কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আসসালামু আলাইকুম/আদাব, কাঁচা ছোলা থেকে ভালো কিছু পেতে চাইলে অবশ্যই কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, ছোলা তাড়াতাড়ি সিদ্ধ করার উপায় ইত্যাদি ছাড়াও কাঁচা ছোলা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা অত্যন্ত জরুরী নিম্নে আমি উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে কাঁচা ছোলা সম্পর্কে আপনার যত প্রশ্ন ও সমস্যা রয়েছে তার অবশ্যই সঠিক সমাধান ও উত্তর পাবেন এবং সঠিক নিয়মে কাঁচা ছোলা খেয়ে অনেক বেশি উপকৃত হবেন।

ভূমিকা

ছোলা উচ্চ প্রোটিন, ফাইবার, আইরন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি ছাড়াও আরো বিভিন্ন পুষ্টিগুণের অধিকারী হওয়ায় আমরা অনেকেই এর সাথে পরিচিত এবং অনেকেই আমরা এটি খেয়ে থাকি। যদিও আমরা ছোলার উপকারিতা ও গুন সম্পর্কে জানি কিন্তু এটি খাওয়ার নিয়ম, কিভাবে ভেজাতে হবে কত সময় ধরে ভেজাতে হবে,
কি পরিমাণে খেতে হবে, কাঁচা, ভাজা কিংবা সেদ্ধ কোনটি খেলে বেশি উপকৃত হবেন, কিভাবে অতি দ্রুত ছোলা সিদ্ধ করবেন এবং অঙ্কুরিত ছোলা কি ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়তে হবে। কারণ সম্পূর্ণ পোস্টটিতে আমি কাঁচা ছোলা সম্পর্কে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি যা যা আপনি পড়ে অনেক বেশি উপকৃত হবেন।

কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ছোলার গুণাগুণ কারো অজানা নয় এতে ভিটামিন ফাইবার ও প্রোটিন রয়েছে এবং এতে ফ্যাটের পরিমাণ ক্ষতি কম ফলে ওজন ঝরাতে সহায়তা করে। এছাড়াও কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে কাঁচা ছোলা। শুধু তাই নয় এর পাশাপাশি হার্ট সুস্থ রাখতে ও এটি বেশ কার্যকরী। কাঁচা ছোলার স্বাস্থ্য গুণ সম্পর্কে জানতে চাইলে নিম্নে বিস্তারিত দেয়া হলো কাঁচা ছোলার খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-

কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
ভেজানো কাঁচা ছোলা রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফাইবার। যা আমাদের হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং শরীরে শর্করার শোষণ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই প্রতিদিন ভেজানো ছোলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে। এগুলো ছাড়া আরো কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে চলুন জেনে নিই কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত-

চুল সুস্থ রাখতে: স্বাস্থ্য উজ্জ্বল চুল পেতে চাইলে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখুন ভেজানো কাঁচা ছোলা। এতে রয়েছে ভিটামিন 'এ', 'বি৬', 'বি৯', জিংক, ম্যাঙ্গানিজ আর এ সকল উপাদানই চুলকে ভালো রাখতে সহায়তা করে।

অস্থির ভাব দূর: সামান্য ঘটনাতেই মন অস্থির হয়ে যায় এমন সমস্যা আমাদের অনেকেরই রয়েছে। এ সমস্যা দূর করতে চাইলে ভেজানো কাঁচা ছোলা খেতে পারেন। কারণ কাঁচা ছোলার সরকার একলা সেমিক ইন্ডেক্সের পরিমাণ অত্যন্ত কম থাকা শরীরে প্রবেশের সাথে সাথে মন অস্থির ভাবটি দূর হয়।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে: এতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়ামের মত খনিজ। যা আমাদের শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্র কমায়। ফলে আমাদের হার্ট সুস্থ থাকে।

রক্তে চর্বি কমায়: ১০০ গ্রাম ছোলায় ফ্যাট রয়েছে মাত্র ৫%। আর এই সামান্য পরিমাণ ফ্যাট আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কারণ ছোলাই যে ফ্যাট রয়েছে তার বেশি ভাগই পলি আনস্যাচুয়েটেড আর এই ফ্যাট আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ক্ষতি নয় বরং এটি আমাদের রক্তের চর্বি কমায়।

হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক রাখতে: ছোলা যেহেতু আয়নার সমৃদ্ধ একটি খাবার শৈলী হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি মিটিয়ে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক রাখতে নিয়মিত ভেজানো কাঁচা ছোলা খেতে পারেন। যে এছাড়াও যারা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন তাদের জন্য ভেজানো কাঁচা ছোলা বেশ উপকারী।

স্বাস্থ্যবান করতে: আমিষ ও প্রোটিন জাতীয় খাদ্য আমাদের শরীরকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান করে তোলে। এছাড়াও আমি জাতীয় খাদ্য আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। অল্প সময়ে স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী শরীর গড়ে তুলতে কাঁচা ছোলা ভেজানো খেতে পারেন এছাড়াও আপনি ছোলা দিয়ে ছাতু তৈরি করে খেতে পারেন।

বার্ধক্য রোধ: ম্যাঙ্গানিজে ত্বক হতে বার্ধক্য বা বয়সে চাপ দূর করতে সহায়তা করে। নিয়মিত কাঁচা ছোলা ভেজানো খেলে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়বে না এবং ত্বক টানটান ও উজ্জ্বল থাকবে।

রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: ছোলাতে কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার রয়েছে যার ফলে এটি লোগ্লাসমিক খাবারের মধ্যে পড়ে। আর লোগ্লাসমিক শ্রমিক খাবারগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। কারণ লোগ্লাসমিক খাবার গুলো ধীরে ধীরে পাচন হয় যার কারণে রক্তের সুগারের মাত্রা এবং চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

হৃদপিন্ডের রোগ কমাতে: কাঁচা ছোলায় ফাইবার ও প্রোটিন থাকায় উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে এনে
খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমা এবং ভালো কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়ায় ফলে হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকে এবং হৃৎপিণ্ড অনেক রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ: ছোলাতে ফাইবারের মাত্রা অত্যন্ত বেশি আর এই ফাইবার আমাদের কার্বোহাইড্রেটকে রেগুলেট করার সাথে সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ রোধ করে এবং পাচন ক্রিয়াকে ভালো করে কাজ করতে সহায়তা করে।

কারণ যে কোন ব্যক্তির কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে খাবারের সঠিক মাত্রায় ফাইবার না থাকা। যেহেতু ছোলা ফাইবার সমৃদ্ধ একটি খাবারের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে নিয়মিত খাদ্য তালিকা বা আপনার ডায়েট চাটে কাঁচা ভেজানো ছোলা খেতে পারেন।

হাড় শক্ত করে: হাড় শক্ত ও মজবুত রাখতে আমাদের শরীরে প্রয়োজন ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও আয়রন যা বিদ্যমান রয়েছে। ফলে আপনি যদি আপনার খাদ্য তালিকায় কাঁচা ছোলা নিয়মিত রাখেন তাহলে আপনার হাড় শক্ত, মজবুত এবং পেশি শক্তিশালী হবে।

খাদ্যনালী ভালো রাখে: বিশেষজ্ঞদের মতে ছোলা যখন খাওয়া হয় সেটি পেটে গিয়ে বিউটারেট নামক ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে। আর এই ফ্যাটি এসির মানুষের শরীর থেকে বিভিন্ন জীবাণু, মৃতপ্রায় কোষ ও রোগাক্রান্ত ধ্বংস করতে সহায়তা করে এবং সুস্থ কোষ গুলোকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে। এভাবেই কাঁচা ছোলা আমাদের খাদ্যনালী ও ক্যান্সার হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়।

কফ সারাতে: শ্বাসনালী থেকে পুরনো কফ দূর করে ডায়াটারি ফাইবার যা আঁশ জাতীয় খাবারের বিদ্যমান রয়েছে আর ছোলা হচ্ছে একটি আঁশ জাতীয় খাবার। আর পাতলা ডায়াটারি ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। জমে থাকা পুরনো কফ বা কাশি ভালো করতে চাইলে ছোলা ও ছোলা শাক খেতে পারেন।

ওজন কমাতে: আপনি যদি ওজন কমাতে চান এবং আপনার ডায়েট চার্ট সম পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ খাদ্য খেতে চান তাহলে আপনি ভেজানো কাঁচা ছোলা সঙ্গে বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে তৈরি করে খেতে পারেন। যেমন আপনি কাঁচা ছোলার সঙ্গে, ধনেপাতা, টমেটো, পুদিনা পাতা, অলিভ অয়েল, শসা, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ ইত্যাদি মিশিয়ে খেলে আপনার ওজন কমে যাবে।

যেহেতু ছোলাকে সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিনের উৎস ধরা হয় এজন্য যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কোলেস্টেরল, কনস্ট্রিপেসন, হাত-পা জ্বালা করা, কৃমিনাশক, যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে, গর্ভবতী মহিলা ও মেরুদন্ডের ব্যথা রয়েছে তারা তাদের খাদ্য তালিকায় বা খাদ্য চাটে নিয়মিত ভেজানো কাঁচা ছোলা রাখতে পারেন।

কাঁচা ছোলা খাওয়ার অপকারিতা
কোন কিছুর ভালো পেতে হলে অবশ্যই জানতে হবে সেটির খারাপ দিক রয়েছে কিনা এবং সেটি কিভাবে খেলে উপকারিতার চেয়ে অপকারিতা বেশি হবে তা জানাও অত্যন্ত জরুরি এবং এটি কত পরিমাণে খেতে হবে তাও জানতে হবে তা না হলে এর উপকারিতা চেয়ে অপকারিতা বেশি হবে। এজন্যই ছোলা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই কাঁচা ছোলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো চলুন জেনে নিন-

কৌটাই রাখা ছোলা: বর্তমানে বিভিন্ন খাবারের মত কৌটায় ছোলা পাওয়া যাচ্ছে। কটাই ছোলা ভালো রাখার জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক প্রিজারভেটিভ আমাদের শরীরের জন্য তেমন কোনো ক্ষতি সাধন করে না খাবারটি যে কৌটায় রাখা হয় সেই কৌটা হতে ধাতু খাবারের সঙ্গে মিশে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করে।

অনেক সময় অনেকদিন ধরে খাবার সংরক্ষণ করে রাখলে কৌটুটি মরিচা ধরে এই মরিচা খাবারে মিশে খাবার বিষাক্ত করে তোলে। এমন ছোলা ক্রয় হতে সতর্ক ও সাবধান থাকবেন কারণ এটা অনেক সময় মারাত্মক হতে পারে।

ওজন বৃদ্ধি: ছোলা ওজন নিয়ন্ত্রণে আনে কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে তেল মশলা দিয়ে ছোলা রান্না করলে ওজন বৃদ্ধি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারেকাঁচা ছোলা খাওয়ার অপকারিতা।

বদহজম: ভেজানো কাঁচা ছোলা রান্না ও সিদ্ধ করা তুলনায় পুষ্টিগুণায়ন বেশি থাকে। কিন্তু একটু হজম হতে একটু বেশি সময় লাগে। কারণ কাঁচা ছোলার ভেতরে থাকা ফাইবার কে ভাঙতে পাচনতন্ত্রের বেশ বেগ পেতে হয়। এর জন্য আপনি যদি কাঁচা ছোলা খেতে চান তাহলে ভালো করে চিবিয়ে এবং প্রথম অবস্থায় অল্প পরিমানে খান।

হঠাৎ করে অতিরিক্ত পরিমাণে ভেজানো কাঁচা ছোলা খেলে বদহজম পাকিস্তানের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর জন্য হঠাৎ কাঁচা ছোলা খাওয়া শুরু করলে অবশ্যই প্রথমে অল্প করে খাওয়া শুরু করবেন।

ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি: বিভিন্ন ডক্টর ইউরিক অ্যাসিড যে সকল ব্যক্তির রয়েছে তাদেরকে ছোলা খেতে নিষেধ করে। কারণ ছোলা ইউরিক এসিড ও শরীরে কিটেনিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

বৃদ্ধ, গর্ভাবস্থায় ও শিশুদের জন্য অঙ্কুরিত ছোলা নিষেধ: ছোলা কে অঙ্কুরিত করে খেলে এর গুণ কয়েকগুণ বেড়ে যায় কারণ অঙ্করিত ছোলার মধ্যে এনজাইম, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ফাইবারের মাত্রা অনেক বেশি মাত্রায় বেড়ে থাকে ভেজানো ছোলা তুলনায়। ছোলা কিন্তু সম্পূর্ণভাবে প্রোটিন সমৃদ্ধ নয় কারণ এতে মিথুইন নামক অ্যামিনো এসিড মিশ্রিত থাকে

কিন্তু ছোলা অঙ্কুরিত হবার পর এতে অ্যামিনো এসিডের পরিমাণও সম্পূর্ণ হয়ে যায় ফলে অঙ্কুরিত ছোলা সম্পূর্ণভাবে প্রোটিন সমৃদ্ধ ফুটে পরিণত হয়।আপনি বলতে পারেন এত গুণের পরেও কেন বৃদ্ধ, গর্ভাবস্থা ও শিশুদের জন্য অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়া নিষেধ।
আসলে অঙ্কুরিত ছোলা অনেকক্ষণ পর্যন্ত পানিতে ভেজানোর ফলে এতে এমন এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া জন্মায় এ সকল বয়সের এবং গর্ভবস্থায় ক্ষতিসাধন করতে পারে। কারণ এমন অবস্থায় এ সকল ব্যক্তিবর্গের এমনটি পাওয়ার অনেক কম থাকে ফলে ব্যাকটেরিয়া গুলো ধ্বংস করতে পারে না। তবে সেদ্ধ কিংবা রান্না করা ছোলা নির্দ্বিধায় খেতে পারেন।

খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

ছোলার উপকারিতা ও গুণ সম্পর্কে আমরা কম বেশি অনেকেই সামান্য হলেও জানি। কারণ ছোলা উচ্চ প্রোটিন, ফাইবার, মিনারেল, ভিটামিন, ট্রিপটোফেন, ম্যাঙ্গানিজ, মলিবডেনাম ও আইরন সমৃদ্ধ একটি খাবার এবং ফ্যাটের পরিমাণ খুবই সামান্য।

এজন্য আমরা অনেকেই ওজন কমাতে এবং এ সকল পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি সহজে মেটানোর জন্য এই খাবারটি খেয়ে থাকি। তবে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খেলে কেমন উপকার বা অপকার পাওয়া যায় তা সম্পর্কে যদি জানতে চান তাহলে পুষ্টিবিদরা খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কি বলেছে চলুন জেনে নিই-

ত্বকের যত্নে: রুক্ষ-শুষ্ক, প্রাণহীন মুখের জেল্লা বাড়াতে কিংবা উজ্জ্বলতা বাড়াতে চাইলে নিয়মিত খালি পেটে বিভিন্ন পোস্টে উপাদানের ভর্তি কাঁচা ছোলা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে সকালে খেতে পারেন। কাঁচা ছোলায় থাকা জিংক পুষ্টি উপাদান আমাদের ত্বকে সতেজ, মসৃণ, ব্রণ মুক্ত ও কোমল করে তোলে।

ত্বকের বলিরেখা দূর: কাঁচা ছোলা রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের মুখের বলিরেখা বা বার্ধক্য রোধ করতে কিংবা ফাইভ লাইন, ব্রণ কমাতে বেশ সহায়তা করে। এই সকল সমস্যার সমাধান করতে চাইলে নিয়মিত কাঁচা ছোলা খেতে পারেন।

পেশি মজবুত: উচ্চ প্রোটিন, পটাশিয়াম, বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ, সহজপাচ্য ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেট এর ভরপুর কাঁচা ছোলা নিয়মিত খালি পেটে খেলে দেহের বেশি মজবুত ও পেশির জোর বৃদ্ধি পায়। এর জন্য আপনি নিয়মিত শরীরচর্চা কিংবা কসরত করার পর পেশির শক্ত, মজবুত ও পেশির জোর বৃদ্ধিতে ছোলা খেতে পারেন।

হাড় শক্ত করতে: হাড় সুস্থ ও শক্তিশালী করতে আমাদের শরীরের প্রয়োজন আঁশ জাতীয় খাবার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও আইরন যা ছোলাতে ভরপুর রয়েছে এর জন্য হাড় মজবুত ও শক্ত করতে নিয়মিত ছোলা খেতে পারেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ: কর্মব্যস্ততা কারণে আমরা অনেকেই আছি যারা পানি পানি কম খায়। ফলে আমাদের শরীরের আদ্রতা কমে যায়, শরীর শক্ত হয়ে যায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যা দেখা দেয়। যেহেতু ছোলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে সহজপাচ্য ফাইবার যা আমাদের খাবার দ্রুত হজম ও পরিপাক করতে সহায়তা করে। আপনার এমন অবস্থা হলে নিয়মিত খালি পেটে কাঁচা ছোলা খেতে পারেন।

হজমে সহায়তা: হজম প্রক্রিয়া সহজ ও হজম জনিত বিভিন্ন সমস্যার খুব সহজেই দূর করতে পারে আঁশ জাতীয় খাদ্য। মূলত আমাদের শরীরে বদহজম, গ্যাস্ট্রিক, পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা ইত্যাদি হজম জনিত বিভিন্ন সমস্যা আঁশ জাতীয় খাদ্যের অভাবে হয়ে থাকে।

তবে আমাদের হাতের কাছে এমন একটি খাদ্য রয়েছে যা ভোজ্য আঁশে ভরপুর সেটা হলো কাঁচা ছোলা। আমাদের শরীরে আঁশ জাতীয় খাদ্যের অভাব পূরণ করে বদহজম জনিত বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে নিয়মিত ছোলা খেতে পারেন।

ওজন কমাতে: কাঁচা ছোলায় রয়েছে উচ্চ প্রোটিন, সহজপাচ্য ফাইবার, অতি কম মাত্রায় ক্যালরি এবং দীর্ঘক্ষন পেট ভরে রাখা কিংবা কম ক্ষুধা খুদা লাগার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম রয়েছে। যেহেতু এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম রয়েছে ফলে আমাদের কম ক্ষুধা লাগে এবং শরীরে সকল পুষ্টি প্রদানের ঘাটতি মিটিয়ে দেয় ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ঋতুস্রাবের কষ্ট: আমরা মেয়েরা অনেকে আছে যারা ঋতুস্রাবের সময় প্রচুর পরিমাণে কষ্ট ভোগ করে থাকি। এমন সময় মেয়েদের শরীর বেশ দুর্বল হয়ে যায় ফলে আয়রন, প্রোটিনের ঘাটি দেখা দেয়। এই ঘাটতি দূর করতে নিয়মিত কাঁচা ছোলা খেতে পারি। তবে আপনি ইচ্ছা করলে কাঁচা ছোলার সঙ্গে গুড় খেতে পারেন। গুড় আমাদের শরীরে বেশ প্রয়োজনীয় পুষ্টকরণের ঘাটতি মেটাবে এবং শরীরে শক্তি যোগাবে।

সকালে খালি পেটে ছোলা খাওয়ার নিয়ম

ছোলা সঙ্গে আমরা অনেকেই হয়তো পরিচিত কারণ এর পুষ্টি উপাদান, গুনগুন ও উপকারিতা এতটাই বেশি। পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ট্রিপটোফে, মলিবডেনাম, ম্যাঙ্গানিজ, প্রোটিন সহ আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেমন তেমনি এরশাদ ও অনেক বেশি।

কেউ এটা ভেজে খেতে পছন্দ করেন, কেউ বা সেদ্ধ করে, কেউ বা রান্না করে আবার কেউ কাঁচা ভিজে খেতে পছন্দ করে। তবে আজ আমি আপনাদের মাঝে সকালে খালি পেটে ছোলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব চলুন জেনে-

রাত্রে পানিতে ভিজিয়ে: এক মুঠ পরিমানে ছোলা ভালো করে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে এক গ্লাস পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন সারারাতের জন্য। সকালে উঠে ভেজানো ছোলা খালি পেটে খাবেন। ভাজা কিংবা শুদ্ধ অথবা রান্না করা ছোলার চাইতে ভেজানো কাঁচা ছোড়াতে বেশি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান ও গুনাগুন অক্ষুণ্য থাকে।
নিয়মিত এভাবে কাচা ছোলা সকালে খালি পেটে খেলে সারাদিনের কর্মের ক্লান্তি অনুভূত হবে না এবং সব সময় শরীর এনার্জি পূর্ণ থাকবে। কারণ ছোলাতে প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার রয়েছে এবং খুবই সামান্য পরিমাণে প্রতি এক কাপ ছোলায় ২৬৯ ক্যালোরি রয়েছে।

কাঁচা ছোলার সালাত তৈরি করে: রাতে ভেজানো কাঁচা ছোলার সঙ্গে সামান্য পরিমাণে অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল, সামান্য পরিমাণ লেবুর রস, গোলমরিচের গুড়ো ও সামান্য পরিমাণে লবণ মিশিয়ে সালাদ তৈরি করে সকালের নাস্তা হিসেবে খেতে পারেন। এই নাস্তা আপনাকে সারা সারাদিন কর্ম করার এনার্জি এবং শরীর ক্লান্ত হতে দেবে না।

ছোলা ও কাঁচা আদা: কাঁচা ছোলা যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি খুব সহজে মেটাতে পারে অপরদিকে আদা যা আমাদের শরীরে আমিষ, এন্টিবায়োটিক, শরীর হতে টক্সিন বের করা ইত্যাদি ছাড়ো আরও বিভিন্ন ধরনের মানুষের শরীরে উপকার প্রদান করে থাকে।

এ দুইটি উপকরণের কম্বিনেশন আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করবে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এছাড়াও নিয়মিত রাতে ভেজানোর ছোলা সকালে ও আদা একসঙ্গে খেলে কৃমিনাশকের কাজ করে।

অঙ্গুরিত ছোলা: সকালে খালি পেটে অঙ্কুরিত ছোলা খেতে পারেন। অঙ্কুরিত ছোলা বলতে সেই ছোলা কে বোঝায় যে ছোলা থেকে সামান্য পরিমাণে গাছ বের হয়। এমন ছোলাতে ভিটামিন বি এর সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় এছাড়াও প্রোটিনের কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায় এমন ছোলাই এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বৃদ্ধি করে। এছাড়াও অঙ্কিত ঝোলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে বিধায় হজম শক্তি বৃদ্ধি ও পাকস্থলী সক্রিয় করে।

পানিসহ কাঁচা ছোলা খাওয়া: যখন আপনি যখন ছোলা ভালো করে ধুয়ে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন তখন কাঁচা ছোলা থাকা পুষ্টি উপাদানের গুনাগুন কিছুটা পানির সঙ্গে মিশে যায় কারণ এটা সারারাত ভেজানো থাকে।

এর জন্য ছোলার সঙ্গে সঙ্গে এর পানিটাও বেশ উপকারী হয়ে ওঠে। এর জন্য অবশ্যই সকালে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার সঙ্গে ভেজানো পানি ও খাবেন ফলে কাঁচা ছোলার সকল পুষ্টি উপাদান আপনার শরীরে প্রবেশ করবে।

কাঁচা ছোলা ও বাদাম: কাঁচা ছোলা ও বাদাম দুটি আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। কারণ দুটি উপাদানই উচ্চ ফাইবার, ভিটামিন, আয়রন, ফ্যাট ও প্রোটিন ইত্যাদি উচ্চ মাত্রায় সমৃদ্ধ রয়েছে। রাতে ভেজানো কাঁচা ছোলা ও বাদাম সকালে উঠে খেলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার পাবেন যেমন-চুল মসৃণ, সিল্কি, নরম, চুল ওঠা বন্ধ,

চুলের সকল ধরনের পুষ্টির ঘাটতি মেটাবে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে, রুক্ষতা সুস্থতা দূর করবে, হাড় মজবুত, পেশি মজবুত ইত্যাদি ছাড়াও আরো বিভিন্ন উপকার পাবেন আপনার শরীরে। তবে কাঁচা ছোলা ও বাদাম দুটোতে যেহেতু ফ্যাট রয়েছে এজন্য অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।

ছোলা ও ভিনেগার: রাতে কাঁচা ভেজানো ছোলা ও সামান্য পরিমাণে ভিনেগার মিশিয়ে আপনি খেতে পারেন এতেও আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান হবে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বৃদ্ধি পাবে।

ছোলা ও গুড়: ছোলা ও গুড় দুটোই আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পুষ্টি উপাদানের ভরপুর খাদ্য। ছোলা উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি অন্যদিকে গুড় আমাদের আমাদের শরীরে শর্করার ঘাটতি মেয়েটাই। শর্করা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে মুক্ত দেয় এছাড়াও ভেজানো ছোলার সঙ্গে গুড় এর কম্বিনেশন আমাদের শরীরে আরো বিভিন্ন ধরনের রোগের সমাধান করে।

কাঁচা ছোলা খেলে কি মোটা হওয়া যায়

লা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপকারী একটি খাবার। আর সেটি যদি হয় কাঁচা তাহলে তার গুনাগুন আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ১০০ গ্রাম ছোলাই আমিষ রয়েছে ১৮ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৬৫ গ্রাম, ফ্যাট মাত্র ৫ গ্রাম, ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ভিটামিন 'এ' ১৯২ মাইক্রগ্রাম এবং প্রচুর পরিমাণে বি ১ ও বি ২ রয়েছে।

এছাড়াও ছোলাই বিভিন্ন ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, খনিজ লবণ, ফলিক এসিড, কার্বোহাইডেট, ফসফরাস এবং উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হচ্ছে ছোলা। এই ছোলা আমরা কাঁচা সেদ্ধ কিংবা তরকারি ভেতরে দিয়েও খেতে পারি। তবে কাঁচা ছোলা খেলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব দূর হয়। কাঁচা ছোলা সকালে ভিজিয়ে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন। চলুন জেনে কাঁচা ছোলা খেলে কি মোটা হওয়া যায়-
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম ছোলাই ফ্যাটের পরিমাণ খুবই সামান্য পরিমাণ রয়েছে অর্থাৎ ১০০ গ্রাম চুলায় ফ্যাটের পরিমাণ মাত্র পাঁচ গ্রাম। অস্ট্রেলিয়ান গবেষকরা জানিয়েছেন যে কোন খাবারে ছোলা যুক্ত করলে টোটাল কোলেস্টরেল এবং খারাপ কোলেস্টরেল এর পরিমাণ কমে যায়। দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় দুই ধরনের খাদ্য আঁস রয়েছে হৃদ রোগের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে দেয়।

ছোলার ফ্যাট বা তেলের বেশিরভাগ পলি আন সিচুয়েটেড ফ্যাট যা শরীরের জন্য মোটেও ক্ষতি নয় বরং তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবে আপনি যদি তেলে ছোলা রান্না করেন তাহলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে কারণ তেলে অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্যাট থাকে যার কারণে আপনার ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।

সিদ্ধ ছোলা খেলে কি মোটা হওয়া যায়

ছোলার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি এবং কাঁচা ছোলা খাওয়াটা কতটা উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই সামান্য হলেও অবগত রয়েছি। তবে অনেকে আছে যারা ভেজানো কাঁচা ছোলা খেতে পারেন না। তারা অনেকেই ভেজানো কাঁচা ছোলা না খেয়ে সেদ্ধ ছোলা খেতে চান। কাঁচা ভেজানো ছোলায় সবচেয়ে বেশি উপকারিতা ও পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় তবে সেদ্ধ কিংবা রান্না করা অথবা ভাজা ছোলায় সামান্য হলেও পুষ্টি উপাদান কমে যায়।

অনেকেই জানতে চান সিদ্ধ ছোলা খেলে কি মোটা হওয়া যায়। এর প্রশ্নের উত্তর হল 'না'। সেদ্ধ করা ছোলা আমাদের পেটে অনেকক্ষণ পর্যন্ত থাকে বিধায় ক্ষুধা কম লাগে এবং বাইরের ভাজাপোড়া কিংবা অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে আমরা বিরত থাকি। যার ফলে আমাদের শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল গুলো কমতে থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।

তবে অনেকক্ষণ ক্ষুধা না লাগার কারণে আমাদের শরীরের যে প্রোটিন কিংবা শরীর দুর্বল হয়ে যাবে তেমন কোন কিছু নয়। ছোলাতে রয়েছে উচ্চ প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম আয়রন ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের শরীরের সকল পুষ্টি উপাদানের ঘাট দিয়ে শরীরকে সুস্থ সবল ও সকল প্রকার রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। তবে আপনি যদি ছোলা খেয়ে মোটা হতে চান তাহলে ছোলা তেল ও মসলা দিয়ে রান্না করতে পারেন।

এতে তেল ও মসলায় থাকা ফ্যাট আপনাকে মোটা হওয়াতে সহায়তা করবে এবং ছোলা শরীরের অন্যান্য পুষ্ট উপাদানের ঘাটতি মেটাবে। আমরা যারা মুসলমান রয়েছি তারা রমজানের সময় মুড়ি কিংবা বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে ছোলা সিদ্ধ করে কিংবা রান্না করে খেয়ে থাকি। কারণ সারাদিন না খেয়ে থাকার পর ছোলা খেলে আমাদের শরীরে এনার্জি কিংবা শক্তি ফিরে আসে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে তেল কিংবা মসলা ব্যবহার করে রান্না করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ছোলা কত ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়?

রমজানের সময় ইফতারি কিংবা সেহরি, ব্যায়াম বা জিম থেকে আসার পর এছাড়াও সকালের নাস্তা পুষ্টিকর করতে এবং শরীর সুস্থ সবল ও বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমরা অনেকেই ছোলা খেয়ে থাকি। কখনো বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে রান্না করে কখনো ভেজে আবার কখনো সারা রাত ভিজিয়ে সকালে কাঁচা ছোলা খেয়ে।

তবে আমরা সকলেই জানি কাঁচা ছোলা অন্যান্য যে কোন ভাবে ছোলা খাওয়ার চাইতে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে আমরা কি জানি ছোলা কত ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়? হয়তো আমরা অনেকেই তা জানি না। কাঁচা ছোলা আপনি যদি খেতে চান তাহলে রাত্রে ভালো করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন এবং তিন থেকে চার কাপ অথবা এক থেকে দুই গ্লাস পানিতে ভালো করে ভিজিয়ে রাখবেন কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা রাখবেন
এছাড়াও আপনি ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অথবা সারারাত ভিজিয়ে সকালে ফ্রেশ হয়ে ছোলার পানি সহ ছোলা খেতে পারেন। তবে আপনি যদি রোজার সময় ইফতারের জন্য ছোলা রান্না করতে চান তাহলে সেহরি খাওয়ার পরে ভিজিয়ে রাখতে পারেন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত। কারণ ছোলা না ফুলে উঠলে রান্না করা যায় না। তবে আপনি যদি সেহরির সময় ভেজাতে ভুলে যান তাহলে ফুটন্ত গরম পানিতে ছোলা ৫ থেকে ১০ মিনিটের ঢাকনা বন্ধ পাত্রে রেখে দিন।

এরপর একটি পেশার কুকারে গরম পানি ও ছোলা সহ তিন থেকে চারটি সিটি হওয়া পর্যন্ত চুলায় রেখে দিন। প্রেসার কুকারের সকল বাষ্প বের হয়ে যাওয়ার পর খুলে দেখবেন সকল ছোলা গুলো সিদ্ধ হয়ে গিয়েছে মাত্র কয়েক মিনিটে।

ছোলা সিদ্ধ করতে কত সময় লাগে?

যারা গৃহিনী রয়েছে তাদের কাছে ছোলা সিদ্ধ করতে কত সময় লাগে? এমন প্রশ্ন করলে দ্রুত সময়ের ভেতরে তারা তার উত্তর দিয়ে দেবে। কিন্তু যারা নতুন সংসার করছেন তারা অনেকেই জানবেন না ছোলা সেদ্ধ করতে কত সময় লাগে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও মহামারির কারণে মানুষ অনেক বেশি স্বাস্থ্যের প্রতি সতর্ক ও নজর দিচ্ছে। যার কারণে ছোলার উপকারিতা জেনে অনেকেই ছোলা খাওয়া হয়তো শুরু করেছেন। এছাড়াও মুসলমানদের সবচেয়ে ফজিলত পূর্ণ মাস রমজানে।

এ মাস দূরে সকল মুসল্লিরা বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে কিংবা শুধুমাত্র ছোলা রান্না করে খান। তবে অনেকেই জানেন না ছোলা সিদ্ধ করতে কত সময় লাগে। ছোলা মূলত প্রথমে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হয় এবং তারপর প্রেসারে ৩ থেকে ৪টি সেটি দিলে ছোলা সেদ্ধ হয়ে যায়। তবে আপনি যদি ছোলা সাত থেকে আট ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে সময় না পান তাহলে গরম পানিতে ১০ থেকে ১২ মিনিট ছোলা ভিজিয়ে ঢাকনা বদ্ধ পাত্রে রেখে দিন এবং প্রেসারে তিন থেকে চারটি সিটি দিয়ে প্রেসারের সকল বাষ্প বের না হওয়া পর্যন্ত রেখে দিন দেখবেন ছোলা সেদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

ছোলা তাড়াতাড়ি সিদ্ধ করার উপায়

রমজান হোক কিংবা মেহমানদের মেহমানদারী অথবা বিকালের নাস্তা আমরা অনেকে আছি যারা ছোলা রান্না বেশ পছন্দ করি। আমরা অনেকেই জানি ছোলা ছয় থেকে সাত ঘন্টা না ভিজিয়ে রাখলে সেদ্ধ হতে চাই না। আবার ভিজিয়ে রাখার পরেও অনেক সময় খোলা সেদ্ধ হতে চায় না। আপনি যদি খুব সহজে এবং দ্রুত সময়ের ছোলা সারারাত ভিজিয়ে অথবা না ভিজিয়ে সেদ্ধ করতে চান। তাহলে নিম্নে ছোলা তাড়াতাড়ি সিদ্ধ করার উপায় গুলো জেনে নিন-

বেকিং পাউডার: সারারাত ছোলা পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন। একটি পাত্র চুলাতে বসিয়ে পানি ফুটিয়ে নিন। পানি ফুটে আসলে পানিতে বুট গুলো দিয়ে দিন। কিছুক্ষণের মধ্যে পানি ফুটতে শুরু করলে এর ভিতরে এক টেবিল চামচ বেকিং পাউডার মিশিয়ে দিন। বেকিং সোডা দ্রুত সময়ের ভেতরে বুর সেদ্ধ করতে সহায়তা করে।

প্রেসার কুকারে সেদ্ধ: সারারাত ভেজানো ছোলাকে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেবেন। চুলায় প্রেসার কুকার বসিয়ে গরম করে নিন এবং ছোলা থেকে এক ইঞ্চি ওপর পর্যন্ত পানি এবং এক চামচ লবণ দিয়ে তিন থেকে চারটি সিটি দিয়ে নিন। দেখবেন ১০ থেকে ১৫ মিনিটের ভেতরে ছোলা সিদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

গরম পানিতে ভিজিয়ে সেদ্ধ: একটি পাত্রে চার কাপ গরম পানিতে এক কাপ ছোলা দিয়ে পাত্রটি ১৫ থেকে ২০ মিনিট ঢেকে রাখুন। এরপর একটি পেছনে দুই থেকে তিনটি সেটি দিয়ে নিন দেখবেন ৩০ মিনিটের ভেতরেই আপনার ছোলা সেদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

ভাজা ছোলা খেলে কি ওজন বাড়ে

সেদ্ধ কিংবা কাঁচা ছোলা খেলে ওজন কমে আমরা অনেকেই জানি। কারণ এতে রয়েছে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার উচ্চ ফাইবার ও প্রোটিন এবং অতি অল্প পরিমাণে ক্যালরি। যা আমাদের অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগতে দেয় না এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ভাজা ছোলা খেলে কি ওজন বাড়ে এমন প্রশ্ন হয়তো আমাদের মনে অনেকেরই রয়েছে।

কারণ ভাজা ছোলা ভাজার ফলে এতে থাকা অনেক পুষ্টি উপাদান ও গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এমন কোন কিছুই না ভাজা ছোলা খেলে ওজন বাড়ে না বরং কমে। সামান্য পুষ্টি উপাদান ভাজার ফলে নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু উচ্চ ফাইবার, প্রোটিন, ও আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকার কারণে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আমাদের পেট ভরে থাকে। ফলে আপনি নিশ্চিন্তায় বিকেলের বিকেলের নাস্তায় অন্যান্য ভাজাপোড়া তৈলাক তো খাবার না খেয়ে ভাজা ছোলা খেতে পারেন। এটি মুখরোচক সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে।

কাঁচা ছোলা খেলে কি ওজন কমে

বর্তমানে আমরা অনেকে এখন স্বাস্থ্যের বেশ সচেতন। যার ফলে অনেকেই জানতে চায় কি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে কারণ ওজন অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে গেলে শরীরে সকল ধরনের রোগে সৃষ্টি হয়। যার জন্য অনেকে ওজন নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। যার মধ্যে সবচেয়ে সহজ এবং সকল পুষ্টি উপাদানের ভরপুর খাবার হচ্ছে কাঁচা ছোলা। তবে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে কাঁচা ছোলা খেলে কি ওজন কমে।
জি হ্যাঁ, কাঁচা ছোলা খেলে খুব সহজে এবং দ্রুত সময়ের ভেতরে আপনি ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। আমরা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য যে সকল পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকি সেগুলো খেতে তেমন একটা সুস্বাদু হয় না। তবে খাঁচা ছোলা দিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ খুবই সোজা কারণ এটা খেতেও সুস্বাদু এবং আপনি এর সাথে সামান্য পরিমাণে লবণ, গুড়, আদা ইত্যাদি মিশে খেতে পারেন আপনার ওজন দ্রুত নিয়ন্ত্রণ না আসবে।

ছোলাই থাকা উচ্চ ফাইবার, প্রোটিন, থায়ামিন, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যা আমাদের অহেতুক ক্ষুদা থেকে বিরত রাখবে এবং শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরলবের করে দেবে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ছোলা এবং ছোলা ভিজানো পানি আপনি দুটোই খেতে পারেন কারণ ঝোলায় থাকা পুষ্প উপাদান গুলো পানির সঙ্গে মিশে যায় ফলে পানি দিও পুষ্টিগুণ ভরপুর হয়। এছাড়াও আপনি কাঁচা ছোলা ভিজে অঙ্কুরিত করে খেতে পারেন এটা আপনার অতিরিক্ত ওজন, কোলেস্টেরল ও গ্যাস্ট্রিক নিয়ন্ত্রণে আনবে।

প্রতিদিন কতটুকু ছোলা খাওয়া উচিত

আমরা জানি ছোলার পুষ্টি উপাদান, গুনাগুন, উপকারিতা কিভাবে খেতে হব কিন্তু আমরা কি জানি প্রতিদিন কতটুকু ছোলা খাওয়া উচিত এবং কতটুকু খেলে আমাদের শরীরের কোন প্রকার ক্ষতি হবে না। কিন্তু আমাদের কি পরিমানে ছোলা খেতে হবে প্রথমত এটা জানাই জরুরী। কারণ আমাদের শরীর সব কিছুরই ভালো ও খারাপ এ দুটির যে কোন একটি প্রতিক্রিয়া দেখায়।

আপনি যদি সঠিক পরিমাণে খান তাহলে আপনার শরীর সুস্থ সবল থাকবে আর আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খান তাহলে আপনার শরীর ও এর প্রতিক্রিয়া দেখাবে অর্থাৎ আপনার শারীরিক অবস্থা ভালো হওয়ার থেকে খারাপ হওয়া সম্ভব না বেশি থাকে। তাহলে অবশ্যই এখন আপনি জানতে চান কতটুকু পরিমানের ছোলা খেলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে।

একজন ব্যক্তি সুস্থ এবং ছোলার সঠিক উপাদান গুলো পেতে চাইলে নিয়মিত ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম ছোলা খাবেন। এর বেশি কখনোই খাবেন না কারণ এটাই যথেষ্ট শরীর সুস্থ রাখতে। কারণ ছোলার এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা উচ্চমাত্রায় রয়েছে যা অতিরিক্ত পরিমাণে আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি সাধিত হতে পারে। চলুন দেখি ৫০ গ্রাম ছোলাতে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে-

  • ক্যালরি- ১৮২ গ্রাম
  • প্রোটিন- ৯. ৫ গ্রাম
  • আশ- ৮. ৫ গ্রাম
  • শর্করা- ৩০. ৫ গ্রাম
  • ফ্যাট ও সোডিয়াম -৪. ৫ গ্রাম
  • ফাইবার- ৩.৫ গ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম- ডিভির ১৯ %
  • ফসফরাস-ডিভির ২২%
  • দস্তা- ডিভির ২৩%
  • আয়রন- ডিভির ২৬%
  • ম্যাঙ্গানিজ- দৈনিক মূল্যের ৭৪% (DV)
  • ফোলেট (ভিটামিন B9)- DV এর ৭১%
  • তামা- ডিভির ৬৪%
  • থায়ামিন- ডিভির ১৬%
  • ভিটামিন B6- ডিভিরএর ১৩%
  • সেলেনিয়াম- ডিভির ১১%
  • পটাসিয়াম- ডিভির ১০%

লেখক এর মন্তব্য

রাইট বাটন আজকে আপনাকে এই পোস্টটির মাধ্যমে কাঁচা ছোলার কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি ছাড়া কাঁচা ছোলা সম্পর্কে আরো বিভিন্ন তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে কাঁচা ছোলা সম্পর্কে উপরোক্ত তথ্যগুলো জানিয়ে সহায়তা করবেন। এমন আরো তথ্য জানতে আমাদের ওয়েব সাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন, আসসালামু আলাইকুম/আদাব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url