উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের জাত
আসসালামু আলাইকুম/আদাব, আজকের আলোচ্য বিষয় উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের জাত, বোরো ধানের বীজতলার পরিচর্যা ইত্যাদি আরো বোরো ধানের জাত সম্পর্কে নিয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন পোস্টটি পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো।
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে বোরো ধানের চাষাবাদ সম্পর্কে আপনার যত প্রশ্ন সমস্যা রয়েছে তার অবশ্যই সঠিক সমাধান উত্তর পাবেন এবং সঠিক বন্ধুত্বের উচ্চকরণশের বড় ধানে জাতগুলো চাষাবাদ করতে পারবেন।
ভূমিকা
কৃষি প্রধান এ দেশে আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। বাঙালিদের জন্য ভাত প্রধান খাদ্য। এজন্যই আজ আমি আপনাদের মাঝে উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের জাত পুরো ধান লাগানোর সময় পরিচর্যা বীজ তলা রোপন পদ্ধতি আদর্শ বীজতলা তৈরি বীজ তলা থেকে কতদিন পর চারা তুলে রোপন করতে হয় সঠিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ও জৈব সার প্রদান পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করেছে আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়বেন।
বোরো ধান কখন লাগাতে হয়?
গ্রাম-গঞ্জে সবুজের সমারহে প্রাণ জুড়িয়ে যায় এর শীতল বাতাসে এমন দেশ বাংলাদেশ। এ দেশ মূলত কৃষি প্রধান দেশ এবং প্রধান খাবার ভাত। সারা বছরই কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের ধান চাষ করে দেশের মানুষের খাদ্যের চাহিদা মেটাই। বোরো ধানের চালের ভাত অনেক বেশি সুস্বাদু হওয়ায় বাংলাদেশ এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।
তবে বোরো ধান কখন লাগাতে হয়? এবং কোন মৌসুমে পাওয়া যায় হয়তো আমরা অনেকেই তা জানি জানিনা। বাংলাদেশের কৃষকেরা কার্তিক মাস থেকে বোরো ধানের চারা রোপন শুরু করে এবং নতুন বছরে অর্থাৎ বৈশাখ মাস থেকে বোরো ধান কৃষকেরা বেশ আনন্দের সাথে ঘরে তুলে জৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত।
যেহেতু বোরো ধান পহেলা বৈশাখ থেকে সকল কৃষকের ঘরে তোলা শুরু হয় বিধায় ঘরে ঘরে এক আনন্দের সমরহ গড়ে ওঠে নতুন চাল দিয়ে পিঠাপুলি আত্মীয়-স্বজন মেহমানদারী ইত্যাদি সকল কিছু করা হয় এই বোরো ধান উঠার আনন্দে। বোরো ধানের আরেক নাম ইরি ধান এর উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশ ও ভারত এছাড়াও এই ধান বসন্তকালে বেশি হয় চাষাবাদ হয় বিধায় একে কৃষকেরা বাসন্তীক ধান বলেও ডেকে থাকে।
বোরো ধানের বীজ বপনের সময়
ধান চাষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আবহাওয়া অর্থাৎ যে সকল ধান যে মৌসুমে বেশি উৎপন্ন হয় সে সকল ধানের বীজ সে সময় রোপন করা সব চাইতে উত্তম। এর জন্য আমাদের জানা দরকার কোন ধানের বীজ কোন আবহার জন্য উপযুক্ত।
আপনি যদি বোরো ধান রোপন করতে চান অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে বোরো ধানের বীজ রোপনের সময় সম্পর্কে অর্থাৎ বোরো ধানের বীজ বপনের সময় রোপন করলে এর ফলন সবচাইতে ভালো হবে। বাংলাদেশের জনগণের যেহেতু প্রধান খাবার ভাত এজন্য বছরজুড়ে বাংলাদেশের সকল কৃষক বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের ধান চাষ করে থাকেন।
সেই অনুসারে আউশ ধানের শেষ হওয়ার পর বোরো ধানের বীজ রোপন শুরু করা হয় বোরো ধানের জন্য বীজ রোপনের উত্তম সময় হচ্ছে অক্টোবর নভেম্বর মাস অর্থাৎ অনেক বেশি খরাও নয় অনেক বেশি ঠান্ডাও নয়। এ মৌসুমে আপনি বোরো ধানের বীজ রোপন করলে অনেক ভালো ফলন পাবেন। সঠিক সময়ে বীজ রোপন করলে এপ্রিল জুন মাসে আপনি এ ধান কাটতে পারবেন অর্থাৎ বৈশাখ মাস থেকে জৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত এই ধান কাটতে পারবেন।
বোরো ধানের আদর্শ বীজতলা তৈরি
বোরো ধানের বীজ রোপনের জন্য প্রথমে আমাদের অবশ্যই মাটি প্রস্তুত করে নিতে হবে অর্থাৎ আদর্শ বীজতলা তৈরি করে নিতে হবে। তা না হলে আপনি আশানরুপ ফলন কখনোই পাবেন না। বোরো ধানের আদর্শ বীজতলা তৈরি বেশ কিছু ধাপ বা বিষয়ে বিবেচনা করে বীজ তলা তৈরি করতে হবে। যেমন সঠিক মৌসুম/সময়, জায়গা, পানি, সার প্রয়োগ, মাটি তৈরি ইত্যাদি। চলুন জেনে নেই বীজতলা তৈরীর ধাপগুলো-
সঠিক মৌসুম নির্বাচনঃ বোরো ধানের বীজতলা তৈরীর পূর্বে অবশ্যই সঠিক মৌসুম নির্বাচন করতে হবে। বোরো ধানের বীজতলা তৈরির সর্বোত্তম সময় হচ্ছে আগস্ট মাস বা অগ্রহায়ণ মাস। যে মাসে অতিরিক্ত রোধে প্রকোপ থাকে না মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয় যা বোরো ধানের বীজ তলার জন্য উপযুক্ত সময়।
সঠিক জমি বা মাটি নির্বাচনঃ বোরো ধানের বীজতলা তৈরির জন্য উর্বর এটেল দোআঁশ মাটির নির্বাচন করতে হবে। এছাড়াও মাটিতে সেচ ব্যবস্থা যেন সহজ ও সুবিধাজনক স্থানে হয় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে এবং নালা তৈরীর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
সার প্রয়োগঃ বীজতলা হতে ভালো চারা পেতে হলে অবশ্যই মাটি তৈরীর সময় মাটিতে ভালো করে সার প্রয়োগ করতে হবে। ভালো বীজতলা তৈরীর জন্য শতাংশ জমিতে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম পটাশ, ২০০ গ্রাম টিএসপি ও ৪থেকে ৫ মণ পচা গোবর সমস্ত বীজতলায় ভালো করে মেশাতে হবে
সঠিকভাবে জমি তৈরিঃ জমি তৈরির জন্য প্রতি ৫০৫ বর্গ স্কয়ার জায়গার জন্য ২ থেকে ৩ কেজি পরিমাণে জৈব সার ভালো করে জমির সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে এবং পানি দিয়ে জমিকে থকথাকে কাদা তৈরি করতে হবে। এরপর জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে ১ মিটার চওড়া করে ভেজা বীজতলা তৈরি করতে হবে।
যে সকল এলাকায় অতিরিক্ত ঠান্ডা প্রভাব রয়েছে সে সকল এলাকায় বোরো ধানের বীজতলা তৈরির জন্য থকথাকে কাদা তৈরি করার প্রয়োজন নেই শুকনো জমিতে বীজতলা তৈরি করতে পারবেন।
নালা তৈরিঃ বীজতলার চারিপাশে ২৫ সেন্টিমিটার নালা এবং দুইটি বীজ তলার মাঝে ৬০ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হবে। নালা তৈরীর সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন নালার উচ্চতা বীজতলা হতে ৭ থেকে ১০ সেন্টিমিটার নিচে হয়।
বীজ জাগ দেওয়াঃ অঙ্গুরিত বীজ থেকে সঠিকভাবে বীজতলার চারা পাওয়ার জন্য যে তাপমাত্রা দরকার তা নিজে থেকেই তৈরি করা বা সৃষ্টি করাকে বীজ জাগ দেওয়া বলে। চারা তৈরির জন্য শুকনো বীজগুলোকে একদিন বা ২২ থেকে ২৩ ঘন্টা ভালো করে পানিতে ভিজিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ছায়ায় স্থানে রাখতে হবে। ছায়াস্থানে বীজ রাখার সময় বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।
শীতকালে অঙ্কুরোদন গুলোকে দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত জাগ দেওয়ার প্রয়োজন পরে। এরপর পাটের তৈরি বস্তার ভেতরে ঘর বা চট বিছিয়ে সামান্য আলো বাতাস প্রবেশ করে এমন স্থানে রাখতে হবে। এমন করে রাখলে উগ্রদ্বয়ের খোসা গুলো নরম হয় এবং বীজ থেকে ভালো চারা উৎপাদন হয়।
বীজ রোপনঃ বীজতলা সঠিকভাবে প্রস্তুত হয়ে আসলে বোরো ধানের অঙ্কুরিত বীজ গুলো কাদায় একটু চেপে রোপন করতে হবে যেন বীজগুলো কাদার সঙ্গে ভালো করে গেথে থাকে। তা না হলে অঙ্কুরিত বীজগুলো থেকে ভালো চারা পাওয়া যাবে না।
বোরো ধানের বীজতলার পরিচর্যা
বীজতলা হতে ভালো চারা পেতে হলে এবং ভালো চারা থেকে ভালো ধান পেতে হলে অবশ্যই বোরো ধানের বীজতলার পরিচর্যা করতে হবে। বোরো ধানের বীজতলা অগ্রহায়ণ মাসে তৈরি শুরু হয় এর জন্য এর বাড়তি পরিচর্যা প্রয়োজন। এ সময় কখনো অধিক শৈত্যপ্রবাহ হয় বীজ তলায় বিভিন্ন ধরনের রোগের সংক্রমণ দেখা দেয় কিভাবে তাই চলুন বোরো ধানের বিস্তার পরিচর্যা কিভাবে করবেন জেনে নি-
- বীজতলায় অনেক সময় সত্য শৈত্যপ্রবাহ কারণে বীজ তলার চারা গুলো হলদে ভাব বা শুকিয়ে যায় এর জন্য যখন শৈত্যপ্রবাহ।
- শৈত্যপ্রবাহের কারণে বীজ তলার চারা হলদে বর্ণ হলে প্রতি শতাংশ বীজ তলার চারা অনুসারে ২৮০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করবেন এরপরও যদি সমস্যা দূর না হয় তাহলে ৪০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করবেন।
- চলবে বীজতলা গুলো পলাথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে এবং শৈত্যপ্রবাহ কমলে পলিথিন তুলে ফেলতে হবে।
- শীতের কালে সময় সন্ধ্যা থেকে সকাল ভালো মতো পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
- বীজতলার চারাই কলসানো রোগ দেখা দিলে তা দূর করার জন্য ২ মিলিলিটার পাইরাক্লোস্টবিন বা অ্যাজোস্কিস্ট্রোবিন ১ লিটার পানিতে আমি সে ছত্রাক স্থানে বিকেলে স্প্রে করবেন
- বীজতলায় সব সময় তিন থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি ধরে রাখবেন।
- বীজ তলার জন্য যে পানি ব্যবহার করবেন তা অবশ্যই নলকূপের ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন এতে বীজতলা গুলো ভালো থাকে।
- বীজতলা থেকে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের চারা তুলে জমিতে রোপন করবেন। এর কম বয়সের চারা রোপণ করলে চারা মৃত্যুর হার বেড়ে যায়।
- প্রতিদিন বীজ তলার পানি পরিবর্তন করে নতুন পানি প্রদান করবেন।
- বীজতলায় যেন কোন প্রকার শিশির বা নিহর না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
- শীতে আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কখনোই বীজতলা হতে চারা তুলে জমিতে রোপণ করবেন না।
ধান রোপনের কত দিন পর সার দিতে হয়?
বীজতলা হতে চারা উৎপাদন করার পর জমিতে চারা রোপণ করে বিভিন্ন ধাপে সার প্রয়োগ করতে হয়।সার প্রয়োগ ঠিক মাত্রা এবং সঠিক দিনে বা সঠিক সময় না প্রদান করলেন আশানুরূপ ফসল পাওয়া সম্ভব হবে না। এজন্য আমাদের অবশ্যই ধান রোপনের কত দিন পর সার দিতে হয়? এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার দরকার চলুন এর সম্পর্কে জেনে নিই-
সার প্রয়োগ অবশ্যই প্রতি শতাংশ জমি অনুসারে প্রয়োগ করতে হবে
- বোরো ধান স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী চারা রোপনের পর থেকে তিন ভাগ ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় যেমন
- স্বল্পমেয়াদী জাতের বোরো ধানের চারার ক্ষেত্রে
- প্রথম কিস্তিতে চারা রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন পর ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়
- দ্বিতীয় কিস্তিতে ৩০ থেকে ৩৫ দিন
- তৃতীয় কিস্তি বা শেষে ধানে কাইচথোড় আসার ৫ থেকে ৭ দিন আগে প্রয়োগ করতে হবে
- দীর্ঘমেয়াদী জাতের বোরো ধানে চারার ক্ষেত্রে
- প্রথম কিস্তিতে চারা রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন পর ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়
- দ্বিতীয় কিস্তিতে ২০ থেকে ২৫ দিন
- তৃতীয় কিস্তি বা শেষে ধানে কাইচথোড় আসার ৫ থেকে ৭ দিন আগে প্রয়োগ করতে হবে।
- এছাড়াও জিপসাম টিএসপি দশটা ও এমওপি সার ইত্যাদি সারগুলো চাষাবাদের শেষ সময় অর্থাৎ কাইচথোড় আসার পর মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।
- টিএসপি ও দস্তা সার কখনো একসাথে মিশ্রিত করে মাটিতে প্রয়োগ করবেন না।
বোরো ধানে কি কি সার দিতে হয় কত মাত্রায়
ভালো ফলন পেতে হলে অবশ্যই বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন ধরনের সার প্রয়োগ করতে হয় চলুন জেনে নিয়ে বোরো ধানে কি কি সার দিতে হয় কত মাত্রায়-
বিঘা প্রতিসার প্রয়োগের মাত্রা নিম্নে দেয়া হলো-
- ইউরিয়া-৩৫ কেজি
- টিএসপি বা ডিএপি-১২ কেজি
- এমওপি-২০ কেজি
- জিপসাম বা গন্ধক-১৫ কেজি
- দস্তা বা মনোহাইড্রেট-১.৫ কেজি
দীর্ঘ মেয়াদী বোরো জাতের ধানের ক্ষেত্রে সার প্রয়োগের মাত্রা নিম্নে দেয়া হলো-
- ব্রিধান২৯
- ব্রিধান৫০
- ব্রিধান৫৮
- ব্রিধান৬৯
- ব্রিধান৮৯
এ সকল ধনের জন্য ইউরিয়া ৪০ কেজি, টিএসপি বা পিএসপি ১৩ কেজি, এমওপি ২২কেজি জিপসাম ১৫ কেজি দস্তা ১.৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে এছাড়াহাওর অঞ্চলের বোরো ধানের জাতের ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ সারের মাত্রা অনুসারে ইউরিয়া সার ২৭ কেজি, এমওপি ২২ কেজি প্রয়োগ করতে হবে
বোরো ধানে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
বোরো ধানের ফলন ভালো করার জন্য বিভিন্ন ধরনের বোরো ধানে সার প্রয়োগ পদ্ধতি রয়েছে তবে ইউরিয়া সার তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করা হয় প্রথম কে প্রথম কিস্তিতে চারা রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন দ্বিতীয় কিস্তিতে ৩০ থেকে ৩৫ এবং তৃতীয় কিস্তিতে ধানে কাইচথোড় আসার ৭ দিন আগে প্রদান করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
আপনি যদি দীর্ঘ মেয়াদী বোরো জাতের চারা রোপন করেন তাহলে আপনাকে ইউরিয়া সার প্রথম কিস্তি এবং দ্বিতীয় তে কিস্তির মধ্যে ২৫ দিন পর পর আসার পর প্রয়োগ করতে হবে এবং তৃতীয় কিস্তিতে বার শেষ কিস্তিতে ইউরিয়া সার ধানের গাছে কাইচথোড় ৫ থেকে ৭ দিন আগে প্রয়োগ করতে হবে
এছাড়াও আপনি বোরো ধান চাষে ভালো ফলন পেতে চাইলে জৈব সারের পাশাপাশি রাসায়নিক সার সমন্বিত করে প্রয়োগ করতে পারেন।
বোরো ধানের জন্য জমি প্রস্তুতির সময় জমিতে যখন অল্প পরিমাণে পানি থাকবে তখন ইউরিয়া সার মাটিতে ভালো করে মিশিয়ে মই দিয়ে সমতল করে নিতে হবে এ তো আপনি ভাল ফলাফল পাবেন।
বোরো ধানের ক্ষেতে মাটিতে জিংক সালফেট বা দস্তা ব্যবহার করলে অন্য যে কোন দুইটি ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবেন না।
উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের জাত
উচ্চ ফলন পেতে চাইলে অবশ্যই উজ্জলনশীল বোরো ধান নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য যেহেতু ভাত এজন্য ধান গবেষণা হতে অনেক উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ধান গবেষণা হতে ১০২ রকমের উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়।
১০২টি উচ্চ ফলনশীল এর মধ্যে
- ইনব্রিড- ৯৫ টি
- হাইব্রিড- ৭টি
হাইব্রিড ব্রিড এর মধ্যে
- বোরো মৌসুমের জন্য- ৪৩ টি
- পোনা ও রোপা আউল মৌসুমীর জন্য- ২৫ টি
- রোপা আমন মৌসুম- ৪৫ টি
- বোরো ও আউশ মৌসুমের জন্য- ১২টি
- রোপা আউশ ও রোপা, আমন, পোনা আমন মৌসুমের জন্য- ১টি
এমনি ছকের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধানের উচ্চ ফলনশীল জান গুলো দেয়া হলো-
বোরো ধানের আধুনিক চাষ পদ্ধতি
বাংলাদেশে মূলত হাওর এলাকায় তবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা হতে বিভিন্ন উন্নত জাত উদ্ভাবন করায় বর্তমানে সকল স্থানে এবং সকল জমিতে কিছু সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করে বোরো ধান চাষ করা হচ্ছে। বোরো ধানে চালের ভাত বেশি সাদও হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। যার ফলে কৃষকরা এর ফলন করে বেশ লাভবান হচ্ছে।
তবে ভালো ফসন পেতে হলে অবশ্যই আধুনিক কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে বোরো ধানের চাষ করতে হবে যেমন জমি সঠিক সময়ে সঠিক এবং এর সঠিক পরিচর্যা করার মাধ্যমে ভালো ফসল পাওয়া সম্ভব। চলুন জেনে বোরো ধানের আধুনিক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত-
জমে তৈরিঃ ভালো ফসল পেতে হলে অবশ্যই যে জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন করবেন তা ভালো করে ফসল ফলানোর উপযোগী গড়ে করতে হবে। বোরো ধানের জন্য এটেল দোআঁশ মাটিতে বীজতলা তৈরি করতে হবে এবং বীজতলা থেকে চারা উৎপন্ন করে যে জমিতে ধান তৈরি করবেন সে জমিটি অবশ্যই ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার গভীর করে মই দিয়ে মাটিকে থমথমে কাদা করতে হবে।
বোরো চাষের ব্যবহৃত জমিতে প্রথমবার চাষ করলে অন্তত সাত থেকে আট দিন জমিতে পানি আটকে রাখবেন এর ফলে জমিতে থাকা আবর্জনা বা আগাছা গুলো মরে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে।
সার প্রয়োগঃ বোরো ধানের ভালো ফসল পেতে হলে অবশ্যই জমিতে সঠিক মাত্রায় সঠিক পরিমাণে সার ও জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। আপনি যদি সঠিক মাত্রায় রাসায়নিক ও জৈব সার প্রয়োগ না করেন তাহলে আশানুরূপ ফসল কখনোই পাবেন না। এজন্য বোরো ধানে জন্য নির্ধারিত জমিতে বিভিন্ন ধরনের সার যেমন ইউরিয়া, টিএসপি বা ডিএপি , দস্তা ইত্যাদি সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপনঃ অঙ্কুরিত বীজতলা হতে চারা ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর বোরো ধান তৈরির জন্য তৈরি কৃত জমিতে সারিবদ্ধ ভাবে রোপন করতে হবে। চারা গুলো এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার রাখতে হবে এবং চারা থেকে চারা দূরত্ব ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার করে রোপন করতে হবে। কিভাবে চারা রোপণ করলে দ্রুত চারা বৃদ্ধি এবং ফসল বৃদ্ধির সহায়তা হয়।
উন্নত জাতের বোরো ধানে চারা হলে এ দূরত্ব কম বেশি করতে পারেন। চারা রোপনের পূর্বে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যেন তৈরি কৃত জমিটি বেশি শক্ত না হয় কারণ শক্ত জমিতে কারা চারা রোপন করার সময় চারা ভেঙে বা নষ্ট হওয়া সম্ভব না বেশি। এজন্য চারা রোপন করার পূর্বে জমিটি নরম করে নেবেন। এছাড়াও চারাগুলো মাটির বেশি গভীরে রোপন করবেন না এতে খুশি গজাতে সময় বেশি নেয়।
আরো পড়ুনঃ আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে মিল ও অমিল কোথায়
সম্পূর্ণ জমিতে চারা রোপন করা হয়ে আসলে একগুচ্ছ চারা জমি সাইডের রোপন করে রাখবেন। ১০ থেকে ১৫ দিন পর যখন কিছু চারা মারা যাবে তখন সে সকল চারা গুলো লাগিয়ে নেবেন এতে সকল চারা সমভাবে বেড়ে উঠবে এবং ফসলও ভালো হবে।
সেচ ব্যবস্থাঃ ভালো ফসল ও ফলন পেতে হলে ধানের চারায় ভালো সেচ ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে। তবে বোরো ধানের ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে পানির প্রয়োজন নেই। তবে কিছু কিছু সময় রয়েছে যখন বোরো ধানে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়। সেই সময়গুলোতে যেমন ধানে কাইচ থোড় সময় থেকে ফসল আসা পর্যন্ত সব সময় জমিতে পানি রাখতে হয়।
এমন ব্যবস্থা না রাখলে ধানের চারা সঠিক পরিমাণে রস বা পুষ্টি উপাদান পাবে না ফলে ফসল উৎপাদনে হার কমে যাবে। এছাড়াও বোরো ধানের চারায় যখন ধান আসবে তার ১০ থেকে ১৫ দিন আগে জমি থেকে পানি বের করে শুকিয়ে নিতে হবে। ফলে জমিতে থাকা অপদ্রব্য বা দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যাবে এবং ফসল জৈব পদার্থ থেকে সতেজ খাবার গ্রহণ করে ফলন বৃদ্ধি করবে।
বর্তমানে বোরো ধানের দাম কত ২০২৪
অন্যান্য দেশে তুলনায় বাংলাদেশে ধান উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় কারণ বাংলাদেশের মানুষ মাছের ভাতে বাঙালি। এটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিবছর প্রায় তিন কোটি ৬০লক্ষ টন চালের প্রয়োজনও হয়। বাংলাদেশের জনগণ বাড়ার সাথে সাথে ধান উৎপাদন বৃদ্ধি ক্রমশ বাড়ছে।
বি বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে কৃষি খাতে বিভিন্ন উন্নয়নের কারণে বর্তমানে কৃষকরা স্বাচ্ছন্দেজীবন যাপন করতে পারছে এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর কৃষকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রদানের মাধ্যমে ধান ক্রয় করে থাকে। বর্তমানে বোরো ধানের দাম কত ২০২৪ সালে বাজারে ১৫০০ থেকে ১৮০০ পর্যন্ত চলছে। তবে এর বাজার দাম কম বেশি হতে থাকে।
লেখক এর মন্তব্যঃ
রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আশা করি উপরোক্ত সম্পন্ন পোস্ট পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করে তাদেরকে বোরো ধান সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করুন। এমন আরো তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন, আসসালামু আলাইকুম/আদাব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url