মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনী-মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছদ্মনাম কি
আসসালামুআলাইকুম/আদাব, আজকের আলোচ্য বিষয় মাইকেল মধুসূদন দত্তের
জীবনী-মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছদ্মনাম কি, মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রথম কাব্য ও নাটকের
নাম ইত্যাদি ছাড়াও মাইকেল মধুসূদন দত্ত সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য নিম্নে
বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে মাইকেল মধুসূদন দত্ত সম্পর্কে আপনার যত প্রশ্ন
জানার রয়েছে তার সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাবেন এবং বাংলা সাহিত্যের নতুন মোড়
ঘুরানো কবিকে সঠিকভাবে জানতে পারবেন।
ভূমিকা
বাংলা সাহিত্যের পথযাত্রার মোড় ঘুরিয়েছিল মাইকেল মধুসূদন দত্ত। আমরা সকলেই কখনো
না কখনো একবার হলেও মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতা পড়েছি। তার কবিতাগুলো আমরা
হয়তো কখনোই ভুলবো না, কবিতার মাধ্যমে তার দেশের প্রতি অনুভূতি ও ভালোবাসা প্রকাশ
আমাদের মনে এখনো গেঁথে আছে।
আরো পড়ুনঃ"অহেতুক জীবন" কবিতা
এমন এক কবির
জীবনের
সম্পর্কে জানা আমাদের সকলের জরুরী। কারণ তিনি কিভাবে একজন কবি হলেন, কেমন কেটেছিল
তার শৈশব ও শিক্ষকতা, কিভাবে তিনি একজন হিন্দু ধর্ম থেকে খ্রিস্টান ধর্মের
রূপান্তরিত হন, তার প্রথম নাটক ও কাব্যগ্রন্থ, তার ছদ্মনাম ও কি কি পেশায় তিনি
কর্মরত ছিলেন ইত্যাদি আরো বিভিন্ন বিষয়ে নিম্ন বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে অনেক বেশি উপকৃত হবেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের পল্লী বাড়ির ছবি
মাইকেল মধুসূদন দত্তের পল্লী বাড়ির ছবি নিম্নে দেয়া হলো-
মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনী-মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছদ্মনাম কি
বাংলা সাহিত্য রচনা, কাব্য রচনা, নাটক ইত্যাদি রচনায় এক নতুনত্ব ও সাহিত্যের এক
নতুন যুগ তুলে ধরেছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিনি যেন বাংলা সাহিত্যের
যাত্রাপথের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে অনেক সুন্দর ভাবে। বাংলা সাহিত্যের এমন এক লেখক
মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনী-মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছদ্মনাম কি ইত্যাদি নিয়ে
নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করলাম-
মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনী
বাঙ্গালীদের বাংলা সাহিত্যের পিপাসু মনের রস মেটানো কবি হচ্ছেন মাইকেল মধুসূদন
দত্ত এর জীবনী সম্পর্কে আমাদের জানা অত্যন্ত জরুরী। বাংলা সাহিত্য কে কিভাবে
ছন্দের মাধ্যমে সমাজে মানুষের কাছে তুলে ধরতে হয় তা শিখিয়েছে চলুন মাইকেল
মধুসূদন দত্তের জীবনী সম্পর্কে জেনে নিন-
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
বাংলা সাহিত্যের মধু কবি প্রবর্তন ও প্রথম বিদ্রোহী কবি হলেন মাইকেল মধুসূদন
দত্ত। তিনি বাংলায় সনেট কবিতা ও অমিত্রাক্ষন ছন্দের প্রবর্তক। মাইকেল মধুসূদন
দত্তকে বাংলা কাব্য সাহিত্যের আধুনিকতার জনক ও বাংলা কবিতার আধুনিকতার জনক বলা
হয়। তিনি ছিলেন প্রথম সার্থক নাট্যকার ও প্রথম পত্রকাব্য কার। বাংলা সাহিত্যের
প্রথম মহাকাব্য রচিতা তিনি ছিলেন। একজন ভাষাবিদ ইংরেজি ছাড়াও ল্যাট্রিনজিক ফরাসি
হিব্রু তেলেগু তামিল ইতালি ভাষা কথা বলতে পারতেন।
শৈশব ও শিক্ষা জীবন
জন্ম ২৫ শে জানুয়ারি ১৮২৮ সালে সাগরদাড়ি যশোর জেলায়। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত
মাতা জানাবি দেবী। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন একজন উকিল, তাছাড়া রাজনার নয়ন
সেই সময় ফার্সি ভাষায় বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। মাতা জানাবি দেবী ছিলেন
ধর্মপরায়ণ মহিলা। তার কাছে মধুসূদন দত্ত প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়।
তিনি মধুসূদন দত্তকে রামায়ণ মহাভারত পুরান প্রবৃত্তির সঙ্গে সুপরিচিত করে
তোলেন। সাগরদাড়িতে মধুসূদন দত্তের বাল্যকাল অতিবাহিত হয় এ সময় পাশের
গ্রাম শেখপুর নামের ইমাম মুফতি লুৎফর হকের কাছে তিনি বাংলা ফার্সি আরবী নিয়ে
পড়া শুরু করেন। মধুসূদন দত্তের ৭ বছর বয়সে রাজনারায়ণ বাবু পরিবারবর্গ নিয়ে
কলকাতায় খিদিরপুর সার্কুলার গাছের বীজ রোড বর্তমান কাল মার্কস স্মরণীয় চলে
আসেন।
আরো পড়ুনঃ
মনুষ্যত্বের মৃত্যু কবিতা
খিদিরপুর স্কুলে দুই বছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে তিনি হিন্দু কলেজে বর্তমানে
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন ভর্তি হবার পরের বছর ১৮৩৪ সালে ৭ মার্চ
কলকাতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ইংরেজি নিড় বিষয়ক প্রস্তাব আবৃত্তি করে সবার
দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কলেজের পরীক্ষায় বরাবর তিনি বৃত্তি পেতেন। এই সময় নারী
শিক্ষা বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা করে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
মধুসূদন দত্তের সহপাঠী ছিলেন ভূতেশ মুখোপাধ্যায়, রাজেন্দ্র লাল মিত্র,
রাজনারায়ণ বসু, গিরেদাস বাসক, প্যারীচরণ সরকার, প্রমুখ শতাব্দীর ব্যক্তিবর্গ।
তার শিক্ষক একজন বিশিষ্ট লেখক ও কবি ডেভিড নেচার রিচার্জ দ্বারা ইংরেজি সাহিত্য
বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত হন এবং তিনি কাব্য রচনা শুরু করেন মধুসূদন দত্তের কবিতা
যখন জ্ঞান নেশায় ক্যালকাটা লাইব্রেরী সনেট বিভিন্ন পাতিকায় প্রকাশিত হতে থাকে
তখন থেকে।
তিনি মহাকবি হওয়া ও বিলেতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন কারণ তার দৃঢ়
বিশ্বাস ছিল একমাত্র বিলেতে যেতে পারলেই তিনি বড় কবি হতে পারবেন।
খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ
৯ ফেব্রুয়ারী ১৮৪৩ সালে মাইকেল মধুসূদন দত্ত চার্জ গিয়ে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ
করে। মাত্র ১৯ বছর বয়সে তাকে পাত্রী হেনরি এবং তিনি তার মাইকেল নামকরণ
করেন। খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহনের পর তার পিতা-মাতা তাকে ত্যাজ্য পুত্র করে এবং
হিন্দু কলেজে খ্রিস্টানদের অধ্যায়ন বিশুদ্ধ থাকায় প্রসারণ তত্ত্বকে কলেজ ত্যাগ
করতে হয়।
বাধ্য হয়ে ১৮৪৪ সালে দিনি শিবপুরের বিশপঁচা কলেজে ভর্তি হন এখানে মধুসূদন দত্তের
বহুভাষা পারদর্শীর বীজ রোপন হয় এখানে তিনি ইংরেজি ছাড়াও গিরিস্লাত ঋণ সংস্কৃতি
প্রবৃত্তি ভাষা শিক্ষার সুযোগ পান।
কর্মজীবন
১৮৪৮ সালে ভগবান নেশা মাদ্রাজ আধুনিক চেন্নাই গমন করেন সেখানে তিনি শিক্ষকতা
করেন।
শিক্ষকতা
মাদ্রাজ মেল অরফ্যান আসাইমাম স্কুল ১৮৪৮ থেকে ১৮৫২ এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের
অধিকুঞ্জ হাই স্কুল ১৮৫২ থেকে ১৮৫৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। তিনি মাদ্রাজি
সাংবাদিক ও কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তিনি সার্কুলেস্টর এবং জেনারেল কেমিক্যাল
ও হিন্দু কেমিকাল পত্রিকার সম্পাদনা করেন।
মাদ্রাজে থাকাকালীন তিনি টিমোথি পেনপোয়েম ছদ্মনামে কবিতা ছাড়াও বিভিন্ন গ্রন্থ
লিখতে থাকেন। তিনি তিনি ১৮৪৮ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ দ্য ক্যাপিটাল লেডি নামে
প্রথম ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ লিখেন এবং ১৮৪৯ সালে ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ ন্যাশন অফ দা
পোস্ট প্রকাশিত হয় মাদ্রাজে থাকাকালীন মধুসূদন দত্তের পিতা মাতার মৃত্যু হয়।
পিতার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ১৮৫৬ সালে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন সেখানে তিনি পুলিশ
গ্রেডেড কেরানি পড়ে দুই ভাসি হিসেবে কাজ করেন।
মধুসূদন দত্তের প্রথম নাটক
'শর্মিষ্ঠা' ১৮৫৯ সালে বাংলা ভাষায় রচিত মৌলিক মধুসূদন দত্তের প্রথম নাটক। এটি ছিল বাংলা
সাহিত্যের প্রথম মৌলিক নাটক তাই মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম
মৌলিক নাটক রচিয়তা। তারপর তিনি আরো নাটক রচনা করেন 'একেই কি বলে সভ্যতা' ১৮৬০
সালে, 'বুড়ো শালিকের ঘাসে রো' ১৮৬০ সালে ১৮০৭ সালে বাংলা কাব্য প্রথম অমিত্রখন্ড
ছন্দ এর ব্যবহার করে নাটক রচনা করেন 'পদ্মাবতী', 'মেঘনাথবধ' কাব্য ১৮৬১
সালে বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক কাব্য এই
কাব্যের
মাধ্যমে তিনি মহাকাব্যের মর্যাদা লাভ পেয়েছিলেন।
তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ
- নাটক- কৃষ্ণকুমারী- ১৮৬১ সালে
- পত্র কাব্য -বীরাঙ্গনা- ১৮৬২ সালে, সনেট, চতুর্দশ- ১৮৬৬ সালে
- কাব্য- মেঘনাথবধ- ১৮৬১ সালে, নাটক- মায়াকানন- ১৮৭৪ সালে
- ইংরেজি অনুবাদ নীলদর্শন, দিন বন্ধু মিত্র
- বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ১২ টি গ্রন্থ ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত পাঁচটি গ্রন্থ রয়েছে
মাইকেল মধুসূদন দত্তের বিদেশ যাত্রা ও শেষ জীবন
১৮৫২ সালের ৯ই জুন মাইকেল মধুসূদন দত্ত ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে বিলের যান
এবং গ্রেজইন এ যোগদান করেন কিন্তু সেখানে আবহাওয়া ও বর্ণবাদীতার কারণে
ইংল্যান্ডের বেশি দিন থাকতে পারেননি।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্য যাত্রা
মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্য যাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন। ইংল্যান্ড থেকে তিনি ১৮৬৩ সালে প্রথমে প্যারিস ও পরে ভার্সাই শহরে বসবাস করতে
শুরু করেন। সেখানে কবির আর্থিক অবস্থা অবনতি হলে তিনি বিদ্যাসাগরকে চিঠি লেখেন
এবং বিদ্যাসাগর তাকে ১৫০০ টাকা পাঠিয়ে চরম বিপদ থেকে রক্ষা করেন। ভার্সাই শহরে
অবস্থান কালে তিনি ইতালি কবি পেয়ে তাকে অনুকরণে বাংলায় সনেট গ্রন্থের শুরু করেন
বাংলা ভাষায় তিনি।
তিনি ১৮৬৫ সালে শেষ দিকে পুনরায় ইংল্যান্ডে যান এবং ১৮৬৬ সালে গ্রেজ ইন থেকে
ব্যারিস্টারি পাস করেন। ১৮৬৭ সালের ৫ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টে যোগদান করেন।
তিনি ছিলেন অমিত রায় অমিত ব্যয়ের জন্য। তার শেষ
জীবন ছিল
অনেক অভাবগ্রস্থ সেই। জীবনের অভাব, অসুস্থতা, দারিদ্রতা ইত্যাদির কারণে তার
জীবন হয়ে
উঠেছিল।
সেই জীবনে তিনি উত্তর পাড়ার জমিদারদের লাইব্রেরী হয়ে বসবাস করতেন। হেন্রিয়াটের
মৃত্যুর মাত্র ২ দিন পরে ১৮৭৩ সালে ১৯ জুন মাত্র ৪৯ বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন
এবং কলকাতায় সার্কুলার রোডে তাকে সমাধি দেয়া হয়। জীবনের অন্তিম পর্যায়ে
জন্মভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসা চিত্র দেখে গেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য কত সালে প্রকাশিত হয়?
তিলোত্তমাসম্ভব মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রথম কাব্য। তবে তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য কত
সালে প্রকাশিত হয়? আমরা কি তা জানি। চলুন জেনে নেই, তিলোত্তমাসম্ভব মাইকেল
মধুসূদন দত্ত মহাভারতের খুব উপ্সুন্দ ও সুন্দ কাহিনী অবলম্বন করে রচনা করেন।
বাংলা সাহিত্যের প্রথম প্রকাশিত অমিত্রাক্ষর ছন্দ কাব্যগ্রন্থ এটি। তিরোতমসম্ভব
কাব্যটি ১৮৬০ সালে মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রকাশ করেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছদ্মনাম কি
মাইকেল মধুসূদন দত্ত আমরা অনেকেই এই নামটি সঙ্গে পরিচিত কিন্তু আমরা কি জানি
মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছদ্মনাম কি। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছদ্মনাম হচ্ছে টিমোথি
পেনপোয়েম। মাইকেল মধুসূদন দত্ত মাদরাজ বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্জু কুঞ্জ হাই স্কুলে
১৮৫২ থেকে ১৮৫৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন এবং মাদ্রাজ মেল অরফ্যান আসাইমাম
স্কুলে ১৮৪৮ থেকে ১৮৫২ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন।
তিনি মাদ্রাজে একজন সাংবাদিক ও কবি হিসেবে বেশ পরিচিত লাভ করেন। শিক্ষকতা করার পর
তিনি জেনারেল কেমিক্যাল ও হিন্দু কেমিক্যাল পত্রিকার সম্পাদনা করেন। মাদ্রাজে
থাকাকালীন তিনি এই ছদ্মনামেই
কবিতা ও
গ্রন্থ লেখালেখি করতেন।
মেঘনাদবধ কাব্যের প্রকাশকাল কত?
মেঘনাদবধ কাব্যটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যটি
মাইকেল মধুসূদন দত্তের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ যা অমিত্রাক্ষরের ছন্দে লেখা।
কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রতিভা ও
লেখালেখির প্রতি ভালবাসা। তবে মেঘনাদবধ কাব্যের প্রকাশকাল কত? হয়তো আমরা অনেকেই
জানিনা চলুন জানি মেঘনাদবধ কাব্যটি দুইটি খন্ডে বিভক্ত করে এবং এর সর্গ ছিল মোট
৯টি।
আরো পড়ুনঃ
"দুঃখের সুখ" কবিতা
প্রথম খন্ডটি মধুসূদন দত্ত ১৮৬১ সালে জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে ১ থেকে ৫ সর্গ
প্রকাশ করেন এবং দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশ করেন একই বছরে ৬ থেকে ৯ সর্গ। এই কাব্যটি
মূলত হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ অনুসরণ করে কিছুটা লেখা হয়েছে এবং এর ভেতরে
বিভিন্ন বিদেশি কাব্যগ্রন্থের কিছুটা ছাপ রয়েছে। এই কবিতাটা প্রকাশ করতে সকল খরচ
বহন করেছিলেন দিগম্বর মিত্র এর জন্য মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার প্রতি কৃতজ্ঞতা
প্রকাশের জন্য এই কবিতার কৃতিত্ব তাকেই দেন।
বাংলা নাট্য সাহিত্যে মধুসূদন দত্তের অবদান
মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা নাটক সাহিত্য রচনা বেশ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। তিনি
নাটক সাহিত্য রচনা শুরু করেন আকস্মিক ঘটনার মাধ্যমে। তিনি রত্ন বলিরেখা নাটক
রামায়ণ বেলগাছিয়া রঙ্গমঞ্চে দেখতে গিয়ে অভিনয় দেখে বেশ বিরক্ত হন এবং সেই
বিরক্ত তার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার নাটক সাহিত্য রচনা করা। ১৮ ৫৯ থেকে ২৮৬১ এই
তিন বছর তিনি অসংখ্য নাট্য চর্চা করেন এবং লিখেন নিম্নে বাংলা নাট্য সাহিত্যে
মধুসূদন দত্তের অবদান রাখা ম্যাটের নাম গুলো দেয়া হলো-
- পৌরাণিক নাটক-শর্মিষ্ঠা- ১৮৫৯, পদ্মাবতী-১৮৬০
- প্রহসন-একেই কি বলে সভ্যতা-১৮৬০-বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ-১৮৬০
- ঐতিহাসিক নাটক-কৃষ্ণকুমারী-১৮৬১
- রূপক নাটক-মায়াকানন-১৮৭৩
এগুলো নাটকের মধ্যে মধুসূদন দত্তের প্রথম নাট্য রচনা হল শর্মিষ্ঠা। এই নাটকে ই
ঈর্ষা টিকোন ও কাম প্রেমের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নাটকটিতে মহাভারতের দেবযানী,
যাতি ও শর্মিষ্ঠা কাহিনী স্থান পেয়েছে। নাটকটিতে উনবিংশ শতাব্দীর নারী
চরিত্রগুলো ব্যক্তিত্ব খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং পশ্চাৎ রীতির প্রভাব
রয়েছে।
পদ্মাবতী মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাটকটি গ্রিক পুরাণ রীতি অবলম্বন করে লেখা
হয়েছে। পেরাস ভেনাস ও দেবীর জন্য এতিমজন ব্রিজ পুরাণে সুন্দরী নারীর বিবাদ নিয়ে
নাটকটি সাজানো হয়েছে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত নাটকটিতে হেলেন হলো পদ্ধতি এবং
প্যারিসেলো ইন্দ্রনীল যেখানে ইন্দ্রনীল রতি কে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী হিসেবে নির্বাচন
করে ভেনাসকে এবং তার বিনিময়ে ইন্দ্রনীল সুন্দরী পদ্ধতিতে লাভ করেন।
কৃষ্ণকুমারী নাটকটি অনুসূদন দত্তের একমাত্র ঐতিহাসিক নাটক এই নাটকের রাজা
হিমসিংহের কন্যা কৃষ্ণকুমারী অত্যন্ত সুন্দর এবং তাকে দুই রাজা বিয়ে করতে চান
এবং রাজকুমারী কৃষ্ণ কুমারীর আত্মহত্যা নিয়ে নাটকটির রচনা করা হয়। নাটকটি
ইলিয়াম উডের রাজস্থান নামক গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত হয়েছিল।
রাজা জয় সিং ও রাজা মানসিংহ নামক দুইটি রাজা অপরূপ সুন্দরী কৃষ্ণকুমারীকে বিবাহ
করতে চাচ্ছিল এবং তাকে না পেয়ে দুই রাজাই ভীমসিং অর্থাৎ কৃষ্ণকুমারীর রাজ্যে
আক্রমণ করবে বলে জানাই। এই আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কৃষ্ণকুমারী আত্মহত্যা করেন।
একেই কি বলে সভ্যতাম মাইকেল মধুসূদন দত্তের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রহসন মূলক নাটক।
এ নাটকের প্রধান চরিত্র ইয়ংবেঙ্গলরাই কে নিয়ে নাটকটি সাজানো হয় যেখানে যুবকের
সকল প্রকার নিয়ম ভাঙ্গা মদ্যপান ধর্মকে অস্বীকার ও নীতিহীন জীবন যাপন করা দেখানো
হয়েছে। মাইকেল মধুসূদন দত্তের আরেকটি প্রহসন মূলক নাটক হলো 'বুড়াে শালিকের
ঘাড়ে রো'। এই নাটকটি একজন জমিদারের গরিবের প্রতি অত্যাচার, অনাচার ও লালসাগ্রস্থ
ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছে।
নাটকটিতে একজন জমিদার ছিলেন যিনি অত্যন্ত বৃদ্ধ, ধর্ম ভক্ত প্রসাদ ও নারী ঘষা
ছিলেন সে গরিবের খাজনা মাফ করতেন না একদিন তিনি এক গরীব চাষীর এক পয়সা খাজনা মাফ
করে না। বৃদ্ধ জমিদার একবার এক সুন্দরী ভক্তরাম ফাতেমাকে অনেক বেশি পছন্দ করতে
লাগে এবং তাকে লোভ দেখায় পাওয়ার জন্য।
বাংলা কাব্যে মধুসূদন দত্তের অবদান আলোচনা করো
বাংলা কাব্য রচনা ইতিহাসে কখনো কখনো এমন কিছু লেখকের আবির্ভাব ঘটে যারা সম্পূর্ণ
সাহিত্যকে এক নতুন জুকে নিয়ে যায় এবং কাব্য রচনা নতুন রূপ তুলে ধরে। তার মধ্যে
একটি ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। অনেকেই বাংলা কাব্যে মধুসূদন দত্তের অবদান আলোচনা করো এমন কথা বলে থাকেন এজন্য আগামী নিম্নে এ বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করছি-
মাইকেল মধুসূদন দত্ত এমন এক ধরনের কবি ছিলেন যার সাহিত্য জীবন বেশ বড় ছিল না
কিন্তু সাহিত্য নাটক, গ্রন্থ, কাব্য রচনায় এক নতুনত্ব নিয়ে আসেন। মাইকেল
মধুসূদন দত্ত প্রথম পশ্চাৎ আদর্শের মহাকাব্য প্রবর্তন করে মাত্র সাত বছর এর মধ্যে
যেমন অখ্যাত কাব্য, পত্র কাব্য, গীতি কাব্য যা সত্তর বছর ইতিহাস এগিয়ে গিয়েছিল।
এমন কবি এবং কবিতার প্রতিভা ও মানসিকভাবে শক্তিশালী কবি তখনকার সময়ে ভারতবর্ষে
তখনো একটিও ছিল না। তখনকার সময়ে বাঙালি সমাজের কাব্য পিপাসু মানুষের পিপাসা
মেটাতো রঙ্গা লালের ভাবা তীরের আক্রান্ত রোমান্টিক কবিতা ও ঈশ্বর গুপ্তের পরিহাস
রসিকতা। এর ভিতর
কবিতা,
সাহিত্য ও নাটকের নতুনত্ব নিয়ে আসে মাইকেল মধুসূদন।
নিম্নে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ আলোচনা করা হলো-
তিলোত্তমা সম্ভব- তিলোত্তমা সম্ভব মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রথম কাব্য যা
১৮৬০ সালে প্রকাশিত হয়। এই কাব্য রচনাটি সাতটি স্বর্গে উত্থান করা হয়। এই
কাব্যটিতে আধুনিক কাব্য হওয়ার দাবি রাখে। এর প্রথম অংশে অমিত্রাক্ষরের প্রবর্তন।
এটি তার প্রথম কাব্য হওয়ায় বেশ ভুল পাওয়া যায় তবুও এটি এক অভাবনীয় ও আধুনিক
কাব্য হিসেবে আখ্যায়িত হয়।
মেঘনাদবধ কাব্য- মাইকেল মধুসূদন দত্তমা শম্ভর লেখার পরই মেঘনাদবধ
কাব্যটির রচয়িতা করে এটি দুইটি খন্ডে প্রকাশ করা হয় ১৮৬১ সালে। প্রথম খন্ডটি
প্রকাশ হয় ১৮ ৬১ সালে জানুয়ারি মাসে এবং দ্বিতীয় খন্ডটি ২১ বছরের জুন মাসে
প্রকাশিত করেন তবে হেমন্ত চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় যখন কাব্যটির সম্প্রসারিত হয়ে
প্রকাশিত করেন ১৮৬২ সালে।
তখন থেকেই মেঘনাথ বধ কাব্যটি দুইটি খন্ডে নয় একটি খন্ডে প্রকাশিত হয়। কাব্যটি
দ্বারা বুঝা যায় সত্যি কথা কি, অদৃষ্টের চরম পরিনিতি, ভারতীয় রীতি চেনা
ধর্মবোধ, গার্হস্থ্য বন্ধন প্রভৃতি ইত্যাদির আদর্শ তুলে ধরে রামায়ণ হতে
অনুপ্রাণিত হয়ে কাব্যটি রচনা করে।
ব্রজাঙ্গনা: মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কবিতাটি কিছু কিছু সময় গীতি
রস উচ্ছ্বাসিত হয়েছিল কিন্তু ব্রজাঙ্গনা কবিতাটি বিরহ শুকা দুধ বর্মন বেদনা
ব্যক্ত করা হয়েছে। তার অনেক বড় বড় কাব্যগ্রন্থ মধ্যে এটা হয়তো সামান্য ছোট
কিন্তু এ কাব্যের ভাষা ও ছন্দ সকলকে মর্মাহিত করে। ব্রজাঙ্গনা কবিতাটি ১৮৬১ সালে
প্রকাশিত হয় যার মাধ্যমে বোঝা যায় মধুসূদন দত্ত কাব্য রচনা বজ্রপাত ঘটিয়েছে।
বীরাঙ্গনা: মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যটিতে সামান্য কিছু ছন্দের
ভুল ছিল কিন্তু বীরাঙ্গনা
কবিতাটি
সম্পূর্ণরূপে নিখুত হয়। অমিত্রাক্ষন ছন্দের সম্পূর্ণ রূপ তুলে ধরা হয় এই
কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে।
কবিতাটি
বিদেশী কবিতা ও পত্রকাব্য অনুসরণ করে লেখা হয়।
চতুর্দশপদী কবিতাবলি: পাইকার মধুসূদন দত্তের শেষ কাব্য চতুর্দশ প্রতি
কবিতা বলি ১৮৬৬ সালে প্রকাশ করা হয়। এই
কবিতা
লেখার পূর্বে কবি অর্থের অভাবে এবং অর্থ লাভের উদ্দেশ্যে বিলেত গিয়েছিলেন এবং
সেখানে গিয়ে তার উল্টোটাই ঘটে সেখানে তার অর্থ অবস্থান আর অবনতি ঘটে।
তিনি বিদেশে উপলব্ধি করেন সেখানে আদর্শ সনেট কবিতাগুলো বেশ প্রচলিত এবং সেখান
থেকেই তিনি সনেট
কবিতা
রচনা করতে শুরু করেন এবং তার নাম দেন চতুর্দশপদী কবিতাবলি, এই
কবিতা
গুলোর মধ্যে দিয়ে তার আবেগ,অনুভূতি ও দেশের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ
ঘটিয়েছেন প্রকাশ করেন। তিনি যদি বিলেত না যেতেন তাহলে হয়তো আমরা এমন কবি এবং
কবিতা
কখনোই পেতাম না।
লেখকের মন্তব্য
রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনাকে মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনী ও মাইকেল
মধুসূদন দত্তের অজানা কিছু তথ্য সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে
অবশ্যই আপনার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে বাংলা সাহিত্য ও নাটকের নতুনত্ব
নিয়ে আসা কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত সম্পর্কে। আমাদের ওয়েব সাইটে নিয়মিত ভিজিট
করুন, আসসালামু আলাইকুম/আদাব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url