মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা
আসসালামু আলাইকুম/আদাব, আজকের আলোচ্য বিষয় মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও
অপকারিতা, মেথি শাক খেলে যে ৬ রোগ কাছেও ঘেষবে না ইত্যাদি। মেথি শাক সম্পর্কে
এগুলো প্রশ্নের উত্তর ছাড়াও যদি মেথির শাক সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান
তাহলে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো।
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে মেথি শাক সম্পর্কে আপনার যত প্রশ্ন ও সমস্যা
রয়েছে তার অবশ্যই সঠিক সমাধান উত্তর পাবেন এবং সঠিক, নিয়ম, পদ্ধতি, পরিমাণ,
সময়সীমা ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে সঠিকভাবে মেথি শাক খেতে পারবেন।
ভূমিকা
মেথি শাক সে প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক ক্ষেত্রে ভেষজ ঔষধি শাক হিসেবে বহুল
পরিচিত। মেথি দানা কিংবা মেথি পাতা সকল কিছুই বেশ উপকারী। অনেকেই মেথি ভেজানো
পানিকে সোনার সাথে তুলনা করে স্বাস্থ্যের জন্য এর উপকারিতা সম্পর্কে জানিয়েছে।
তাই আজ আমি আপনাদের মাঝে মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা, মেথি শাক
খেলে যে ৬ রোগ কাছেও ঘেষবে না,
মেথি শাক এ কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে, মেথির শাক কিভাবে রান্না করে অর্থাৎ
মেথির মেথি শাক এর রেসিপি ইত্যাদি আরো মেথির শাক সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত
আলোচনা করেছি। আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে অনেক বেশি উপকৃত হবেন।
মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা
আজকের আলোচ্য বিষয় মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা। আদিকাল হতে
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ভেষজ গুণসম্পন্ন মেথি বা মেথির শাক বহুল ব্যবহৃত একটি শাক।
মেথি বা মেথির শাকের এতটা পরিমাণ উপকারিতা রয়েছে যে তাপ বলে শেষ করা যাবে না।
অনেকেই মেথি ভেজানো পানিকে সোনার চেয়ে দামি বলা হয়েছে স্বাস্থ্যের জন্য। তাহলে
আপনারা বুঝতেই পারছেন যে মেথি শাক কতটা উপকারী হতে পারে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য।
চলুন জেনে নেই মেথি শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-
মেথির শাক খাওয়ার উপকারিতা
মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা মধ্যে প্রথমে আমরা আলোচনা করব মেথির
শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আমরা অনেকেই মেথির শাক ভেজে খেয়েছি, বিভিন্ন
রেসিপি ভেতরে দিয়েও খেয়েছি তবে এই মেথি শাক স্বাস্থ্যের জন্য আপনার কি কি
উপকারে আসতে পারে চলুন জেনে নেই-
- কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে মেথির শাক। রক্তের লিপিড লেভেলকে নিয়ন্ত্রণে আনতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় মেথির শাক কেননা এটি কোলেস্ট্রলের এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল ভালো ডিম সিটি লাইফ ও প্রোটিন এর মাত্রা কমিয়ে এইচ ডি এল বা হাইডেনিটি হাইপো প্রোটিনের বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক রাখতে সহায়তা করে।
- বর্তমানে অনেকে আছেন যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। মেথির শাক ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। শরীরে গ্লুকোজ মেটাবলিজম কে নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে। ভেষজ চিকিৎসায় মেথি শাকে এন্টিবায়োটিক হিসেবে গণ্য করা হয়।
- খাদ্যাভ্যাস সঠিক না থাকার কারণে বর্তমানে অনেকেই হার্টের সমস্যায় ভুগছি। মেথি শাকের আর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি প্লেটলেট বৃদ্ধির গতিকে কমায় ফলে হৃদপিন্ডের রক্ত জমে যাওয়ার মত বিপদজনক সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। এর ফলে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক জনিত সমস্যা বা হার্ট ব্লকের সমস্যা অনেকাংশে কমে যেতে পারে।
- পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান ও মেথি শাকের পুষ্টি উপাদান গুলো বিশেষ ভূমিকা রেখে থাকে।
- গ্যাস্ট্রিক বদহজম ও পেটের অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানও বিশেষ ভূমিকা রাখে মেথির শাক।
- লিভারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধানের সহায়ক হিসেবে কাজ করে মেথির শাক।
- ডায়রিয়া নিরাময় করতেও আপনি মেথির শাক খেতে পারেন।
- অল্প বয়সে মুখে বলি রেখা বা বার্ধক্য জনিত সমস্যা সমাধানেও মেথির পাতা বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- ত্বকে ব্রণ, বিভিন্ন দাগ, মেস্তার দাগ ইত্যাদি দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা মেথির পাতার ফেসপ্যাক কারণ মেথির পাত আমাদের ত্বকের ব্যাকটেরিয়াকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে।
- মেথিতে আইরন ও ভিটামিনের সংমিশ্রণ থাকায় চুলের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বিশেষ করে স্কার্ভের বিভিন্ন সংক্রমণজনিত সমস্যা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা রাখে মেথি পাতার হেয়ার প্যাক।
- অকালে চুল পেকে যাওয়া দূর করতে চাইলে সপ্তাহে দুই দিন মেথি পাতা দিয়ে তৈরি ব্যবহার করতে পারেন।
- মেথির শাক ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন পরিপূর্ণ একটি শাক হওয়ায় এটি আমাদের ইউরিন ক্লিয়ার করতে সহায়তা করে।
- মেথি শাক যেহেতু হাই ফাইবার যুক্ত একটি শাক ফলে এটি খেলে আমাদের পেট অনেকক্ষণ ধরে ভরা থাকবে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে আসে এতে আপনি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে বা ওজন নিয়ন্ত্রণ প্রসেসে মেথির শাক আপনার খাদ্য চাটে যুক্ত করলে এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণেও বেশ সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
- মেথির শাক খুব সহজে আমাদের পাকস্থলীর হজম ক্রিয়ার হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে ফলে অম্বলজনিত সমস্যায় ভুগলেও তা খুব সহজেই কমাতে সহায়তা করে।
- মেথির শাক আমাদের ত্বকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি যারটিক্যাল এর মাত্রা কমে ত্বকের আসল জেলা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।
- ভিটামিন "এ", "সি" এবং "কে" যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- রক্তে জমাট বাড়তে সহায়তা করে।
- মেথি পাতায় এন্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য থাকায় এটি আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। পেট এই শাক তিক্ত রস নিঃসরণে সহায়তা করে ফলে খুব সহজেই পেট হতে জমে থাকা গ্যাস্ট্রিক দূর অনেকটাই দূর করতে সহায়তা করে।
- মেথি পাতা কোষ্ঠকাঠিন্য. পেটে ব্যথা, অন্ত্রের প্রদাহ ভোগ ও আনসারের প্রদাহ দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- পুরুষের ও মহিলাদের টেস্টস্ট্রোজন হরমোন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে মেথির শাক।
- ক্যালকট্রোমেনাম ও পটাশিয়াম যা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে।
- নিলোনেলিখ ও নিলোনিক অ্যাসিড থাকে যা দেহের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।
- বাতের ব্যথা কমাতেও সহায়তা করে মেথির শাক।
- মেথির শাক আর্থ্রারাইটিস রোগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হারে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
- আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন। দীর্ঘদিন ধরে অ্যানিমিয়া রোগে ভুগলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের বাসা বাঁধতে পারে মেথির শাক খেলে আপনি এই সমস্যা থেকে অনেকটা সমাধান পেতে পারেন কারন মেথির সঙ্গে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা রক্তস্বল্পতা কমাতেও সাহায্য করে তাছাড়া রয়েছে ফসফরাস, প্রোটিন, জিংক ,ক্যালসিয়াম, ফাইবার রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
- গর্ভঅবস্থায় গর্ভবতী মেয়েদের মাতৃদুগ্ধ বাড়াতে সহায়তা করে মেথির শাক। কারণ মেথির শাক এ রয়েছে ডাইসগেনিন যা মাতৃদুগ্ধ বাড়াতে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। তবে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে এর জন্য অবশ্যই গর্ভ অবস্থায় গর্ভবতী মহিলার ডক্টরে পরামর্শ অনুসারে মেথি শাক খাবেন।
- মেথি শাক মরণব্যাধি ক্যান্সার রোগ থেকে মুক্তি দিতে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। শাক রক্ত থেকে টক্সিন জাতীয় পদার্থ গুলোকে বের করে দিতে সহায়তা করে ফলে ট্রাইক্লিকেরাইড বেস্ট ক্যান্সার হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয় এবং এর সম্ভাবনাও অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
- মেথি সাগে থাকা ভিটামিন এ ও সি চুলকে শক্তিশালী, চুলের গোড়া মজবুত, চুল ঝরে পড়া রোধ করে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- মেথি পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন প্রদাহ বিশেষ করে ফুসফুসের বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। ফুসফুসের প্রদাহের ফলে খুসখুসে কাশি, বংকার্টিস, শ্বাসকষ্ট, শরীরে বিভিন্ন স্থান ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, শরীরে বিভিন্ন প্রদানের ও ব্যথার সৃষ্টি হয়। এ সকল সমস্যা দূর করতে চাইলে এক সপ্তাহ মেথি পাতার রস সকালে খেলে অনেকটাই স্বস্তি পাবেন।
- মেথি শাক এ রয়েছে কার্বোহাইড্রেট এবং সুগার শোষণ করার ক্ষমতা ফলে শরীরে ইন্সুরেন্স এর মাত্রা কমে যায় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে মেথি শাক খেতে পারেন।
- মেথি কিডনির মধ্যে ক্যালসিফিকেশন তৈরি করতে সহায়তা করে। ফলে কিডনির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি হতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে এবং কিডনির মধ্যে পাথর সৃষ্টি হতে বাধা প্রদান করে।
- হার্ট এর শিরায় ও আছেউপশিরায় জমে থাকা অল্প পরিমাণ চর্বিগুলোকে ঝরাতেও সহায়তা করে মেথির শাক।
এতক্ষণ আমরা মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা মধ্যে মেথির শাক এর
উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করলাম এখন আমরা আলোচনা করব মেথি শাকের অপকারিতা
সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জেনে নেই-
মেথির শাক খাওয়ার অপকারিতা
এখন আমি আপনাদের মাঝে আলোচনা করব মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতার
মধ্যে মেথির শাক খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে। মেথির শাক সামান্য তিতা হলেও অনেক
সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এর উপকারিতা চেয়ে
অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনেক বেশি হতে পারে। চলুন জেনে নেই মেথির শাক
খাওয়ার অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিকরা গুলো কি কি-
- মেথির শাক খেতে অনেকটা তিতো স্বাদ ফলে অনেকের বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা হতে পারে।
- ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এটি বিপদজনক হতে পারে যেহেতু এটি রক্তে সুগারের মাত্র কমাতে সাহায্য করে ফলে অতিরিক্ত খেলে হঠাৎ রক্তের সুগারের মাত্রা কমে গিয়ে বিপদজনক হতে পারে।
- গর্ভবতী মহিলাদের অতিরিক্ত পরিমাণে বা দীর্ঘ সময় ধরে মেথি খেলে বিভিন্ন ধরনের বিপদজনক সমস্যা দেখা দিতে পারে এজন্য অবশ্যই খাওয়ার পূর্বে গর্ভবতী মহিলাদের ডক্টরের পরামর্শ মোতাবেক খেতে হবে।
- যেহেতু মেথির আগে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে এর জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে গ্যাস্ট্রিক, বদহজম, ডায়রিয়া ডায়রিয়া ও পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
- যে সকল ব্যক্তিদের অ্যালার্জি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে মেথির শাক অবশ্যই পরীক্ষিত হওয়ার পরে খাবেন নতুবা আপনার এলার্জি বেড়ে যেতে পারে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে
জানা-অজানা অনেক তথ্য সম্পর্কে জানলাম। আশা করি মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও
অপকারিতাতা সম্পর্কে জেনে আপনি অনেক বেশি উপকৃত হয়েছেন। তবে উপরোক্ত আলোচনা
ছাড়াও মেথির শাক সম্পর্কে আরো শতাধিক উপকারিতা রয়েছে। তাই চলুন সম্পর্কে আরো
কিছু জানা অজানা তথ্য সম্পর্কে জেনে নি যা আমি নিম্নে আলোচনা করেছি। যেমন-
- মেথি শাকে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে
- মেথি শাক english-নিয়মমেথি শাকের ছবি
- মেথি শাক খাওয়ার সঠিক সময়
- মেথি শাকের রেসিপি
- মেথি শাক খেলে যে ৬ রোগ কাছেও ঘেষবে না
মেথি শাকে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে
আপনারা মেথির শাকের মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত উপরোক্ত
আলোচনা থেকে জানতে পেরেছেন কিন্তু মেথি শাকে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা
সম্পর্কে কি আপনাদের সঠিক ধারণা রয়েছে। কোন খাবার খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আমাদের
জানা দরকার সে খাবারটিতে কি কি পুষ্টি উপাদান বা গুনাগুন রয়েছে কারণ সে খাবারটা
আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তখনই হবে যখন আমরা জানতে পারবো আমাদের শরীরে কি কি
পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি রয়েছে এবং কি খেলে সে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি মিটবে। তাই
চলুন জেনে নেই মেথি শাকে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে-
১০০ গ্রাম মেথি শাক থেকে আপনি পেতে পারেন
- ক্যালোরি- ৫০ ক্যালোরি
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট- ১.৫ গ্রাম (৭%)
- সোডিয়াম- ৬৭ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম- (২%), ৭৭০ মিলিগ্রাম(২২%)
- কার্বোহাইড্রেট - ৫৮ গ্রাম (১৯%)
- প্রোটিন - ২৩ গ্রাম (৪৬%)
- ভেষজ উপাদান
- আয়রন- ৮.৮ গ্রাম
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন বি ৬
- ভিটামিন বি ১
- ক্যালশিয়াম
- ম্যাগনেশিয়ামে
মেথি শাক english-মেথি শাকের ছবি
মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত আপনি জেনে নিয়েছেন কিন্তু
মেথি শাক english-মেথি শাকের ছবি কি আপনি জানেন বা দেখেছেন এজন্য আজ আমি আপনাদের
মাঝে মেথির ইংরেজি নাম ওমেথি শাকের ছবির দেখতে কেমন তুলে ধরলাম-
মেথি শাক english
মেথি শাক english হল fenugreek Leaves.
মেথি শাকের ছবি
মেথি শাকের ছবি নিম্নে দেয়া হলো-
মেথি শাক খাওয়ার সঠিক সময়
মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা যেমন জরুরি তেমনি মেথি
শাক খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কেও জানা অত্যন্ত জরুরি। কারণ কোন কিছু সঠিক
উপকারিতা পেতে হলে অবশ্যই তা সঠিক নিয়মে সঠিক পরিমাণে ও পদ্ধতিতে খাওয়ার
সম্পর্কে জানতে হবে। চলুন জেনে জানি। মেথির শাক রান্না করে খাওয়ার চাইতে এর জুস
তৈরি করে খাওয়া বেশি উপকারী। আপনি যদি মেথির শাক জুস করে খান তাহলে আপনার ত্বক,
চুল, ওজন কমানো,
ডায়াবেটিস, কোলেস্ট্রল, হাড়ের চিকিৎসা, টেস্টও ইস্ট্রোজেন, পাকস্থলী চিকিৎসা,
ইউরিন ক্লিয়ার করতে, লিভার কে সুস্থ রাখতে ও স্বাস্থ্যের বিশেষ উপকারিতা পাবেন।
এছাড়াও আপনি দুপুরের খাদ্য তালিকায় এই শাককে রাখতে পারেন। যদি কাঁচা পাতার রস
তৈরি করে খেতে চান তাহলে অবশ্যই ৫০ থেকে ৭০ গ্রাম নিয়ে জুস করে খাবেন। তবে
প্রথমে ৫০ গ্রাম নিয়ে খাওয়াই ভালো কারণ এতে আপনার শরীরে এটি একসেপ্ট বা গ্রহণ
করছে কিনা তা জানা যাবে।
আরো পড়ুনঃ ডাবের পানির ৫৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা
এর জন্য প্রথমে আপনি সকালে ৫০ গ্রাম পাতা ডাল সহ নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে
কিংবা পাটায় পিষে পেস্ট করে তৈরি করে নেবেন। ব্লেন্ডারে পেস্ট করলে এর ভেতরে এক
গ্লাস পানি দিয়ে দিবেন এবং পাটায় পিষে করলে পরে এক গ্লাস পানি দিয়ে নেবেন। এটি
আপনি সরাসরি সকাল বেলা খালি পেটে না খেয়ে প্রথমে হালকা হাঁটাচলা করার পর হালকা
গরম জল পান করে আধাঘন্টা পরে মেথি পাতার জুস্টি খেয়ে নিতে পারেন। আপনারা যদি
কাঁচা নীতি পাতা না পান তাহলে
শুকনো কাস্তুরি মেথিয়া ও খেতে পারেন।আপনি যদি মেথির শাক রান্না করে খেতে চান
তাহলে অবশ্যই অল্প তেল,পেঁয়াজ, মরিচ ও রসুন দিয়ে রান্না করে খাবেন। অবশ্যই
লক্ষ্য রাখবেন সাতটি যেন দীর্ঘ সময় ধরে না রান্না করে অল্প সময়ের ভেতরে রান্না
করে ফেলবেন অর্থাৎ ১০ মিনিটের মধ্যেই রান্না শেষ করে ফেলবেন। অবশ্যই ঢাকনা দিয়ে
রান্না করবেন এবং জল ফেলে দেবেন না। সম্ভব হলে পিংক সল্ট ব্যবহার করে রান্না
করবেন।
শাক রান্না করার পর কখনই ফ্রিজে রেখে খাবেন না বা পুনরায় গরম করে খাবেন না এতে
এর পুষ্টিগুণ আগুন নষ্ট হয়ে যায় এবং সঠিক উপকারিতা টা পাবেন না। সর্বোত্তম
উপকারিতা পেতে হলে অবশ্যই রান্নার করার পর থেকে পাঁচ ঘন্টার বেশি সময় না রেখে
তার আগে খেয়ে নিতে হবে।
মেথি শাকের রেসিপি
আপনারা তো মেথির শাকের মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে
জানলেন কিন্তু সেই শাকের উপকারিতা কিভাবে পাবেন কিভাবে খেলে আপনি বেশি উপকারিতা
পাবেন তাই আমি আপনাদের মাঝে মেথি শাকের রেসিপি নিয়ে এসেছি। মেথির শাক আপনি
বিভিন্নভাবে খেতে পারেন মেথি শাকের ভাজি তৈরি করে সবজির ভেতরে মেথি শাক দিয়ে
কিংবা মেথির পরোটা তৈরি করে চলুন দেখি নেই মেথির শাকের কিছু রেসিপি
মেথির পরোটা
উপকরণ
- আটা
- মেথির শাক
- জোয়ান
- ধনেপাতা
- ধনে গুঁড়ো
- মরিচ গুঁড়ো
- কাঁচা মরিচ
- স্বাদ অনুসারে লবণ
তৈরি প্রণালী: উপুক্ত সকল উপকরণগুলো ভালো করে আটা সঙ্গে মিশিয়ে নেবেন এবং
অল্প অল্প সাদা তেল এবং পানি দিয়ে মাখিয়ে নেবেন। এরপর এরপর মিশ্রণটি 30 মিনিটের
জন্য ঢাকনা দিয়ে উপরে সুতির কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে দেবেন। এরপর বেলে পরোটা আকারে
ভেজে নিন।
সবজি দিয়ে মেথির শাক
উপকরণ
- গাজর
- সিম
- বেগুন
- মটরশুঁটি
- ফুলকপি
- কুমড়ো
- আলু
- কালোজিরা
- স্বাদ অনুসারে লবণ
- কাঁচা মরিচ
- আদাজিরা বাটা
- মেথি শাক
তৈরি প্রণালী: আপনার পছন্দ অনুসারে অনেকগুলো সবজি নিয়ে ধুয়ে কেটে নেবেন।
সবজি ধুয়ে কাটলে এর পুষ্টিগুণ গুলো কখনো থাকে। আপনি আপনার পছন্দ অনুসারে যে কোন
সবজি নিয়েই তৈরি করতে পারবেন মেথি শাকের ঘন্ট। এরপর একটি পাতিলে কালোজিরা ও লবণ
হলুদ দিয়ে সকল সবজিগুলো ভেজে নিন। করে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে সবজিগুলো সিদ্ধ
হয়ে আসলে কাঁচা মরিচ আদা রসুন বাটা দিয়ে হালকা কষিয়ে নেবেন এবং মেথির শাক
ছিটিয়ে দেবেন। প্রয়োজন অনুসারে সামান্য জল দিয়ে দমে রেখে দিয়ে গরম গরম খেতে
পারবেন।
মেথির শাক ভাজা
উপকরণ
- আলু
- কুমড়ো
- মেথি শাক
- কাঁচা মরিচ
- কালোজিরা
- স্বাদ অনুসারে লবণ
- রসুন
- পেঁয়াজ
- কালোজিরা
তৈরি প্রণালী: একটি পাত্রে কুচি কুচি করে আলু ও কুমড়ো কেটে মেখে শাক
সহকারে লবণ ও মরিচ দিয়ে সেদ্ধ করে নেবেন। সেদ্ধ হয়ে আসলে তেলে কালোজিরা,
পেঁয়াজ, রসুন দিয়ে ফোড়ন দিয়ে নেবেন। হালকা নাড়াচা করে পরিবেশন করুন গরম গরম
মেথির শাক ভাজি।
মেথি শাক খেলে যে ৬ রোগ কাছেও ঘেষবে না
মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা জানার সাথে সাথে আমাদের জানা প্রয়োজন
মেথি শাক খেলে যে ৬ রোগ কাছেও ঘেষবে না এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানি। আমাদের শরীরকে
সুস্থ সবল ও প্রাণবন্তক রাখতে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় যে কোন একটি শাক রাখার
পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরো পড়ুনঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
আর সে শাকটি যদি হয় আমাদের শরীরে প্রয়োজন সকল
উপাদানে ভরপুর। এমন একটি শাক হল মেথির শাক। মেথি শাক খেলে যে ৬ রোগ কাছেও ঘেষবে
না চলুন সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে জেনে নিই-
সুগার বা ডায়াবেটিস কমাতে: যাদের অতিরিক্ত পরিমাণে ডায়াবেটিস রয়েছে এবং
সহজে কমতে চায় না তারা নিয়মিত মেথি ভেজানো পানি পান করতে পারে এটা খুব দ্রুত
রক্তে থাকা সুগারের পরিমাণ কমে দিতে পারে। কিন্তু তা অবশ্যই ডক্টরের পরামর্শ
অনুসারে পান করবেন কারণ হঠাৎ করে দ্রুত রক্তের সুগারের পরিমাণ কমে গেলে ক্ষতি হতে
পারে।
ওজন ও চর্বি কমাতে: মেথিতে রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন
পুষ্টি উপাদান ফাইবার। ফাইবার আমাদের পেটকে অনেকক্ষণ ধরে ভরা রাখতে বা ক্ষুধা কম
লাগাতে সাহায্য করে। এতে আমাদের খাওয়ার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কমে যায় ফলে আপনি
খুব সহজেই মেথি শাক খেয়ে ওজন ও চর্বি কমাতে পারবেন।
কোলেস্টেরল কমাতে: কোলেস্টেরল দ্রুত বাড়ার সমস্যায় আমরা অনেকেই ভুগছি।
আর দ্রুত কোলেস্টেরল কমানোর জন্য আমরা নিয়মিত মেথির শাক খেতে পারি। বিশেষজ্ঞদের
মতে নিয়মিত মেথির শাক খেলে খুব দ্রুত কোলেস্টেরল মাত্রা কম থাকে।
ত্বক ও চুলের যত্নে: মেথির শাক এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি
পুষ্টি উপাদান। আমাদের ত্বকের মৃত সেলকে প্রানোবন্ধক করে তুলে ত্বকে উজ্জ্বল ও
নরম করে দেয়।এছাড়া ত্বকের উস্কতা,শুষ্কতা,ব্রণ,মেস্তা,চোখের নিচে কালো ভাব
ইত্যাদি খুব সহজে দূর করতে পারে।
চুলে যত্নে: মেথির জুড়ি মেলা ভার। চুলে যত রকমের সমস্যা সৃষ্টি হয় তার
সকল সমস্যায় খুব সহজে দূর করতে পারে যেমন চুল ফেটে যাওয়া চুল ওঠা, মাথার
খুশকি,মাথার উকুন,প্রাণহীন চুল, শুষ্ক চুল ইত্যাদি নানা সমস্যা।
ইউরিক অ্যাসিড কমাতে: বর্তমান যুগে আমরা অনেকেই ইউরিন ক্লিয়ার বা ইউরিক
এসিড নামক রোগে ভুগছি। এর মেন সমস্যা হল শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে ক্ষতিকর পদার্থ
ইউরিন এর মাধ্যমে বের না হওয়া। মেথির শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন রকম ভিটামিনের ভরপুর ও ফাইবার যা খুব সহজেই
ইউরিনকে ক্লিয়ার করতে পারে।
লেখকের মন্তব্য-মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা
রাইট বটন আজকে এ পোস্টটির মাধ্যমে মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা
ছাড়াও মেথির শাক সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও জানা অজানা তথ্য সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছে। আশা করি উপরুক্ত সম্পন্ন পোষ্টটি পড়ে আপনি
উপকৃত হয়েছেন। আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয়-স্বজন ও
বন্ধু-বান্ধবের সাথে মেথি শাক খাওয়ার ৩৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানাতে
পোস্টটি শেয়ার করুন। এমন আরও তথ্য জানতে আমাদের ওয়েব সাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন,
সাবস্ক্রাইব করে রাখুন, ফলো করে রাখুন এবং বেশি বেশি শেয়ার করুন, আসসালামু
আলাইকুম/আদাব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url