ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা

আসসালামু আলাইকুম/আদাব, আজকের আলোচ্য বিষয় ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা, হাড্ডিসার গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি উপায় ইত্যাদি আরো ষাঁড় গরু সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন পোস্টে পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো।
ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টে পড়ে ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ সম্পর্কে আপনার যত প্রশ্ন ও সমস্যা রয়েছে তার অবশ্যই সঠিক সমাধান উত্তর পাবেন এবং সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ করে লাভবান হবেন।

ভূমিকা

বর্তমানে গরু মোটাতাজাকরণ বেশ লাভজনক ব্যবসা হয়ে উঠেছে। তবে সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে অনেকেই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এজন্যই আজ আমি আপনাদের জন্য ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি, তিন মাসে গরু মোটাতাজাকরণ, সঠিক গরু নির্বাচন পদ্ধতি, হাড্ডিসার গরুকে কিভাবে মোটাতাজা করবেন, গরু মোটাতাজা করনের ঔষধ,

গরুকে মোটাতাজা করতে কিভাবে গুড় খাওয়াবেন, গরু মোটাতাজাকরণের ভিটামিনের নাম, ওজন অনুসারে গরুর খাদ্য তালিকা, গরুর দানাদার খাদ্যের তালিকা ইত্যাদি ছাড়াও এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনা করেছি । আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে অনেক বেশি উপকৃত হবেন।

মোটাতাজা করার জন্য কেমন গরু নির্বাচন করা হয়?

বর্তমানে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আমিষের চাহিদা মেটানোর জন্য গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ অত্যন্ত জরুরী। তবে এর আগে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে মোটাতাজা করার জন্য কেমন গরু নির্বাচন করা হয়? আপনি যদি সঠিক গরু ক্রয় করতে পারেন তাহলে অবশ্যই অল্প সময়ের ভেতরে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে গরু মোটাতাজা করতে পারবেন। চলুন জেনে নিই গরু ক্রয়ের সময় কেমন গরু নির্বাচন করবেন-

হাট হতে বা এলাকা হতে গরুর শারীরিক অবস্থা দেখে যেমন গরু কিনবেন

  • গরু কেনার সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন গরুটির বয়স যেন ২৪ মাস থেকে উর্ধ্বে ৬০ মাসের মধ্যে হয়। কারণ এ সকল কারন এ সকল বয়সের গরুকে খুব সহজেই মোটাতাজা করুন করা যায়।
  • মোটাতাজাকরণ গরু নির্বাচনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে গরুটি খাওয়ার অভাবে শুকিয়ে গিয়েছে তবে কোন প্রকার অসুখে নয়।
  • গরুর গায়ের লোম গুলো ছোট এবং একে অপরের সাথে লাগানো বা মেলানো এমন যেন হয় লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • গরু মুখ আকার ছোট এবং পা গুলো লম্বা সাইজের হবে
  • মাথা প্রশস্ত, পা সোজা এবং হাড় গুলো মোটা
  • পুরো শরীর বর্গাকার, পিঠ প্রশস্ত বা চওড়া
  • গায়ের চামড়া টানলে ঢিলা অনুভূতি হয়।
  • দুধের বাটের তলা প্রশস্ত।
  • পিঠ ও মাজার প্রশস্ত।
  • কান বড় এবং মাথা ছোট।
  • সুস্থ গরু অনবরত জাবর কাটবে।
  • কান গরম আছে কিনা।
  • পায়ে ক্ষুরা রোগ আছে কিনা।
  • খাবার খাচ্ছে কিনা লক্ষ রাখতে হবে।
  • গায়ে কোন প্রকার ক্ষত আছে কিনা।
  • গায়ে চর্বি আছে কিনা।
  • খাওয়ার প্রতি রুচি অনেক বেশি।
  • অবশ্যই ভালো জাত নির্বাচন করবেন যেমন ব্রাহমা মেলোর ইন্দো ব্রাজিল।
  • গরুর স্বভাব কেমন অর্থাৎ গরুটি যদি বেশি উত্তেজিত, রাগান্বিত, লাফালাফি করে তাহলে সে জাতীয় গরু মোটাতাজাকরণ বেশ অসুবিধা হয় কারণে এ সকল গরু লাফালাফির কারণে ক্যালসিয়াম বেশি খরচ করে।
এলাকা বিবেচনায় গুরু নির্বাচন

গরু মোটাতাজাকরণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গরুকে সঠিক মাপে বা সঠিক মানের খাদ্য সরবরাহ করা তবে আপনি যদি গরু মোটাতাজা করার জন্য কোন এলাকা হতে গরু ক্রয় কিনতে চান তাহলে উক্ত এলাকার সম্পর্কে কিছু খোঁজ খবর বা ঘোরাফেরা করে তথ্য সংগ্রহ করবেন।

আশেপাশের ঘোরাফেরা করলে আপনি বুঝতে পারবেন গরুকে কি জাতীয় খাবার খাওয়ানো হয়েছে বেশি যেমন এলাকা গ্রাম্য হলে সবুজ জাতীয় ঘাস ও শস্য জাতীয় খাবার যেমন- গম, ভুট্টা, ডাল, খর ইত্যাদি। প্রথম অবস্থা হতে কোন গরুকে ভালো খাবার খাওয়ালে খুব সহজেই দ্রুত সময়ের ভেতরে গরুকে মোটাতাজাকরণ করা সম্ভব হয়।

আবাসন নির্বাচন

গ্রাম্য হতে বা এলাকা হতে গরু ক্রয় করলে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন গরুটাকে কেমন অবস্থায় বা কেমন আবাসনে রাখা হয়েছিল। গরুর রাখার আবাসন টি খারাপ হলে গরুটি অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে আর আবাসন ও গরুর সরঞ্জাম গুলো ভালো থাকলে গরুটি সুস্থ ও সফল হয়।

হাড্ডিসার গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি উপায়

আপনি যদি বাজার থেকে কম দামে হাড্ডিসার গরু কিনে আনেন এবং সেটি মোটাতাজা করতে চান তাহলে আপনাকে বিশেষ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। চলুন জেনে নিই হাড্ডিসার গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি উপায় গুলো কি-

  • বাজার থেকে গরুটি কিনে আনার পর অবশ্যই অন্যান্য গরু থেকে আলাদা রেখে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।
  • লিভারটি পরিষ্কার করে শক্তিশালী করার জন্য টনিক ঔষধ খাওয়াতে হবে।
  • বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও রুচি বাড়ানোর ঔষধ খাওয়াতে হবে।
  • ধীরে ধীরে গরুটিকে খাবার খাওয়ানোর পরিমাণ বাড়াতে হবে বিশেষ করে সবুজ ঘাস ও দানাদার খাবার।
  • গরুটি সুস্থ হলে বা খাওয়ার প্রতি রুচি বাড়লে মোটাতাজাকরণ ঔষধ খাওয়াতে পারেন যেমন-
  • আনুমানিকভাবে ৫০ কেজি ওজনের গরুর জন্য অ্যালমাক্স ভেট(Almax Vet) একটি ট্যাবলেট সকালে খালি পেটে খাওয়াতে পারেন এবং গরুর ওজন যদি ১০০ কেজির বেশি হয় তাহলে দুইটি করে ট্যাবলেট
  • খাওয়াতে পারেন।
  • ট্যাবলেট খাওয়ানোর তিনদিন পর ৫০ কেজি ওজনের গরুর জন্য inj. Nitronex vet ২.৫ মিলি গুড়ের চামড়ার নিচে ইনজেক্ট করবেন।
  • Syp. Xinc Care ও Syp. Heparin vet ৫০ কেজি ওজনের গরু জন্য ৫০ মিলি করে সিরাপ গুলো খাওয়ানো শুরু করবেন যেদিন ইনজেকশনটি দেওয়ার হবে এবং সিরাপ গুলো অন্তত পাঁচ দিন খাওয়াবেন।
  • গরুর শিরায় Cal-D-Mag স্যালাইন দেবেন সিরাপ গুলো খাওয়ানো শেষ হলে।
  • এগুলো সকল কিছু খাওয়ানো এবং দেওয়া হয়ে গেলে গরুকে এক সপ্তাহ পর পর ওজন অনুসারে অর্থাৎ ৫০ কেজি ওজন হলে ৫ মিলি করে মাংসপেশিতে Inj. Ranasol AD3E Vet ও Inj. Cataphos vet প্রয়োগ করবেন।

তিন মাসে ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি

ষাঁড় গরু দ্রুত সময়ের ভেতরে মোটা তাজা করে লাভবান হওয়া যায় অনেকেই এখন গরুকে হাল চাষ, প্রজনন, দুধ ও বাচ্চা ইত্যাদি না করে মোটাতাজাকরণ করছে। এটি একটি অল্প সময়ে অর্থাৎ ৯০ দিনের প্রকল্প।

পর্যাপ্ত পরিমাণ সুষম খাবার দেখাশোন ইত্যাদি কিছু সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করে খুব সহজেই লাভবান হওয়া যায় বিধায় অনেক বেকার যুবক কর্মসংস্থান এর মাধ্যমে খুঁজে পাচ্ছে। চলুন জেনেই তিন মাসে ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য-

গরু নির্বাচনঃ গরু মোটাতাজাকরণের জন্য অবশ্যই সঠিক গরু নির্বাচন করতে হবে কারণ এর উপর নির্ভর করে আপনি ভবিষ্যতে অল্প সময়ে লাভবান হতে পারবেন। সঠিক গরু নির্বাচন না করলে অর্থাৎ শুনে বিভিন্ন কিছু বিবেচনা না করে নির্বাচন করলে বড় ধরনের ক্ষতির ভিতরে পড়তে পারেন।

গরুটি যদি হাট হতে কিনেন তাহলে তার শারীরিক অবস্থা, ওজন, স্বভাব, জাত, বয়স, রোগ ইত্যাদি দেখে নিবেন। আর যদি এলাকা হতে কিনেন তাহলেও এলাকায় গরুটিকে কিভাবে রাখা হতো কোন প্রকার রোগ রয়েছে কিনা কি খাবার খাওয়ানো হতো ইত্যাদি বিষয়গুলো দেখে শুনে নেবেন।

সঠিক আবাসন প্রদানঃ গরু মোটাতাজাকরণের জন্য অবশ্যই গরুকে একটি ভালো আরামদায়ক শেড প্রদান করতে হবে। গরু মোটাতাজাকরণ করা হয় মূলত মাংস বৃদ্ধি করার জন্য। গরুর মাংস যত বেশি হবে তত পরিমাণে আপনি লাভবান হতে পারবেন ভাল এর জন্য গরুকে অবশ্যই ভালো বাসস্থান প্রদান করতে হবে।
বাসস্থান যদি স্যাঁতসেতে, ময়লা, নিচু হয় তাহলে দ্রুত গরু অসুস্থ হয়ে যাবে এবং অসুস্থ গরু মোটাতাজাকরণ করা বেশ কষ্টসাধ্য এবং লস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এজন্য অবশ্যই গরুকে সঠিক বাসস্থান যেমন উঁচু শুকনো খোলামেলা অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে সুরক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা মল-মূত্র যাওয়ার সঠিক পথ বা ব্যবস্থা গরু সেটে দৈর্ঘ্য কমপক্ষে ৫ ফুট দৈর্ঘ্য প্রস্থ ৮ ফুট এবং উচ্চতা যথেষ্ট পরিমাণে হতে হবে এছাড়াও অবশ্যই সেন্টার ছায়াযুক্ত স্থানে তৈরি করতে হবে।

সঠিক খাদ্য ও পুষ্টি প্রদানঃ গরু মোটাতাজাকরণ মানে মাংস বৃদ্ধি আর মাংস বৃদ্ধি মানে সঠিক খাদ্য ও পুষ্টি প্রদান করা। সঠিক খাদ্য ও পুষ্টি প্রদানের মাধ্যমে খুব সহজে দ্রুত সময়ের ভেতরে মাত্র ৯০ দিন অর্থাৎ তিন মাসেই আপনি লাভবান হতে পারবেন।

মোটাতাজাকরণ পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে আপনি গরুকে ভালো মানের শস্য যেমন ভুট্টা, গম ও ওট ঘড় বা সাইলেজ মিশ্রিত আদর্শ খাবার খাওয়াতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির ৯০ দিনের গরু মোটাতাজা করুন ফিড রয়েছে যেগুলোতে রয়েছে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান উচ্চ মানের ক্যালসিয়াম, চর্বির, আয়রন, ভিটামিন ইত্যাদি।

এগুলো যদি আপনি সঠিক মাত্র সঠিক পদ্ধতি সঠিক নিয়মে খাওয়াতে পারেন তাহলে গরুর সকল পুষ্টি উপাদান ও পুষ্টি ঘাটতি মিটিয়ে অল্প সময়ে গরু মোটাতাজা করনের মাধ্যমে মাংস বৃদ্ধি হবে এবং অল্প সময়ে অর্থাৎ 90 দিনে গরু বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন।

এছাড়াও গরুর খাদ্যের সাথে ইউরিয়া ও ছোলা গুড় মিশিয়ে দ্রুত সময়ের ভেতরে গরু মোটাতাজা করতে পারেন। যেমন খড় ও ভুট্টার সঙ্গে ইউরিয়া বা ছোলা গুড় মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।

ছাড়াও আপনি আরো বিভিন্ন পদ্ধতি থেকে অনুসরণ করে গরু মোটাতাজা করতে পারেন যেমন-

  • গরুর সামনে সব সময় যেকোনো খাদ্য রাখা।
  • গরুর পাত্র এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্র সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
  • গরুর দানাদার খাদ্য গুলো অবশ্যই আধা ভাঙ্গা অবস্থায় বা ভিজিয়ে প্রদান করা।
  • মাঝে মাঝে করে কেউ হাঁটাচলা করানো।
  • গরুকে বিরক্ত বা উত্তেজিত না করা।
  • বিভিন্ন পরজীবী থেকে সুরক্ষা প্রদান করা যেমন- মাছি, আঠালি ইত্যাদি।
  • গরমের সময় ফ্যান এবং ঠান্ডার সময় হিটার বা পোশাক পরিধান করানো।
  • সব সময় বিশুদ্ধ পানি প্রদান করা।
  • গোসল করানো এবং পরিষ্কার রাখা।
  • গরুকে সরিষার খৈল প্রদান করা।
  • ওজনের ওপর ভিত্তি করে ডায়েট চার্ট তৈরি করা।
  • নিয়মিত কাঁচা ঘাস খড় প্রদান করা।
  • ইউরিয়া যুক্ত খাবার প্রতিদিন খাওয়ানো।
  • বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ক্যালসিয়াম আয়রন প্রদান করা।
  • সবসময় চিকিৎসকের সাথে শরণাপন্ন থাকা।
  • পানির ব্যবস্থা সবসময় রাখা বিশেষ করে শুকনা জাত খাবার খাওয়ানোর সময়।
  • গুরুকে এমন কোন খাবার প্রদান করা যাবে না যাতে গরুর পেট ফাঁপা বা বদহজম হয়।
  • পানি, খর, ঘাস, দানাদার খাদ্য ইত্যাদির খাদ্যের অনুপাত সঠিক রাখা
  • নিয়মিত খাবারে চাটে যেন 5% থেকে 7% চর্বি জাতীয় খাদ্য থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা
খড় সাথে ইউরিয়া ও ছোলা গুড় মিশিয়ে যেভাবে খাবেন
  • প্রথমে গরুকে খাওয়ানোর খড় কুচিকুচি করে কেটে রাখবেন এবং একটি বালতিতে ২০ লিটার পরিমাণে পানিতে এক কেজি পরিমাণে ইউরিয়া ভাল করে মিশিয়ে রাখবেন। মেশানো ইউরিয়া ও ঘর একসাথে ভালো করে মিশ্রিত করে
  • এমন পাত্রে আবদ্ধ করতে হবে যেন কোন প্রকার বাতাস প্রবেশ না করতে পারে। এভাবে ১০ থেকে ১২ দিন রাখার পর খড়গুলো রোদে শুকিয়ে দৈনিক গরুকে ছোলা গুড় ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম মিশ্রিত করে তিন কেজি পরিমাণ করে খাওয়াবেন।
  • এভাবে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করেও খুব সহজে গরুকে মোটা তাজা করতে পারবেন।

ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধ নাম

আমরা অনেকে আছি যারা গরু দ্রুত মোটাতাজাকরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর হরমোনাল ঔষধ অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে। তবে এর ফলে গরুর বেশ ক্ষতি হয় অনেক সময় গরুর মারা যায়। তবে খুব সহজেই সুষম খাদ্য পাশাপাশি গরুর হজম ক্রিয়া উন্নত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও গরুর কোন প্রকার ক্ষতি প্রদান করে না এমন ঔষধ গুলি ঘনঘন প্রদান করতে পারেন। চলুন জেনে নেই ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধ নাম গুলো কি -

গরুকে বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন প্রদান করাঃ গরু মোটাতাজাকরণের জন্য বেশ কিছু ভ্যাকসিন সাত দিন পর পর দেয়ার প্রয়োজন হয়। এগুলো না দিলে গরুর বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন গলা ফোলা, ঘুরারোগ, বাদলা ও তকাল ইত্যাদি হতে পারে। এজন্য অবশ্যই ভ্যাকসিন গুলো দিয়ে নেবেন।

কৃমির বা পরজীবী থেকে মুক্তির ঔষধঃ বাংলাদেশের বেশিভাগ গর কৃমি বা পরজীবী তে আক্রান্ত হয়। এজন্য অবশ্যই গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় তিন থেকে চার মাস পর পর কৃমিনাশক ঔষধ খাবেন। কৃমিনাশক ঔষধ হিসেবে আপনি নাইট্রোজেন ১ সিসি ইনজেকশন প্রদান করতে পারেন।

গরুর হজম ক্রিয়া বৃদ্ধির ঔষধঃ মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় গরুর হজম ক্রিয়া বা হজম ক্ষমতা ভালো হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ গরুর পাচন ক্রিয়া যদি ভালো না হয় তাহলে গরু কম খাবার খাবে ফলে গরু মোটাতাজা করুন করা সম্ভব হবে না। এজন্য অবশ্যই প্রথমে গরু হাট বা বাজার থেকে কেনার পর হজম বৃদ্ধির ঔষধ প্রদান করতে হবে। যেমন-

  • ক্যাটাফস ও এসল ইঞ্জেকশন।
  • জাইমোভেট, হরপাচপ ও ডিজিমিক্স।
  • বায়োলাক্স, বায়োগ্রাড ও এসিলাক্স প্লাস।
লিভার টকিন ঔষধঃ গরুর শরীর সুস্থ ও মাংস বৃদ্ধি করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ঔষধ হচ্ছে লিভার টকিন। এটা গরুকে সুস্থ, হজম বৃদ্ধি এবং মাংস বিস্তার করতে সহায়তা করে। যেকোনো সময় আপনি গরুকে এই ঔষধ খাওয়াতে পারেন। নিম্নত ঔষধ গুলো খাওয়ালে খুব সহজে গরু মোটাতাজা করা সম্ভব হবে-

  • সুপারলিভ- ১ লিটার।
  • লেভাটন- ১০০ মিলি।
  • রেনালিভ- ১ লিটার।
  • হেপাএমাইল- ১০০ মিলি।
  • লিভা ভেট- ১০০ মিলি।
ক্যালসিয়াম জাতীয় ঔষধঃ গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় করা ক্যালসিয়াম অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ অতিরিক্ত ওজনে গরুর পায়ের হাড় ক্ষয় বা পা ভেঙে যেতে পারে। এজন্য গরুর শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরি হয় এমন খাদ্য বা ঔষধ প্রদান করতে হবে যেমন-

  • রিনাক্যাল পি- ১ লিটার ও ৫ লিটার।
  • ডিসিপি গোল্ড- ১ কেজি ও ৫ কেজি।
  • ক্যালভেট পি-১ লিটার।
  • সানক্যালভেট ওরাল- ১ লিটার ও ৫ লিটার।
  • ডিসিপি প্লাস- ১ কেজি ও ৫ কেজি।

গরু মোটাতাজাকরণ ভিটামিন এর নাম

গরু মোটাতাজা করুন করার জন্য ভিটামিন প্রদান করা অত্যন্ত জরুরী। গরু মোটাতাজাকরণ করার সময় যদি ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে গরু মাংস উৎপাদন ব্যাহত হবে আর মাংস উৎপাদন কম মানে গরুর ওজন হ্রাস হওয়া।
যা একটি গরু মোটাতাজা করণ প্রকল্পের জন্য বেশ লাভজনক বা খতির বিষয়। এজন্য আপনি গরু মোটাতাজাকরণের জন্য যে ভিটামিন গুলো প্রদান করবেন সেগুলা গরুকে খাওয়াতেও পারেন অথবা ইনজিশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে পারেন চলুন জেনে নিই গরু মোটাতাজাকরণ ভিটামিন এর নাম গুলো কি-

  • ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ইনজেকশন।
  • ভিটামিন "এ" ইঞ্জেকশন।
  • ভিটামিন "ই" ইঞ্জেকশন।
  • ভিটামিন মিনারেল।
  • এমাইনো এসিড সাপ্লিমেন্ট।
  • ডিবি ভিটামিন।
  • রেনাভেট ডিবি।
  • মেগাভেট ডিবি।
  • ক্যামফাসটনিক।
এ ভিটামিন গুলো অবশ্যই গরুকে খাওয়ানোর পূর্বে আপনার নিকটস্থ প্রাণী চিকিৎসক বা প্রাণীর অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ বা পরামর্শ অনুসারে খাওয়াবেন।।

গরু মোটাতাজাকরণে গুড় কিভাবে ব্যবহার করা হয়?

আপনি গরু মোটাতাজা করতে চান এবংগরু মোটাতাজাকরণে গুড় কিভাবে ব্যবহার করা হয়? এ সম্পর্কে জানতে চান। গরু মোটাতাজাকরণ ছোলা গুড় অত্যন্ত প্রয়োজন। আপনি বিভিন্ন নিয়মে ছোলা বোরকা হতে পারেন তবে ২০ লিটার পানিতে এক কেজি ইউরিয়া মিশ্রিত খড় ১০ থেকে ১২ দিন বায়ু মুক্ত অবস্থায় আবদ্ধ করে রেখে রোদে শুকনো করতে হবে। এরপরঅল্প ইউরিয়া মিশ্রিত খড় বিভিন্ন উপাদান ও ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ছোলা গুড়ের ভালো করে মিশিয়ে খাওয়াতে পার।।

ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা

ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি মানেই সঠিক খাদ্য প্রদান করা। এজন্যই আজ আমি আপনাদের মাঝে ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত নিম্নে আলোচনা করলাম-

ক্রমিক নং

 উপাদানের নাম

   খাবারের পরিমাণ

০১

গমের ভুষি

৫৫০ গ্রাম

  ০২

খেসারি ভুষি

২০০ গ্রাম

০৩

তিলের খই

১৫০ গ্রাম

০৪

মাছের গোড়া

৮০ গ্রাম

০৫

লবণ

০৬ গ্রাম

০৬

ঝিনুকের পাউডার

২৬ গ্রাম

০৭

শুষ্ক খাদ্য

৯০০ গ্রাম

০৮

মেটাবলিক শক্তি

১০.৭১ গ্রাম

০৯

আমিষ

২১০ গ্রাম

  

ক্রমিক নং

উপাদানের নাম

খাবারের পরিমাণ

০১

চাল ভাঙ্গা

২০০ গ্রাম

০২

শুষ্ক খাদ্য

৯০০ গ্রাম

০৩

  গমের ভুষি

৩০০ গ্রাম

০৪

ধানের ভুষি

২৩০ গ্রাম

০৫

সরিষার খৈল

১৯০ গ্রাম

০৬

মাছের গুড়া

৫০ গ্রাম

০৭

লবণ

০৬ গ্রাম

০৮

ঝিনুক পাউডার

২৫ গ্রাম

০৯

  মেটাবলিক শক্তি

১১.২৫ গ্রাম

১০

আমিষ

১৮৭ গ্রাম


বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান এজন্য এ সম্পর্কে একটি বিস্তারিত তালিকা নিম্নে দেয়া হলো-

ক্রমিক নং

উপাদানের নাম

খাবারের পরিমাণ

০১

গম ভাঙা

২০০ গ্রাম

০২

গমের ভুসি

১৩০ গ্রাম

০৩

ধানের ভুষি

২০০ গ্রাম

০৪

মসুর ভুসি

২৪০ গ্রাম

০৫

সরিষার খোল

১৫০ গ্রাম

০৬

মাছের গুঁড়া

৫০ গ্রাম

০৭

লবণ

০৫ গ্রাম

০৮

ঝিনুকের পাউডার

২৫ গ্রাম

০৯

শুষ্ক খাদ্য

৯০০ গ্রাম

১০

মেটাবলিক শক্তি

১১.০৪ গ্রাম

১১

আমিষ

১৮১ গ্রাম



ক্রমিক নং

উপাদানের নাম

খাবারের পরিমাণ

০১

চাল ভাঙ্গা

১০০ গ্রাম

০২

খেসারি ভাঙ্গা

১০০ গ্রাম

০৩

গমের ভুষি

১৫০ গ্রাম

০৪

ধানের ভুষি

৩৮০ গ্রাম

০৫

নারিকেলের খৈল

২০০ গ্রাম

০৬

মাছের গুঁড়া

৪০ গ্রাম

০৭

লবণ

০৬ গ্রাম

০৮

ঝিনুকের পাউডার

২৫ গ্রাম

০৯

শুষ্ক খাদ্য

৯০০ গ্রাম

১০

মেটাবলিক শক্তি

১১.৬ গ্রাম

১১

আমিষ

১৮৪ গ্রাম


ওজন অনুযায়ী গরুর খাদ্য তালিকা

ওজন অনুযায়ী গরুর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে নিম্নের বিস্তারিত তালিকার মাধ্যমে দেখানো হলো-

গরুর ওজন

দৈনিক দানাদার খাদ্য

ঘাস, সাইলেজ, খড় ও ইউএমএস

 খাদ্য প্রদান

৭৬-১০০ কেজি

১-২ কেজি

৩-৩.৬ কেজি

 




২-৩বার

১০১-১৫০ কেজি

২-৩ কেজি

.৪-৪.৬ কেজি

১৫১-২২৫ কেজি

৩-৪ কেজি

৫-৫.৬ কেজি

২২৬-৩০০ কেজি

৪-৫ কেজি

৭-৮ কেজি

৩০১-৩৭৫ কেজি

৫-৬ কেজি

১০-১০.৫ কেজি

৩৭৬-৪৫০ কেজি

৬-৭ কেজি

১২-১৩.৫ কেজি

৪৫১ কেজির ঊর্ধ্বে

৭-৮ কেজি

১৫-১৭ কেজি

লেখক এর মন্তব্য

রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আশা করি উপরোক্ত সম্পন্ন পোস্টে পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগবে অবশ্যই আপনারা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সাথে শেয়ার করে তাদেরকে ষাঁড় গরু কিভাবে মোটাতাজা করতে হবে এর পদ্ধতি সম্পর্কে জানিয়ে সহায়তা করুন। এমন আরও তথ্য জানতে আমাদের আর্টিকেলটি নিয়মিত ভিজিট করুন, আসসালামু আলাইকুম/আদাব ওজন অনুসারে গরুর মত খাদ্য তালিকা

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url