গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন?
আজকের আলোচ্য বিষয় গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি
খাবেন? গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কমপক্ষে কত প্রোটিন প্রয়োজন হয়? কত মাসের গর্ভের
বাচ্চার নড়াচড়া করে? ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে।
বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো।
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে গর্ভঅবস্থা নিয়ে আপনার যত প্রশ্ন ও সমস্যা
রয়েছে অবশ্যই সে সকল সমস্যার সমাধান ও উত্তর পাবেন এবং সুস্থ ও সবল থেকে গর্ভ
অবস্থার প্রতিটি মুহূর্তকে অনুভব করবেন।
ভূমিকা
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন? গর্ভঅবস্থা একটি মেয়ের জন্য কতটা স্পেশাল
মুহূর্ত তা শুধুমাত্র মেয়েরা বোঝে। মেয়েরা এ মুহূর্তগুলোকে চিন্তা মুক্ত ও
সুস্থ থেকে অনুভব করতে চায়। তবে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও অসুস্থতার কারণে তা পারে
না। এজন্য আজ আমি আপনাদের জন্য গর্ভ অবস্থায় প্রথম দিন থেকে শেষ পর্যন্ত মাস
পর্যন্ত যে সকল সমস্যা সৃষ্টি হয় তার সমাধান নিয়ে উক্ত আর্টিকেলটি লিখেছি।
আরো পড়ুনঃ
গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন? কি কি সবজি খাওয়া যাবে না, কি কি ফল
খাওয়া যাবে নাএকজন গর্ভবতী মায়ের ওজন কত হওয়া উচিত? কিভাবে ওজন ঠিক রাখবেন, কত
মাসের গর্ভের বাচ্চার নড়াচড়া করে? ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে নিম্নে বিস্তারিত
আলোচনা করেছি। আশা করা সম্পন্ন পোষ্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হবেন।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন?
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন? আজকের আলোচ্য বিষয়। গর্ভবতী মায়েদের
জন্য প্রথম তিন মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও খুশির সময় হয়ে থাকে। এ সময়
মায়েদের একটু বেশি যত্ন ও দেখভালের প্রয়োজন হয়। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে
কি খাবেন? আর কি খাবেন না এ প্রশ্ন নিয়ে মাদের মনে সব সময় ঘুরতে থাকে। আজ আমি
উক্ত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম-
প্রথম তিন মাসের গর্ভবতী মায়েদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির যোগান দিতে হয়
নিম্ন এগুলো পুষ্টি উপাদানের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
আয়রনঃ আমাদের দেশে গর্ভবতী মেয়েদের বেশিরভাগ আয়রনের ঘাটতি দেখা
দেয়। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চল গুলোতে। গর্ভবতী মায়ের আয়রনের ঘাটতি দেখা দিলে
গর্ভে বাচ্চার অক্সিজেনের মাত্রা কম পৌঁছায় ফলে বাচ্চা গঠন, বৃদ্ধি এবং সময়ের
আগে জন্ম নেয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়।এ সকল সমস্যা থেকে গর্ভবতী মায়েদের দূরে রাখতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন জাতীয়
খাবার যেমন পালং শাক, মুরগির মাংস, ছোলা, কলা, খেজুর, ডিম ইত্যাদি অবশ্যই খাদ্য
তালিকায় রাখতে হবে নিয়মিত খেতে হবে।
ফলিক অ্যাসিডঃ গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রথম তিন মাস অনেক বেশি
ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। কারণ এই সময় গর্ভপাত হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে। গর্ভপাত রোধ
করতে শরীরে ফলিক এসিড এর মাত্রা সঠিক থাকা অত্যন্ত জরুরী। এজন্য আমরা ডক্টরের
পরামর্শ অনুসারে ফলিক এসিডের বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট বা খাদ্য তালিকায় ফলিক এসিড
জাতীয় খাদ্য যেমন পেস্তা বাদাম, ছোলা, ডিম, আখড়ায়, মুগ, সূর্যমুখী এর বীজ,
ব্রকলি, চিয়া সিড, কমলা লেবু, শতমুখী ইত্যাদি খেতে পারি।
ক্যালসিয়ামঃ গর্ভাবস্থায় শিশুর শরীর গঠনে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত
জরুরী। গর্ভে শিশুর হাড়ের গঠনের সময় ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে তা মায়ের শরীর
থেকে ক্যালসিয়াম নিয়ে হাড়ের গঠন হয়। ফলে মায়ের বিভিন্ন ধরনের ক্যালসিয়াম
জনিত সমস্যা সৃষ্টি হয়। এজন্য অবশ্যই গর্ভ অবস্থায় মায়ের ক্যালসিয়ামের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার
যেমন-
ব্রকলি, বাঁধাকপি, দুধ, ঢেঁড়স, টোফু, কাটাযুক্ত, মাছ, ডুমুর, তিল, ডিম, পালং
শাক, তিসি,বিভিন্ন প্রকারের বাদাম, কিসমিস, দই, খেজুর ইত্যাদি অবশ্যই খাদ্য
তালিকায় রাখতে হবে এবং নিয়মিত খেতে হবে। এছাড়া ডক্টরের পরামর্শ অনুসারে
ক্যালসিয়ামের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।
জিংকঃ জিংক গর্ভবতী মা এবং গর্ভে থাকা বাচ্চার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। জিংক এর ঘাটতি দেখা দিলে মা ও গর্ভে থাকা বাচ্চার
দুজনেরই সমস্যা সৃষ্টি হয়। জিংক গর্ভে থাকা বাচ্চার কোষ গঠনে সহায়তা করে।
গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ১১ মিলিগ্রাম জিংক জাতীয় খাদ্য খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। জিংক জাতীয় খাদ্য হিসেবে আমরা গর্ভবতী মায়েদের দিতে পারি
যেমন- দুধ, মুরগির
মাংস, ডিম, বিভিন্ন প্রকারের ডাল, কাজু, সিমের বিচি, গরুর মাংস, ছোলা, বিভিন্ন
প্রকার বাদাম, খেজুর, কিসমিস ইত্যাদি। এছাড়া শরীরে জিনের অতিরিক্ত ঘাটতি দেখা
দিলে ডক্টরের পরামর্শ অনুসারে জিং ট্যাবলেট খাবেন।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য মা ও গর্ভে থাকা বাচ্চার
জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। নিয়মিত গর্ভে থাকা বাচ্চা এবং গর্ভবতী মায়ের জন্য
নিয়মিত প্রতিদিন ৮০গ্রাম প্রোটিন জাতীয় খাদ্য খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। প্রোটিন
জাতীয় খাদ্য হিসেবে মাছ, মাংস, ডিম, বিভিন্ন প্রকারের ডাল ইত্যাদি নিয়মিত খাদ্য
তালিকায় রেখে গর্ভবতী মায়েদের খেতে দেবো।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডঃ গর্ভ অবস্থায় গর্ভে থাকা বাচ্চার
স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়
উপাদান হলো ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। গর্ভ অবস্থা থেকে যদি গর্ভবতী মায়ের ওমেগা
থ্রি ফ্যাটি এসিডের কোন ঘাটতি না থাকে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে নিয়মিত খেয়ে থাকে
তাহলে জন্মের পর বাচ্চার দৃষ্টি শক্তি, ভাষার বিকাশ ও বুদ্ধি খুব ভালো হয়। এজন্য অবশ্যই গর্ভ অবস্থা থেকেই মেগা থ্রি ফ্যাটি এসির যুক্ত খাবার অথবা ডক্টরের
পরামর্শঅনুসারে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।
আশ জাতীয় খাবারঃ গর্ভবতী মায়েদের গর্ভ অবস্থায় নিয়মিত খাদ্য
খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। আজযুক্ত খাবার রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা গর্ভবতী
মায়েদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ খুব সহজেই দূর করতে সহায়তা করে। আজযুক্ত খাবার হিসেবে
মুখ ও ছোলা ভুট্টা সবুজ মটর শাকসবজি ব্রকলি অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
এছাড়া কখনোই ভুলবেন না গর্ভবতী মায়েদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার কথা।
আরো পড়ুনঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
উপরোক্তা আলোচনা থেকে আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে
কি খাবেন? এবং এই তিন মাস একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা শুধু
তার পরিবার এবং গর্ভবতী মাই বোঝে। এজন্য আজ আমি আপনাদের মাঝে গর্ভাবস্থায় প্রথম
তিন মাসে কি খাবেন? এ প্রশ্নের উত্তর ছাড়াও গর্ভাবস্থায় আরো একজন গর্ভবতী
মহিলার জন্য যে সকল তথ্যগুলো জানা অত্যন্ত জরুরি তা নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত
আলোচনা করেছি। আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে অনেক বেশি উপকৃত হবেন চলুন জেনে
নিই কি কি বিষয় নিয়ে আমি আপনাদের মাঝে আলোচনা করছি-
- গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কমপক্ষে কত প্রোটিন প্রয়োজন হয়?
- কত মাসের গর্ভের বাচ্চার নড়াচড়া করে?
- গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়?
- একজন গর্ভবতী মায়ের ওজন কত হওয়া উচিত?
- গর্ভবতী মায়েরা কিভাবে ওজন ঠিক রাখবেন
- গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
- গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কমপক্ষে কত প্রোটিন প্রয়োজন হয়?
যারা নতুন গর্ভবতী মা তাদের মনে কতইনা প্রশ্ন আসে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ
প্রশ্নগুলো হল গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন? গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন
কমপক্ষে কত প্রোটিন প্রয়োজন হয়? ইত্যাদি আরও বিভিন্ন এজন্য আজ আমি উপরে
আলোচনায় গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন? বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং এখন
গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কমপক্ষে কত প্রোটিন প্রয়োজন হয়? এ প্রশ্নের সঠিক সমাধান
জানতে হলে অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো-
প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গর্ভে থাকা বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশ, হাড়ের গঠন,
এন্টিবডি, এনজাইম,হরমোনাল শারীর গঠন ইত্যাদি করতে সহায়তা করে। এছাড়া গর্ভবতী
মায়ের স্তন বৃদ্ধি ও ইউটেরাস গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এজন্য প্রথম তিন মাসে
গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৮০ থেকে ১০০গ্রাম মত প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত।
এছাড়া তিন মাসের পর থেকে এ প্রোটিনের মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করতে থাকতে হবে।
কত মাসের গর্ভের বাচ্চার নড়াচড়া করে?
আজ আমি আপনাদের মাঝে গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন? প্রশ্নের উত্তর নিয়ে
বিস্তারিত আলোচনা করছি কিন্তু গর্ভবতী মা যখন প্রথম গর্ভধারণ করে তখন থেকে তার
মনে প্রশ্ন জাগে কত মাসে গর্ভের বাচ্চা নাড়াচাড়া করে? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার
জন্যই আজ আমি উক্ত আর্টিকেলটি লিখেছি। আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে আপনি সকল
প্রশ্নের উত্তর এবং সমাধান পাবেন-
- গর্ভ অবস্থায় পেটে বাচ্চার নাড়াচাড়া করা একটা স্বাভাবিক ঘটনা এবং বিষয়। অনেক সময় বাচ্চা সুস্থ ও সবল আছে কিনা তা নড়াচাড়া দেখে বোঝা যায়। অনেক সময় নাড়াচাড়ায় বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা দিলে বিপদে লক্ষণ হিসেবেও ধরা হয ।
- গর্ভে থাকা বাচ্চা যখন প্রথম নাড়াচাড়া করে সে অনুভূতিটা একটি মায়ের জন্য অনেক খুশির। সাধারণত এ নাড়াচাড়াটা ঝাকুনির মতো অনুভব হয়। আবার কখনো কখনো মনে হয় বাচ্চা চারিদিকে ঘুরছে। গর্ভকালীন সময় বারার সাথে সাথে এটা কখনো লাথিতে পরিণত হয় কখনো বাজোরে ঝাঁকনি অনুভূত হয়। এগুলো সাধারণত বাচ্চা সুস্থ রয়েছে তা বোঝায়।
- প্রথম চার মাস গর্ভবতী মায়েরা বাচ্চার নড়াচড়ার এ অনুভূতি অনুভব করতে পারে না। সাধারণত গর্ভকালীন সময় চার মাসের অধিক হলে অথবা ১৬ সপ্তাহ থেকে ২৪ সপ্তাহ সময়ের ভেতরে গর্ভে থাকা বাচ্চা নড়াচড়া করতে শুরু করে। কোন গর্ভবতী মায়ের যদি ২৪ সপ্তাহ পার হয়ে যাওয়ার পরেও বাচ্চা কোন প্রকার নড়াচাড়া না করে বা নড়াচড়া অনুভূতি না পান তাহলে অবশ্যই ডক্টরের পরামর্শ নেবেন।
- শিশুর নাড়াচাড়া বাড়তে থাকে আট থেকে নয় মাসের ভেতরে। গর্ভকালীন সময় বাড়ার সাথে সাথে এ নড়াচাড়া ধরন ও বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে ডক্টরদের মতে গর্ভে থাকা বাচ্চা সাধারণত বিকেলে ও সন্ধ্যাতে সবচেয়ে বেশি নাড়াচাড়া করে।
- বাচ্চা যখন মায়ের গর্ভে ঘুমায় তখন কোন প্রকার নাড়াচাড়া আপনি টের পাবে না তবে বাচ্চা সাধারণত ২০ থেকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞ ও ডক্টরে মতে গর্ভে থাকা বাচ্চার ঘুম চক্র একটানা কখনোই ৯০ মিনিটের বেশি থাকে না।
- গর্ভকালীন সময় যখন নয় মাস থেকে ১০ মাসের ভেতরে থাকে তখন বাচ্চা নাড়াচাড়া অনেক বেশি বা সর্বোচ্চ মাত্রায় থাকে। গর্ভে থাকা বাচ্চা প্রসবের আগ পর্যন্ত এ নাড়াচাড়া করতে থাকে।
- গর্ভবতী নারীর গর্ভে থাকা বাঁচা সুস্থ রয়েছে কিনা তা এ নড়াচড়া দেখে বোঝা যায়। নড়াচড়া যদি হঠাৎ কমে যায় তাহলে বুঝতে হবে বাচ্চার কোন সমস্যা হয়েছে। এজন্য পেটের ভেতরে বাচ্চার এই নড়াচড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা অবশ্য গর্ভবতী মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় এ নড়াচাড়া দেখেই বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয়।
গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়?
এখন আমি আপনাদের মাঝে গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন? মধ্যে একজন গর্ভবতী
মায়ের জন্য গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়? এ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে
বিস্তারিত আলোচনা করব যা জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। এ তথ্যগুলো না
জানলে অনেক সময় অনেক বেশি ক্ষতি হয়।এজন্য সঠিক তথ্য জানার জন্য অবশ্যই সম্পূর্ণ
আর্টিকেলটি পড়ুন বিশেষ অনুরোধ রইল। নিম্নে উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা
হলো-
সামুদ্রিক মাছঃ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের সামুদ্রিক মাছ খাওয়া
থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরি কারণ সামুদ্রিকের মাঝে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পারদ
যা বাচ্চার মস্তিষ্কের ক্ষতি ও বৃদ্ধি ব্যাহত করে। এজন্য গর্ভ অবস্থায় সামুদ্রিক
মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাদ্যঃ গর্ভ অবস্থায় কখনো কোমল পানীয়,
চকলেট, কফি, অতিরিক্ত চা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন কারণ এগুলোতে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে ক্যাফেইন। যা ভ্রনের ক্ষতি ও কখনো কখনো গর্ভপাত ঘটায়। এজন্য অবশ্যই গর্ব
অবস্থায় এগুলো থেকে দূরে থাকুন।
অ্যালকোহলঃ যখন থেকে চিন্তা করবেন আপনি মা হবেন তখন থেকেই মা-বাবা
দুজনেই বিভিন্ন প্রকার অ্যালকোহল ধূমপান অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে দূরে থাকবেন বা
একেবারেই বন্ধ করে দেবেন। কারণ এগুলোর প্রভাব অবশ্যই আপনার গর্ভে থাকা বাচ্চার
ওপর পড়বে। ধূমপান জাতীয় দ্রব্য স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতি তা হয়তো আপনি
অবশ্যই জানেন।
আধা সেদ্ধ খাবারঃ গর্ভ অবস্থার প্রথম তিন মাস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ
সময়। এ সময় খাওয়া-দাওয়া ও চলাফেরা একটু সাবধানেও যত্ন সহকারে করতে হয়। এ
সময় কখনোই সে আধা সেদ্ধ ডিম আধা সেদ্ধ মাছ মাংস কখনোই খাবেন না কারণ এগুলোতে
থাকে প্রচুর পরিমাণে সালমোনিলা ব্যাকটেরিয়া, লিস্টেরিয়া ব্যাকটেরিয়া যা আধা
সেদ্ধ অবস্থায় মারা যায় না।এ ব্যাকটেরিয়া গুলো কখনো কখনো গর্ভপাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এজন্য গর্ভাবস্থায় আধা সেদ্ধ কোনো কিছু খাবেন না।
কলিজাঃ গর্ভ অবস্থার প্রথমদিকে কখনোই কলিজা খাবেন না কারণ কলিজাতে
রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। ভিটামিন এ জাতীয় খাদ্য মা ও শিশুর জন্য
অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু প্রথম অবস্থায় তা অনেক সময় গর্ভপাতের কারণ হয়ে থাকে।
অপাস্তিরিত দুধঃ অপাস্তিরিত দুধ বলতে মূলত কাঁচা দুধকে বোঝানো হয়।
গর্ভ অবস্থায় কখনোই কাঁচা দুধ খাবেন না। কারণ কাঁচা অবস্থায় দুধের ভেতরে
বিভিন্ন ধরনের জীবাণু থাকে যা বাচ্চা ও মায়ের শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর।
দুধ যখন জাল দেওয়া হয় তখন এতে থাকা বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু মারা
যায়।
চিজ বা পনিরঃআমরা অনেকেই গর্ভ অবস্থায় চিজ বা পনির জাতীয় খাবার খেয়ে
থাকি। এটা গর্ভে থাকা বাঁচার জন্য অত্যন্ত ক্ষতি ও বিপদজনক। কারণ যে চিসটি আপনি
খাচ্ছেন তা পাস্তিরিত দুধ দিয়ে তৈরি না অপাস্তিরিত দুধ দিয়ে তৈরি আপনি জানেন
না। যদি তা অপাস্তিরিত দুধ দিয়ে তৈরি হয় তাহলে বাচ্চার জন্য অনেক বেশি ক্ষতি
হতে পারে। এজন্য গর্ভ অবস্থায় চিজ বা পনির জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
একজন গর্ভবতী মায়ের ওজন কত হওয়া উচিত?
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন? যেমন আপনার মনে প্রশ্ন জাগছে তেমনি একজন
গর্ভবতী মায়ের ওজন কত হওয়া উচিত? তা নিয়েও হয়তো একজন গর্ভবতী মহিলার মনে প্রশ্ন জাগছে। এ
প্রশ্নের সঠিক উত্তর ও সমাধান পেতে আমাদের পোস্টটি সম্পন্ন করার বিশেষ অনুরোধ রইল
এ সম্পর্কে নিম্ন বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- গর্ভ অবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের এক একজনার ওজন একেক রকমের বৃদ্ধি পায়। তবে একজন গর্ভবতী মায়ের ১২ থেকে ১৬ কেজি পর্যন্ত ওজন বৃদ্ধি হওয়া স্বাভাবিক ধরা হয়। তবে যাদের উচ্চতা ও বডি গঠন বেশি তাদের ১৭ কেজি পর্যন্ত বাড়লেও তা স্বাভাবিক ধরা হয়।
- গর্ভকালীন সময় নয় মাসকে যদি ৩ ভাগে ভাগ করা হয়, তাহলে কি পরিমাণে ওজন বৃদ্ধিকে, আদর্শ মাত্রা ধরা হয় তা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- প্রথম তিন মাসে স্বাভাবিকভাবে 0.৬-২.৬ কেজি
- দ্বিতীয় তিন মাসে প্রতি সপ্তাহে ৫৫০ গ্রাম থেকে ১.২ কেজি
- তৃতীয় তিন মাসে প্রতি সপ্তাহে ১৫০ গ্রাম থেকে ১.৩ কেজি
গর্ভকালীন সময়ে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে ওজন বেড়ে যায় তাহলে অনেক সময়
ডায়াবেটিস,প্রিম্যাচিউর প্রসব,উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-একলাম্পসিয়া ইত্যাদির ঝুঁকি
বেড়ে যায়। এছাড়া প্রসবের আগে ও পরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। আবার এর
কম ওজন হলে বাচ্চার ওজন ও বাচ্চা অসুস্থ জন্মায়। এছাড়া কখনো কখনো প্রিম্যাচিউর
প্রসব ঘটে। এজন্য অবশ্যই গর্ভ অবস্থায় একজন মায়ের ওজন ঠিক রাখা বা স্বাভাবিক
রাখা অত্যন্ত জরুরি।
গর্ভবতী মায়েরা কিভাবে ওজন ঠিক রাখবেন
গর্ভকালীন সময়ে তিন মাস ওজন বেশি একটা বাড়ে না। কারণ এ সময় অরুচি খাওয়ার
প্রতি অনীহা বমি বমি ভাব বেশি হয়। তবে এর পরে সময়কাল গুলোতে বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি
করার জন্য ও শারীরিকভাবে গঠন তৈরি করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেতে
হবে। মা ও শিশু দুজনের সুস্থ ও সবল থাকার জন্য অবশ্যই সঠিক ওজন বজায় রাখতে হবে।
নিম্নে গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন? জানার সাথে সাথে গর্ভবতী মায়েরা
কিভাবে ওজন ঠিক রাখবেন চলুন জেনে নেই-
- গর্ভাবস্থায় অবশ্যই সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
- প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার যেমন গম ভুট্টা ছোলা মুখ ইত্যাদি।
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম মাছ মাংস বিভিন্ন প্রকার বাদাম ইত্যাদি।
- বিভিন্ন প্রকারের মৌসুমী শাকসবজি ও মৌসুমী ফল খেতে হবে।
- প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ থেকে ১১ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
- বিভিন্ন প্রকারে তেলাক্ত ও বাইরের ফাস্টফুড খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
- একবারে প্রচুর পরিমাণে খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারে বারে খাবার খেতে হবে।
- অবশ্যই নিয়মিত হাঁটাচলা ও বিভিন্ন ধরনের হালকা ব্যায়াম করতে হবে।
- অবশ্যই সব সময় যেকোনো একটি ডাক্তারের শরণাপন্ন থাকবেন।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
গর্ভ অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে বিরত থাকতে হয়। যার জন্য গর্ভাবস্থায়
প্রথম তিন মাসে কি খাবেন? যেমন জানা জরুরী তেমনি গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া
যাবে না জানাও অত্যন্ত জরুরী যদি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে অবশ্যই
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার অনুরোধ রইল। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
আনারসঃ চিকিৎসকদের মতে আনারসে থাকা পুষ্টি উপাদান গর্ব অবস্থায়
নারীর জরায়ু সংকোচন করে। ফলে অনেক সময় গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এজন্য গর্ভ
অবস্থায় আনারস খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন।
তেতুলঃ তেতুলে রয়েছে ভিটামিন সি যা গর্ভ অবস্থায় প্রোজেস্টেরল
হরমোন ক্ষরণের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এই হরমোনের মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে কমে গেলে
জরায়ু সংকোচন হয় ফলে গর্ভপাত ঘটে। এজন্য গর্ভ অবস্থায় তেতুল খাওয়া উচিত নয়।
আঙ্গুরঃ আঙ্গুর অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে গর্ভ অবস্থায় গর্ভবতী মায়ের
ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যায়। যার কারণে গর্ভ অবস্থায় আঙ্গুর খাওয়া থেকে
বিরত থাকুন।
কলাঃ গর্ভবতী মায়ের যদি অতিরিক্ত পরিমাণে ডায়াবেটিস থাকে তাহলে
গর্ভ অবস্থায় কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
কাইটিনেজ উপাদান যা ডায়াবেটিস এর মাত্রা বাড়িয়ে গর্ভপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
পেঁপেঃ পেঁপে জরায়ু সংকোচন ঘটাতে বেশ ভূমিকা রাখে। এজন্য অনেক
চিকিৎসক গর্ভাবস্থায় পেঁপে খেতে নিষেধ করে।
তরমুজঃ তরমুজ আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে ফেলে। অনেক
সময় গর্ভ অবস্থায় এ টক্সিন ভ্রনের সংস্পর্শে এলে ভ্রনের বেশ ক্ষতি হয়। এজন্য
গর্ভ অবস্থায় তরমুজ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
খেজুরঃ পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল হল খেজুর। তবে গর্ভবতী মায়েদের
জন্য এটা খাওয়া নিষেধ। কারণ খেজুরে রয়েছে অনেকপরিমাণে পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি।
যা গর্ভবতী মায়েদের জরায়ুর পেশীকে সংকুচিত করে গর্ভপাত ঘটায়। এজন্য ডক্তরদের
মতে গর্ভ অবস্থায় খেজুর খাওয়া উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
গর্ভ অবস্থায় মা ও শিশু দুইজনকেই সুস্থ সবল রাখতে শাকসবজি খাওয়া অত্যন্ত জরুরী
কিন্তু গর্ভ অবস্থায় কিছু শাকসবজি রয়েছে যা গর্ভপাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এজন্যই যেমন আমাদের জানতে হবে গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন? তেমনি জানতে
হবে গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না। চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত নিম্নে
আলোচনা থেকে জেনে নিই-
সজিনাঃ পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজি হল সজিনা। গর্ভপাতের জন্য দায়ী
বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে একটি উপাদান হলো আলফা সিতেস্টেরল যার স্বাধীনতা প্রচুর
পরিমাণে রয়েছে। এজন্য গর্ভ অবস্থায় সজিনা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
করলাঃ করলা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। তবে করাতে রয়েছে
মারোডিসিন, গ্লাইকোলাইসিসি ও সেকনিক যা গর্ভবতী ও সন্তানের বেশ ক্ষতি করে
কাঁচা সবজিঃ পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা
আমাদের শরীরের জন্য খুবই ভালো তবে গর্ভবতী মায়েদের জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
কারণ এ উপাদানটি গর্ভপাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
না ধোয়া সবজিঃ বাজার থেকে নিয়ে আসার সাথে সাথে কোন শাকসবজি যেমন
টমেটো, গাজর, শসা গর্ভবতী মহিলা খাবেন না। কারণ না ধোয়া শাকসবজিতে বিভিন্ন ধরনের
ব্যাকটেরিয়া জীবাণু ও ভাইরাস লেগে থাকে। যা বাচ্চা ও মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য
বেশ ক্ষতিকর।
কাঁচা সবজিঃ কাঁচা সবজি খাওয়া পেট ও স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো
নয়। কাঁচা সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া জীবাণু ও
ভাইরাস। যেমন আমরা অনেকেই ফুলকপি বাঁধাকপি কাঁচা খেয়ে থাকি যা গর্ভবতী মায়েদের
জন্য মোটেও ভালো নয়।
লেখক এর মন্তব্য-গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন?
রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের
কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি উপরোক্ত সম্পন্ন পোষ্টটি পড়ে আপনি
উপকৃত হয়েছেন। আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয়-স্বজন ও
বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করে তাদেরকে গর্ভ অবস্থায় যে সকল সমস্যা হয় তার
সমাধান দিয়ে সাহায্য করুন। এমন আরো তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট
করুন, আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url