পৃথিবীর পুরাতন সপ্তম আশ্চর্যের নাম ও ছবি
আসসালামু আলাইকুম/আদাব, পৃথিবীর পুরাতন সপ্তম আশ্চর্যের নাম ও ছবি, পৃথিবীর নতুন
সপ্তম আশ্চর্য গুলো কি কি ইত্যাদি আরও সপ্তম এ আশ্চর্যকর নিদর্শন সম্পর্কে আলোচনা
করেছি। বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন পুষ্টি পড়ার অনুরোধ রইলো।
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে সপ্তম আশ্চর্যকর ভাস্কর্য ও নির্মাণ সম্পর্কে
আপনার যত প্রশ্ন ও সমস্যা রয়েছে তার অবশ্যই সঠিক সমাধান ও উত্তর পাবেন এবং সপ্তম
আশ্চর্যের সঠিক তথ্য জেনে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।
ভূমিকা
যুগ ও শতাব্দীর পরিবর্তনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানব কর্তিত যুদ্ধের মাধ্যমে সে
প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন আশ্চর্যকর নিদর্শন তৈরি হয়েছে এবং তার
অস্তিত্ব মিলিয়ে গিয়েছে। যার কারণেই কালের পরিবর্তে বিভিন্ন আশ্চর্যকর
নিদর্শনের তালিকার পরিবর্তন ঘটেছে। এজন্য আজ আমি আপনাদের মাঝে পৃথিবীর পুরাতন
সপ্তম আশ্চর্যের নাম ও ছবি
আরো পড়ুনঃ
ছবি সহ রাজশাহী মহানগরীর দর্শনীয় স্থান সমূহ
পৃথিবীর নতুন আশ্চর্য গুলোর নাম, কে এই আশ্চর্য নিদর্শন গুলো নির্ধারণ করে থাকে,
কিভাবে নির্বাচিত হয় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি সম্পূর্ণ
পোস্টটি পড়লে অনেক বেশি উপকৃত হবেন। এর জন্য সম্পূর্ন পোস্ট করার বিশেষ অনুরোধ
রইলো।
পৃথিবীর নতুন সপ্তম আশ্চর্য গুলো কি কি?
কালের পরিবর্তে ঝড়-ঝাপটা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলোচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে মিশরের
গ্রেড পিরামিড ব্যতীত কোন সপ্তম আশ্চর্যের অস্তিত্ব নেই। নতুন করে তালিকা
প্রণয়নের তাগিদ অনুভব করে উদ্যোগ নেয় নিউ সেভেন ওয়ার্ডস ফাউন্ডেশন। প্রায় ১০০
কোটি মানুষ ভোট দেয় এতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়ে ২০০৭ সালে নির্বাচিত হয়
সাতটি স্থান।
যা বর্তমান বা আধুনিক পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য নামে পরিচিত পরিচিত। তবে এদের কোন
ক্রমবিন্যাস প্রকাশ করেনি আয়োজক সংগঠন প্রত্যেকটির রয়েছে সমমর্যাদা। ২০০০ সালে
প্রায় ২০ টি মনুমেন্ট কে নিয়ে ভোট গ্রহণ শুরু হয় এবং ফলাফল জানানো হয় ৭ই
জুলাই ২০০৭ সালে। চলুন জেনে নেই পৃথিবীর নতুন সপ্তম আশ্চর্য গুলো কি কি?-
আধুনিক বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের নতুন তালিকায় স্থান পেয়েছে
- চীনের মহা প্রাচীর- চীন
- পেত্রা- জর্ডান
- দা রোমের কলোজিয়াম-ইতালি
- চিচেন ইত্জা- মেক্সিকো
- মাচু পিচু- পেরু
- ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার- ব্রাজিল
- তাজমহল- ভারত
চীনের মহাপ্রাচীর: এটি হলো বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাচীর। চীনের ঐতিহাসিক
উত্তরাঞ্চলে বর্ডারের চায়না রাজ্য এবং রাজত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য খ্রিস্টপূর্ব
পঞ্চম শতক থেকে খ্রিস্টীয় ১৬ শত পর্যন্ত চীনের এ প্রাচীর তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ
করা হয়। প্রথম সম্রাট কিং সে হুয়া এটি প্রথম ব্যবহার করেন এবং সাম্রাজ্যকে
রক্ষার জন্য দি করে তৈরি করেন।
এর গড় উচ্চতা প্রায় ১০ মিটার প্রশস্ত চার থেকে পাঁচ মিটার। প্রাচীর দৈর্ঘ্য
প্রায় পাঁচ কোটি কিলোমিটার। যার অনেক অংশই ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিবছর প্রায় ১০
মিলিয়ন পর্যটন চীনের প্রাচীর দেখতে আসে।
পেত্রা: প্রাচীন আরবের অনেকগুলো সাম্রাজ্যের মধ্যে অন্যতম ছিল নবাতাইন
রাজ্য। এই নবাতাইন রাজ্যেরই রাজধানী ছিল পেত্রা। এটি তৈরি হয়েছে গুহার মধ্য যা
কোথাও কোথাও মাত্র ১২ ফুট চওড়া। গুহার পাশেই রয়েছে কঠিন পাথরের দেওয়াল গায়ে
ব্যথিত। একটি অর্ধগোল আকৃতি নাট্যশালা যেখানে প্রায় তিন হাজার দশ একত্রে বসতে
পারে। বহু বছর অজানা থাকার পর এ প্রাচীন শহরটি পশ্চিমা বিশ্বের কাছে উন্মোচণা
করেন সুইচ পরিব্রাজক রোহান লুডিগা বুরখাদার ১৮১২ সালে।
দা রোমের কলোজিয়াম: রোম রাজ্যের কালজয়ী নিদর্শন কালেসিয়াম ইতালির রোম
শহরের অবস্থিত এটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। পঞ্চাশ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন
উপবৃত্তাকার ছাদবিহীন এই মঞ্চটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ৭০ থেকে ৭২ খ্রিস্টাব্দের
মধ্যবর্তী কোন এক সময়। এর দৈর্ঘ্য ১৯৬ মিটার এবং প্রস্থর ১৫৬ মিটার । বাইরের
দেওয়াল বাইরের দেয়ালের উচ্চতা ৪৮ মিটার।
আরো পড়ুনঃ ঢাকা থেকে চেন্নাই বিমান ভাড়া ২০২৪
গৃহযুদ্ধ এবং বিদ্রোহের ইহুদি রোমান যুদ্ধ সময় চারজন সৈন্যপক্ষ সম্রাট ঘোষণা করা
হয়। ভেস্পা শিানে বিজয় লাভ করে এবং ফ্লেভিয়ান রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করে। তার
পুত্র পরবর্তী সম্রাট তাহসানে রোমের বিখ্যাত কলোসিয়াম নির্মাণ করেন।
চিচেন ইত্জা: চিচেন ইত্জা প্রকৃতপক্ষে একটি পিরামিড। chi chaen এবং ltza
এটির উৎপত্তি মায়া শব্দ। chi অর্থ মুখ, chen অর্থ খুব এবং ltza এই অঞ্চলে
বসবাসরত ট্রাইবের নাম। সুতরাং মেক্সিকান শব্দ চিচেন এর অর্থ কুয়ার মুখ। এর জন্য
এর নাম হয় ইনছা কুড় মুখ। এই স্থপতি কবে বা কারা নির্মাণ করেছে তার সঠিকভাবে
জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় ১৪০০ বছর আগে ৬০০ সালে এটি নির্মাণ করা হয়েছে।
মাচু পিচু: মাচু পিচু পেরুর সবচাইতে আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। এটি
কোসকা থেকে সত্তর কিলোমিটার উত্তর পশ্চিম সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪০০ মিটার উচ্চতা
পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। ধারণ করা হয় ইনকা সভ্যতার প্রাচীন নিদর্শক মাচু
পিচুকে খ্রিস্টপূর্ব ১৪৪৮ সালের নিদর্শন বলে ধারণা করা হয়। মাছোপিছু কথার অর্থ
পুরনো পাহাড়। ১৯১১ সালের আগে পর্যন্ত এটি বিশ্ববাসীর কাছে অপরিচিত ছিল।
প্রত্নতত্ত্ববিদ Hram Bingharam দাও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন।
ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার: এটি ব্রাজিলীয় খ্রিস্ট ধর্মের একটি প্রতীক। এটি
তিজুকা ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্কে শহর থেকে আড়াল করে রাখা ২৩৪০ ফুট উচ্চতার
কর্কভাদো পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত পাহাড়ে চূড়ায় অবস্থিত। একজন ফরাসি ভাস্কর
পাল ল্যান্ডস্কি ১৯২২ এবং ১৯৩১ এর মধ্যে নির্মিত এটি করেছিলেন। এটি নির্মাণে
উদ্দেশ্য ছিল পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের প্রথম শতবার্ষিকী উদযাপন।
মৃত্তিকাটির স্তম্ভের ভিত্তি ৮ মিটার বা 26 ফুট, উচ্চতা ৩০ মিটার বা ৯৮ ফুট এবং
তা চুরার পাশে প্রস্তারিত এক একটি হাতের দৈর্ঘ্য ২৮ মিটার বা ৯২ ফুট। এটি তৈরিতে
প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়।
তাজমহল: ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি মুঘল সম্রাট শাহজাহান
তার স্ত্রী তার আরজুমান্দ রানু বেগম যিনি মমতাজ নামে পরিচিত তার স্মৃতির
উদ্দেশ্যে ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ কাজ শুরু করেন ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে শেষ হয় এর
কাজ। তাজমহল নির্মাণে খরচ হয় প্রায় ৩২০ মিলিয়ন রুপি তৎকালীন সময়ে। দিনের
বিভিন্ন সময় তাজমহল ভিন্ন রঙে দেখা যায়। তাজমহলের উচ্চতা 73 মিটার।
রহস্যময় পৃথিবীর বুকে মানব সৃষ্টির এই নির্মাণগুলো বর্তমান সমাজকে আশ্চর্য করে
তোলে এবং সেসময় কোন প্রযুক্তি ছাড়া নির্মাণ কাজ এত নিখুঁত এবং নিপুনের সৌন্দর্য
ও বৈচিত্রের সাথে নিদর্শনগুলো নির্মাণ করেছে সত্যিই আশ্চর্য করে চলেছে আমাদেরকে।
পৃথিবীর পুরাতন সপ্তম আশ্চর্যের নাম ও ছবি
পৃথিবীতে এমন কিছু আশ্চর্যকর ভাস্কর্য বা নির্মাণ কাজ রয়েছে যা আমাদের সকলকে
হতবা করে তোলে। এই ভাস্কর্য ও নির্মাণ কাজ সকলের কাছে তুলে ধরতেই প্রতিটি যুগেই
বিভিন্ন গবেষণা, নির্মাণের ইতিহাস, ঐতিহ্যের গুরুত্ব বিবেচনা করে আশ্চর্য কিছু
ভাস্কর্য নির্মাণ কাজ সকলের কাছে তুলে ধরা হয়। যার মধ্যে প্রাচীন যুগ ও
মধ্যযুগের এমন কিছু ভাস্কর্য বা আশ্চর্য নিদর্শন রয়েছে
আরো পড়ুনঃ চায়না থেকে আমদানি পণ্য তালিকা
যেগুলো সময়ের পরিবর্তনে পরিবর্তন হয়েছে এবং নতুন বা বর্তমান যুগে নতুন সপ্তম
আশ্চর্য ২০০৭ সালের ৭ই জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। তবে আপনি কি পৃথিবীর প্রাচীন ও
মধ্যযুগের সপ্তম আশ্চর্য গুলো কি ছিল তা সম্পর্কে জানেন। যদি পৃথিবীর পুরাতন সপ্তম আশ্চর্যের নাম ও ছবি গুলো দেখতে ও জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার অনুরোধ
রইল-
- গির্জার মহা পিরামিড/ খুফুর পিরামিড(Great Pyramid of Giza)- মিশরের এল গিজা
- বেরেলীনের শূন্য উদ্যান/ঝুলন্ত বাগান(Hanging Gardens of Babylon)- ইরাক
- আর্টেমিসের মন্দির/ডায়নার মন্দির(Temple of Artemis)- এফিয়াস শহর বর্তমান তুরস্ক
- অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি
- রোডস এর মূর্তি
- আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর(Lighthouse of Alexandria)- মিশর
- হ্যালিকারণেসাসের সমাধি মন্দির(Mausoleum of Halicarnassus)- তুরস্ক
গির্জার মহা পিরামিড/ খুফুর পিরামিড(Great Pyramid of Giza): গির্জার মহা
পিরামিড/ খুফুর পিরামিড মিশরের এল গিজা নামক স্থানে অবস্থিত। গির্জার গোরস্থানের
তিনটি পিরামিডের মধ্যে সবচাইতে পুরাতন খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০ হাজার বছর আগের এবং
সবচেয়ে বড় পিরামিড হচ্ছে এটি। পিরামিডের উচ্চতা ১৪০ মিটার বা ১৪০ ফুট এই
পিরামিডের তিনটি প্রধান প্রকোষ্ঠ রয়েছে এবং এর দৈর্ঘ্য ৪৭ মিটার এবং দৈর্ঘ্য ৮
মিটার।
এই পিরামিড টি প্রায় ৭৫৫ ফুট জমির উপরে তৈরি করা হয়েছে। পিরামিড টি
সম্পূর্ণভাবে তৈরি করা হয়েছে অনেক বড় বড় পাথর এর খন্ড দিয়ে। আনুমানিক ভাবে
ধরা হয় এই পিরামিড তৈরি করতে প্রায় এক লাখ শ্রমিক এবং সময় লেগেছিল প্রায় ২০
বছর। পিরামিডের উপর বিভিন্ন গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা এ পিরামিডের ভেতরে একটি বড়
শূন্যস্থানে সন্ধান পেয়েছে।
তবে এ পিরামিড কিভাবে তৈরি হয়েছে তার রহস্য এখনো ভেদ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা
করা হয় বিশাল বিশাল পাথরগুলো দূরদূরান্ত পাহাড় থেকে স্লেজ এর মাধ্যমে সরিয়ে
অনেক শ্রমিক ব্যবহার করে টেনে এনে একটি সাথে অন্যটি পাথর জোড়া দিয়ে তৈরি করা
হয়েছে।
বেরেলীনের শূন্য উদ্যান/ঝুলন্ত বাগান(Hanging Gardens of Babylon): ইরাকের
ব্যাবিলন শহরের ইউফ্রেটিস নদীর তীরে মেসোপটেমিয় সভ্যতায় খ্রিস্টপূর্ব ৬০৫ থেকে
৫৬২ অব্দে নির্মিত হয় এটি। এই নির্মাণ কাজ গড়ে তোলার পেছনে রয়েছে সম্রাট
নেবুচাদনেজারের প্রিয় তোমার প্রতি ভীষণ ভালোবাসা। তৎকালীন সময়ে তিনি ছিলেন
সেখানকার সম্রাট এবং তিনি নিনেভে দখল করেন মিডিয়ান সম্রাট এর সহযোগিতায়।
এরপর তিনি মিডিয়ান রাজকন্যা কে বিয়ে করেন। যেহেতু ব্যারিলন প্রদেশ ছিল একটি
সমতল ভূমি এবং মিডিয়াম ছিল পাহাড় পর্বতের দেশ। যার কারণে রাজকন্যা বেশ ব্যাকুল
হয়ে যায়। তা দেখে সম্রাট নেবুচাদনেজার রাজকন্যাকে খুশি করার জন্য এক বিশাল
পাহাড় তৈরি করে এবং সবচাইতে সুন্দর এবং চমৎকার একটি বাগান তৈরি করে পাহাড়টির
সঙ্গে।
আরো পড়ুনঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে কিভাবে লোন নেব
আর এ পাহাড়টি তৈরি করার জন্য এক বিশাল ভিড় তৈরি করা হয় যার আয়তন ছিল প্রায়
৮০০ বর্গফুট এবং পাহাড়টির উচ্চতা ছিল প্রায় ৮০ফুট। ধারণ করা হয় প্রায় চার
হাজার শ্রমিক অক্লান্ত পরিশ্রম এর মাধ্যমে পাহাড়ের উপরে এ বাগানটি তৈরি করা হয়।
শুধুমাত্র বাগানটি পরিচর্যা করার জন্য তৎকালীন সময়ে নিয়োজিত ছিল প্রায় ১০৫০
মালি।
সে বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চারার ওপর করা হয় ধারণা করা হয় প্রায় পাঁচ থেকে
ছয় হাজার রকমের ফুল সে উদ্যানে রোপন করা হয়েছিল এবং নদী থেকে মোটা দড়ির
মাধ্যমে সে উদ্যানে পানি দেওয়া হতো। কিন্তু ৫১৪ খ্রিস্টাব্দে পারস্য সম্রাট
সাইরাস জেরুজালেম যখন দখল করে তখন সম্পূর্ণভাবেই ব্যাবিলনের সাম্রাজ্য ধ্বংস হতে
থাকে।
আর্টেমিসের মন্দির/ডায়নার মন্দির(Temple of Artemis): খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০
অব্দে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল এফিয়াস অঞ্চলে বর্তমানে যা তুরস্ক।
মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছিল পুরোটাই মার্বেল পাথর দিয়ে এবং মন্দিরটির দৈর্ঘ্য ৩৭৭
ফুট এবং চড়াই ১৮০ ফুট এছাড়াও মন্দিরটি তে ১২৭ টি স্তম্ভ ছিল যার প্রত্যেকটি
স্তম্ভের উচ্চতা ৬০ ফুট।
একটি আশ্চর্য ও মজার বিষয় হলো মন্দিরটির সম্পূর্ণ দেওয়ার জুড়ে বসানো ছিল মনি
মুক্তা পান না রুপা ও হীরার মত অতি মূল্যবান ও নামি দামি রত্ন এবং প্রবেশপথের দুই
ধারে বসানো হয়েছিল ডায়মন্ডের মূর্তি। তবে মন্দিরটি এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৩৬৫
খ্রিস্টাব্দে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি: সবচেয়ে প্রাচীনতম স্থাপত্য গুলোর মধ্যে একটি
হল অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি। এই মূর্তিটি ফিডিয়াস নামক এক ভাস্কর্য দ্বারা
নির্মিত হয়েছিল। অলিম্পিয়ার জিউসের কে গ্রিক এর দেবদাসের রাজা, দেবতা ও
পুরুষদের জনক ধরা হতো এবং তাকে এ সম্বর্ধনা ও সম্মান জানানোর জন্যই এই মহৎ
মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছিল।
মূলত জিউসের সম্মাননা হিসেবে প্রতি চার বছর পরপর অলিম্পিক গেম অনুষ্ঠিত হয়। এ
মূর্তিটি যে দ্বীপে দ্বীপের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সে পুরো জুড়েই এর ভিত্তি
তৈরি করা হয়েছিল। প্রায় আড়াই বছর দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সাতজন
মিস্ত্রি এই মূর্তিটি তৈরি করেন। ভাস্কর্যটি দেবী অথেনা (গ্রিক পুরাণ) অনুরূপ
আকার দিয়ে মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছে।
মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছিল একটি কাঠের ফ্রেম দিয়ে এবং আবৃত করা হয়েছিল আইভরি ও
স্বর্ণ প্যানেল দিয়ে। প্রথমে মূর্তিটি প্রায় ৪২ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট ব্যাসার্ধের।
পঞ্চম শতাব্দীতে এক অগ্নি দ্বারা এটি ধ্বংস করা হয়।
রোডস এর মূর্তি: পৃথিবীর সপ্তম প্রাচীন আশ্চর্যের মধ্যে এটি একটি। এই
মূর্তিটি সূর্য দেবতা হিলিয়াসের মূর্তি যা মূলত দ্বীপের ওপর অবস্থিত বিধায় এর
নাম রোডস এর মূর্তিও বলা হয়। মূর্তিটি যে দ্বীপে রয়েছে তা মহাবীর আলেকজান্ডারের
রাজ্যের কিছু অংশ বিশেষ ছিল। রোডস দ্বীপে বসবাসকারীরা এই বিশাল মূর্তিটি
খ্রিস্টপূর্ব ২৮০ অব্দে নির্মাণ করে।
এ মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছিল যুদ্ধে ফেলে রাখা সরঞ্জামাদি তামা ও লোহা দিয়ে।
মূলত আলেকজান্ডার যখন মারা যায় তারপর তার সেনাপতি রোডস দ্বীপের দখল নিতে চাই।
রোডস বসবাসকারীরা ছিল সেনাপতি টলেমি সামর্থক অন্য আরেকজন সেনাপতি এই দ্বীপ দখলের
জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করে। যুদ্ধে টলেমির সনো দীপ্তিকে শত্রুমুক্ত করে এবং শত্রুরা এ
তামা ও লোহা ফেলে যায়।
আর এসকল সরঞ্জামাদি দিয়েই সেখানকার বাসিন্দারা সূর্য দেবতা হিলিয়াসের মূর্তি
স্থাপন করে। মূর্তিটির তৈরি করতে ২৫০ টন তামার ব্যবহার করা হয় এটি দুটি স্তরে
বিভক্ত করে তৈরি করা হয়েছিল একটি স্তরে পাথরের ভিত্তি ছিল যা ৪০ টন ওজনের এবং
উপরের স্তরটি ছিল মূল কাঠামো, মূর্তিটির উচ্চতা ছিল ১২০ ফুট। প্রলয় কারী
ভূমিকম্পে ২২৮ খ্রিস্টাব্দে এ মূর্তির এক পা ভেঙে যায় এবং ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্য
অবস্থায় দ্বীপ টি দখলকারী জাতি মূর্তিতে ধ্বংস করে দেয়।
আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর: তৃতীয় শতকের মিশরের বহু পরিচিত প্রাচীন সপ্তম
আশ্চর্যের মধ্যে একটি হল আলেকজান্ডার বাতিঘর। দিদির বার করেন আলেকজান্ডার এবং তার
নাম অনুসারেই এর নামকরণ করা হয় আলেকজান্ডার বাতিঘর। এই বাতিঘরটি মিশরে পিরামিডের
মতোই বিখ্যাত কিন্তু পিরামিড আজও টিকে আছে আর বাড়তি ঘরের অস্তিত্ব নেই।
আলেকজান্ডার মূলত এটি নির্মাণ করেছিল সমুদ্র বন্দরের অবস্থান চিহ্নিত করার জন্য
কিন্তু পরবর্তীতে এটি বাতিঘর হিসেবেই বেশি পরিচিত লাভ করে। অনেক দূর থেকে যেন
সমুদ্রের চলাচলকারী নাবিকরা পথ হারিয়ে অন্য কোথাও না যায় এবং কূলে খোজ সহজেই
পায় এর জন্যই এটি মূলত নির্মাণ করা হয়েছিল।
বাতিঘরটিতে ওঠার জন্য একটি প্যাঁচানো সিঁড়ি ছিল এবং সেটা বেয়েই ওপরে উঠে সেখানে
থাকা একজন ব্যক্তি বাতি জ্বালিয়ে দিত। এ বাতিঘরে সব সময় আলো জ্বলতো ফলে
সমুদ্রের চলাচলকারী নাবিকরা খুব সহজে জলা বাতি থেকেই বুঝতে পারতো কোথায় সমুদ্রের
কুল রয়েছে। এই বাতিঘরের ভিত্তি ভূমির আয়তন ছিল প্রায় ১১০ বর্গফুট এবং উচ্চতা
ছিল ৪৫০ ফুট।
বাতিঘরে জালানো আলো ৫০ মাইল দূর থেকেও দেখা যেত। আলেকজান্ডার বাতিঘরটি তিনবার
ভূমিকম্পের শিকার হয় ৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৩২৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তবে প্রলয়
ভূমিকম্পের ফলে ১৪ শতকে আলেকজান্ডার বাতিঘরটি ভেঙে যায়।
হ্যালিকারণেসাসের সমাধি মন্দির(Mausoleum of Halicarnassus): রাজা
মোসোলাসের মৃত্যুর পর তার শরণার্থী তার বোন রাণী আর্তেমিসিয়া খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০
অব্দে তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিম এ অবস্থিত কারিয়ারাজ্যে খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ শব্দে
এটি নির্মাণ করেন। রাণী আর্তেমিসিয়া তার স্ত্রী ছিলেন সে সময়ে নিজের বোনকে বিয়ে
করা সামাজিকভাবে বাধা নিষেধ ছিল না। বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় মন্দিরটি
সম্পূর্ণভাবেমার্বেল পাথর দিয়ে সেরা ভাস্কর্যকার দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।
মন্দিরটি তিনটি স্তরে তৈরি করা হয়েছিল প্রথম স্তরে বিশাল এক ভিত্তি নির্মাণ করা
হয় দ্বিতীয় স্তরে ৬৫ ফুট উচ্চতার ৩৮ টি থাম এবং তৃতীয় ছিল সুদূর আকাশে উঠে
যাওয়া ৫০ ফুট বিশাল এক পিরামিড আকারের গম্বুজ। আলেকজান্ডার তুরস্ক আক্রমণের সময়
এই মন্দিরটি ধ্বংস করে দেয়।
মধ্যযুগের সপ্তম আশ্চর্য নিদর্শন গুলো হল
- তাজমহল- ভারত
- আলেকজান্দ্রিয়ার ভূগর্ভস্থ সমাধি
- চীনের প্রাচীর- চীন
- ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জ
- রোমের কলোসিয়াম
- নানকিনের চিনামাটির মিনার
- সেন্ট সোফিয়ার মসজিদ
পৃথিবীর কোন আশ্চর্য ভারতে দেখা যায়?
পৃথিবীর কোন আশ্চর্য ভারতে দেখা যায়? চলুন জেনে নিন। ভারতে এমন একটি আশ্চর্যকর রাজকীয় নিদর্শন রয়েছে যা সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে একটি
সেটি হল তাজমহল। তাজমহল ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রায় অবস্থিত। অপরূপ সুন্দর এই
তাজমহল মূলত তৈরি করেন মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী স্মৃতির উদ্দেশ্যে। তিনি
এতটাই সুন্দর ভাবে এ তাজমহল তৈরি করেছিলেন যে এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায়
২১ বছর
অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ১৬৩২ থেকে শুরু হয়ে কাজ সম্পন্ন হয়েছিল ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে।
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তাজমহলকে ১৮৫৩ সালে তালিকাভুক্ত করেন।
বিশ্বজুড়ে এর কারুকার্য ও মনমুগ্ধকর সৌন্দর্যের শ্রেষ্ঠত্ব অনেক বেশি
প্রশংসনীয়। কি তাজমহল মূলত শান্তি, ভালোবাসা ও সৌন্দর্যের এক প্রতীক।
পৃথিবীর 10 টি আশ্চর্য জিনিস
পৃথিবীর 10 টি আশ্চর্য জিনিস এর নাম ও চিত্র নিম্নে দেয়া হলো-
রোমান স্নানাগার
পিসার হেলানো টাওয়ার
কলোসিয়াম
চিচেন ইতজা
হাজিয়া সোফিয়া
মাসুপিসু
পেত্রা
চিনের প্রাচির
পৃথিবীর দুটি প্রাচীন আশ্চর্য কোন দেশে ছিল?
বিশ্ব পৃথিবী জুড়ে যে সপ্তম আশ্চর্যকর নিদর্শন বা ভাস্কর্য রয়েছে তা বিভিন্ন
দেশে অবস্থিত। এমন কিছু আশ্চর্যকর প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে যা একটি দেশে দুইটি করে
রয়েছে। এখন আপনার মনে হয় তো প্রশ্ন জাগছে পৃথিবীর দুটি প্রাচীন আশ্চর্য কোন দেশে ছিল? দুইটি করে আশ্চর্য কর নিদর্শন রয়েছে এমন বিভিন্ন দোষ রয়েছে যার মধ্যে
মিশরে রয়েছে দুইটি পিরামিড ও আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর,
তুরস্কের রয়েছে দুইটি আর্টেমিসের মন্দির/ডায়নার মন্দির ও হ্যালিকারণেসাসের
সমাধি মন্দির, গ্রিসে রয়েছে দুইটি অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি ও রোডস এর মূর্তি।
এ সকল আশ্চর্য নিদর্শন বা ভাস্কর্যের মধ্যে শুধুমাত্র মিশরের পিরামিড এর অস্তিত্ব
রয়েছে বাকি সবগুলো যুগের পর যুগ এর অস্তিত্ব নষ্ট হয়ে গিয়েছে বা ধ্বংস হয়ে
গেছে।
পৃথিবীতে নতুন নতুন আশ্চর্য সৃষ্টি হয় কেন?
পৃথিবীতে এমন কিছু আশ্চর্যকর নিদর্শন বা ভাস্কর্য ছিল যা আমরা অনেকেই জানিনা।
বিভিন্ন গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে পৃথিবীর বুক থেকে প্রাচীন নতুন আশ্চর্যকর
ভাস্কর্য পানি দর্শনের খোঁজ পাওয়া যায়। পৃথিবীতে নতুন নতুন আশ্চর্য সৃষ্টি হয়
কেন? এর প্রশ্নের বিভিন্ন ভাবে উত্তর দেওয়া যায়। প্রথমত প্রাচীনকালের সভ্যতা
কেমন ছিল এবং কিভাবে তারা কোন প্রকার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার না করে বিশাল
বিশাল এবং বেশ টেকনোলজি পূর্ণ নিদর্শন তৈরি করেছে।
যার অপরূপ এবং আশ্চর্যকর উদাহরণ হচ্ছে মিশরের পিরামিড। এটি কিভাবে তৈরি করা
হয়েছিল এবং এতে ব্যবহৃত এত বিশাল বিশাল পাথরগুলো কোথা থেকে কিভাবে এত বেশি
উঁচুতে কোন প্রকার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার না করে তোলা হয়েছিল তা এখনো
অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে অন্যান্য আশ্চর্যকর নিদর্শন বা সৃষ্টির
মধ্যে এখনো টিকে রয়েছে মিশরের পিরামিড। এমন আরো আশ্চর্যকর নিদর্শন রয়েছে যা
এখনো আমাদের অনেকের চোখে পড়েনি।
তবে বর্তমানেও এমন কিছু নিদর্শন বা আশ্চর্যকর ভাস্কর্য তৈরি করছে যা মনোমুগ্ধকর।
যার মধ্যে অন্যতম হলো ভারতের আগ্রার তাজমহল। যা হয়তো বা অনেক অনেক অনেক শতাব্দীর
মানুষের কাছে আশ্চর্যকর এক নিদর্শন হয়ে উঠবে। এর জন্যই হয়তোবা পৃথিবীতে নতুন
নতুন আশ্চর্য সৃষ্টি হয় তাছাড়া নতুন আশ্চর্য সৃষ্টির ফলে মানুষের ব্রেনের
ক্ষমতা ও সেই শতাব্দীর মানুষের চিন্তা ভাবনা বোঝা যায়।
আমরা যে আশ্চর্য কর ভাস্কর্য বা নির্মাণাদি দেখতে পায় তা মূলত কোন একটি সংস্থা
অনেকগুলো মানুষের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। আপনি যদি জানতে চান আধুনিক
বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য কে নির্বাচিত করেন? আধুনিক বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য নির্বাচন
করেছেন সুইজারল্যান্ড সংস্থা নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন। ২০০ টি স্থাপনা
তালিকা থেকে ২০০৭ সালে ৭ই জানুয়ারি এই সংস্থাটি ১০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের ভোট
ভোট গ্রহণের মাধ্যমে সপ্তম আশ্চর্য নির্বাচন করা হয় এবং এবং প্রকাশ করা হয়
বিশ্বের নতুন সাতটি আশ্চর্যকর নিদর্শন এর নাম।
লেখক এর মন্তব্য
রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনাকে বিশ্বের প্রাচীন মধ্যম ও বর্তমান
আশ্চর্যকর নিদর্শন সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আশা করি উপরুক্ত
সম্পন্ন পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে
অবশ্যই আপনার আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করে তাদেরকে আশ্চর্যকর
এই নিদর্শন সম্পর্কে জানিয়ে সহায়তা করবেন। এমন আরও তথ্য জানতে আমাদের
ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন, শেয়ার করুন, সাবস্ক্রাইব করুন ও ফলো করে রাখুন।
আসসালামু আলাইকুম/আদাব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url