কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার সুফল ও কুফল
আসসালামু আলাইকুম/আদাব, আজকের আলোচ্য বিষয় কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার
সুফল ও কুফল, ভূমিক্ষয়ে কেন কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে অসুবিধা হয় তা ব্যাখ্যা
কর ইত্যাদি আরও কৃষি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি
পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো।
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে বাংলাদেশের কৃষকের প্রতি আপনার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা
আরো কয়েকগুণ বেড়ে যাবে এছাড়া বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ভূমিকা
বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে বাংলাদেশের কৃষকরা
বেশ সুবিধা পাচ্ছে তবে এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। এ অসুবিধা গুলো হয়তো সময়ের সাথে
দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও বাংলাদেশের কিছু পুরাতন ও আধুনিক যন্ত্রের নাম, ভূমিক্ষয়
এর ফলে কেন যন্ত্রপাতি ব্যবহার অসুবিধা হয়।
আরো পড়ুনঃ
আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে মিল ও অমিল কোথায়
বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নের সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ গুলো কি কি, বাংলাদেশের কত
শতাংশ মানুষ কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল ইত্যাদি আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিম্নে
বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে আপনি কৃষি বিষয়ে
বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। সেজন্যে সম্পন্ন পোস্টটি পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো।
পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতির নাম গুলো কি
বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি হয়েছে। যার ফলে
কৃষকরা তাদের অনেক কষ্টের কাজ গুলো খুব সহজেই করতে পারছে। এর ফলে যেমন কৃষকের
কষ্ট কমে এসেছে তেমনি উৎপাদন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে কৃষি ক্ষেত্রে পুরাতন যে সকল যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হতো সেগুলোর নাম হয়তো
আমাদের এ প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা জানে না। তবে তাদের এ সম্পর্কে অবশ্যই জানা
দরকার কারণ আগের কৃষকরা কত কষ্ট করে ফসল ফলাতো সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি ব্যবহার
করে। চলুন জেনে পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতির নাম গুলো কি কি-
- তার কাটার পুরাতন যন্ত্র
- ইদুর মারার ফাঁদ
- পানি দেয়ার পাম্প
- ফুট পাম
- লাঙ্গুর
- জোয়াল
- ঢেঁকি
- গুটি সার
- বনদা
- খালোই
- মাতোল
- খুন সাথী
- সোয়া সেরে
- টুকরি
- টালা
- মই
- চাত্তাবহায়
- গম উড়ানি
- ধান উড়ানি
- রান দাও
- দাও
- ছানার
- কোদাল
- ছুরি
- হাতুর
- গরুর গাড়ি
- খুনতাই
আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির নাম গুলো কি
আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন বাংলাদেশের কৃষকের কৃষি কাজ কে সহজ ও উন্নত করেছে তেমনি
কৃষকের জীবন যাত্রার মান ও উন্নত করেছে। চলুন জেনে নিই আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির নাম গুলো কি কি। নিম্নে কৃষিকাজে ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতির নাম গুলো দেয়া হলো-
- ট্রাক্টর
- হারভেস্টার
- প্লান্টার
- স্পেয়ার
- থ্রেসার
- রিপার
- বেলার
- ব্যাচ ডায়ার
- ফর্কলিফট
- মাড়াই কল
- রাইস ট্রান্সপ্লান্টার
- হাইড্রোটিলার মেশিন
ভূমিক্ষয়ে কেন কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে অসুবিধা হয় তা ব্যাখ্যা কর
কৃষকের জন্য কৃষি জমিতে ভূমিক্ষয় হওয়া অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। কৃষি জমিতে
বিভিন্ন কারণে ভূমিক্ষয় হয়ে থাকে তবে অনেকদিন ধরে জমিতে চাষাবাদ না করা,
নিষ্কাশন না করা, জৈব সার প্রয়োগ না করা, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহারে
অসতর্কতা ইত্যাদির কারণে হয়ে থাকে।ভূমিক্ষয়ে কেন কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে অসুবিধা হয় তা ব্যাখ্যা কর হলো নিম্নে-
- কৃষি জমিতে ভূমিকায় হলে ভূমিটির মূলত সমতলতা নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট হওয়ার কারণেই মেশিন বা যন্ত্রপাতি চালাতে বেশ বেশ কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় জমিটি চাষাবাদ এর জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পরে।
- ভূমিক্ষয় এর ফলে কৃষি জমি তার উর্বরতা হারিয়ে ফেলি এতে ফসল উৎপাদনের মাত্রা অনেকাংশে কমে আসে।
- জমিতে ভূমিকায় হলে ফসলের মাটি নষ্ট হয়ে যায় এতে ফসল উৎপন্ন হতে অনেক সময় লাগে এবং অনেক সময় সে জমিটিতে ফসল উৎপন্ন বন্ধ হয়ে যায়।
- ভূমিক্ষয় হওয়ার ফলে জমিটি ঠিক করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মেশিন বা যন্ত্রপাতিও চালনা করা সম্ভব হয় না ফলে জমিটি ফসল উৎপাদনের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
- জমিতে যদি ক্ষুদ্র আকারের ভূমিক্ষয় হয় তাহলে ছোট ছোট গর্তের কারণে মেশিন চলাচলে অনেক অসুবিধা হয় ফলে ফসল চাষ করতে বিভিন্ন কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়।
- জমিতে বড় আকারের ভূমিক্ষয় হলে সে জমিতে মেশিন চলনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে ফলে চাষাবাদ করার জন্য কৃষি জমিটি অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
- কোন জমি যদি ভারসাম্যহীনভাবে ভূমিক্ষয় হয়ে থাকে তাহলে বিভিন্ন ধরনের মেশিন চালানোর সময় বেশ কষ্টের সম্মুখীন হতে হয় এক্ষেত্রেও অনেক সময় জমিটি চাষাবাদ এর অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতিকরণে কৃষি খাত অতি গুরুত্বপূর্ণ এছাড়াও দেশের
মানুষের পুষ্টি ও খাদ্যের যোগান দেয় কৃষি খাত। এজন্য বাংলাদেশ সরকার কৃষি
উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। চলুন জেনে নিই
বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ গুলো কি
- বাংলাদেশ সরকার কৃষি খাতে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার গতিশীল করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করছে।
- বাংলাদেশ সরকার সকল কৃষকের কাছে ২৫% কম মূল্যে বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৩৫ টি জেলায় ৩৮ হাজারেরও বেশি কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে।
- বাংলাদেশ সরকার ৬০% পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়ে উদ্ভিদ কৃষি খাতের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি কৃষকের নিকট বাংলাদেশ সরকার কৃষকের জন্য প্রতিবছর বছর বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধি করছেন যেমন যেমন বীজ, ইক্ষু, বিভিন্ন ধরনের সার ইত্যাদি।
- কৃষকের জন্য বাংলাদেশ সরকার বৈদ্যুতিক রিবেট বিতরণ করছেন।
- বাংলাদেশ সরকার কৃষি খাতে ২০০৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ভর্তুগি দিয়েছিলেন ৫১৭ ৮. ২৬৯১ কোটি টাকা এখন ২০১২ থেকে ২০১৩ বেড়ে হয়েছে ১১৯৯৯.৯৯৩৮ কোটি টাকা।
- বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ যেমন- বন্যা, সিডর, আইলা ইত্যাদি আরো বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে সময় কৃষকের মাঝে বিভিন্ন ধরনের কৃষি প্রণোদনা প্রদান করে থাকেন।
- বাংলাদেশ সরকার পানি উত্তোলন এর জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য জোরদার করেছেন।
- জলাবদ্ধতা, হাওর, দক্ষিণাঞ্চল ও ডোবা অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট সেচ ব্যবস্থা করার জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
- কৃষকের জন্য সেচ সুবিধা বৃদ্ধি করার জন্য সেচের আওতা বাড়াচ্ছে।
- কৃষকের জন্য রাবার, ডেম, ড্যাম, বিভিন্ন বাঁধ, পাহাড়ের ঝিরি বাঁধ ইত্যাদি আরও বিভিন্ন কিছু নির্মাণ করছেন।
- বাংলাদেশ সরকারের আরেকটি বিশেষ সাফল্য হচ্ছে কৃষকের জন্য কৃষি পণ্য বিপণন ব্যবস্থা।
- বিপণন ব্যবস্থায় ইতিবাচক করার জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ধরনের পাইকারি বাজার, রিফার ভ্যান, কুল চেম্বার, গ্রোয়াস মার্কেট, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ইত্যাদি।
- কৃষি জমিতে বিভিন্ন ধরনের দালান কোঠা তৈরির কারণে কৃষি জমি হ্রস বৃদ্ধি পাচ্ছে বিধায় বাংলাদেশ সরকার খুলনা, সিলেট ও বৃহত্তর বরিশাল জেলায় পতিত জমি গুলো কৃষি আয়তায় নিয়ে আনছে।
কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার সুফল ও কুফল
বাংলাদেশ সরকার কৃষি খাতে উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্র
ব্যবহারের প্রতি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করছে। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন জেলায় ফসল ও
উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য পানি সেচ, শস্য উৎপাদনে আধুনিকরণ ব্যবস্থা, বিভিন্ন
ধরনের আধুনিক রাসায়নিক সার প্রয়োগ, কীটনাশক ব্যবহার ও বিভিন্ন ধরনের আধুনিক
যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করছে।তবে এর কিছু কুফল রয়েছে।
চলুন জেনে কিসিতে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার সুফল ও কুফল কি
কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারের সুফল
বর্তমানে সরকার কৃষিখাতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকের অল্প
জমিতে বেশি পরিমাণে ফলন উৎপাদন করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। চলুন
জেনে নিই কিভাবে কৃষকেরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সুফল ভোগ করছে।
কৃষি জমি সম্প্রসারণঃ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে যেহেতু
মাটির উর্বরতা এবং মাটি সকল ধরনের ফসল উৎপাদনের উপযোগী হয়ে উঠছে এজন্য কৃষকেরা
জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করতে পারছে।
শস্য উৎপাদন বৃদ্ধিঃ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার জন্য মাটিতে
বিভিন্ন ধরনের শস্য সহজে উৎপাদন করা যাচ্ছে এবং অল্প জমিতে অধিক পরিমাণে শস্য
উৎপাদন করাও সম্ভব হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষকের জন্য ধান গম ভুট্টা ইত্যাদি আরো
বিভিন্ন ধরনের উৎপাদনশীল ফসল উৎপাদন করা খুব সহজ ও সুবিধা জনক হয়ে এসেছে।
কৃষকের দৃষ্টি পরিবর্তনঃ পূর্বে কৃষক পুরাতন যন্ত্রপাতি ব্যবহার
করে কৃষিকাজ করতো ফলে ফসল উৎপাদন কম ও কষ্ট অনেক বেশি হত। বর্তমানে আধুনিক
যন্ত্রপাতি কৃষক ব্যবহার করার ফলে যেমন ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে অল্প পরিমাণ
জমিতে তেমনি কৃষকের কষ্ট তুলনামূলকভাবে কয়েক গুণ এসেছে।
কর্মসংস্থান বৃদ্ধিঃ আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার কারণে কৃষি কাজ
যেহেতু সহজ হয়ে এসেছে এজন্য বর্তমানে সকলের কৃষি কাজ করার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি
পেয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান যুগের যুবকদের মধ্যে কৃষি কাজ করার প্রতি অনেক বেশি
আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে দেশে বেকারত্ব কমে আসছে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি
পাচ্ছে।
কৃষকের উন্নতিঃ কৃষি খাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার কারণে যেহেতু
অল্প জমিতে বেশি পরিমাণে ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে সে কারণেই কৃষকের
লাভংশেরসংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে করে কৃষকের জীবন যাত্রার মাননও উন্নতি হচ্ছে।
কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নের বিকাশঃ আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে কৃষকের
অধিক পরিমাণে ফসল উৎপাদন হচ্ছে ফলে চাল, গম, ডাল ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাতকরণ
শিল্পগুলো শিল্পের অগ্রগতি ঘটছে এছাড়াও আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি প্রতিষ্ঠানগুলো
ও শিল্পায়নের বিকাশ ঘটছে।
খাদ্যশস্যের আমদানি হ্রাসঃ কৃষি খাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার
কারণে খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পারছে ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে খাদ্য আমদানির
পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। এতে যেমন দেশের কৃষকের উন্নতি ঘটছে তেমন দেশের মানুষ
দেশীয় টাটকা খাবার খেতে পারছে।
কৃষি জমির উন্নতিঃ আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করার কারণে কৃষি জমিকে ফসল
ফলানোর উপযোগী করার জন্য যে সকল প্রক্রিয়া বা ব্যবস্থা নেয়া হয় সেগুলো খুব
সহজ হয়ে আসছে। ফলে ফসল ফলানোর জন্য জমিকে যেভাবে তৈরি করা প্রয়োজন সেভাবে খুব
দ্রুত এবং সহজভাবেই তৈরি করা হচ্ছে।
কৃষকের আয় বৃদ্ধিঃ পূর্বে কৃষকরা অধিক জমিতে অল্প পরিমাণে ফসল উৎপাদন
করতে পারতো এছাড়াও একটি জমিতে শুধু একটিমাত্র ফসল উৎপাদন করতে করতো। এখন
বর্তমানে আধুনিকরণের কারণে এবং বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করার কারণে
কৃষক অল্প জমিতে অধিক পরিমাণে ফসল উৎপাদন করতে পারছে এবং একই জমিতে একসঙ্গে দুই
থেকে তিনটি ফসল উৎপাদন করতে পারছে ফলে কৃষকের খুব দ্রুত আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হেক্টর প্রতি ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিঃ আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে ফসল
উৎপাদন তুলনামূলকভাবে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।পূর্বে কৃষকের অধিক পরিমাণে জমে
থাকার পরেও সকল জমিতে চাষাবাদ করার মত লোকবল ছিল না। সেই কারণে অধিক জমি থাকার
ফলেও কৃষক বেশি পরিমাণে ফসল ফোলাতে পারত না। আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার
কারণে বর্তমানে কৃষক অল্প জমিতেই অতীত পরিমাণে ফসল উৎপাদন করতে পারছে কারণ ফসল
ফলানোর জন্য অধিক লোকমানের প্রয়োজন হয় না এবং মাটি খুব দ্রুতই চাষাবাদের
উপযোগী করা যায়।
কৃষকের শ্রম হ্রাসঃ কৃষিখাতে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি যেমন ট্রাক্টর,
সেচ ব্যবস্থা ও হারভেস্টার ব্যবহারে কৃষকের কাজ দ্রুত সময়ের ভেতরে সম্পূর্ণ
হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায় এতে করে কৃষকের শ্রম কয়েক গুণ কমে যায়। এছাড়াও
আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কি কৃষকের জমিতে চাষ দেওয়া ফসল কাটা ও সেচের
মতো কাজগুলো খুব সহজে অল্প সময়ের ভিতরে সম্পন্ন হয়।
ফসলের অপচয়ের হ্রাসঃ আধুনিক যন্ত্র যেমন স্টোরেজ ব্যবস্থা ফসলশুকানোর
যন্ত্র দ্রুত সময়ের ভেতরে সকল ফসল কাটা হয় ফলেলোকবল দিয়ে যে শস্য অপচয় হতো
তা কয়েক অংশে কমে গিয়েছে অনেক কৃষকের লাভের সংখ্যা বৃদ্ধি পাই।
কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কুফল
আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন কৃষক খাতে অনেক সুবিধা ও উন্নতি নিয়ে এসেছে তবে এর
কিছু নেতিবাচক প্রভাব কিছু কিছু কৃষকের মাঝে পড়েছে। চলুন জেনে নেই কৃষিতে
আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কুফল গুলো কি
- আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যয়বহুল হওয়ায় ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য এ সকল যন্ত্রপাতি কেনা ও রক্ষবক্ষণ বেশ কষ্টসাধ্য হয়।
- আধুনিক যন্ত্রপাতি যেহেতু ব্যয়বহুল এজন্য বড় কৃষকরা এই সকল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারে এবং ছোট কৃষক এ সকল যন্ত্রপাতির সুবিধা ব্যবহার করতে পারেনা ফলে বড় ও ছোট কৃষকদের মধ্যে ফসল উৎপাদন ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি হয়।
- ক্ষুদ্র কৃষকরা যেহেতু লেখাপড়া কম জানে এজন্য তাদের জন্য এ সকল যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে বেশ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়।
- আধুনিক যন্ত্রপাতি আমাদের পরিবেশগত বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করাতে পারে। উদাহরণঃ অধিক ভারবহ যন্ত্রপাতি যেমন ট্রাক্টর মাটির উর্বরতা বাস করতে পারে মাটি সংকোচন ঘটায় ও ভূমিক্ষয় এর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
- রাসায়নিক ও কীটনাশক সার যদি সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করতে না পারে তাহলে পরিবেশের জন্য বেশ ক্ষতি ও দূষণ হতে পারে।
- আধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে গ্রীন হাউজ অতি মাত্রায় নির্গমনের ফলে জলবায়ুর বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হতে পারে।
- আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে যে সকল শ্রমিক মাঠে কাজ করে এবং তা দিয়েই তাদের জীবিকা নির্বাহিত হয় তারা কর্মহারা হয়ে যাচ্ছে।
- আধুনিক যন্ত্রপাতির কারণে গ্রামীন বেকারত্বের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা
বর্তমান সরকার কৃষি খাতকে উন্নতি ও প্রযুক্তি নির্ভর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের
পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার ফলে দেশে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ফসল আমদানির
পরিমাণ দিনে দিনে কমে আসছে। যার ফলের দেশের কৃষকের লাভের সংখ্যা ও জীবনযাত্রা
বেশ উন্নতি হচ্ছে। চলুন জেনে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা গুলো কি।
- বর্তমান সরকার কৃষকদের জন্য অঞ্চল ভিত্তিকভাবে কৃষি উন্নয়নের জন্য ১৭ টি কৃষকের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন।
- বর্তমান সরকার কৃষি খাত উন্নয়ন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফসলের জাত উন্নতিকরণ, সেচ কাঠামো নির্মাণ, কৃষি প্রযুক্তি বৃদ্ধি, কৃষিজাত পণ্যের বাজারজাতকরণ সহজ, সকল কৃষকের জন্য সেচ ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি আরো উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
- এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় কৃষি উন্নয়ন করার জন্য ২০১৩ সালে একটি বিশাল প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন।
- বর্তমান সরকারের কারণে বর্তমানের কৃষকরা ডিজিটাল ভাবে কৃষিকাজ করতে পারছি।
- বাংলাদেশ সরকার কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের কৃষি সার্ভিস ও তথ্য প্রদান করার জন্য বিভিন্ন জেলার দশটি অঞ্চলে মোট ২৪৫ টি যোগাযোগ ও কৃষি তথ্য কেন্দ্র স্থাপন করেছেন।
- কৃষি যোগাযোগ তথ্য কেন্দ্রে কৃষকরা খুব সহজে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে।
- এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার অনলাইনে ২০০ টিরও বেশি উপজেলায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে কৃষকদের মাঝে সেবা প্রদান করার ব্যবস্থা করে তুলেছেন।
কৃষিকে অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত বলা হয় কেন
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কৃষি শিক্ষা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কারণ বাংলাদেশের জিডিপির এক পঞ্চমাংশ প্রায় আসে শুধুমাত্র কৃষিখাত থেকে। হয়তো
আপনি এখন বুঝতে পেরেছেন কৃষিকে অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত বলা হয় কেন।
কৃষি খাত থেকেই আমাদের দেশের জনগণের খাদ্য ও পুষ্টির যোগানের নিরাপত্তা নিশ্চিত
করে এই খাত। এই খাতে দেশের অনেক জনগণ কর্মসংস্থানরত আছে এবং শুধু কৃষিকাজ
অবলম্বন করে তাদের জীবন যাত্রা চলাচল করে।
এজন্য আমাদের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে চাইলে কৃষি খাতে
অবশ্যই উন্নতি করতে হবে। এর জন্যই বর্তমান সরকার কৃষি খাতে বিশেষ বিশেষ ও বড়
ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করছে।এছাড়া কৃষি খাতকে আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তি নির্ভর
করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।
কৃষি খাত ও কৃষক আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মেরুদন্ড। সকল দেশের মানুষ
তাদের জীবিকা, জীবন, পুষ্টি ঘাটতি মেটাতে কৃষকের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে রয়েছে।
কৃষিঘাত কোনভাবে বাদ পড়লে দেশের উন্নয়ন ও পুষ্টি ঘাটতি মেটানো বেশ কষ্টকর
হয়ে আসবে সকলের জন্য।
সেইজন্য আমাদের সকলকে কৃষি খাতকে উন্নয়ন করার বিশেষ ব্যবস্থা ও প্রকল্প গ্রহণ
করতে হবে। বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃত্তিতে কৃষি কাজ বিশেষ করে প্রাণিসম্পদ ফসল
উৎপাদন বন ও মৎস্য বিশেষ গুরুত্ব অবদান।
বাংলাদেশের কৃষি খাতের অন্যতম প্রধান উৎপন্ন দ্রব্য কোনটি?
বাংলাদেশ অন্যান্য খাতে তুলনায় কৃষির দিক থেকে বেশ এগিয়ে। এদেশে বিভিন্ন
ধরনের ফসল উৎপন্ন হয়। তবে আমরা কি জানি বাংলাদেশের কৃষি খাতের অন্যতম প্রধান
উৎপন্ন দ্রব্য কোনটি? চলুন জেনে নিন এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
কৃষি গবেষকের তথ্য মতে বাংলাদেশ চাল উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বের চতুর্থ স্থানে
অবস্থিত। বাংলাদেশের কৃষিখাতে অন্যতম প্রধান উৎপন্ন দ্রব্য হল খাদ্য শস্য
জাতীয় ফসল। যেমন পাট ধান গম আম ইত্যাদি। কৃষকদের সেচ সুবিধা প্রসারিত হওয়ার
কারণে কৃষকরা গম ও ভুট্টা চাষে বেশি ঝুঁকে পড়ছে। বাংলাদেশের প্রধান ফসল হলো
ধান।
২৮.৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছিল ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে। অপরদিকে ৯
মিলিয়ন মেট্রিক টন গম উৎপাদিত হয়েছিল বাংলাদেশে ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে।
বাংলাদেশের গ্রামীন এলাকায় খুবই সামান্য পরিসরে গম উৎপাদিত হতো ১৯৮০ সালের
দিকে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক সাহায্যের অন্যতম উপকরণ হয়ে উঠেছিল ১৯৭০ দিকে গম। যে কারণে
ধীরে ধীরে গমের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাংলাদেশ রেকর্ড সংখ্যক গম উৎপাদন করে
১৯৮৫ সালে যা ছিল ১.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
বাংলাদেশের আমদানিকৃত কৃষি শস্য খাদ্য হলো গম যা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাড়ছে
প্রায় এক মিলিয়ন টন হারে। গম আমদানিকৃত দেশের মধ্যে রয়েছে ওয়ালফুড
প্রোগ্রাম যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইকোনমিক কমিটি।
বাংলাদেশের মূলত বেশিরভাগ খাদ্য পণ্য দেশীয় চাহিদা মিটানোর জন্য বেশি উৎপাদিত
করা হয়ে থাকে। তবে সামান্য কিছু পরিসরে শস্য আমদানি হয়। বাংলাদেশের মানুষের
খাদ্যে শস্যের সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে আলু গম ভুট্টা কলা আম আনারস কাঁঠাল
চিনি ইত্যাদি।
বাংলাদেশের শতকরা কত ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল?
অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ মূলত কিসের উপর বেশি নির্ভরশীল। বাংলাদেশে
বর্তমানে কৃষকের সংখ্যা কমে আসলে ও আধুনিক ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনে
কৃষকের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর জন্যই।
তবে আমি আপনি কি জানি বাংলাদেশের শতকরা কত ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল?
আপনি শুনে হয়তো অবাক হবেন বাংলাদেশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ কৃষির ওপর
নির্ভরশীল। এজন্যই হয়তো বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশে তুলনায় কৃষির ওপর নির্ভরশীল
দেশ বলা হয়। যা আমাদের জন্য বেশ গর্বের।
লেখক এর মন্তব্য
রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি খাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি
ব্যবহারের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা
করেছি। আশা করি উপরোক্ত সম্পন্ন পোস্টি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন
আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয়-স্বজন ও
বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করে তাদেরকে বাংলাদেশের কৃষি সম্পর্কে তথ্য দিয়ে
সহায়তা করবেন। এমন আরো তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন,
আসসালামু আলাইকুম/আদাব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url