসবজি ও মৌসুমী ফল খাওয়াবেন।
- বাচ্চাকে সব সময় ব্যস্ত রাখবেন।
- বাড়ি থেকে বের হলে অবশ্যই বাচ্চাকে মার্কস পরিধান করাবেন।
নিউমোনিয়া হলে কি খেতে হবে?
নিউমোনিয়া হলে কি খেতে হবে? কি খাওয়া যাবেনা আমাদের মনে অনেকের এই প্রশ্ন থেকে দেন। এ বিষয়ে জানতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন। নিম্নে উক্ত বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে-
কমলালেবুঃ নিমোনিয়া হলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি কমে যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কমলালেবু খেতে পারেন। কমলালেবুতে থাকা ভিটামিন সি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে সুস্থ সবল ও শক্তিশালী করে তোলে।
মধুঃ মধু একটি প্রাচীনতম ঔষধ। যা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণজনিত রোগে ব্যবহার করা হয়। যেমন সর্দি-কাশি জ্বর মাথাব্যথা গলা ব্যথা ইত্যাদি আরো বিভিন্ন ধরনের রোগের মহা ঔষধ। এর জন্য অবশ্যই মধু খাবেন।
শস্য দানাঃ শস্য দানাযুক্ত খাবার নিমোনিয়া ছাড়াতে বেশ কার্যকারী ভূমিকা রাখে। শস্যু দানা তে থাকে উচ্চ পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট ভিটামিন বি যা আমাদের শরীরের তাপমাত্রা সঠিক রাখে এবং দ্রুত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হিসেবে আমরা ওটস, লাল চাল বার্লি ইত্যাদি খেতে পারি।
আদাঃ নিউমোনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য আদা একটি আশীর্বাদ। আদাতে অনেক বেশি অলৌকিক উপাদান রয়েছে যা খুব সহজে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ জনিত ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। আদা খুব সহজে আমাদের শরীরের জমে থাকা কফ বের করে দেয়।
উষ্ণ পানিঃ নিমোনিয়া হলে কখনোই ঠান্ডা পানি পান করবেন না অবশ্য উষ্ণ গরম পানি সব সময় খাবেন। এছাড়া উষ্ণ গরম পানির ভেতরে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে গড়গড়া বা খেতে পারেন এতেও অনেক বেশি উপশম পাবেন।
গরম দুধঃ নিমোনিয়া রোগী অবশ্যই গরম দুধ খাবেন। দুধে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীলকে দুর্বল হওয়া থেকে প্রতিরোধ করবে। দুধ আমাদের শরীরের সকল পুষ্টির ঘাটতি মিটিয়ে দ্রুত নিউমোনিয়া রোগ থেকে মুক্তি দেয়।
মৌসুমী শাকসবজিঃ নিউমোনিয়া রোগে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি কমে যায় এজন্য আমাদের অবশ্যই ওই সকল খাদ্য খেতে হবে যেগুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং নিউমোনিয়া রোগের সাথে লড়াই করবে। মৌসুমী শাকসবজিতে রয়েছে মৌসুমী বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে বাঁচার পুষ্টি উপাদান।
মৌসুমী ফলঃ নিউমোনিয়া রোগীকে সবসময় মৌসুমী বিভিন্ন ফলের রস খাওয়াবেন। এতে রোগীর শরীরের দুর্বলতা দ্রুত কেটে যাবে এবং শরীর দ্রুত সুস্থ হতে থাকবে।
গরম সুপঃ নিউমোনিয়া রোগীর যেহেতু খাওয়ার প্রতি অনীহা বেশি থাকে। এর জন্য শরীর অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই অবশ্যই ভেজিটেবল সুপ বা চিকেন সুপ তৈরি করে খাবেন এতে শরীরের পুষ্টি উপাদান ঠিক থাকবে এবং দুর্বলতা কেটে যাবে।
লেবুঃ নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীকে লেবু খাওয়াতে কখনোই ভুলবেন না। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি নিউমোনিয়া রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এটি আমাদের শরীরকে অ্যান্টিবডি করে তোলে।
এছাড়া নিউমোনিয়া রোগীকে টক দই,নারকেলের জল,বাটার মিল্ক, প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার খেতে দেবেন। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত বেড়ে যাবে এবং শরীর দ্রুত সুস্থ সবল হয়ে যাবে।
নিউমোনিয়া থেকে সুস্থ হতে কতদিন লাগে?
নিউমোনিয়া থেকে সুস্থ হতে কতদিন লাগে? জানতে সম্পন্ন পোষ্টটি পড়ুন নিম্নে উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
নিউমোনিয়া লক্ষণ দেখার সাথে সাথে যদি চিকিৎসা করা যায় তাহলে তা খুব সহজে এবং দ্রুত সমাধান করা যায়। ডঃ চিকিৎসা শুরু দিন থেকে দুই থেকে তিন দিন পর থেকেই শরীরে উন্নতি দেখা দেয়। এন্টিবেটিক দেওয়ার দুই থেকে চার সপ্তাহের ভেতরেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি মোটামুটি সুস্থ হয়ে আসে। সম্পূর্ণ কোর্স পূর্ণ করলে আক্রান্ত ব্যক্তি এক মাসের ভেতরে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে যায়।
তবে নিউমোনিয়া যদি অতিরিক্ত পরিমাণে হয়ে যায় তাহলে সুস্থ হতে অনেক বেশি সময় লাগে। অনেক সময় রোগী অবহেলার কারণে মারা যায়। এজন্য অবশ্যই অল্প লক্ষণ দেখা মাত্রই আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
ছাড়া যে সকল ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক রোগ রয়েছে যেমন ডায়াবেটিস ক্যান্সার এইচআইভি ইত্যাদি তাদের ইউমোনিয়া হলে ছাড়তে অনেক বেশি সময় লাগে।
নিউমোনিয়া হলে কি মানুষ মারা যায়?
আমরা অনেকেই জানিনা, নিউমোনিয়া হলে কি মানুষ মারা যায়? হ্যাঁ নিউমোনিয়া অতিরিক্ত পরিমাণে হলে মানুষ মারা যায়। এ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে সম্পন্ন পোষ্টটি পড়ুন নিম্নে উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
যে সকল ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম সে সকল ব্যক্তির নিউমোনিয়া রোগ হলে অনেক সময় মারা যায়। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশু বাচ্চা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি কম। বাংলাদেশের প্রায় ১০ লাখ শিশু ও বয়স্ক এই নিমোনিয়া রোগে মারা যায়।
এজন্য অবশ্যই বুঝতে পারছেন যে নিউমোনিয়া রোগ কতটা ভয়ংকর। তবে এরও সামান্য লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে যদি চিকিৎসা করা যায় তাহলে খুব দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। মানুষের বেশি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় যখন এটি অবহেলা করা হয়। সঠিক চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে খুব সহজেই এ রোগ থেকে সুস্থ হওয়া যায়।
নিউমোনিয়ার রোগের ঘরোয়া কার্যকর চিকিৎসা
নিউমোনিয়াজনিত মারাত্মক রোগ থেকে নিস্তার পেতে ঘরোয়া কিছু কার্যকরী চিকিৎসা গ্রহণ করতেন পারেন। চলুন নিম্নে জেনে নেই নিউমোনিয়ার রোগের ঘরোয়া কার্যকর চিকিৎসা গুলো কি কি-
মেথি চা খাওয়াঃ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গবেষণা অনুসারে মেথি চা খেলে নিউমোনিয়াজনিত মারাত্মক রোগ থেকে খুব সহজেই নিস্তার পাওয়া যায়। মেথি আমাদের শরীরের জ্বর কে ঘাম হিসাবে বের করে দেয় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি।
আদা চাঃ আমরা অনেকেই কাশি হলে আদা চা খেয়ে থাকি। এর কারণ কি আমরা জানি। এর কারণ আদতে থাকা গুনাগুন আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে গরম করে এবং সর্দি-কাশি জ্বর ইত্যাদি সংক্রমণজনিত ভাইরাসকে ধ্বংস করে।
গরম খাবার খাওয়াঃ নিমোনিয়াসাধারণত ঠান্ডা বাসি খাবার খাওয়ার কারণেই হয়ে থাকে বেশি। ঠান্ডা জাতীয় খাবার আমাদের শরীরে কফ জমিয়ে রাখে। এভাবে ধীরে ধীরে নিমোনিয়া অতিরিক্ত পরিমাণে হয়ে যায়। এজন্য নিউমোনিয়া থেকে বাঁচতে কখনোই ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাবেন না সবসময় গরম টাটকা খাবার খাবেন।
পেপারমিন্ট চাঃ পেপারমেট আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ প্রতিহত করে।এছাড়া শরীরের ব্যথা জ্বর সর্দি কাশি কফ বের করে দেওয়া ইত্যাদি খুব সহজেই সমাধান দেয়। শুধুমাত্র যদি আপনি পেপারমেন্ট নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ নেন এতেও আপনি অনেক বেশি আরাম পাবেন।
কালোজিরা ও মধুঃ সকল রোগের ঔষধ মৃত্যু ব্যতীত হলো কালোজিরা। নিয়মিত কালোজিরা খেলে সকল রোগ থেকে আপনি খুব সহজে ইফতার পাবেন। এছাড়া ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন ধরনের সংক্রমিত রোগ থেকে খুব সহজেই নিস্তার পাবেন নিয়মিত খালি চা খেলে। কালোজিরা ও মধু একসাথে খেলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং ঠান্ডা জনিত সকল সমস্যা দূর হয়ে নিমোনিয়া থেকে মুক্তি পাবেন।
লবণ পানি দিয়ে গড় গড়াঃ প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে আপনি গরম পানির ভেতরে এক চিমটি লবণ মিশে দিনে তার থেকে পাঁচ বার গড়গড়া করতে পারেন। এতে আপনার বুকে জমে থাকা কফ খুব সহজে বেরিয়ে আসবে এবং বুকের ব্যথা, জ্বালা থেকে খুব সহজে আরাম পাবেন।
কফি পানঃ কফি আমাদের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা খুব সহজে দূর করতে পারে। নিউমোনিয়া হলে আমাদের শ্বাসকষ্ট জড়িত বিভিন্ন সমস্যা হয়। এজন্য আপনি কফি খেতে পারেন।
নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া কোনটি?
নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। যা আমাদের আশেপাশে বিদ্যমান। চলুন জেনে নিই নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া কোনটি? নিম্নে উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হলো-
- স্টেপ্টোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া
- ক্লামিদোফিলিয়া নিউমোনিক
- মরাক্রোল্লা কাতারহালিস
- হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা
- ইজিউল্লা নিমফিলিয়া
- মাইক্রোপ্লাজমা নিমোনিয়া
- রাইনো ভাইরাস
- করোনাভাইরাস
- ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
- এডেলো ভাইরাস
- ব্ল্যাসড়োমাসেস
- হিসড়োপ্লাসম কাপ্সুলাটাম
- ক্রিপ্টোকক্কাস নিওফরমান্স
- ট্যাক্রোপ্লাসম গন্ডী
নিউমোনিয়ায় কোন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়
আমরা অনেকে নিউমোনিয়ায় কোন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় তা জানতে চাই। সঠিক তথ্য জানতে সম্পন্ন পোষ্টটি পড়ুন নিম্নে উক্ত বিষয়ে আলোচনা করা হলো-
অ্যান্টিবায়োটিকঃ নিউমোনিয়া রোগ সারাতে এন্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ বেশ কার্যকারী ভূমিকা রাখে। অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে নিউমোনিয়া রোগীকে টেট্রাসাইক্লিন, এজিথোমাইসিন, ক্লারিথোমাইসিন, এমোক্সিসিলিন, লেভোফ্লোক্রসিন ইত্যাদি এন্টিবেটিক দেয়া হয়।
অ্যান্টিভাইরালঃ অ্যান্টিভাইরাস দূর করার জন্য বেশ কিছু অ্যান্টিভাইরাস যুক্ত ঔষধ ব্যবহার করা হয় এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিকিৎসকরা দিয়ে থাকে রেলিঞ্জা।
অ্যান্টিফাঙ্গালঃ নিউমোনিয়া রোগীর ফাঙ্গাস জনিতসকল সমস্যা দূর করার জন্য অ্যা এন্টিফাঙ্গাস যুক্ত ঔষধ হিসেবে ফুলকোনাজল দেয়া হয়।
জ্বর ও ব্যথা নিরাময়ক ওষুধঃ জ্বর মাথা ব্যাথা কাশি ইত্যাদি নিরাময়ের জন্য রোগীকে ন্যাপ্রোক্সেন, আইবোপ্রফেন, এসি টাইম ইন জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে তবে শিশুদের কখনোই এসপিরিন ঔষধ খাওয়াবেন না।
সতর্কতাঃ উপরোক্ত সকল ঔষধ গুলো অবশ্যই চিকিৎসকের মতামত অনুসারে সেবন করবেন। কারণ না বুঝে ওষধ খাওয়া মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
নিউমোনিয়া টিকা কতদিন পর পর দেওয়া হয়?
আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সকলের জানা দরকারনিউমোনিয়া টিকা কতদিন পর পর দেওয়া হয়?এই প্রাণঘাতী রোগ থেকে রক্ষার জন্য সকলেরই এ তথ্যটি জানা দরকার। নিমোনিয়া টিকা সাধারণত এক বছর অন্তর অন্তর দিতে হয়। এটি দেয়ার কোন নির্দিষ্ট সময় নেই।বছরে যেকোনো সময় এই টিকা দেওয়া যায়। সাধারণত দুইটি টিকা দিতে হয় একটি হল পিসিভি১৩ এবং অন্যটি পিপিসিভি২৩ দিতে হয়। একটি দেয়ার এক বছর অন্তর আরেকটি টিকা দিতে হবে।
নিউমোনিয়া রোগের টিকার নাম কি?
নিউমোনিয়া রোগের টিকার নাম কি? আমরা অনেকেই জানতে চাই। নিউমোনিয়া রোগ থেকে প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের টিকা দেওয়া হয় এই টিকাগুলো চিরতরে নিউমোনিয়া রোগকে ধ্বংস করতে পারে না কিন্তু মৃত্যুর হার কিছুটা কমিয়ে আনে। যে সকল ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি তাদের এ টিকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে বৃদ্ধ ও বাচ্চাদের এ টিকা অবশ্যই দেয়ার প্রয়োজন।
এ ছাড়া যে সকল ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে ধূমপান মদ্যপান বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত কোনো কারণবশত সার্জারি করা হয়েছে এদের অবশ্যই এই টিকা দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। দুই ধরনের নিমোনিয়া ভ্যাকসিন রয়েছে একটি হলো পিসিভি১৩ ও পিপিএসভি২৩। পিসিভি১৩ ভ্যাকসিন টি ১৩ ধরনের নিউমোনিয়ার ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে এবং পিপিএসভি২৩ ভ্যাকসিন টি ২৩ ধরনের নিমোনিয়া ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে।
লেখক এর মন্তব্য
রাইট বাটন আজকে এ পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বাচ্চা ও বয়স্কদের নিমোনিয়া রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ কিভাবে করবেন তার কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আশা করি উপরোক্ত সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সাথে শেয়ার করে তাদের বাচ্চা ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া রোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করুন। এমন আরো তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন, আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url