অ্যালোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের নিয়ম
আসসালামু আলাইকুম/আদাব, আজকের আলোচ্য বিষয় অ্যালোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের নিয়ম,
এলোভেরা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায় ইত্যাদি আরও এলোভেরা নিয়ে আলোচনা করেছি।
বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো।
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে অ্যালোভেরা চুলে ব্যবহার সম্পর্কে আপনার যত প্রশ্ন
ওসমস্যা রয়েছে তার অবশ্যই সঠিক সমাধান ও উত্তর পাবেন এবং অ্যালোভেরা সঠিক নিয়মে
সঠিক পদ্ধতি জেনে আপনার চুলকে ঘন মজবুত লম্বা সিল্কি ও প্রাণবন্ত করতে পারবেন।
ভূমিকা
বর্তমান আবহাওয়া, ধুলাবালি ও বাজারে বিভিন্ন ক্ষতিকারক হেয়ার প্রোডাক্ট আমাদের
চুলকে রুক্ষ-শুষ্ক, প্রানহীন করে তুলছে। আপনি যদি ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক কিছু উপাদান
দিয়ে চুলকে ঘন, লম্বা, মজবুত, প্রানোবন্ধ করতে চান তাহলে এলোভেরা সঙ্গে কিছু
গুরুত্বপূর্ণ ও পুষ্টি উপাদান মিশিয়ে প্যাক, স্মথি, হেয়ার মাক্স ইত্যাদি তৈরি
করতে পারেন।
এ সকল কিছু তৈরি করার নিয়ম ও উপায় সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
যেমন এলোভেরা কিভাবে চুলকে সিল্কি করবে এর উপায়, এলোভেরা জেল এর উপকারিতা,
অপকারিতা, শুষ্ক চুল কিভাবে এলোভেরা প্রাণবন্ত করবে, এলোভেরা ব্যবহারের নিয়ম,
আরো পড়ুনঃ
চুল লম্বা করার ঘরোয়া সহজ উপায়
নতুন চুল গজাতে এলোভেরার, অ্যালোভেরা দিয়ে কিভাবে চুল লম্বা করবেন ইত্যাদি আরো
এলোভেরা দিয়ে চুল আপনার মন মত করার পদ্ধতির সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করেছি। আশা
করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়বেন।
এলোভেরা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায়
সুন্দর, মজবুত, লম্বা, সিল্কি চুল আমরা সকলেই চাই। এমন চুল পেতে হলে প্রথমে
আমাদের চুল কি চাই তা বুঝতে হবে। চুলের জন্য এমন পুষ্টি উপাদান বা উপকরণ নির্বাচন
করতে হবে যা আমাদের চুলের সকল সমস্যা খুব সহজে দূর করে চুলকে সিল্কি করবে।
এজন্যই আজ আমি আপনাদের মাঝে এমন একটি উপাদানের নাম বলব যা চুলের জন্য সর্বগুণ
সম্পন্ন। সেটি হল অ্যালোভেরা। এজন্যই আজ আমি আপনাদের মাঝে এলোভেরা দিয়ে চুল
সিল্কি করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই-
অ্যালোভেরা দিয়ে চুল সিল্কি করতে চাইলে আপনি অ্যালোভেরা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন
ধরনের হেয়ার মাক্স ব্যবহার করতে পারেন। চলুন হেয়ার মাক্সগুলো তৈরি পদ্ধতি জেনে
নিই-
ভিটামিন ই ক্যাপসুল ও অ্যালোভেরার তৈরি হেয়ার মাক্স
উপকরণ
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল- ২ টি
- অ্যালোভেরা জেল-৩ থেকে ৪ চা চামচ
- আমন্ড অয়েল- কয়েক ফোঁটা
- লেবুর রস- ১ চা চামচ
- ডিম এর সাদা অংশ- ১ অথবা ২টি (চুল অনুসারে)
- টক দই- ১ চা চামচ
তৈরি প্রণালী ও ব্যবহারবিধিঃ উপরোক্ত সকল উপকরণগুলো ভালো করে মিশিয়ে
হেয়ার মাক্স তৈরি করে নিন। মাক্সটি তৈরি হলে ভালো করে চুলের স্ক্যাল্প ও পুরো
চুলে মাসাজ করুন ৫ থেকে ১০ মিনিট। মাসাজ শেষে চুল গুলো ৮০% শুকিয়ে বা ৩০ থেকে ৪৫
মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন
পরে পরিবর্তন আপনি নিজেই লক্ষ্য করতে পারবেন।
উপকারিতাঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনার চুলের ভিটামিন ই এর ঘাটতি মিটিয়ে
চুলকে মজবুত করবে, আমন্ড অয়েল নতুন চুল গজাতে, চুল বৃদ্ধি করবে, লেবু রস চুলের
স্ক্যাল্পে খুকশি ও বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ দূর করবে, টক দই,এলোভেরা ও ডিমের সাদা
অংশ চুলকে মজবুত, ঘন, উজ্জ্বল ও সিল্কি করবে।
নারিকেল তেল ও অ্যালোভেরা তৈরি হেয়ার মাক্স
উপকরণ
- অ্যালোভেরা জেল- ২ থেকে ৩ চামচ
- নারিকেল তেল- ২ চা চামচ
- লেবু রস- ১ চা চামচ
- জবা ফুল পেস্ট- ১থেকে ২ চা চামচ
- টক দই- এক চামচ
তৈরি প্রণালী ও ব্যবহারবিধিঃ উপরোক্ত সকল উপকরণগুলো একটি পাত্রে নিয়ে
ভালো করে মিশিয়ে নিন। এ মাস্কটি ব্যবহার পূর্বে অবশ্যই চুল ভালো করে চিরুনি
দিয়ে আঁচড়িয়ে নেবেন। যেন চুলে কোন প্রকার জোট না থাকে। তৈরি মাক্সটি চুলে পাঁচ
থেকে দশ মিনিট ভালো করে ম্যাসাজ করে নেবেন।
আরো পড়ুনঃ শীতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির
লক্ষ্য রাখবেন চুলের কোন অংশ যেন বাদ না পরে। চুলগুলো শুকিয়ে আসলে উষ্ণ পানি
দিয়ে চুলগুলো ভালো করে ধুয়ে ফেলবেন। এভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার
করতে করতে পারেন।
উপকারিতাঃ লেবুর রস চুলের স্ক্যাল্পে বিভিন্ন সংক্রমণ রোধ করবে, টক দই
এলোভেরা নারকেল তেল ও জবা ফুল চুলের বিভিন্ন সমস্যা যেমন আগা ফেটে যাওয়া, চুল
পাতলা হয়ে যাওয়া, রুক্ষ- শুষ্ক হয়ে যাওয়া এ তাদের সমস্যা দূর করে চুলকে
উজ্জ্বল মজবুত, ঘন, লম্বা ও সিল্কি।
কাস্টার্ড অয়েল ও অ্যালোভেরার তৈরি হেয়ার মাক্স
উপকরণ
- এলোভেরা জেল
- কাস্টার্ড অয়েল
- মধু
- পেঁয়াজের রস
- রোজমেরী এসেন্সিয়াল অয়েল
- লেবুর রস
- নারিকেল তেল
তৈরি প্রণালী ও ব্যবহার বিধিঃ একটি পাত্রে এলোভেরা জেল ২ থেকে ৩ চা চামচ,
কাস্টার্ড অয়েল ১ চা চামচ, পেঁয়াজের রস ১ চা চামচ, রোজমেরি এসেন্সিয়াল অয়েল
কয়েক ফোঁটা, মধু এক চা চামচ, নারিকেল তেল ও লেবুর রস এক চামচ ভালো করে মিশিয়ে
পেস্ট তৈরি করে নিন।
পেজটি চুলে ভালো করে ম্যাসাজ করে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। চুল ধোয়ার পর
অবশ্যই চুলে যে কোন কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন। এভাবে সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন
ব্যবহারে চুলের সকল সমস্যা দূর হয়ে চুল সিল্কি, ঘন, মজবুত ও প্রাণবন্ধক হবে।
উপকারিতাঃ উপরোক্ত ব্যবহারিত সকল উপকরণ চুলের জন্য বেশ উপকারী। চুলের
খুশি, স্ক্যাল্পে সংক্রমণজনিত সমস্যা, আগা ফেটে যাওয়া, চুল ঝরে পড়া, নতুন চুল
না গজানো, চুলে চিপ চিপে ভাব ইত্যাদি সহজেই দূর করে চুলকে সিল্কি করে।
মেথি ও এলোভেরা জেলের মাক্স তৈরি
উপকরণ
- মেথি পাউডার
- অ্যালোভেরা জেল
- টক দই
- অলিভ অয়েল
- লেবুর রস
- মধু
- ডিমের সাদা অংশ
তৈরি প্রণালী ও ব্যবহার বিধিঃ মেথি পাউডার ২ থেকে ৩ চামচ, একটি অথবা দুইটি
চুল অনুসারে ডিমের সাদা অংশ, লেবুর রস এক চামচ, এলোভেরা দুই থেকে তিন চামচ, মধু
এক চা চামচ, টক দই ও অলিভ অয়েল এক চা চামচ ভালো করে মিশ্রিত করে পেস্ট তৈরি করে
চলে স্কাল্পে এবং পুরো চুলে ভালো করে ৫-১০ মিনিট ম্যাসাজ করে নিন।
মেসেজ করার পর চুল ২০ থেকে ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং শ্যাম্পু করে নিন।
শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই ব্যবহার করবেন এভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন ব্যবহারে
কার্যকরী ফলাফল পাবেন।
উপকারিতাঃ আপনি চাইলে উপরোক্ত উপকরণের ভেতরে অন্য কোন উপকরণ মিশ্রিত করেও
ব্যবহার করতে পারেন। তবে উপরোক্ত উপকরণগুলো আপনার চুলের সকল সমস্যার দূর করে খুব
সহজেই চুলকে সিল্কি করতে পারবে।
অ্যাপেল সিডর ভিনিগার ও অ্যালোভেরা জেলের মাক্স
উপকরণ
- অ্যালোভেরা জেল- দুই থেকে তিন চামচ
- অ্যাপেল সিডার ভিনেগার- এক টা চামচ
- মধু- এক চা চামচ
- অলিভ অয়েল/কাস্টার্ড অয়েল- কয়েক ফোটা
- লেবুর রস- এক চা চামচ
তৈরি প্রণালী ও ব্যবহার বিধিঃ উপরোক্ত সকল উপকরণ গুলো একটি পাত্রে নিয়ে
ভালো করে মিশিয়ে নিন। পানি ব্যবহার করার কোন প্রয়োজন নেই। মিশ্রণটি ভালো করে
সম্পূর্ণ চুলে ৫ থেকে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করুন। সম্পূর্ণ চুল ৮০% পর্যন্ত শুকানো
হলে বা ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ভালো পেতে
মাসে তিন দিকে চারবার ব্যবহার করুন।
উপকারিতাঃ উপযুক্ত সকল উপকরণ গুলো আপনার চুলকে উজ্জ্বল মসৃণ ও সিল্কি করে
তুলবে এর সাথে আপনার সকল সমস্যা দূর করবে।
অ্যালোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের উপকারিতা
অ্যালোভেরা এমন একটি পুষ্টি উপাদানে সম্পূর্ণ উদ্ভিদ যা খেয়ে কিংবা প্রয়োগের
মাধ্যমে চুলের যে কোন সমস্যা দূর করা সম্ভব। বিভিন্ন চিকিৎসক ও গবেষকের মতে
অ্যালোভেরা চুলের ত্বকের মাসাজের ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি হয় ফলে চুল মজবুত ঘন
শক্তিশালী হয়।
আরো পড়ুনঃ ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত সবজি
এছাড়াও চুলের সকল পুষ্টি গুনাগুনের ঘাটতি খুব সহজেই মেটায়। এ থেকে প্রমাণিত হয়
যে অ্যালোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের উপকারিতা অনেক বেশি। চলুন জেনে নেই অ্যালোভেরা
জেল নিয়মিত ব্যবহারে চুলের উপকারিতা গুলো কি-
চুল পড়া বন্ধ করেঃ চুল পড়া রোধের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি
উপাদান হচ্ছে লাইসিন ও সিস্টাইন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যা অ্যালোভেরা বিদ্যমান
রয়েছে। এর জন্য আপনি নিশ্চিন্তায় চুল পড়া বন্ধ করতে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার
করতে পারেন।
চুল বৃদ্ধি করতেঃ চুল বৃদ্ধি কমে যায় মূলত চুলে কোন প্রকারের পুষ্টি
ঘাটতি দেখা দিলে। গবেষকদের মতে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে
পারে এলোভেরা। চুল বৃদ্ধি করতে চাইলে চুলের ত্বকে ভালো করে এলোভেরা মাসাজ করতে
পারেন কারণ এই মাসাজের ফলে চুলের ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং চুল এর গোরা
মজবুত হয় ও চুলের বৃদ্ধি দ্রুত ঘটে।
চুলের আগা ফেটে যাওয়া রোধ করেঃ অ্যালোভেরাই থাকা পুষ্টি উপাদান খুব সহজে
চুলে সকল জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দিয়ে মেটাতে পারে বিধায় চুলের
আগা ফাটার সমস্যার সমাধান দ্রুত হয়। চুলের আগা ফাটা সমস্যা মূলত চুলে বিভিন্ন
গুষ্টির ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে।
এছাড়াও চুলের আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করে যেমন
- চুলকে নরম, মসৃণতা, উজ্জ্বলতা ও সিল্কি করে তুলে
- চুলে খুশী দূর করে
- স্কাল্পে সংক্রমণ রোধ করে এলোভাড়ায় থাকা অ্যান্ড ব্যাকটেরিয়া রোগ অ্যান্টি ফাঙ্গাস উপাদান
- তেলাক্ত চুলের চিপ চিপে ভাব দূর করে
- চুলের রক্ষতা শুষ্কতা খুব সহজে দূর করে
- চুলকে ডিপ কন্ডিশন করে।
- চুলের ভিটামিনের ঘাটতি মেটাই।
- চুল ঘন ও নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে।
- চুলের ত্বকের ক্ষত বা চুলকানি খুব সহজেই রোধ করে।
- চুলে মশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
- দ্রুত চুল পাকা রোধ করে।
- চুলকে সাইনি ও মোলায়েম করে।
- চুলের গোড়া শক্ত করে।
- চুল মজবুত করতে।
- স্কাল্পে বিভিন্ন অস্বস্তি দূর করতে।
- চুলের গঠন দৃঢ়হ রাখতে
- চুল মাঝখান থেকে ভেঙে যাওয়া রোধ করে
- চুলের লালচে ভাব দূর করতে
- চুলের আদ্রতা ধরে রাখে
- প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে
শুষ্ক চুলের জন্য অ্যালোভেরা কি ভালো?
শীত কিংবা গ্রীষ্মকাল অথবা যেকোনো ঋতুই হোক না কেন চুল সুষ্ক হয়ে যাওয়া এই
সমস্যায় হয়তো আমরা অনেকেই ভুগে থাকি। সঠিক উপকরণ পদ্ধতি বা প্রোডাক্ট না জানার
কারণে অনেক সময় ভুল উপকরণ ব্যবহারে এর সমস্যা কয়েক গুণ আরো বেড়ে যায়।
অনেকে অনেক প্রোডাক্ট ব্যবহার করে এ প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে চুলের শুষ্কতা দূর
করতে চায় এজন্য অনেকের মনে এমন প্রশ্ন জাগে শুষ্ক চুলের জন্য অ্যালোভেরা কি
ভালো?
জি আপনি অ্যালোভেরা ব্যবহার করে খুব সহজেই চুলের শুষ্কতা দূর করতে পারবেন।
এলোভেরা রয়েছে এমন সকল পুষ্টি উপাদান যা চুলের স্কাল্পে মৃত কোষগুলো সারিয়ে
তুলতে সহায়তা করে। চুলের কালভে খুকশী, বিভিন্ন সংক্রমণ, ক্ষত, অপুষ্টির অভাব
ইত্যাদি কারণে মূলত চুল শুষ্ক হয়ে যায়।
অ্যালোভেরাই থাকা অ্যান্টিফাঙ্গাস ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান এ সকল সমস্যার
সমাধান খুব সহজেই দিতে পারে। অ্যালোভেরাতে রয়েছে পটাশিয়াম, অ্যামিনো এসিড,
ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন "এ", ফলিক এসিড, আইরন, জিংক, ভিটামিন "বি৬", সোডিয়াম,
ভিটামিন "বি২" ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান যা চুলের শুষ্কতা দূর করতে অত্যন্ত
প্রয়োজন।
আপনি অ্যালোভেরা চুলে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে প্যাক
তৈরি করে স্মোদি তৈরি করে এছাড়াও শুধুমাত্র অ্যালোভেরা ব্যবহার করেও আপনি
সুস্থতা দূর করতে পারেন।
অ্যালোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের নিয়ম
অ্যালোভেরাই এমন সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা চুলের ত্বকে মাসাজ করে কিংবা খেয়ে
অথবা এলোভেরা সহ বিভিন্ন উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে চুলের সৌন্দর্য, মোলায়েম,
মজবুত, ঘন, লম্বা ইত্যাদি করা সম্ভব চুলের সকল সমস্যা সমাধান করে।
তবে এ সকল উপকারিতা পেতে হলে আমাদের অবশ্যই এলোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের সঠিক
নিয়ম সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। এজন্যই আজ আমি আপনাদের জন্য নিচে অ্যালোভেরা
জেল চুলে ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত আলোচনা করব চলুন সেগুলো জেনে
নিন-
এলোভেরা ও ডিমঃ এলোভেরা যেমন চুলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি
উপাদান রয়েছে তেমনি ডিমে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান প্রোটিন ও জিংক
রয়েছে। আর এই দুইটি পুষ্টি উপাদান যখন একসঙ্গে মিশ্রিত করা হয় তখন এর গুনাগুন আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়।
এর জন্য প্রথমে আপনাকে একটি পাত্রে চুল অনুসারে একটি অথবা দুইটি ডিম ভেঙে
কুসুমগুলো আলাদা করে নিয়ে সাদা অংশ ব্যবহার করতে হবে। বাজার থেকে কেনা
অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন অথবা ঘরোয়া ভাবে অ্যালোভেরা জেল তৈরি করে
ব্যবহার করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
এর সাথে এক চামচ মধু ও দুই চা চামচ টক দই ভাল ব্যবহার করতে পারেন। সকল উপকরণগুলো
ভালো করে মিশিয়ে চুলের দুই থেকে তিন মিনিট ম্যাসাজ করুন। উক্ত উপকরণের সঙ্গে কোন
প্রকার পানি মেশানোর প্রয়োজন নেই। চুলে এভাবে ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট রেখে দিন।
যেহেতু পেস্টটিতে ডিম রয়েছে এর জন্য শুকিয়ে আসলে ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন। চুল ধোয়ার পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন। এভাবে আপনি পেস্টটি
নিয়মিত সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করলে আপনার চুলের সকল সমস্যা সমাধানের
সাথে চুলের উজ্জ্বল হালকা মোলায়েম স্বাস্থ্য উজ্জ্বল করে তুলবে।
অ্যালোভেরা ও পেঁয়াজের রসঃ প্রাচীনকাল থেকে চুলের যত্নে পেঁয়াজের রস
ব্যবহার হয়ে আসছে। পেঁয়াজের রস চুলকে খুশি আগা ফেটে যাওয়া চুল হালকা হয়ে
যাওয়া রুক্ষ শুষ্ক এতে সমস্যা সমাধান করে মজবুত ঘন লম্বা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ
থেকে সুরক্ষা নতুন চুল গজাতে ইত্যাদিতে সহায়তা করে।
চুলের জন্য পুষ্টি উপাদানের ভরপুর পেঁয়াজের সঙ্গে যখন অ্যালোভেরা মিশ্রণ করা হয়
তখন এর কার্যকারিতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। এর জন্য প্রথমে আপনাকে একটি পাত্রে
মাঝারি সাইজের দুইটি পেঁয়াজের পেস্ট ২ থেকে ৩ চামচ, এলোভেরা জেল ২ থেকে ৩ চামচ,
১ চামচ অলিভ অয়েল ইত্যাদি সকল উপকরণ গুলো ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন
তৈরিকৃত পেস্টটি শুকানো পর্যন্ত চুলে রেখে দিন। পেজটি চুলে প্রয়োগের সময় এবং
চুল শুকিয়ে যাওয়ার পর ভালো করে চুল মাসাজ করে নেবেন। চুল শুকানোর পর ভালো করে
শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন। মাসে তিন থেকে চার দিন ব্যবহারে
চুলের পরিবর্তন আপনি নিজেই লক্ষ্য করতে পারবেন।
এলোভেরা ও জবা ফুলঃ জবা ফুলে রয়েছে এমন লুকানো পুষ্টি উপাদান যা চুলকে
ঘন, আগা মজবুত করার মত সক্ষমতা। জবা ফুলের সাথে যখন চুলের জন্য সকল পুষ্টি
উপাদানে ভরপুর উপাদান এলোভেরা মিশ্রিত করা হয় তখন এদের কার্যকারিতা অনেক গুণ
বেড়ে যায়। এ দুইটি উপকরণের সঙ্গে দুই চামচ টক দই, এক চামচ লেবু রস, মেথি পাউডার
এক চামচ, মেহেদী পেস্ট দুই থেকে তিন চামচ ব্যবহার করতে পারেন।
এটি চুলের জন্য অতি প্রয়োজনীয় পেস্ট। পেস্টটি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ভালো করে
মাসাজ করে নেবেন এবং চুলে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রাখার পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে
ফেলবেন। মাসে দুই থেকে তিনদিন ব্যবহারে আপনার চুলের সকল সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
চুলেরপরিবর্তন আপনি নিজের চোখে দেখতে পাবেন।
অ্যালোভেরা ও টক দইঃ টক দই দুই চামচ, এক চামচ মধু, এক চামচ অলিভ অয়েল বা
নারিকেল তেল ও দুই থেকে তিন চামচ এলোভেরা জেল ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে
চুলের স্কাল্পে ভালো করে ম্যাসাজ করুন ৫ থেকে ১০ মিনিট এবং সম্পূর্ণ চুলে ভালো
করে এপ্লাই করুন। ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে কন্ডিশনার
ব্যবহার করুন। এভাবে ব্যবহারে আপনার চুলের হারানো উজ্জ্বলতা, সাইনি, মসৃণতা ফিরে
আসবে।
এলোভেরা জেল ও লেবু রসঃ লেবুর রস আমাদের চুলের স্কাল্পে বিভিন্ন সংক্রমণ
যেমন খুকশী, ক্ষত, মৃত চামড়া, চুলকানি, ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু ইত্যাদি দূর করে
এবং চুলে ভিটামিন সি এর অভাব মেটায়। এজন্য প্রথমে আপনাকে এক চামচ লেবুর রস দুই
থেকে তিন চামচ এলোভেরা জেল টি ট্রিএসমেসিয়াল
ওয়েল বা অলিভ অয়েল বা নারিকেল তেল কয়েক ফোটা ভালো করে মিশিয়ে চুলে এপ্লাই
করুন। অবশ্যই পাঁচ থেকে দশ মিনিট মিশ্রিত পেজটি মাসাজ করবেন। চুলগুলো শুকিয়ে
আসলে আরো একবার ম্যাসাজ করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
অ্যালোভেরা জেল ও আমলকিঃ চুলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন ভিটামিন সি ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমলকিতে অধিক পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে। চুলকে মজবুত, ঘন, লম্বা, প্রানোবন্ধুক করতে এদের ভূমিকা অনেক বেশি। এর জন্য আপনাকে প্রথমে কয়েকটি
আমলকি নিয়ে তার পেস্ট তৈরি করে নিতে
হবে এবং এতে তিন থেকে চার চামচ এ অ্যালোভেরা জেল ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে
নিতে হবে এর সাথে আপনি সামান্য পরিমাণে মধু ও মিশ্রিত করতে পারেন। তৈরিকৃত চুলে
কয়েক মিনিট মাসাজ করে আধাঘন্টা সময় রেখে দিন
শুকিয়ে আসলে ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন সপ্তাহে
দুই থেকে তিন দিন ব্যবহারে আপনার চুলের রুক্ষতা শুষ্কতা দূর, নতুন চুল গজানো
বিভিন্ন সংক্রমণ দূর ইত্যাদি সমস্যার সমাধান দেখবেন খুব সহজেই হয়ে গেছে।
উপরোক্ত নিয়মে চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহার ছাড়াও আপনি আরো বিভিন্ন উপকরণ
অ্যালোভেরার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন এলোভেরা ও বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে আপনি
প্যাক তৈরি করতে পারেন, স্মথি, হেয়ার মাক্স, শুধু এলোভেরা মাসাজ, বিভিন্ন তেলের
সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে ম্যাসাজ ,
চুল পরিষ্কার করার জন্য শুধুমাত্র এলোভেরা জেল, শ্যাম্পুর সঙ্গে অ্যালোভেরা যুক্ত
করে ব্যবহার করতে পারেন ইত্যাদি আরও আপনার পছন্দ অনুসারে উপকরণ অ্যালোভেরার সাথে
মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
ছেলেদের চুলের যত্নে এলোভেরা
মেয়ে কিংবা ছেলেদের চুলের যত্নে এলোভেরা বেশ কার্যকরী। অনেক ছেলেরা মনে করেন
মেয়েরা যেভাবে অ্যালোভেরা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্যাক, স্মোদি, হেয়ার মাক্স
ব্যবহার করেন সেভাবে কি ব্যবহার করা যাবে। অবশ্যই ছেলে এবং মেয়েরা উপরোক্ত আমি
যেভাবে এলোভেরা ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বলেছি সেভাবে ব্যবহার করতে পারেন।
মেয়েদের মত ছেলেদের চুল না গজানো, অতিরিক্ত চুল ঝরে পড়া, চুল পাতলা হয়ে
যাওয়া, চুলের স্কার্ফ অতিরিক্ত খুশি, বিভিন্ন সংক্রমণ দেখা দেয়। অপরুপ্ত নিয়ম
গুলো অনুসরণ করে একজন ছেলে যদি ব্যবহার করেন তাহলে অবশ্যই চুলের সকল সমস্যা
সমাধান পাবেন।
চুলের যত্নে অ্যালোভেরা প্যাক
এলোভেরা ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী তেমনি চুলের যত্নে এর ভূমিকা অনেক
বেশি। আপনারা অনেকেই জানতে চান চুলের যত্নে এলোভেরা দিয়ে তৈরি কিছু প্যাক
সম্পর্কে আলোচনা করতে। এজন্য আজ আমি আপনাদের মাঝে চুলের জন্য সকল প্রশ্ন উপাদানে
ভরপুর অ্যালোভেরা সঙ্গে আরো কয়েকটি চুলের জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান
দিয়ে তৈরি ব্যাগ সম্পর্কে নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন জেনে নিই চুলের যত্নে
অ্যালোভেরা প্যাক গুলো কি-
অ্যালোভেরা ও নারকেলের দুধের প্যাকঃ প্রাকৃতিকভাবে চুলকে নরম, কোমল, মসৃণ,
সাইনি, সিল্কি, লম্বা, ঘন, মজবুত করতে চাইলে আপনি অ্যালোভেরা ও নারকেল দুধের
প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে তিন থেকে চার চামচ এলোভেরা জেল, দুই
থেকে তিন চামচ নারকেলের দুধ, এক চামচ মধু, এক চামচ চিনি,
এক চামচ টক দই, কয়েক ফোঁটা নারিকেলের তেল, এক চামচ লেবু ও এক চামচ মেথি ভালো করে
সকল উপকরণগুলো ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নেবেন। তৈরিকৃত পেস্টটি সমস্ত চুলে মাসাজ
করে লাগিয়ে নেবেন এবং হেয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে রাখবেন।
সম্পূর্ণ চুল ৮০% শুকিয়ে আসলে ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। শ্যাম্পু
শেষে অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন এভাবে সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন করবেন
পরিবর্তন আপনি নিজে লক্ষ্য করতে পারবেন।
অ্যালোভেরা ও গ্রিন টি প্যাকঃ চায়ের লিকার আমাদের চুলের জন্য বেশ উপকারী।
এর জন্য আপনাকে প্রথমে দুই থেকে তিন চামচ চায়ের লিকারের সঙ্গে তিন থেকে চার চামচ
এলোভেরা, এক চামচ মধু এক চামচ চিনি, এক চামচ লেবুর রস, দুই থেকে তিন চামচ
পেঁয়াজের রস,
এক চামচ টক দই আমন্ড অয়েল বা অলিভ অয়েল এক চামচ ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি
করে নিন। ৪৫ থেকে ১ ঘন্টা চুলে রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে কন্ডিশনার
চুলে ব্যবহার করবেন।
এলোভেরা ও মেহেদির প্যাকঃ মেহেদী আমাদের চুলের জন্য কতটা প্রয়োজন হয়তো
তা বলার প্রয়োজন নেই আমরা সকলেই তা জানি। চুল অনুসারে এক কাপ মেহেদী, তিন থেকে
চার চামচ এলোভেরা, এক চামচ লেবুর রস, দুই চামচ পেঁয়াজের রস, টক দই এক চামচ, মেথি
পাউডার এক চামচ,
ডিমের সাদা অংশ চুল অনুসারে একটি অথবা দুইটি, একটি থেকে দুটি জবা ফুল, মধু এক চা
চামচ, দুই থেকে তিনটি আমলকির পেস্ট ও কাস্টার্ড অয়েল এক কয়েক ফোঁটা এটা দিয়ে
সকল উপকরণ গুলো ভালো করে বিলিন্ডারে পেস্ট তৈরি করে নিন।
পেস্ট তৈরি হয়ে আসছে সম্পূর্ণ চুলের মাসাজ করে এপ্লাই করুন। এক ঘন্টা অথবা চুল
৮০% শুকিয়ে আসলে শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। মাসে
তিন থেকে চার বার ব্যবহার হয় আপনার চুল এর সকল সমস্যা দূর হয়ে চুল হবে লম্বা ঘন
মজবুত উজ্জ্বল ইত্যাদি।
এলোভেরা ও কেশরাজের প্যাকঃ কেশরাজ শব্দটি শুনে আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন
এটি চুলের রাজা অর্থাৎ চুলের সকল সমস্যা দূর করতে পারে এই ভেষজ গাছ। অনেকে হয়তো
এই কাজ চিনবেন অনেকেই চিনবেন না। এই গাছ সহ অঞ্চলে খুব কম দেখা যায়। তবে এটি
চুলের জন্য বেশ উপকারী একটি গাছ।
এর জন্য প্রথমে আপনাকে এক কাপ চেষ্টা পেস্ট চার থেকে পাঁচ চামচ মেহেদী পেস্ট
অ্যালোভেরা জেল তিন থেকে চার চামচ মধু এক চামচ টক দই একটা চামচ লেবু এক চামচ মেথি
পাউডার এক চামচ একটি ডিমের সাদা অংশ চিনি এক চামচ পেঁয়াজের রস এক চামচ ইত্যাদি
সকল উপকরণগুলো ভালো করে মিশিয়ে চুলে এক ঘন্টার জন্য রেখে দেবেন
আপনি চাইলে চুলগুলো শুকিয়ে আসলে ভালো করে বেঁধে পরের দিন শ্যাম্পু দিয়ে
ভালো করে ধুয়ে কন্ডিশন ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাকটি এতটাই কার্যকারী আপনি
নিয়মিত মাসে তিন থেকে চার বার ব্যবহারে আপনার চুল, দ্রুত লম্বা, ঘন, মজবুত,
উজ্জল, প্রাণবন্তক, সিল্কি হবে।
এলোভেরা জেল ও আমলা প্যাকঃ তিন থেকে চার চামচ এলোভেরা জেল, আমলার পেস্ট ২
চামচ, নারিকেলের দুধ দুই চামচ, ক্যাস্টর অয়েল, দুইটি দুইটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ও
একটি ডিমের সাদা অংশ ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন।
প্যাকটি চুলের গোড়ায় ও সম্পূর্ণ চুলে ভালো করে মাসাজ করে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট পর
করবেন এবং শ্যাম্পু দিয়ে ধোয়ার পর প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি এমন কোন মশ্চারাইজার বা
কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন অথবা মাসে চার থেকে পাঁচ দিন
ব্যবহারে আপনার চুলের সকল সমস্যা আশা করি সমাধান হবে।
এলোভেরা, দারচিনি ও থানকুনি পাতার প্যাকঃ তিন থেকে চার চামচ এলোভেরা জেল,
দারচিনি হাফ চামচ, থানকুনির পাতা দুই চামচ, মধু এক চামচ, চিনি এক চামচ, ডিম একটি,
মেথি পাউডার এক চামচ, ভিটামিন ই ক্যাপসুল দুইটি, মেহেদী পেস্ট ২ চামচ, জবা ফুল
দুইটি, আমান্ড অয়েল এক চামচ,
বেকিং পাউডার হাফ চামচ ইত্যাদি সকল উপকরণগুলো ভালো করে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন।
চুলে সম্পূর্ণ পেজটি মাসাজ করে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট রেখে দিন। শ্যাম্পু দিয়ে ভালো
করে ধুয়ে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
এলোভেরা জেল ও কলার প্যাকঃ একটি পাত্রে চার থেকে পাঁচ চামচ এলোভেরা জেল,
মাঝারি সাইজের একটি কলা, অর্ধেক অ্যাভোকাডো, এক চামচ মধু , চিনি এক চামচ, মেথি
পাউডার এক চামচ, অলিভ অয়েল এক চামচ, পেঁয়াজের রস দুই চামচ, টক দই এক চামচ,
একটি ডিম, রোজমেরি অয়েল এক চামচ ইত্যাদি সকল উপকরণ গুলো ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে
নিন। পেজটি ভালো করে সমস্ত চুলে এপ্লাই করে শুকিয়ে নিন। শুকিয়ে আসলে ভালো করে
শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
এলোভেরা জেল ও গ্লিসারিনের প্যাকঃ উসকো শুষ্ক ত্রাণহীন চুলকে নরম, সিল্কি,
মোলায়েম, প্রানবন্ধক করতে চাইলে এক চামচ গ্লিসারিন, এক চামচ মধু, এক চামচ বেকিং
পাউডার, ভিটামিন ই ক্যাপসুল দুইটি টক দই দুই চামচ, পেঁয়াজের রস এক চামচ ও
অ্যালোভেরা জেল তিন থেকে চার চামচ ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে চুলে ৪০ থেকে
৪৫ মিনিট ভালো করে শুকিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে কন্ডিশন ব্যবহার করুন।
অ্যালোভেরা জেল ও হলুদ এর প্যাকঃ একটি পাত্রে এক চামচ হলুদ, দুই থেকে তিন
চামচ নারিকেলের দুধ, মধু এক চামচ, ডিম একটি, মেথি পাউডার এক চামচ, অ্যাপেল ফিডার
ভিনেগার এক চামচ ও অ্যালোভেরা জেল তিন থেকে চার চামচ ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি
করে নিন।
৫ থেকে ১০ মিনিট তুলে ভালো করে পেস্টে ম্যাসাজ করুন এবং ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটের জন্য
হেয়ার কাপ দিয়ে ঢেকে রাখুন। চুলগুলো শুকিয়ে আসলে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে
কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন,
এলোভেরা কি চুল গজাতে সাহায্য করে?
আমরা অনেকে ত্বক ও চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহার করে থাকি। চুল লম্বা , ঘন, মজবুত,
সিল্কি, প্রানোবন্ধক করতে এলোভেরা ব্যবহার করে থাকে তবে অনেকের মনে এমন প্রশ্ন
জাগে এলোভেরা কি চুল গজাতে সাহায্য করে? জি হ্যাঁ অ্যালোভেরা এমন কিছু পুষ্টি
উপাদান রয়েছে যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এলোভেরা রয়েছে প্রোটিন, অ্যান্টি
ব্যাকটেরিয়াল, এন্টিঅক্সিডেন্ট,
মিনারেল ভিটামিন "বি৬" ইত্যাদি আরো পুষ্টি উপাদান যা চুলের স্কাল্পের ফলিকলকে
পরিপুষ্ট করে চুলের সকল সমস্যার সমাধান করে নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে। এজন্য
আপনি নিশ্চিন্তায় নতুন চুল গজানোর জন্য এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন।
চুলের জন্য অ্যালোভেরার অপকারিতা?
কোন জিনিস ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই তার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা
অত্যান্ত জরুরী। এজন্য আজ আমি আপনাদের মাঝে অ্যালোভেরা ব্যবহারের কিছু পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে আলোচনা করব। চলুন জেনে চুলের জন্য
অ্যালোভেরার অপকারিতা? সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য।
আপনি অ্যালোভেরা খেয়ে শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগের সমস্যার সমাধান করতে পারেন এবং
চুলে ব্যবহার করে চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে পারেন। চুলকে ঘন, মজবুত, প্রানবদ্ধক, লম্বা, সিল্কি করতে এলোভেরা ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আপনি নতুন
চুল গজানো, চুলের খুশকি ও বিভিন্ন সংক্রমণ দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যালোভেরা আপনি সঠিক নিয়মে নিরাপদ পদ্ধতিতে খেলে এটি ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
কিন্তু অ্যালোভেরার ভেতর থেকে যখন অনাকাঙ্খিত ভাবে এক ধরনের অ্যালো-লেটে নামক
রসালো পদার্থ বের হয় তখন এটি ক্ষতিকারক হয়ে যায়। পদার্থটি শরীর, ত্বক ও চুলের
জন্য বেশ ক্ষতিকর। পদার্থটির এলোভেরার ভেতর থেকে হালকা হলুদ রঙের বের হয়।
এটি চুলে ব্যবহার করলে চুলকানি, ফুসকুড়ি, এলার্জি, রেশেজ, চুল ঝরে পড়া, চুলের
গোড়া দুর্বল ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে এছাড়া আপনি যদি এটি খান তাহলে
শরীরের বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে যেমন- ডায়রিয়া, বেশি
দুর্বল শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা দ্রুত কমে যাওয়া, ওজন হ্রাস ,
কিডনির সমস্যা, হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে
পারে এছাড়াও আপনি গর্ভবস্থায় এটি খেলে গর্ভপাত হওয়া সম্ভব নাও থাকে। বাচ্চারা
এটি খেলে বাচ্চার মারাত্মক পেটে ব্যথা ও ডায়রিয়া আমাশয় দেখা দিতে পারে।
এলোভেরা দিয়ে চুল বড় করার উপায়
এলোভেরা দিয়ে চুল বড় করার উপায় সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে সম্পূর্ণ পোস্টটি
পড়ুন।এলোভেরা এমন কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা খুব সহজে চুলকে লম্বা মজবুত ঘন
করতে পারে। তবে আপনি যদি এলোভেরার সাথে আরও বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে ব্যবহার করতে
পারেন তাহলে আপনার চুল দ্রুত লম্বা বা বড় হবে। চলুন জেনে নেই সে উপকরণ গুলো কি
যেগুলো আপনি অ্যালোবের সঙ্গে মিশিয়ে চুল বড় করতে পারেন।
- এলোভেরা সঙ্গে লেবু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে 15 থেকে 20 মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন
- অ্যালোভেরা ও টক দই ভালো করে মিশ্রিত করে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।
- এলোভেরা ও মেথির পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।
- এলোভেরা নারকেল তেল ও মধু একসঙ্গে মিশ্রিত করে ত্যাগ তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।
- অ্যালোভেরা জেল ও রোজমেরি এসেন্সিয়াল একসঙ্গে মিশিয়ে স্মুথি তৈরি করতে পারেন
- অ্যালোভেরা লেবুর রস অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বেকিং পাউডার ও পিয়াজের রস মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে পারেন।
- এলোভেরা মেহেদী টক দই লেবু ও মধু মিশে হেয়ার মার্কস তৈরি করে 15 থেকে 20 মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে পারেন।
- চুলকে মশার আইডিয়াল করতে এলোভেরা জেল ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে পারেন।
লেখক এর মন্তব্য
রাই বটন আজকে এ পোষ্টের মাধ্যমে এলোভেরা জেল চুলের ব্যবহারের কিছু টিপস ট্রিকস
সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আশা করি উপরোক্ত সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি
উপকৃত হয়েছেন। আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয়-স্বজন ও
বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করে তাদেরকে এলোভেরা জেল চুলের ব্যবহারের উপকারিতা
অপকারিতা নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কেও জানিয়ে সহায়তা করুন। এমন আরও তথ্য জানতে আ
আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন আসসালামু আলাইকুম/আদাব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url