গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা
গবাদি পশুর সবচেয়ে মারাত্মক ও প্রাণঘাতী রোগ হচ্ছে ক্ষুরা রোগ এরজন্য আজ আমি
আপনাদের মাঝে গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা, গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ ও
প্রতিকার, গবাদি পশুর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত রোগ কি ও প্রতিকার ইত্যাদি আরো
ক্ষুরা রোগ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগ সহ আরো বিভিন্ন ধরনের
গবাদি পশুর রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং গবাদি
পশুর রোগ সম্পর্কে আপনার যত প্রশ্ন ও সমস্যা রয়েছে তার অবশ্যই সঠিক সমাধান ও
উত্তর পাবেন এবং আপনার গবাদি পশুকে সুস্থ-সবল রাখতে সক্ষম হবেন।
ভূমিকা
আমরা অনেকেই আছি যারা গবাদি পশু পালন করি কিন্তু
গরুর বিভিন্ন রোগ ও
রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানি না। ফলে কি কারনে গবাদি পশু মারা যায় জানা যায় না।
আজ আমি তাদের জন্য গবাদি পশুর বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে, রোগের লক্ষণ, প্রতিকার,
প্রতিরোধ ও ভ্যাকসিন ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আরো পড়ুনঃ
ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা
এছাড়াও কিভাবে গরুর ক্ষুরা রোগ হয়েছে বুঝবেন অর্থাৎ এর লক্ষণ, প্রতিকার,
প্রতিরোধ, চিকিৎসা সম্পর্কে,
গরুর জ্বর হলে কি
করবেন, গবাদি পশুর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ গুলো কি কি ও এর সমাধান
বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে গবাদি পশুর বিভিন্ন রোগ
সম্পর্কে আপনি অনেক কিছু জানতে পারবেন এবং কোন রোগ হওয়ার পূর্বে তার প্রতিকার
করতে পারবেন।
গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
কোন গবাদি পশু পালনের পূর্বে অবশ্যই সেই পশুর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা দরকার
বিশেষ করে সে গবাদি পশুর কি কি রোগ হয় এবং সে রোগ গুলো কিভাবে খুব সহজেই
প্রতিকার করা যায়। পালনকৃত গবাদি পশুর বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে আপনার পূর্ব ধারণা
থাকলে অর্থাৎ কোন রোগ হলে কি কি লক্ষণ গবাদি পশুর ভেতরে দেখা যায় এবং লক্ষণ
দেখার সাথে সাথে কি কি প্রতিকার
গ্রহণ করতে হবে তা সম্পর্কে যদি সঠিক তথ্য জানা থাকে তাহলে খুব সহজেই রোগ মুক্ত
করা যায়। এজন্যই আজ আমি আপনাদের মাঝে
গরুর এমন একটি রোগ
এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করব যা সবচেয়ে বেশি গবাদি পশুদের ভেতরে
লক্ষ্য করা যায় সেটি হল ক্ষুরা চলুন জেনে নিই গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের
লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য -
গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ
যে লক্ষণ গুলো দেখে বুঝতে পারবেন ও আবার দীপশুর খোঁড়া রোগ হয়েছে নিম্নে সে
লক্ষণগুলো দেয়া হলো-
- ক্ষুরা রোগের প্রথম লক্ষণ হল অধিক পরিমাণে জ্বর হওয়া তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি বা তার অধিক হতে পারে।
- আক্রান্ত গুরুর মুখ ও নাক দিয়ে অনবরত লালা ধরতে থাকে।
- গরু ছোটা ছুটি করা বন্ধ করে একেবারে শান্ত হয়ে যায়।
- খাবার খাওয়ার প্রতি অরুচি বা খাওয়া ছেড়ে দেয়।
- দুধ উৎপাদনকারী গরু হলে দুধের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
- প্রথমদিকে গরুর মুখের ভেতর ছোট ছোট পানির ফোস্কা পড়ে। ধীরে ধীরে এ ফোস্কা গুলো থেকেই ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
- ফোস্কা গুলো ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফেটে যায় এবং লালা হয়ে বেরিয়ে আসে। এভাবে আস্তে আস্তে জিহ্বার ওপরের চামড়া উঠতে থাকে।
- একইভাবে গরুর পায়ে ফোস্কা সৃষ্টি হয় এবং ফোস্কা গুলো ফেটে গিয়ে বড় ধরনের ক্ষতি সৃষ্টি হয়ে গরু ঘোরাতে শুরু করে।
- ক্ষতের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে গরু আর হাঁটতে পারে না।
- অনেক সময় দেখা যায় এ ফোস্কা গুলো গরুর বাটে হয় যার ফলে বাটে ঠুনকো রোগ হয় ও বাট থেকে দুধ অনবরত বের হতে থাকে।
- গুরু ওজন ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
- গর্ভবতী গরু এ রোগে আক্রান্ত হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভপাত হয়ে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়।
- হালের বলদ প্রকৃতির গরু এ রোগে আক্রান্ত হলে এদের কর্মক্ষমতা অনেক কমে যায়।
- গরুর গায়ের লোমগুলো ধীরে ধীরে লম্বা হতে থাকে।
- এ রোগটি এক গরু থেকে গরুকে যেভাবে সংক্রমিত করে থাকে
- যেহেতু এই রোগে গুরুর মুখ দিয়ে অনবরত লালা ঝরতে থাকে ফলে এ লালার সঙ্গে ভাইরাস বেরিয়ে এসে বাতাসের গতিতে উড়ে বেড়ায় এবং অন্যান্য গরুকে সংক্রমিত করে।
- আক্রান্ত গরু অন্য সুস্থ গরুর সংস্পর্শে আসলে দ্রুত সংক্রমিত হয়।
- উক্ত রোগে আক্রান্ত গরু মারা গেলে তা যেখানে সেখানে মাটিতে চাপা দেওয়ার কারণে এর ভাইরাসগুলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
- আক্রান্ত গরুর দুধ যদি তার বাচ্চা খায় তাহলে সে বাচ্চারও এই রোগ হয়ে যায়।
গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের প্রতিকার
গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণগুলো দেখার সাথে সাথে যে প্রতিকার বা পদক্ষেপগুলো
গ্রহণ গ্রহণের মাধ্যমে অন্যান্য গবাদি পশু বা রোগে আক্রান্ত গবাদি পশুকে দ্রুত
রোগ মুক্ত করতে যে সকল পদক্ষেপগুলো অর্থাৎ গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের প্রতিকার
সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- কোন খামারে এ রোগ দেখা দিলে অবশ্যই প্রথমে খামার ভালো করে জীবাণু নাশক পদার্থ দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ভাইরাস মুক্ত করতে হবে।
- পায়ের খোঁড়া দ্রুত দূর করার জন্য ১ গ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট , এক লিটার পানিতে ভালো করে মিশিয়ে গরুর ক্ষত স্থান ভালো করে ধুয়ে দিতে হবে এবং উক্ত স্থানে যেন মাছি মশা না বসে এর জন্য মলম লাগিয়ে দিতে হবে।
- আক্রান্ত গরুর মুখপা সবসময় পরিষ্কার রাখার জন্য সালভার পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
- গরুর স্বাস্থ্য সঠিক রাখার জন্য খুদের ভাত ভাতের মার বিভিন্ন রকমের সুষম খাবার ও ধানের গুঁড়ো সাথে ভিটামিন ও খনিজ লবণ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
- ক্ষতের পরিমাণ অতিরিক্ত হয়ে আসলে অবশ্যই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে বা প্রাণী চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
- গরুর ওজন প্রতি কেজি অনুসারে পেনিসিলিন ইঞ্জেকশন আন্তর্জাতিক একক ১০ থেকে ১২ হাজার প্রয়োগ করতে হবে।
- এছাড়া এ রোগ দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের আন্টিবায়োটিক ইনজেকশন যেমন ভেনাদডিজ বা ডায়াডিন ব্যবহার করতে পারেন।
- গরুর ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ইনজেকশন ব্যবহার করতে পারেন।
গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের প্রতিরোধ
গবাদি পশুর কোন রোগ হওয়ার পূর্বে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা সবচাইতে ভালো। তবে বিভিন্ন কারণবশত গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগ হয়ে থাকে। গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের প্রতিরোধ হিসেবে যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করবেন চলুন জেনে নিই সেগুলো-- নিয়মিত গরু সকল টিকাগুলো দিতে হবে
- গরুর বাচ্চার বয়স ৪ বয়স হওয়ার সাথে সাথে ঘুরা রোগের প্রথম ডোজ দিতে হবে এবং ছয় মাস পর পর নিয়মিতভাবে এটি কার দিতে হবে.
- গর্ভবতী গরুর ৬মাস গর্ভকালীন সময় পর্যন্ত এই টিকা দেয়া যাবে এ সময়কাল পার হয়ে গেলে আর টিকা দেওয়া যাবে না
- খামারে এই রোগে গরু আক্রান্ত হলে আক্রান্ত গরুকে অবশ্যই আলাদা রাখতে হবে।
- আক্রান্ত গরুর খাবারের পাত্র কখনো অন্যান্য গরুকে খেতে দেওয়া যাবে না।
- অসুস্থ গরুকে যে ব্যাক্তি যত্ন করবে সে ব্যক্তি যেন সুস্থ গরুর কাছে না আসে।
- অসুস্থ গরু যেন সুস্থ গরু সংস্পর্শে কোনোভাবে না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- আক্রান্ত গরুকে কখনোই স্যাতস্যাতে বা কাদা স্থানে রাখা যাবে না।
- গরুর গলায় কোন প্রকার মাদুলি ঝোলানো যাবে না।
- আক্রান্ত গুরুর আশেপাশে কোন প্রকার ধোয়া দেওয়া যাবে না
গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা
গরু, ছাগল মহিষ ইত্যাদি গবাদি পশু সবচাইতে মারাত্মক ও প্রাণঘাতী ছোঁয়াচে রোগ
হচ্ছে ক্ষুরা রোগ। বেশিরভাগ গরু এ রোগে আক্রান্ত হলে মারা যায়। এজন্য যে সকল
কারণে এই রোগের আক্রান্ত হয় সে সকল কারণগুলো অনুসন্ধান করে পূর্ব সতর্ক সব
সময় থাকতে হবে। গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের সবচাইতে ভালো চিকিৎসা হলো পূর্ব সতর্ক
থাকা। এ রোগে বেশিরভাগ গরুই মারা যাওয়ার কারণ হচ্ছে গবাদি পশুর সমস্ত শরীরে
ক্ষতের সৃষ্টি হয় অর্থাৎ জিহ্বা,
পা, দাঁতের মাড়ি, ফোস্কা পড়ে যাওয়া, গায়ে ও সমস্ত মুখে। সমস্ত মুখে হওয়ার
কারণে খেতে পারেনা, মুখ দিয়ে সব সময় লালা ও ফেনা ঝরে ফলে দ্রুত গবাদি পশু
শুকিয়ে যায় এবং পায়ে ক্ষতের কারণে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না ফলে
অতিরিক্ত জ্বরে ও ব্যাথায় দ্রুত গবাদি পশুটি মারা যায়। তবে লক্ষণ দেখার সাথে
সাথে চিকিৎসা করলে এবং গবাদি পশুর বিশেষ যত্ন করলে ক্ষুরা রোগ ভালো করা যায়।
চলুন জেনে নেই গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা গুলো কি-
- প্রথমত আক্রান্তগবাদি পশুকে অন্যান্য গরু থেকে আলাদা করে নেবেন।
- আক্রান্ত গরুকে শুকনো স্থানে রাখবেন কখনোই স্যাঁতস্যাঁতে স্থান হতে বিরত রাখবেন।
- খামারে থাকা সমস্ত গরুকে সুস্থ অবস্থায় অবশ্যই বছরে দুইবার ক্ষুরা রোগের প্রতিশোধক টিকা প্রদান করবেন।
- পটাশ বা আইওসান মিশ্রিত পানি দিয়ে ক্ষতস্থানগুলো কিছুক্ষণ পর পর ধুয়ে ফেলবেন।
- আক্রান্ত গবাদি পশুর মুখের ক্ষতস্থানগুলো পরিষ্কার করার জন্য ফিটকিরির পানি ১০ গ্রাম ২ চামচ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে নেবেন।
- সোহাগার খৈ ও মধু ভালো করে মিশিয়ে ক্ষতস্থানে প্রলেপ দিয়ে দিবেন।
- পায়ের ঘা পরিষ্কার করার জন্য খাবার সোডা ৪০ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ধুয়ে ফেলবেন এবং সালফানাসাইড পাউডার লাগিয়ে দিবেন।
- গরুকে দানা জাতীয় খাবার যেমন গমের ভুষি, ধানের গুড়া, রাইস পালিশ ইত্যাদি খাবেন ঘাস ও খড় খাওয়া বন্ধ রাখবেন কারণ মুখের ঘা এর কারণে খড় ও ঘাস খেলে এগুলো ক্ষতস্থানের ক্ষত বাড়াতে পারে।
- সালফানাসাইড পাউডার অথবা টেট্রাসাইক্লিন ঔষধ দিনে পাঁচ থেকে সাত বার ব্যবহার করতে পারেন।
- মুখের ঘা এর কারণে অনেক সময় গরু খেতে চায় না এজন্য অবশ্যই হাতে ধরে ছোট লোকমা তৈরি করে গরুকে খাবার খাওয়াবেন এতে গরু দুর্বল হবে না।
- অবশ্য আক্রান্ত কবরের আশেপাশে জীবাণু নাশক স্প্রে করবেন এবং লক্ষ্য রাখবেন যেন কোনভাবে ক্ষতস্থানগুলোতে মশা, মাছি না বসে।
গরুর জ্বর হলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত
স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, আবহাওয়া পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে গরুর জ্বর হয়ে
থাকে। তবে যারা গবাদি পশু পালন করেন তাদের মনে সব সময় প্রশ্ন জাগে
গরুর জ্বর হলে কি
ঔষধ খাওয়া উচিত হবে কিনা আর যদি হয় তাহলে কি কি ওষুধ খাওয়াতে হবে এবং কি
ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও গরুর কত ডিগ্রি জ্বর হলে ঔষধ খাওয়াতে হবে এটা
দিয়ে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে নিম্নে আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি-
- কোন গবাদি পশু বা গরুর শরীরের তাপমাত্রা ১০১ থেকে ১০৩ এর ভেতরে থাকলে তা স্বাভাবিক ধরা হয়। শরীরে তাপমাত্রা ১০৩ এর অধিক হলে জ্বর হিসেবে ধরা হয়। দ্রুত এ জ্বর নিরাময়ের জন্য যে ওষুধগুলো ব্যবহার করবেন।
- আরথ্রিভেট ৫০ কেজি ওজনের জন্য ২ এমএল করে গরুর চামড়ার নিচে ইনজেকশন দিতে পারেন
- এলারভেট ইনজেকশন ইনজেকশন দিতে পারেন
- রেনামাইসিন ইনজেকশন-১০০-১০ কেজি ওজনের জন্য এক মিলি অধিক পরিমাণে জ্বর হলে
- ফাস্ট ভেট পায়েল জিন স্বাভাবিক জ্বর আসলে হলে ব্যবহার করতে পারেন।
- আরো পড়ুনঃতল পেটের চর্বি কমানোর উপায়
গবাদি পশুর ভাইরাস জনিত রোগ কি কি
গবাদি পশুর বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ হয়ে থাকে। যা অনেক সময় গবাদি পশুর
জন্য প্রাণঘাতী হয়। আজ আমি আপনাদের মাঝে গবাদি পশুর ভাইরাস জনিত রোগ কি কি এবং
রোগগুলোর লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করেছি-
ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ
সকল প্রকারের ভাইরাস জনিত রোগের থেকে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর রোগ হল এটি। বিশ্বজুড়ে
এ রোগ এন এস ডি নামে পরিচিত এবং তা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে আছে।এই রোগটি ক্ষুরা
রোগের চেয়েও বেশি মারাত্মক। এটি একবার কোনো খামারে হলে পুরো খামার ধ্বংস হয়ে
যায়।
গবাদি পশুর এই রোগটি বসন্তের শুরুতে বেশি হয়ে থাকে। যেহেতু এটি একটি ফক্র জাতীয়
ভাইরাস সেহেতু প্রচুর পরিমাণে মশা মাছি বসে অন্যান্য গরুতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের লক্ষণ
- এ রোগের গরুর তাপমাত্রা হঠাৎ অনেক বেশি বেড়ে যায় ১০৫ থেকে ১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
- নাক মুখ ও চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরতে থাকে।
- অতিরিক্ত পানি ঝডার কারণে অনেক সময় নাক চোখ বন্ধ হয়ে যায়।
- ধীরে ধীরে গরুর পুরো শরীরে আঁচিলের মত ফোস্কা বের হতে থাকে।
- অনেক সময় দেখা যায় এ আঁচিল গুলো শুধু গরুর ঘাড়, ওলান, গরুর মাথা ও পায়ে সামনে হয়ে থাকে।
- রোগে বিশেষ কোন চিকিৎসা নেই তবে অধিক পরিমাণে পরিচর্যা করলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক যেমন ট্রাইজেন ভেট ইনজেকশন বা ট্রাইজেক্ট ভেট ইনজেকশন ব্যবহার করতে পারেন।
- গরুর ব্যথা ও জ্বর নিরাময়ের জন্য তাফরিনভেট বোলাস ইনজেকশন ব্যবহার করতে পারেন।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য টিএমটি ভেট বোলস আমিতো খাবারের সাথে খাওয়াতে পারেন।
- গরুর ঘরে যেন কোন প্রকার মশা মাছি ক্ষুদ্র না হয় এমন ব্যবস্থা নিতে হবে।
- আক্রান্ত গরু অবশ্যই অন্যান্য গরু থেকে আলাদা সরিয়ে রাখতে হবে।
- আক্রান্ত গরুর দুধ বাছুরকে কখনোই খাওয়ানো যাবে না।
ক্ষুরা রোগ
ক্ষুরা রোগ একটি ভাইরাস জনিত মারাত্মক রোগ। এ রোগ বাতাসের সাথে এক স্থান থেকে
অন্য স্থানে ছড়িয়ে
গরুকে
সহজে সংক্রমিত করে ফেলে। এ রোগে আক্রান্ত গরুর মৃত্যুর হার অনেক বেশি।
ক্ষুরা রোগের লক্ষণ
- শরীরে অধিক পরিমাণে জ্বর আসে।
- নাক মুখ ও চোখ দিয়ে পানি বা লালা বের হয়।
- আস্তে আস্তে চোখ নাক বন্ধ হয়ে আসে।
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোস্কা দেখা দেয়।
- দুধ ও ওজন দ্রুত হঠাৎ কমে যায়।
- বাছুর গরুর ক্ষেত্রে অনেক সময় লক্ষ্য দেখার আগেই বাছুর মারা যায়।
ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার
- এ রোগে আক্রান্ত গরুর পায়ে ও মুখে বা পুরো শরীরে পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট মেশানো পানি দিয়ে অথবা সোডা মিশ্রিত পানি দিয়ে দিনে তিন থেকে চার বার ধরে দিতে হবে।
- মশা ও মাছের উপদ্রব যেন না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
- আক্রান্ত গরুকে অবশ্য অন্যান্য গবাদি পশু থেকে আলাদা রাখতে হবে।
- আক্রান্ত গরুর খাওয়ার পাত্র অবশ্যই আলাদা রাখতে হবে।
- আক্রান্ত গরু মারা গেলে অনেক দূরে এবং ৬ফুট নিচে চাপা দিতে হবে।
ফ্যাসিওলিয়াসিস রোগ
ফেসিওলা হেপাটিকা ও ফেসিওলা জাইগানটিকা নামক এক ধরনের পাতা ক্রিমে থেকে এ রোগ
সৃষ্টি হয়েছে বিধায় একে ফ্যাসিওলিয়াসিস রোগ বলা হয়। এ ভাইরাস গরুর যকৃতকে
আক্রান্ত করে। ভাইরাসটি যকৃতে আক্রান্ত করে রক্তস্বল্পতা, ডায়রিয়া,
আরো পড়ুনঃ
মশা তাড়ানোর উপায় কি-মশা মারার স্প্রে নাম
বদহজম, ম্যান্ডবুলের নিচের দিকে পানি জমা করে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যকৃত নষ্ট করে
দেয়, ক্ষুধা মন্দা, দুর্বল করা ও যকৃতের তীব্র প্রদাহের কারণে অনেক সময়
রক্তক্ষরণ হয়ে গরু হঠাৎ মারা যায়।
ফ্যাসিওলিয়াসিস রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার
- গরুর প্রতি কেজি ওজনের উপর নির্ভর করে ১০ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম করে ট্রাইক্লবেন্টাজল বোলাস ওষুধ খাওয়ালে ৮০ থেকে ১০০ ভাগ ফল পাবেন।
- প্রতি ৫০ কেজি ওজনের গরুর জন্য প্রতিদিন ১.৫ মিলিগ্রাম হিসেবে নাইট্রোক্লিননিল গুরুর চামড়ার নিচে প্রই করতে হবে।
দুগ্ধ জ্বর বা মিল্ক ফিডার
যে সকল গরু অধিক
পরিমাণে দুধ দেয় সেই সকল গরু প্রসবের পরেই এর রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ
রোগে আক্রান্ত হলে গরু কোন কিছু খেতে চায় না মাথা অনেক বেশি ভারী হয়ে পড়ে ফলে
সবসময় জিব্বা বের করে থাকে এবং কাঁধ সব সময় মাটির সাথে রাখে। অনেক সময় অজ্ঞান
হয়ে মারা যায়।
দুগ্ধ জ্বর বা মিল্ক ফিডার রোগের লক্ষণ
- দুধ অনেক বেশি ফুলে থাক।।
- কিছু খেতে চায় না।
- মাথা সবসময় স্থির রাখে।
- জিব্বা বের করে থাক।।
- মাথা মাটির সাথে সবসময়ই একপাশে হেলিয়ে রাখে।
- বুকে ভর করে বেশিরভাগ সময় শুয়ে থাকে।
- হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়।
দুগ্ধ জ্বর বা মিল্ক ফিডার রোগের চিকিৎসা
- রোগে সবসময় খাদ্যের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
- গর্ভবতী গরুর প্রসবকালীন শেষ মাসগুলোতে খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ক্যালসিয়াম ভিটামিন ডি ফসফরাস খাওয়াতে হবে।
- সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- বেশিরভাগ সময় ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে এরূপ হয়ে থাকে এজন্য অবশ্যই রোগ দেখা দিলে খেলে ক্যালসিয়ামের ইনজেকশন গরুর ওজন অনুসারে প্রয়োগ করতে হবে।
গবাদি পশুর ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ কি কি
গবাদি পশুর ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ কি কি সম্পর্কে জানতে হলে সম্পন্ন পোস্টটি
পড়ারক বিশেষ অনুরোধ রইলো। নিম্নে উক্ত বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
গলাফোলা রোগ
গরুর জন্য সবচেয়ে বেশি মারাত্মক ও মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি এই রোগে। এটি মূলত
একটি ভাইরাস জনিত রোগ। সাধারণভাবে সকল
গরুর শরীরে এ
জীবাণু বিদ্যমান থাকে কিন্তু কোন কারনে যদি গরুর অধিক ঠান্ডা বা গরম অনুভূতি হয়
তাহলে জীবাণুগুলো অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে যায় এবং গরুর শরীর দুর্বল করে দেয়।
গলাফোলা রোগের লক্ষণ
- গলার অতিরিক্ত ব্যথায় অনেক সময় গরুর অনেক বেশি জ্বর হয়।
- নাক ও মুখ দিয়ে পানি বের হতে থাকে।
- গরু একেবারে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে মারা যায়।
- অল্পমাত্রায় এ রোগ দেখা দিলে গরু ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
- গরুর গলা ফোলা থেকে শুরু হয়ে চোয়াল, কান, নাক, তলপেট, মাথা ও মুখের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যায়।
- গরুর গলার ভেতরে সব সময় ঘরঘর শব্দ করতে থাকে।
- যে স্থানে ফুলে যায় সে স্থান অনেক বেশি পরিমাণে শক্ত ও গরম থাকে।
- খুশখুসে কাশি হয়।
- ফুলাই স্থান যদি সইতে ছিদ্র করা হয় তাহলে সেখানে হলুদ রঙের পানি বের হয়।
গলা ফোলা রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার
- গলা ফোলা সামান্য দেখা মাত্রই পশু বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে তা না হলে গরুকে বাঁচানো অনেক মুশকিল হয়ে যায়।
- এ রোগের ঔষধ হিসেবে এমপিসিলিন, ট্রেট্রাসেলিন ইত্যাদি জাতীয় ইনজেকশন গরুর মাংসের নিচে প্রয়োগ করলে ভালো ফলাফল পেতে পারেন।
- এ রোগ পুরোপুরি নির্মূল করা প্রায় অসম্ভব কারণ এ রোগের ব্যাকটেরিয়া আগে থেকে গরুর শরীরে বিদ্যমান থাকে।
- এ রোগের যেগুলো আক্রান্ত হবে সেগুলোকে অবশ্য অন্যগুলো থেকে আলাদা রাখতে হবে।
- গলা ফোলা টিকা দেওয়ার মাধ্যমে এই রোগ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
তড়কা রোগ
তড়কা রোগ এমন একটি ব্যাকটেরিয়াল জনিত মারাত্মক রোগ রোগ যা গরুর থেকে মানুষেও
ছড়িয়ে পড়ে। গরুর বিভিন্ন ধরনের খাবারে সাধারণত এই ব্যাকটেরিয়া গুলো থাকে যেমন
ঘাস, পাতা ইত্যাদি। যখন গুরু এ সকল খাবার খায় তখন এ রোগে সংক্রমিত হয়।
তড়কা রোগের লক্ষণ
তড়কা রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার
- জেনাসিস ভেট, পেনিসিলিন, এম্পিসিন ভেট ভাইপেন ভেট নামক গুলো গরুর চামড়ার নিচে প্রয়োগ করতে পারেন।
- স্ট্রেপটোমাইসিন ইনজেকশন ব্যবহার করতে পারেন এটা অনেক কার্যকারী।
- অসুস্থ গরুকে অবশ্য অন্য গরু থেকে আলাদা রাখবেন।
- আক্রান্ত গরু মারা গেলে অবশ্যই ৬ ফুট মাটির নিচে দাফন করতে হবে এবং আক্রান্ত গরুকে যে পাত্রে খাওয়ানো হতো বা এর সকল জিনিসপত্র ও মাটির নিচে চাপা দিতে হবে।
রক্ত আমাশয়
গরুর জন্য এটি একটি অত্যন্ত মারাত্মক ও ভয়াবহ রোগ। প্রোটোজোয়া নামক ভাইরাস থেকে
এর রোগ হয়ে থাকে।
রক্ত আমাশয় রোগের লক্ষণ
- এ রোগে আক্রান্ত হলে গরুর মল অনেক বেশি দুর্গন্ধ যুক্ত হয়ে থাকে
- মল রক্ত ও আমাশয় যুক্ত হয়ে থাকে।
- গরুর মলত্যাগ করতে অনেক বেশি কষ্ট বোধ হয়।
রক্ত আমাশার রোগের চিকিৎসা
- এ রোগ হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে বাসস্থান পানিপাত্র খাবার অপরিষ্কার থাকা এর জন্য অবশ্যই গরুর খাবার পাত্র ও পানি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবো।
- আক্রান্ত গরুকে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ঔষধ খাওয়াতে হবে।
- উক্ত রোগের ঔষধ হিসেবে সালফানামাইড নামক ঔষধ খাওয়াতে পারেন।
গরুর বাদলা রোগ
ক্লস্টিডিয়াম শোভিয়াই নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে এ রোগ হয়ে থাকে। বৃষ্টির দিনে
বর্ষা মৌসুম এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। বৃষ্টির পানিতে ভেসে আসা বিভিন্ন
ব্যাকটেরিয়া ঘাসে লেগে থাকে। যখন গরু এই ঘাস খায় তখন এ জীবন
গরুর শরীরে প্রবেশ
করে। এটি একটি অত্যন্ত মারাত্মক ভয়াবহ র...
গরুর বাদলা রোগের লক্ষণ
- গরুর কোমর ঘাড় ও কাঁধ অনেক বেশি ফুলে যাওয়ার কারনে গরু প্রচুর ব্যথা অনুভূত হয় এবং অনেক বেশি জ্বর আসে।
- ফলা স্থানগুলো অনেক বেশি শক্ত হয়ে যায়।
- ফোলা স্থানগুলো সুই দিয়ে ছিদ্র করলে ফেনা ও টক গন্ধ যুক্ত তরল পদার্থ বেরিয়ে আসে।
- পেট ফুলে যায় ও খাবার খাওয়ার প্রতি অরুচি দেখায়।
- গরুর হাটতে অনেক বেশি কষ্ট হয়, অনেক সময় গরুর দাঁড়াতে পারে না।
- দ্রুত চিকিৎসকের ব্যবস্থা না নিলে গরু মারা যায়।
গরুর বাদলা রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার
- গরুর চামড়ার নিচে ১০০ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম আন্টি ব্ল্যাক লেগ ইঞ্জেকশন বা সিরাপ দিতে পারেন।
- আন্টিহিস্টামিলিক প্রকৃতির ইনজেকশন যেমন ডিলারজেন, হিস্টাভেট তিন দিন ধরে ৬ সিসি করে দিতে পারেন।
- আক্রান্ত গরুকে অবশ্যই অন্যান্য গরু থেকে দূরে রাখতে হবে।
- এই রোগ যেহেতু ছোঁয়াচে রোগ তাই কোন অবস্থাতে পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া যাবে না।
- মাটির ৬ ফুট গর্ত করে দাফন করে দিতে হবে এবং এর সকল জিনিসপত্র ও এর সাথে দাফন করতে হবে।
- প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর এ টিকা দিলে খুব সহজে এ রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।
- দুই বছরের কম বয়সের গরুর এই রোগ বেশি হয়ে থাকে তাই অবশ্যই এ সকল বয়সের গরুকে এ রোগের টিকা অবশ্যই দিবেন।
কৃমি বা পরজীবি
এ রোগে সবচেয়ে বেশি
গরু আক্রান্ত হয়ে
থাকে। গরু সাধারণত অন্তঃ ও বহিঃ কৃমিতে বেশি আক্রান্ত হয়। অন্তঃ কৃমিকে সাধারণত
তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথা-
- ফিতা কৃমি
- গোল কৃমি
- পাতা কৃমি
বহিঃ কৃমি কৃমিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় যথা-
- উকুন
- আটালী
- মাইট
কৃমি বা পরজীবির লক্ষণ
- কৃমি হলে গরু দিনে দিনে দুর্বল ও শুকিয়ে যায়।
- গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে যায় বিধায় বিভিন্ন রোগ সহজে আক্রমণ করে।
- ঘন ঘন গরুর পাতলা পায়খানা হয়।
- গরুর গায়ের লোম সব সময় উষ্ক-রুক্ষ হয়ে থাকে।
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাছুরের মৃত্যু ঘটে।
- দুগ্ধ গরু দুধ কম দেয়।
- স্বাস্থ্যবান গরুর স্বাস্থ্য দ্রুত কমে যায়।
কৃমি বা পরজীবীর চিকিৎসা
- এ রোগ হলে ট্রাইকেলা বেন্ডাজল বা অক্সিজেনডাজোল ঔষধ খাওয়াতে পারেন।
- অনেক সময় অলবেন্ডাজলঅল বা মে বিনডাজল বা লিভা মেস ল ইত্যাদি ওষুধ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- বহিঃ পরজীবের চিকিৎসার জন্য আইভারমেকটিন ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন।
গরুর মুখে ঘা হলে করণীয় কি
গরুর মুখের ঘা সাধারণত ক্ষুরা রোগের একটি লক্ষণ। এ রোগ হলে গরুর মুখে ফোস্কা মত
হয়। ধীরে ধীরে ফোস্কাগুলো ফেটে ঘা এ পরিণত হয় নিম্নে
গরুর মুখে ঘা হলে
করণীয় কি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো -
- আক্রান্ত গরুকে অবসান গরু থেকে দূরে রাখতে হবে।
- মুখে ঘা এর কারণে গরু কিছু খেতে চায় না এজন্য গরুর খাওয়ানোর প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে হবে।
- গরুর মুখ দিনে তিন থেকে চারবার পটাশিয়াম পারম্যাকানিক মিশানো পানি বা সোডা মেশানো পানি দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
- মশা, মাছি যেন মুখে না বসে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
- ঘা দ্রুত বৃদ্ধি হওয়ার আগে পশু বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে চিকিৎসা করতে হবে।
গরুর পায়ে পোকা হলে করণীয়
বর্তমানে গরুর পায়ে পোকা হওয়া একটি সাধারন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ আমরা
অনেকেই গরুকে সাথে ভেজা ও স্যাতস্যাতে স্থানে রাখি ফলে গরুর পায়ের ঘোরায় পোকা
জন্ম নেয়। গরুর পায়ে পোকা হলে করণীয় কি নিম্নে উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা
করা হলো-
- প্রথমত গরুকে অবশ্যই স্যাতস্যাতে বা ভেজা স্থানে থেকে দূরে রাখতে হবে এবং শুকনো ও উঁচু স্থানে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
- মাঝে মাঝে গরুর পায়ের ক্ষুরা পরিষ্কার করতে হবে কারণ এই অপরিষ্কার হওয়ার কারণে পোকা দেখো চোখ আছে চোখ বানান হয়ে থাকে।
- গরুর পা অতিরিক্ত ছোটাছোটি বা লাফালাফি করছে দেখা দিলে বুঝবেন পায়ে পোকা হয়েছে এবং উক্ত স্থানে তারপিন তেল সিরিঞ্জের মাধ্যমে ব্যবহার করলে খুব সহজেই পোকা মারা যায়।
- তারপিন তেলের সাথে নারকেল তেল ও ন্যাপথলিন ব্যবহার করলে খুব সহজে এবং দ্রুত সময়ের ভিতরে পায়ের সকল পোকা মারা যাবে।
লেখক এর মন্তব্য
রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে গবাদি পশুর বিভিন্ন রোগের লক্ষণ প্রতিরোধ
প্রতিকার দিয়ে আপনার
গরুকে সুস্থ-সবল
রাখার কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি উপরোক্ত সম্পন্ন পোষ্টটি পড়ে
আপনি উপকৃত হয়েছেন। আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার
আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করে তাদের
গরুকে সুস্থ সবল ও
রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করুন। এমন আরো তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত
ভিজিট করুন, আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url