বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায়

আসসালামু আলাইকুম/আদাব, আজকের আলোচ্য বিষয় বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায় ও মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার ইত্যাদি আরো মোবাইল আসক্তি নিয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন পোস্টে পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো।
বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায়
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে মোবাইল আসক্তি নিয়ে আপনার যত প্রশ্ন সমস্যা রয়েছে তার অবশ্যই সঠিক সমাধান ও উত্তর পাবেন এবং আপনার বাচ্চাকে মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্ত করে একটি স্বাভাবিক জীবন উপহার দিতে পারবেন।

ভূমিকা

বর্তমান যুগের ছেলেমেয়েরা আধুনিকায়ন প্রযুক্তির যুগে বসবাস করছে। তাদেরকে এ প্রযুক্তি থেকে কখনোই বেরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এ প্রযুক্তির যেমন অনেক বেশি সুবিধা রয়েছে তেমনি বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে।
বাচ্চারা এর সুবিধাগুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই পুরো বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে উন্নতির শীর্ষ দারে নিয়ে যাচ্ছে এবং পুরো বিশ্বের সামনে নিজের প্রতিভা তুলে ধরতে পারছে। প্রযুক্তির শুধুমাত্র সুবিধা রয়েছে কিন্তু এর সুবিধা গুলো কেউ যদি অপব্যবহার করে তাহলে এর প্রভাব বেশ ক্ষতিকর।

তেমনভাবে আজ পুরো বিশ্বে বাচ্চা হোক বা বয়স্ক সকলের মধ্যে ফোন বা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এর ক্ষতিকারক প্রভাব বিশেষ করে বাচ্চাদের ভেতরে বেশি দেখা দিচ্ছে।

এজন্যই আজ আমি আপনাদের মাঝে বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায় মোবাইল আসক্তি কি এবং এর মাধ্যমে কি কি রোগ হয় এর ক্ষতিকারক দিয়ে চোখ ও মস্তিষ্কের জন্য মোবাইল ফোন কতটা ক্ষতিকর এর প্রতিকার ইত্যাদি আরো বিভিন্ন মোবাইল আসক্তি নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টে করলে আপনার বাচ্চাকে মোবাইল আসক্তি থেকে কিভাবে দূরে রাখবেন এবং কি কি ক্ষতি হচ্ছে তা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন।

মোবাইল ফোন আসক্তি কি? মোবাইল আসক্তি রোগের নাম

বর্তমান যুগ আধুনিকায়ন প্রযুক্তির যুগ। এর সাথে আমাদের সকলের তাল মিলিয়ে চলতে হয়। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে হলে সেটি আসক্তি আসক্তিতে পরিণত হয়। প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে সৃষ্টি সকল আসক্তির মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর ও মারাত্মক আসক্তি হল মোবাইল। এ আসক্তির প্রভাব বাচ্চাদের উপর সবচেয়ে বেশি পড়েছে।

আপনি বলতে পারেন মোবাইল ফোন আসক্তি কি? মোবাইল আসক্তি রোগের নাম। বিভিন্ন গবেষণা ও চিকিৎসকের মতে মোবাইল আসক্তি কথাটি এসেছে অতিরিক্ত পরিমাণে মোবাইল ফোন ব্যবহারে মাধ্যমে আচরণ ও মানসিকতা বিভিন্ন পরিবর্তন থেকে।

মোবাইল আসক্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হলো সব সময় যেখানে সেখানে ফোনে ব্যস্ত থাকা বা ফোনের পেছনে তাদের সকলসময় ব্যয় করা, ফোনে অত্যাধিক পরিমাণে অর্থ ব্যয় করা, যে সকল স্থানে মনোযোগ ও শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন সে সকল স্থানেও ফোন ব্যবহার করা, মোবাইল ফোন থেকে সামান্য সময়ের জন্য আলাদা হলে বিভিন্ন উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়া,

পরিবারের সাথে সময় না কাটানো, সব সময় একা একা থাকা, কথাতে বিরক্ত ভাব ইত্যাদি আরও বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। এভাবে অত্যাধিক পরিমাণে মোবাইলের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হলে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। বর্তমানে শিশু ও অল্পবয়সী বাচ্চাদের মধ্যে আসক্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

মোবাইল আসক্তি রোগের নাম

বর্তমানে মোবাইল ফোনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি জরিপে বা গবেষণায় দেখা গিয়েছে ২০১৯ সালে ৪১.৫ শতাংশ হারে বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোন ব্যবহার বেড়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণে মোবাইলের প্রতি আসক্তির মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের বাসা সৃষ্টি করতে পারে।

চিকিৎসক ও গবেষকরা যখন মানুষের মধ্যে মোবাইলের এই আসক্তি দূর করার কথা ভাবছিল তখনই গবেষণায় দেখা গিয়েছে এ আসক্তির ফলে মানুষের শরীরে কিছু রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। আপনি হয়তো শুনে অবাক হবেন মোবাইল আসক্তি রোগের নাম শুনে। আপনি বলতে পারেন মোবাইল আসক্তির আবার কোন রোগ হয়। জি, আপনি ঠিক শুনেছেন।
মোবাইল আসক্তির ফলে আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে বিভিন্ন ধরনের রোগ। যার নাম হল ডিজিটাল ভার্টিগো। এ রোগের লক্ষণগুলো হলো হঠাৎ মাথা ঘোরা, যেখানে সেখানে বা কাজরত অবস্থায় মাথা ঘুরে যাওয়া, শুয়ে থাকা অবস্থায় পুরো ঘর যেন ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে , কানে কম শুনতে পাওয়া, মানসিক ও শারীরিক ভারসাম্য বিঘ্ন হওয়া ইত্যাদি আরও বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।

প্রথম অবস্থায় মানুষের এ আসক্তি বোঝা যায় না কারণ সামান্য ঘাড়ে ব্যথা, মাথাব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ গুলো দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় লাগে এই বড় বড় লক্ষণগুলো দেখা দিতে এজন্যই এ রোগ সহজেই প্রকাশ পায় না। আর প্রকাশ পেলে অনেক বেশি দেরি হয়ে যায় কারণ ততক্ষণে মানসিক ও শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় মানুষের শারীরিক ভারসাম্য হারিয়ে চলাফেরা করার সক্ষমতা ও হারিয়ে ফেলে।

বাচ্চারা মোবাইল দেখলে চোখের কি ক্ষতি হয়?

চিকিৎসকের কাছে মা-বাবারা বাচ্চাকে নিয়ে গেলে একই প্রশ্ন থাকে আমার বাচ্চা সারাদিন মোবাইল বা টিভি দেখে আপনি আমার বাচ্চাটাকে একটু নিষেধ করুন বা বাচ্চারা মোবাইল দেখলে চোখের কি ক্ষতি হয়? বাচ্চারা কতক্ষণ মোবাইল বা টিভি দেখতে পারবে ইত্যাদি আরো নানা প্রশ্ন করে থাকেন।

আপনি যদি বলেন আপনি একবারে বাচ্চাকে মোবাইল টিভি বা অনলাইন জগ থেকে দূরে রাখবেন তাহলে আপনি তা কখনো করতে পারবেন না। কারণ এখন বাচ্চার দের সকল কিছু আধুনিক এবং অনলাইনে হচ্ছে। যেমন অনলাইনে ক্লাস প্রজেক্ট এর মাধ্যমে ক্লাস গান ছবি আঁকা নাচ নতুন কিছু তৈরি বা নতুন কিছু প্রযুক্তি তৈরি থাকে সকল কিছুই বাচ্চারা এখন অনলাইন থেকে শিখছে।

তাহলে আপনি বলতে পারেন এভাবে করলে তো আমার বাচ্চার চোখের সমস্যা হতে পারে। এসব কোনো কাজগুলো যদি বাচ্চারা কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে নিয়ে করে তাহলে বাচ্চাদের কোন প্রকার চোখের সমস্যা হবেনা তবে অনলাইনে বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন গেমস ভিডিও মোবাইল ও টিভি স্ক্রিন অতি নিকট থেকে দেখলে ইত্যাদি অতিরিক্ত পরিমাণে করলে অবশ্যই বাচ্চাদের বিভিন্ন রকমের চোখের সমস্যা হতে পারে যেমন-

  • বাচ্চারা যখন অতি নিকট থেকে টিভি বা ফোনের ব্যবহারবা ভিডিও দেখে তখন বাচ্চাদের দূরের জিনিস দেখতে বেশ কষ্ট হয় অর্থাৎ কাছে থেকে মোবাইল বা টিভি দেখার কারণে বাচ্চাদের দূরের জিনিস দেখতে বেশ সমস্যা সৃষ্টি হয় যাকে বলা হয় মায়োপিয়া রোগ বা দূরদর্শিতা রোগ।
  • চোখের পাওয়ার জনিত বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়।
  • কাজ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে টিভি বা ফোনের স্ক্রিন দেখার কারণে বাচ্চার চোখ দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায় ফলে বাচ্চার চোখে জ্বালা চোখ দিয়ে পানি পড়া ফুলে যাওয়া এটা দিয়ে আরো বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়।
  • বাচ্চাদের কোন কিছুতে মনোযোগ দেওয়া বা মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করা বা দেখার ক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে আসে।
  • আলোর প্রতি সহজে সংবেদনশীল হয়ে যায়।
  • বাচ্চারা অনেকক্ষণ ধরে টিভি বা ভিডিও দেখার জন্য বা কোন ভিডিও দেখার জন্য চোখের পলক কম ফেলে এবং এক নজরে অনেকক্ষণ দেখতে চাই যার কারণে চোখে অনেক বেশি চাপ পড়ে ফলে চোখের মাইয়োপিয়া রোগ উচ্চ মাত্রা ধারণ করে এবং ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি অনেক কমে আসে।
  • চোখে চুলকানি হতে পারে।
  • দূরের জিনিস দেখার জন্য চোখে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করতে হয়।
  • চোখে সব সময় পানি জমে থাকা বা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
মোবাইল ফোন আসক্তি মস্তিষ্কের ক্ষতি করে

মোবাইল ফোন আসক্তি মস্তিষ্কের ক্ষতি করে?

অনেকেই আছে যারা নিজের অজান্তে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছি। আমার মনে হয় তো এমন প্রশ্ন জাগতে পারে মোবাইল ফোন আসক্তি মস্তিষ্কের ক্ষতি করে? জি হ্যাঁ।

বিভিন্ন গবেষণা ও চিকিৎসকের মতে যে সকল ব্যক্তি অতিরিক্ত পরিমাণে ফোন ব্যবহার করে বা ফোনের প্রতি অনেক বেশি আসক্ত তাদের মানসিক বা মস্তিষ্কের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়।যেমন বিঘ্নতা, মস্তিষ্কের বিভিন্ন জটিলতম রোগ, মেলাটোনিক হরমোন নিঃসরণ ব্যাহত অনিদ্রা হওয়া, বিভ্রান্তি বা ভুলে যাওয়া ইত্যাদি আরো বিভিন্ন সমস্যার। চলুন জেনে নেই ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার বা আসক্তি হওয়ায় মস্তিষ্কে কি কি ক্ষতি হয়-

ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধিঃ আপনি যখন অতিরিক্ত পরিমাণে মোবাইল ব্যবহার করবেন বা মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বেন তখন আপনি সহজেই সকল কিছু ভুলে যাবেন কারন আপনার মনের ভেতরে শুধু সব সময় মোবাইল দেখার ইচ্ছা বা মোবাইল দেখার জন্য উদ্বেগ সৃষ্টি হবে এবং আপনি দ্রুত আপনার স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকেন যা বেশ চিন্তনীয় ও ক্ষতিকর।

অনিদ্রা রোগঃ অতিরিক্ত পরিমাণে ফোনে বিভিন্ন ভিডিও গেমস কার্টুন ইত্যাদি দেখতে এতটাই মানুষ বর্তমানে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে যে তাদের ঘুমের পরিমাণ বা পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম যেমন-একজন মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন দৈনিক ৮ ঘন্টা ঘুম।বর্তমানে ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন ডিভাইসে ব্যস্ত থাকার কারণে দুই ঘন্টা তিন ঘন্টা বা সারা রাত জেগে ফোন ব্যবহার করছে। এতে এক সময় এমন হয় যে সহজে ঘুম আসে না আপনার ঘুমের ওষুধ খেয়েও এভাবে অনেক দিন পর্যন্ত ভালোমতো ঘুম না হওয়ার কারণে মানসিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

বিষন্নতার ঝুঁকিঃ আপনি যদি ফোনে আসক্তি হয়ে যান তাহলে আপনি কারণ বা বিনা কারণে হঠাৎ আপনার মন খারাপ অনুভূতি হবে এই অনুভূতিকে বিষন্নতা বলা হয়। অনেক মানুষ আছে যারা দুঃখ, কষ্ট দূর বা ভোলার জন্য ফোন ব্যবহার করে বা বিষন্নতা দূর করার জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে ফোন ব্যবহার করে। এক সময় এমন হয় এ ফোনই আপনার বিষন্নতার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণা ও চিকিৎসকের মতে মানুষের বিষন্নতার ঝুঁকি বর্তমানে অতিরিক্তফোনের প্রতি আসক্ত আরো বেশি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

স্মৃতির বিভ্রান্তঃ আগের যুগে যখন অতিরিক্ত পরিমাণে ফোনের প্রচলন ছিল না তখন আমরা কোন নাম্বার বা যে কোন কিছু খুব সহজেই মনে রাখতে পারতাম এবং অনেকক্ষণ পর্যন্ত। বর্তমানে এখন আমরা কোথায় আমাদের চশমা থুয়েছি যা আমাদের মাথার উপরে থাকে বা অনেক সময় আমাদের চোখেই থাকে কিন্তু আমরা তা ভুলে যায় বা মস্তিষ্কে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় যা মূলত ফোনে অতিরিক্ত আসক্তির কারণে হয়ে থাকে।

কাজের প্রতি অমনোযোগীঃ যাদের অতিরিক্ত পরিমাণে ফোনের প্রতি আসক্তি রয়েছে তারা কোন কাজে সহজে মনোযোগ দিতে পারেনা কারণ তাদের মাথায় সব সময় ফোনে ভিডিও চ্যাটিং গেম কার্টুন ইত্যাদি দেখার চিন্তাভাবনা ঘোরাফেরা করে। যার ফলে যেকোনো কাজ করতে অমনোযোগ বা বারে বারে কাজে ভুল হয় বা কাজের ক্ষতি হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ভেতরে এ লক্ষণগুলো বেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে কারণ বাচ্চারা পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ দিতে পারছে না পড়াশোনা সহজে মাথায় ঢুকছে না বা বুঝতে পারছে না কারণ তাদের মাথায় সব সময় ফোন ঘোরাফেরা করে।

মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণঃ আমরা অনেকেই জানি ম্যারাডোনি হরমোন আমাদের ঘুম থেকে জাগ্রত ওঠাও শরীরের বিভিন্ন স্নায়ুকে স্থিতিশীল রাখে। অতিরিক্ত পরিমাণে সবসময় দিনে রাতে বা ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহার রে আসক্তি থাকার কারণে মেলাটুনি হরমোন নিঃসরণ ব্যাহত হয়। ফলে মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।

সামাজিক আচরণ ভুলে যাওয়াঃ সব সময় ফোনের দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ানোর কারণে সামাজিকভাবে চলাফেরা ও আচরণ ভুলে যাই। ফোনের প্রতি আসক্তি ব্যক্তি সবসময় ফোনের দুনিয়াতেই ব্যস্ত থাকে কখনো গেমস কার্টুন ভিডিও চ্যাটিং ইত্যাদি বিভিন্ন অনলাইন দুনিয়ায় যেন তার সব কিছু। ফলে মস্তিষ্ক থেকে সামাজিক আচার আচরণ ও ব্যবহার ভুলে যায় বা মুছে যায়।

আচার-আচরণে পরিবর্তনঃ সমাজ ও পরিবারের সঙ্গে যেহেতু ফোনে আসক্তি ব্যক্তিরা কম চলাফেরা করে ফলে তারা যখন সামাজিক ও পরিবারের সাথে কোন বিষয়ে কথাবাত্রা বলে বা কোন বিষয়ে পরিবার আলোচনা হলে তার অনেক বিরক্ত বোধ হয়। এতে পরিবার ও সমাজের মানুষের সাথে অল্পতেই বা সামান্য বিষয়েই বিরক্ত হয়ে আচার-আচরণ খারাপ বা চিরচিড়ে ভাব দেখাই।

অফসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার(OCD) রোগঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে সকল ব্যক্তি অতিরিক্ত পরিমাণে ফোনে আসক্তি তাদের ভেতরে ওসিডি বা সুচিবায়ুগ্রস্থতা রোগ বেশি দেখা দেয়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয় যেমন কোন কিছুর শব্দ হলে তারা মনে করে ফোনে কোন সতর্ক বা অ্যালার্ম বা নোটিফিকেশন বার্তা এসেছে

যার কারণে সকল ব্যাক্তি বারে বারে হাতে ফোন নেয় এবং চেক করে দেখে কোন নোটিফিকেশন বা মেসেজ বা কোন সমস্যা ফোনে হলো কিনা। তাদের মাথায় সব সময় এ সকল চিন্তা গুলো লেগেই থাকে।

ঘর হতে বের হতে ভয়ঃ যে সকল বাচ্চারা ছোট থেকে ফোনের প্রতি আসক্ত তারা ঘর থেকে বের হতে ভয় করে। কারণ তাদের দুনিয়া প্রথম থেকেই ফোন। এ দুনিয়ার বাইরে তাদের চলাফেরা ও মানুষের আচার-আচরণ দেখে মস্তিষ্কে ভয় অনুভূতি সৃষ্টি হয়।

কথা বলার ক্ষমতা হারানোঃ বর্তমানে বাচ্চাদের যেকোনো কারণেই হোক না কেন প্রথম থেকেই ফোনের প্রতি আসক্তি হচ্ছে করছি কারণ খাবার খাওয়ানো, খেলাধুলা, পড়াশোনা, ছবি আঁকা, বিভিন্ন বিনোদন, বাচ্চার সামান্য বিরক্ততে হাতে ফোন ধরিয়ে দেওয়া ইত্যাদি সকল কিছু অনলাইনে বা ফোনের মাধ্যমে করছে।

ফলে একসময় যখন এটা অতিরিক্ত পরিমাণে হয়ে যায় তখন বাচ্চারা সমাজে মানুষের সাথে কথা বলতে পারে না। অনেক সময় বাচ্চারা সব সময় ফোনের ভেতরে থাকার কারণে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে কারন তারা সমাজে মানুষের সাথে কথা বলে অভ্যস্ত নয় তারা জানে না কিভাবে সমাজে কথা বলতে হয়।

এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দেয় যেমন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, অচেতন হয়ে পড়া, অটিজম জনিত সমস্যা, ঘাড়ে, পিঠে, মাজায়, মাথার আগে পিছে ও কপাল ইত্যাদি প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা আরো বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয় অতিরিক্ত পরিমাণে ফোনের প্রতি আসক্ত ব্যক্তিদের।
বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায়

বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায়

আপনার বাচ্চা কি অতিরিক্ত ফোনে আসক্তি হয়ে গিয়েছে? এর কোন সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না। আপনার বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে চান। এজন্যই আজ আমি আপনাদের বাচ্চাদের ফোনের দুনিয়া থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনার জন্য কিছু ফোন থেকে আসক্তি দূর করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব চলুন জেনে সে উপায়গুলো কি-

বাচ্চাকে পর্যাপ্ত সময় দিনঃ বাচ্চাকে ফোনের আসক্তি থেকে একমাত্র মা-বাবার দেওয়া বাচ্চাদের সময়ই পারে এর থেকে মুক্তি দিতে। যেহেতু আমরা বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির যুগে রয়েছে এজন্য অনলাইন দুনিয়া থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখা অসম্ভব। তবে তা অতিরিক্ত মাত্রা থেকে আমরা মা বাবায় পারি বাচ্চাদেরকে দূরে আনতে।

যে সকল সময় গুলো বাচ্চারা ভিডিও কার্টুন গেম স ইত্যাদি খেলে নিজেকে আনন্দিত করে সে সকল সময় গুলো আপনি নিজে দিন বাচ্চাকে সে সকল সময়ে আপনি বাচ্চার সাথে বিভিন্ন খেলা খেলতে পারেন, গান গাইতে পারেন, নাচতে পারেন, বাগান করাতে পারেন, রান্না করাতে পারেন, টিভি দেখতে পারেন, ছবি আঁকতে পারেন,
হাতের লেখা ভালো করতে পারেন, নতুন কিছু উদ্ভাবন করা শেখাতে পারেন ইত্যাদি আরো বিভিন্ন কিছু আপনি বাচ্চার সাথে করে অতিরিক্ত পরিমাণে বাচ্চাকে ফোনের প্রতি আসক্তি হওয়া থেকে দূরে রাখতে পারবেন।

বাচ্চাকে বাইরে খেলাধুলা করানোঃ বাচ্চাকে বাইরে প্রতিবেশীর বা অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন এবং বাইরে খেলতে পারে এমন খেলনা দিয়ে বাচ্চাকে খেলাবেন যেমন- ফুটবল, ক্রিকেট ব্যাডমিন্টন, সাইকেল ইত্যাদি। বাচ্চা যদি বাইরে আসতে না চায় তাহলে বাচ্চাকে বিভিন্ন উপহার দিন যা হতে পারে তার পছন্দ খাবার বা খেলনা ইত্যাদি এতে খুব সহজে বাচ্চা ফোনের প্রতি আসক্ত কেটে যাবে।

সম্পূর্ণ দিনের রুটিন করতে পারেনঃ বাচ্চাদের জন্য সম্পূর্ণ দিনের একটি রুটিন তৈরি করতে পারেন এবং সে রুটিন অনুসারে বাচ্চাকে সকল কার্যক্রম করাতে পারেন। যেমন নির্দিষ্ট একটি সময় করে দিতে পারেন অনলাইন দুনিয়াতে থাকার জন্য।

এছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে যেখানে আপনি অনলাইনে বাচ্চাকে থাকার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় করে দিতে পারেন যেমন আপনি দুই ঘণ্টা বাচ্চাকে টিভি ভিডিও কার্টুন গেম ইত্যাদি দেখার জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন সময় শেষ হলে অনলাইন সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। একে বলা হয় স্ক্রিনিং টাইমিং।

ফোনে স্ক্রিন লক রেখেঃ বাচ্চাকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অনলাইন দুনিয়াতে রেখে আপনি আপনার ফোনে স্ক্রিন লক দিয়ে রাখতে পারেন। এতে করে আপনার অজান্তে বাচ্চা ফোর ব্যবহার করতে পারবে না। বর্তমান প্রযুক্তিতে এমন অনেক কঠিন ফোন স্কিন পাসওয়ার্ড বা লক রয়েছে যা আপনি ছাড়া কেউ আপনার ফোন কখনোই অন করতে পারবে না।

বাচ্চার সামনে ফোন ব্যবহার না করাঃ বাচ্চারা খুব সহজে কোন কিছু দেখে শিখতে পারে বা অনুসরণ করতে পারে। আপনি যদি সবসময় বাচ্চার সামনে ফোন ব্যবহার করেন এবং ফোনে বিভিন্ন ধরনের গান ভিডিও চ্যাটিং ইত্যাদি করেন তাহলে বাচ্চাও সেগুলো করার ইচ্ছা পোষণ করবে এবং করার জেদ করবে। এজন্য প্রয়োজন ব্যক্ত বাঁচার সামনে ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

বিভিন্ন কার্যকলাপে ব্যস্ত রেখেঃ আপনার বাচ্চা যে সকল বিষয়ে প্রতিভা রয়েছে সে সকল বিষয় করতে দিন। যেমন ক্রিকেট খেলা, ফুটবল খেলা, নাচ হাতের, লেখা সুন্দর করা, গান, নতুন কিছু উদ্ভাবন, প্রকৃতির সাথে পরিচয় করানো, গাছ লাগানো বা বাগান করা পাখি বা কোন পোষা পানিকে খাবার দেওয়া কাগজ বা এটা সেটা কেটে বিভিন্ন কিছু তৈরি করা ইত্যাদি,

আরো বিভিন্ন কিছু করাতে পারেন এবং অবশ্যই সে সকল বিষয়ে বাচ্চাকে অনেক বেশি উৎসাহিত করবেন। এভাবে খুব সহজে আপনি আপনার বাচ্চাকে অনলাইন বিভিন্ন মাধ্যম হতে আসক্তি হওয়া থেকে সুরক্ষিত করতে পারবেন।

শিক্ষনীয় খেলনা কিনে দিয়েঃ অনলাইনে ভিডিও কার্টুন গেমস না খেলিয়ে আপনি আপনার বাসায় বিভিন্ন ধরনের শিক্ষনীয় খেলনা কিনে বাচ্চাকে অবসর সময়ে খেলাতে পারেন। এতে যেমন আপনার বাচ্চা নতুন অনেক কিছু শিখবে তেমনি মানসিক বিকাশ প্রফুল্লতা চঞ্চলতা সৃষ্টি হবে।

মজার গল্পের বই পড়ানো বা অডিও বুক পড়ানোঃ বিভিন্ন মজার গল্পের বই বা শিক্ষনীয় বই বাচ্চাকে পড়ানোর অভ্যাস করাতে পারেন বা বাচ্চা যদি পড়তে না চায় তাহলে অডিও বুক বইগুলোর শিক্ষণীয় ও নাটকীয় গল্প শোনাতে পারেন শুনে বাচ্চারা অনেক কিছু খুব সহজেই মনে রাখতে পারে।

ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ না রাখাঃ বাচ্চাকে যে কার্টুন গেম বা ভিডিও দেখাতে চান তা ডাউনলোড করে ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে রাখতে পারেন বা ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ না ঢুকিয়ে রাখতে পারেন এতে বাচ্চা শুধুমাত্র সেসকল ভিডিও বা কাটুন ততক্ষণ পর্যন্ত দেখতে পারবে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি চাইবেন।

ছবি আঁকা শেখানোঃ ছবি আঁকা বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি মানসিক বিকাশ ও কিউরিসিটি বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকরী একটি উপায়। যেমন বাচ্চারা রং তুলি দিয়ে কালারফুল বিভিন্ন কিছু তৈরি করার চেষ্টা করে এতে করে বাচ্চাদের মন ও বিকাশ ঠিক থাকে সাথে সাথে বাচ্চাদের ফোনের প্রতি আসক্তিও কমে আসে।

বিভিন্ন ধাঁধা সমাধান করতে দেওয়াঃ আপনি যদি বাচ্চার স্মৃতিশক্তি মানসিক বিকাশ নতুন কিছু করা ইত্যাদি গুণগুলো বাচ্চার ভেতরে আনতে চান তাহলে বাচ্চাকে বিভিন্ন ধাঁধা সমাধান করতে দেন বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রয়েছে যেমন পাজল কিউব ইত্যাদি।

বিভিন্ন উপহার দিয়েঃ বাচ্চারা উপহার বেশ পছন্দ করে আপনি বাচ্চাকে কোন একটি শিক্ষনীয় জিনিস করতে দিয়ে বলতে পারেন সমাধান বা সম্পূর্ণ কাজটি করতে পারলে তুমি এই উপহার পাবে। এতে করে বাচ্চা যেমন খেলার ছলে নতুন কিছু শিখতে পারবে এবং মানসিক বিকাশ ঘটবে তেমনি অতিরিক্ত গেমস ভিডিও দেখা থেকে বিরত থাকবে।

মোবাইলের ক্ষতিকর দিকগুলো বাচ্চার সামনে তুলে ধরাঃ বাচ্চা কে সম্ভব হলে অল্প করে মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরবেন। এতে বাচ্চা বুঝতে পারবে এটা অতিরিক্ত ব্যবহারে তার কি কি ক্ষতি হতে পারে। তবে তাকে কখনোই ভয় দেখাবেন না বোঝানোর চেষ্টা করবেন।

মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার

ফোন আমাদেরকে খুব সহজে কোন তথ্য সেকেন্ডের ভেতরে জানা জানানো মানসিক বিকাশ নতুন নতুন কিছু জানা পুরো বিশ্বে কি ঘটনা ঘটছে বাকি উন্নতি হচ্ছে তা সকল কিছু খুব সহজেই জানা ইত্যাদি আরো বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে তবে বাচ্চাদের জন্য শুরুর অবস্থায় মানসিক বিকাশ মস্তিষ্কের বিকাশ শারীরিক গঠন ইত্যাদি সঠিকভাবে সঠিক সময়ে হওয়া থেকে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এই ফোন।
বাচ্চারা খুব সহজেই নতুন কোন কিছুর প্রতি বেশ আকৃষ্ট হয়ে যায় তখন তার প্রতি তাদের আসক্তি হয়ে যায়। তবে বর্তমান যুগে এমন হয়ে এসেছে যে বাচ্চাদের পড়াশোনা বিভিন্ন আরও কার্যক্রম সকল কিছুই অনলাইনে হয়ে গিয়েছে এতে যেমন বাচ্চাদের সৃজনশীলতা বুদ্ধিমত্তা বাড়ছে ফলে আমরা তা থেকে বাচ্চাদেরকে সম্পূর্ণভাবে বিরত রাখতে পারছি না।

কিন্তু এগুলো ছাড়াও বিভিন্নভাবে বাচ্চারা ফোনের সাথে প্রতিআসক্তি হয়ে যাচ্ছে যা আমাদের কিছুটা অসতর্কতা ও কিছুটা অবহেলার কারণে হচ্ছে। চলুন মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার গুলো কি-

মোবাইল আসক্তি হওয়ার কারণ

বর্তমানে বাচ্চারা বিভিন্ন কারণে অথবা বলতে পারেন পিতা মাতার বিভিন্ন অসতর্কতার বা মোবাইল আসক্তির কুফল বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না জেনে হাতে ফোন তুলে দেওয়া ইত্যাদি আরও বিভিন্ন কারণে বাচ্চারা ফোনের প্রতি বেশ আসক্তি হয়ে পড়েছে। চলুন জেনে নিই মোবাইল আসক্তি হওয়ার কারণগুলো কি-

  • বাচ্চাকে সময় না দেওয়া।
  • সামান্য যেদে হাতে ফোন তুলে দেওয়া।
  • বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা বা সময় না কাটানো।
  • নতুন কিছু না করতে দেওয়া বা অতিরিক্ত বিধি নিষেধ করা।
  • বাইরের পরিবেশে না ঘোরানো।
  • প্রতিবেশী বা বাইরে বাচ্চাদের সাথে খেলা করতে না দেওয়া।
  • বাচ্চার সাথে কম কথা বলা।
  • বাচ্চাদের সামনে অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার করা।
  • প্রি স্কুল গুলোতে শিশুদের বিভিন্ন কার্টুন দেখানো।
  • বাচ্চার সামনে উচ্চস্বরে গান শোনা বা বিভিন্ন ভিডিও দেখা।
  • পিতা মাতা দুজনই সবসময়ই কর্ম ব্যস্ততাই থাকা।
  • খাবার খাওয়ানোর সময় হাতে ফোন তুলে দেওয়া।
  • বাড়িতে পিতা-মাতার কর্মব্যস্ততা থাকায় হাতে ফোন তুলে দেওয়া।
  • বাচ্চার সাথে গল্প না করা।
  • বাচ্চার সামলানোর জন্য ন্যানি বা আয়া রাখা।
  • খেলার মাঠ বা খেলার জায়গা না থাকা।
  • বাচ্চা বেশি সময় একাকীত্ব বা একা একা থাকা।

মোবাইল আসক্তির প্রতিকার

বাচ্চা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে ফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে যায় তাহলে আমাদের মা-বাবার অবশ্যই এ কর্তব্য ও দায়িত্ব রয়েছে বাচ্চাকে এ আসক্ত থেকে মুক্ত দেওয়া বা দূরে আনা। আপনি যদি আপনার বাচ্চা কি আসক্তি থেকে দূরে আনতে চান তাহলে অবশ্যই মোবাইল আসক্তির প্রতিকার সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে চলুন এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও প্রতিকার গুলো জেনে নিন-

  • বাচ্চাকে বিভিন্ন ঘরোয়া কাজে ব্যস্ত রাখুন যেমন রান্নার কাজে সহায়তা করা, গাছে পানি দেওয়া বা গাছ লাগানো, ঘরের জিনিসপত্র গোছানো, সঠিক স্থানে রাখা ইত্যাদি।
  • পোষা প্রাণী দিয়ে খেলতে দেওয়া বা পোষা প্রাণীকে পানিকে খেতে দেওয়া, দেখে শুনে রাখা, যত্ন নেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি কাজ শিখিয়ে ব্যস্ত রাখতে পারেন।
  • বাচ্চার একাকীত্ব দূর করা। বর্তমানে বেশি ভাগ পরিবার চারজন থেকে পাঁচজনের হয় এবং পিতা মাতা দুজনই চাকরির কারণে কর্ম ব্যস্ত থাকে ফলে বাচ্চারা একাকীত্ব হয়ে যায়। বাচ্চাদের এ একাকীত্ব দূর করার জন্য বাচ্চাকে পর্যাপ্ত সময় দিন এবং সময় হলেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যান।
  • বাচ্চাকে নিয়ে ঘরে এবং বাইরে খেলা করুন।
  • প্রথম থেকে আপনার বাচ্চাকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন অথবা বই পড়তে না চাইলে অডিও বুক গুলো শোনাতে পারেন।
  • সৃজনশীল বিভিন্ন কর্মের সঙ্গে সবসময় ব্যস্ত রাখা।
  • খাবার খাওয়ানোর সময় হাত বাচ্চার হাতে ফোন না তুলে দিয়ে বিভিন্ন গল্প শোনান।
  • ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে কখনোই বাচ্চার হাতে ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস না দেওয়া।
  • বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেধে দিন।
  • বাচ্চারা ফোনে বা টিভিতে কি দেখছে সেই বিষয়ে তথ্য রাখা।
  • বাচ্চার জন্য সম্পূর্ণ দিনের একটি রুটিন তৈরি করা।
  • প্রতিবেশী বা অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে পরিচিত করানো এবং তাদের স্বার্থে খেলাধুলা করা।
  • বাচ্চার নতুন কিছু করলে তাতে উৎসাহী প্রধান করা।
  • ন্যানি বা আয়া উপর বাচ্চার সমস্ত দায়িত্ব না দেওয়া।
  • সময় হলেই বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে হাঁটতে যাওয়া।
  • প্রতিদিন একবার হলেও বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে হাঁটতে যাওয়া বা খেলা করা।
  • অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো সব সময় ভালোমতো বোঝানো।
  • অতিরিক্ত হলে সামান্য কঠোর হওয়া।
  • বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে ব্যস্ত রাখা যেমন ক্রিকেট, ফুটবল, সাইকেলিং, নাচ, গান, ছবি আঁকা হাতের লেখা সুন্দর করা ইত্যাদি।

শিক্ষার্থীদের উপর মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর প্রভাব?

বর্তমান যুগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাকে উন্নতির শীর্ষদ দ্বারে নিয়ে যাওয়া। মোবাইল ফোন ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেমন শিক্ষাকে সহজ উন্নত করা যায় তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে অতিরিক্ত ব্যবহারে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের উপর মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর প্রভাব?

নিয়ে পিতা-মাতারা ও শিক্ষকরা বেশ চিন্তিত। তবে আমরা অনেকেই জানিনা মোবাইল ফোনের আসক্তির ফলে শিক্ষার্থীদের উপর কি কি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। চলুন মোবাইল ফোনের শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষতিকার প্রভাব গুলো কি কি জেনে নিন-

  • প্রযুক্তির ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে।
  • স্বাস্থ্যগতভাবে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
  • চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন চোখে ঝাপসা দেখা, দূরের জিনিস কম দেখতে পাওয়া, চোখে বেশি চাপ পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ ব্যথা করা, চোখের চুলকানি ইত্যাদির কারণে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে।
  • সাইবার বুলিং বা অনলাইনে হুমকির পরিমাণ বাড়ছে।
  • অনলাইনে সকল তথ্য শিক্ষার্থীরা দেওয়ার কারণে গোপনীয়তা লঙ্ঘন ঘটছে ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির শিকার হচ্ছে ফলে বিভিন্নভাবে মানসিক যন্ত্রণা, স্বাস্থ্য ও লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে।
  • গ্রুপ স্টাডি একত্রে থেকে কোন বিষয়ে নিয়ে আলোচনা বা উদ্ভাবন করা ইত্যাদি বিষয়গুলো্র হ্রাস পাচ্ছে।
  • শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাস্তবতা বা বাস্তবজনিত শিক্ষনীয় জিনিসগুলো শিক্ষার্থীদের ভেতরে হ্রাস পাচ্ছে।
  • শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনে বেশি আসক্ত হওয়ার কারণে স্কুল কলেজের বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটিতে খুব কম অংশগ্রহণ করে যার ফলে মানসিক ও শারীরিক বিকাশ হ্রাস পায়।
  • শিক্ষার্থীরা যখন মোবাইল ব্যবহার করে তখন তাদের মস্তিষ্কে কোষগুলো থেকে ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণ হয় যার কারণে ফোনের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে যায় এবং রাত জেগে ফোন ব্যবহার করে এবং পড়াশোনার ক্ষতি হয়।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে ফোন ব্যবহারে মাজা ব্যথা পিঠে ব্যথা ঘাড়ে ব্যথা মাথা কপাল ইত্যাদি ব্যথা বা সমস্যার কারণে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে।
  • অতিরিক্ত মোবাইল ফোনেরআসক্তির কারণে অনেক বাচ্চারা পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ছে।
  • মেধাবী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
  • শিক্ষার্থীদের ভেতরে নতুন কিছু উদ্ভাবন করার মনোভাব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
  • অনেকে ক্লাস বন্ধ করে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের জন্য ভিডিও, গেমস ইত্যাদি তৈরি করছে।
  • পড়াশুনার প্রতি মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
  • মেজাজ খিটখিটে বা অল্পতেই রেগে যাওয়া সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে।
  • খাওয়ার প্রতি অনীহা বা ক্ষুধা মন্দা সৃষ্টি হচ্ছে।
  • অনিদ্রা বা ঘুম জড়িত বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
  • পড়া মনে না থাকা।

লেখকের মন্তব্য

রাইব বাটন আজকে এ পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বাচ্চাকে মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্ত ও মোবাইল আসক্তি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আশা করি উপরোক্ত সম্পন্ন পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করে তাদের মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্ত দেওয়ার জন্য সকল তথ্যগুলো দিয়ে সহায়তা করুন। এমন আরো তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন, আসসালামু আলাইকুম/আদাব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url