ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম জেনে নিন
আসসালামু আলাইকুম/আদাব, আজকের আলোচ্য বিষয় হলো ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম এবং ভাংতি
রোজা রাখার নিয়ত ইত্যাদি ছাড়াও ভাংতি রোজা সম্পর্কে জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য।
এই পোস্টে থাকছে কাজা রোজার নিয়ত কখন করতে হবে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক।
পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ থাকলো, যাতে আপনি ভাংতি রোজা রাখার
নিয়ম এবং ভাংতি রোজা রাখার নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। আশা করছি, এতে
আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর এবং সঠিক নির্দেশনা পাবেন।
ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম জেনে নিন
এখন আমি আপনাদের সাথে ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম সম্পর্কে শেয়ার করতে যাচ্ছি। ভাংতি
রোজা হলো এমন একটি রোজা, যা কোনো কারণে পূর্ণভাবে রাখা সম্ভব হয়নি, এবং পরে তা
পূর্ণ করা হয়। সাধারণত, যে রোজা কোনো কারণে ভেঙে যায় বা রাখার সুযোগ হয়নি, তা
পরবর্তী সময়ে রাখার মাধ্যমে পূর্ণ করা হয়। তবে, এটি কিছু বিশেষ নিয়মের মধ্যে হতে
হবে।
কি কারণে ভাংতি রোজা হতে পারে?
রোজা ভাঙার জন্য কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে, যেমনঃ
- অসুস্থতাঃ যদি কোনো ব্যক্তির শারীরিক সমস্যা থাকে, যেমন জ্বর বা অন্য কোনো গুরুতর অসুখ, তাহলে রোজা রাখা সম্ভব হয় না। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পরে রোজা রাখতে হবে।
- যাত্রা বা দীর্ঘ ভ্রমণঃ যদি কেউ দীর্ঘ ভ্রমণে থাকে এবং তার জন্য রোজা রাখা কঠিন হয়, তবে সে ভাংতি রোজা রাখতে পারে। কিন্তু যাত্রা শেষে এই রোজা পরবর্তীতে পূর্ণ করতে হবে।
- মাসিক বা প্রসবের পরঃ মহিলাদের মাসিক বা প্রসবকালীন সময়ে রোজা রাখার প্রয়োজন নেই, তবে পরে তা পূর্ণ করতে হবে।
ভাংতি রোজা পূর্ণ করার নিয়মঃ যখন ভাংতি রোজা থাকে, তখন এটি পরবর্তীতে
পূর্ণ করতে হবে। তবে এখানে কিছু নিয়ম আছেঃ
- প্রথমে রোজা রাখার কারণে আল্লাহর কাছে তাওবা করুন। যারা ভুলক্রমে রোজা ভেঙে ফেলেন, তাদের তাওবা করা উচিত এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
- এটি নির্দিষ্ট সময়ে পূর্ণ করুন। যদি কোনো কারণে রোজা ভেঙে যায়, তা অবশ্যই পরবর্তী সময়ে পূর্ণ করতে হবে। তবে, এটি যত দ্রুত সম্ভব করতে হবে, যতটা সম্ভব পরে না ফেলে।
- ঐদিনের রোজা সংক্রান্ত নিয়ম মানুন। যেমন, সুবহে সাদিকের আগে সেহরি খেয়ে রোজা শুরু করতে হবে এবং মাগরিবের সময়ে ইফতার করতে হবে।
- ঋণ বা অন্য কোনো প্রয়োজনের কারণে রোজা পূর্ণ করতে হলে, সে সময়ে আদায় করুন।
ভাংতি রোজা রাখার পদ্ধতিঃ যতটা সম্ভব, মানুষ যেন নিজের অসুস্থতা বা
অন্যান্য কারণে নির্দিষ্ট সময়ে রোজা না ভাঙে, তার জন্য কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করা
উচিতঃ
- স্বাস্থ্য সচেতনতাঃ রোজা রাখার সময় শারীরিক অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। অসুস্থ হলে পরামর্শ নিন এবং অযথা শরীরের উপর চাপ না দেওয়ার চেষ্টা করুন।
- যাত্রা পরিকল্পনাঃ দীর্ঘ যাত্রার জন্য যদি রোজা রাখা কঠিন মনে হয়, তবে সেক্ষেত্রে রোজা ভেঙে পরবর্তী সময়ে তা পূর্ণ করা যেতে পারে। তবে রোজা ভাঙার আগে, শরীরের অবস্থার প্রতি সতর্ক থাকতে হবে।
- মাসিক এবং প্রসবকালীনঃ মহিলাদের জন্য এটি একটি সাধারণ নিয়ম যে, মাসিক বা প্রসবকালীন সময়ে রোজা রাখার প্রয়োজন নেই, তবে পরবর্তীতে তা পূর্ণ করতে হবে।
ভাংতি রোজা না রাখলে কি হতে পারে?
যদি কেউ ভাংতি রোজা রাখার পরে তা পরিপূর্ণভাবে না রাখে, তবে তার জন্য ধর্মীয়
দৃষ্টিকোণ থেকে তাপল এবং শাস্তির সম্ভাবনা থাকতে পারে। তবে, আল্লাহ দয়ালু, এবং
পরিপূর্ণ রোজা না রাখতে পারলে পরবর্তী সময়ে তা সম্পন্ন করাটাই সঠিক পদ্ধতি।
আরো পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজের নিয়ম - শবে কদরের ফজিলত
ভাংতি রোজা হলো এমন একটি ব্যবস্থা যা ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক বা অন্যান্য কারণে
অসম্পূর্ণ রোজাকে পরবর্তীতে পূর্ণ করার সুযোগ দেয়। এটি ইসলামের একটি বিশেষ
সহানুভূতিপূর্ণ দিক, যা ব্যক্তি বা মুসলমানদের রোজা রাখার জন্য সুপ্ত উপায় হিসেবে
কাজ করে থাকে।
ভাংতি রোজা রাখার নিয়ত
উপরোক্ত আলোচনায় ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম জানিয়েছি চলুন এখন ভাংতি রোজা রাখার
নিয়ত সম্পর্কে জানি। রোজা রাখা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। অনেক সময় কিছু
বিশেষ কারণে রোজা ভাঙতে হতে পারে। তবে, এ ক্ষেত্রে নিয়ত করা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। ভাংতি রোজা রাখার সময় নির্দিষ্ট নিয়ত থাকা উচিত, যাতে আল্লাহর
রাস্তায় তা সম্পূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্য হয়। নিচে ভাংতি রোজা রাখার নিয়ত দেয়া
হলোঃ
আরবি নিয়তঃ
نويت أن أفطر هذا اليوم من رمضان تقربا إلى الله تعالى
বাংলা অনুবাদঃ
"আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আজকের রোজা ভাঙার নিয়ত করছি।"
নিয়তের গুরুত্বঃ রোজা ভাঙার সময় সঠিক নিয়ত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এটি আল্লাহর কাছে আপনার ইবাদতের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায় এবং আপনার মনোভাব পরিষ্কার
রাখে। নিয়ত অবশ্যই অন্তরে হতে হবে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় হতে হবে, যা পুরোপুরি
ঈমানের সাথে সম্পন্ন হয়।
নফল রোজার নিয়ত
ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম এবং ভাংতি রোজা রাখার নিয়ত সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন
জানি নফল রোজার নিয়ত সম্পর্কে। নফল রোজা (ঐচ্ছিক রোজা) মুসলমানদের জন্য একটি
গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নফল রোজা পালন করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে বাড়তি সওয়াব
অর্জন করা যায় এবং নিজেদের আত্মশুদ্ধি ও নৈকট্য লাভ করা সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ আইয়ামে বীজের রোজার ফজিলত জেনে নিন
নফল রোজা পালন করতে হলে সঠিক নিয়ত করতে হবে, যা মূল ইবাদতের গ্রহণযোগ্যতার জন্য
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নফল রোজার নিয়ত করার সময়, মনে রাখতে হবে যে, এটি একটি
পবিত্র ইবাদত, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পালন করা হয়।
নফল রোজার নিয়ত (আরবি)
نَوَيْتُ صَوْمَ يَوْمِ غَدٍ عَنْ نَفْلٍ لِلَّهِ تَعَالَى
নাওয়াইতু সাওমা ইয়াওমি গাদিন আন নাফলিন লিল্লাহি তাআলা
এই নিয়তটি সাধারণত বাংলা উচ্চারণে এভাবে বলা যায়ঃ "আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির
জন্য আগামীকাল নফল রোজা রাখার নিয়ত করছি।"
নফল রোজার নিয়ত (বাংলা)
"আমি আল্লাহর জন্য নফল রোজা রাখার নিয়ত করছি।"
এখানে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট একটি দিনের নফল রোজা পালন করার
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
নফল রোজা রাখার উদ্দেশ্য ও সওয়াবঃ
- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভঃ নফল রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আমরা প্রতিদিনের নিয়মিত কাজ থেকে সময় বের করে নফল রোজা রাখলে আল্লাহর কাছে আরও কাছাকাছি যেতে পারি।
- অতিরিক্ত সওয়াবঃ ফরজ রোজার পর, নফল রোজার মাধ্যমে আরো সওয়াব অর্জন করা সম্ভব। আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন যে, একজন বান্দা যত বেশি ইবাদত করবে, ততই তাঁর সওয়াব বাড়বে।
- আত্মশুদ্ধিঃ নফল রোজা শুধু শারীরিক আত্মসংযমই নয়, এটি একজন মানুষের মানসিক ও আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্যও খুব উপকারী।
নফল রোজা কখন রাখতে পারি?
এটি কোনও নির্দিষ্ট সময়ে রাখা যায় না, বরং যেকোনো দিন নফল রোজা রাখা যেতে পারে,
তবে শাওয়াল মাসের প্রথম ছয়দিন বা আছুরা (১০ মুহাররম) ইত্যাদি বিশেষ সময়ে নফল রোজা
রাখলে আরো বেশি সওয়াব অর্জিত হয়।
ফরজ রোজার নিয়ত কখন করতে হয়
উপরোক্ত আলোচনায় ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম এবং ভাংতি রোজা রাখার নিয়ত জানিয়েছি
চলুন এখন ফরজ রোজার নিয়ত কখন করতে হয় সম্পর্কে জানি। ফরজ রোজার নিয়ত একটি
গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা রোজা পালন করার পূর্বে মনে মনে করতে হয়। ইসলামে, ফরজ রোজার
জন্য নিয়ত করার বিধান রয়েছে, যা রোজার শুরুতে করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া জেনে নিন
নিয়ত করা মানে হলো, রোজা রাখার উদ্দেশ্যে নিজের মন ও হৃদয়ে দৃঢ় সংকল্প করা।
এটি অবশ্যই রাতের সময়ে করা উচিত, এবং ফজর নামাজের আগে এর পূর্ণতা পাওয়া উচিত।
নিয়ত করতে, মুসলমানদের উদ্দেশ্য থাকে যে তারা আল্লাহর আদেশ পালন করার জন্য এবং
তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোজা রাখবে।
নিয়ত অবশ্যই অন্তরে হতে হবে, অর্থাৎ মুখে উচ্চারণ করা শর্ত নয়, তবে মুখে বললেও
তা গ্রহণযোগ্য। একটি সাধারণ নিয়ত হতে পারে: "আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
আগামীকাল সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত রোজা রাখব।" এটি মনে রাখাও জরুরি যে, নিয়ত
করার সময় কোনো ধরনের সন্দেহ বা দোটানা থাকা উচিত নয়। রোজার নিয়ত পুরোপুরি এবং
দৃঢ়চিত্তে করতে হবে যাতে কোনো অস্পষ্টতা না থাকে।
নিয়ত করার সময় কেবল এক দিন বা এক মাসের জন্য নয়, বরং সারা মাসের জন্য রোজা
পালন করার সংকল্প থাকতে হবে। রোজা শুরুর আগে নিয়ত করার মাধ্যমে, এটি একটি স্পষ্ট
সংকল্প হয়ে ওঠে যে, মুসলমান ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তাঁর রোজা গ্রহণযোগ্য করতে
চায় এবং তাঁর দয়ালুতা ও ক্ষমা লাভের চেষ্টা করছে। এটি রোজার গুরুত্ব এবং
উদ্দেশ্য উপলব্ধি করার জন্য একটি মৌলিক পদক্ষেপ।
কাজা রোজার নিয়ত কখন করতে হবে
ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম এবং ভাংতি রোজা রাখার নিয়ত সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন
জানি কাজা রোজার নিয়ত কখন করতে হবে সম্পর্কে। কাজা রোজার নিয়ত ফজর নামাজের আগে
করা উচিত। কাজা রোজা হচ্ছে সেই রোজা, যা কোনো কারণে অতীতে পালন করা হয়নি বা ছুটে
গিয়েছিল। এই রোজা পুনরায় পালন করার জন্য, প্রতিটি কাজা রোজার জন্য আলাদা নিয়ত
করা জরুরি।
নিয়তটি অন্তরে করতে হবে এবং মুখে বলার প্রয়োজন নেই। সাধারণত, কাজা রোজার নিয়ত
করতে, এর উদ্দেশ্য এবং সময় নির্ধারণ করতে হবে যেমন- "আমি আল্লাহর জন্য আগামীকাল
কাজা রোজা রাখব।" এটি প্রতিদিনের নিয়মিত রোজা থেকে আলাদা, কারণ এটি অতীতের কোনো
একটি রোজার ক্ষতি পূরণ করার জন্য রাখা হয়। কাজা রোজার নিয়ত স্পষ্টভাবে করতে
হবে, যাতে কোনো দ্বিধা বা সংশয় না থাকে।
মহিলাদের কাজা রোজা রাখার নিয়ম
ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম এবং ভাংতি রোজা রাখার নিয়ত সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন
জানি মহিলাদের কাজা রোজা রাখার নিয়ম সম্পর্কে। মহিলাদের কাজা রোজা রাখার নিয়ম
কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবে মূলত তা পুরুষদের মতোই। যে মহিলা কোনো কারণে রোজা
রাখতে পারেননি, যেমন মাসিক, সন্তান জন্মদানের পর বা অন্য কোনো কারণে রোজা ছুটে
গিয়েছে,
তাকে সেই রোজাগুলি পরে কাজা করতে হবে। কাজা রোজা রাখার সময়, মহিলা অবশ্যই
নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলবেন। নিয়ত অবশ্যই সঠিকভাবে অন্তরে করতে হবে এবং ফজর
নামাজের আগে তা করতে হবে। কাজা রোজা পালন করার জন্য আলাদা নিয়ত করা প্রয়োজন,
যেমন: "আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আজ কাজা রোজা রাখব।" একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
হলো,
কাজা রোজা রাখার সময় সেহরি খাওয়ার পরেই রোজা শুরু করতে হবে এবং সঠিক সময়ে
ইফতার করতে হবে। মহিলারা যদি একাধিক কাজা রোজা রেখে থাকেন, তবে তারা ইচ্ছেমতো এক
বা একাধিক রোজা একসাথে রাখতে পারেন, তবে প্রতিটি রোজার জন্য নিয়ত করতে হবে। এই
রোজাগুলি শাস্তি বা গুনাহ মুছতে,
তথা অতীতের অনিচ্ছাকৃত অভাব পূর্ণ করতে রাখা হয়, তাই কাজা রোজার নিয়ম যথাযথভাবে
পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহিলাদের উচিত, কাজা রোজাগুলি যত দ্রুত সম্ভব
পূর্ণ করা, কারণ এসব রোজা যত দেরি হবে, তত বেশি কাজা রোজা জমে যেতে পারে।
সেহেরী না খেয়ে কি কাজা রোজা রাখা যাবে
উপরোক্ত আলোচনায় ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম এবং ভাংতি রোজা রাখার নিয়ত জানিয়েছি
চলুন এখন সেহেরী না খেয়ে কি কাজা রোজা রাখা যাবে সম্পর্কে জানি। সেহরি না খেয়ে
কাজা রোজা রাখা সম্ভব, তবে এটি শর্তসাপেক্ষ। ইসলামে, সেহরি খাওয়া রোজা রাখার
জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এবং এটি রোজার সঠিকতা এবং সুবিধা অর্জনের জন্য
প্রয়োজনীয়।
তবে, যদি কোনো কারণে সেহরি খাওয়া সম্ভব না হয়, যেমন ভুলে গিয়ে বা সময়ের অভাবে
সেহরি না খাওয়া, তাহলে কাজা রোজা রাখা যাবে। সেহরি না খেলে, রোজা পবিত্র হবে এবং
তা পালন করা যাবে, কিন্তু সেহরি খাওয়া রোজার শক্তি থেকে রক্ষা করে এবং দিনের
সময় শক্তি বাড়ায়। কাজা রোজার ক্ষেত্রে, এটি এক ধরনের ঋণ বা প্রতিশোধ রূপে পালন
করা হয়। এটি অবশ্যই নিয়ম ও নির্ধারিত সময়ে রাখতে হবে,
তবে সেহরি খাওয়া একটি সুন্নত, যা ইবাদতের সৌন্দর্য বাড়ায়। কাজা রোজা রাখার
সময় সেহরি না খেলে, রোজা সম্পূর্ণ হবে, তবে সেহরি খেলে রোজার বরকত অনেক বাড়ে।
সেহরি খাওয়া শুধু শারীরিক সহায়ক নয়, এটি মানসিকভাবে একজন মুসলমানকে রোজার জন্য
প্রস্তুত করতে সহায়ক। অতএব, সেহরি না খেয়ে কাজা রোজা রাখা যাবে, তবে রোজার
সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার জন্য সেহরি খাওয়া উচিত।
রমজানের আগে রোজা কাজা না করলে কি হয়?
ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম এবং ভাংতি রোজা রাখার নিয়ত সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন
জানি রমজানের আগে রোজা কাজা না করলে কি হয়? সম্পর্কে। রমজানের আগে রোজা কাজা না
করলে, তা একজন মুসলমানের উপর আল্লাহর অজানা ঋণ হয়ে থাকে। কাজা রোজা হল সেই রোজা,
যা কোনো কারণে সময়মতো রাখা হয়নি বা পালন করা সম্ভব হয়নি,
আরো পড়ুনঃ সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত জেনে নিন
যেমন মাসিক, সন্তান জন্মদান, বা অসুস্থতার কারণে। এই ধরনের রোজাগুলি পরে করতে হয়।
যদি রমজানের আগে সেগুলি করা না হয়, তবে ব্যক্তি এক ধরনের দায়বদ্ধতায় পড়ে যান,
কারণ এগুলি এক ধরনের ঋণ বা অপরাধ পূরণের রূপে রাখা হয়। যদি কাজা রোজা না করা হয়,
তবে তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।
তবে, কাজা রোজা না করলে আল্লাহর নির্দেশনার প্রতি অবহেলা করা হয়, এবং এতে ব্যক্তি
পাপী হয়ে পড়তে পারে। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে, যে ব্যক্তি কাজা রোজা পালন করবে না,
তাকে অতিরিক্ত শাস্তি বা দায়ের সম্মুখীন হতে হতে পারে। এজন্য মুসলমানদের উচিত যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজা রোজাগুলি পূর্ণ করা, যাতে কোনো কারণে তারা অতিরিক্ত দায়ে না
পড়েন।
এছাড়া, কাজা রোজা না করলে একদিকে যেমন এক ধরনের ধর্মীয় ঋণ থাকে, তেমনি অন্যদিকে
এই অনুপস্থিত রোজাগুলি ঈমান ও তাকওয়ার জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। তাই মুসলমানদের
উচিত, যত দ্রুত সম্ভব কাজা রোজাগুলি পূর্ণ করা এবং রমজানের মধ্যে এই ধরনের ঋণ
পরিশোধ করা। এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সহজ হয়।
রোজার কাফফারা কয়টি ও কি কি
উপরোক্ত আলোচনায় ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম এবং ভাংতি রোজা রাখার নিয়ত জানিয়েছি
চলুন এখন রোজার কাফফারা কয়টি ও কি কি সম্পর্কে জানি। রোজার কাফফারা হল সেই
প্রতিকার বা শাস্তি, যা রোজার ক্ষতি বা অবহেলা করার ফলে পালন করতে হয়। কাফফারা
প্রয়োগ হয় বিশেষ কিছু অবস্থায়, যখন রোজা ভঙ্গ হয় বা কোনো কারণে রোজার শর্ত
পূর্ণ হয়নি। কাফফারা মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়ঃ
রোজা ভঙ্গের শাস্তি (কাফফারা)ঃ যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে, যেমন, যৌন
সম্পর্ক স্থাপন, খাবার বা পানীয় গ্রহণ করে রোজা ভঙ্গ করে, তবে তাকে কাফফারা দিতে
হবে। কাফফারা হিসেবে তাকে দুটি বিকল্প দেওয়া হয়েছেঃ
- শত দিনের রোজা রাখার মাধ্যমে কাফফারা প্রদানঃ এই বিকল্পে, ওই ব্যক্তি ৬০টি নিরবচ্ছিন্ন রোজা রাখতে হবে। এটি কঠিন হতে পারে, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠোর শাস্তি।
- ৬০ জন গরীবকে খাবার খাওয়ানোঃ যে ব্যক্তি রোজা ভঙ্গ করে কাফফারা দিচ্ছে, সে ৬০ জন গরীব-দুঃখীকে একদিনের পুষ্টিকর খাবার দিতে পারবে। একদিনের খাবারের পরিমাণ সাধারণত এক বস্তা খাবারের সমান হতে পারে। তবে, এই বিকল্প তখনই গ্রহণযোগ্য যখন শত দিনের রোজা রাখা সম্ভব না হয় বা কষ্টকর মনে হয়।
কোনো কারণে রোজা ভঙ্গ না করলে কাফফারা প্রয়োজন নয়ঃ যদি কোনো ব্যক্তি
অজান্তে বা ভুলবশত খাবার বা পানীয় গ্রহণ করেন, তবে তাকে কাফফারা দিতে হয় না।
তবে, তার জন্য পরবর্তীতে সেই রোজাটি পুনরায় রাখতে হবে, যা "কাজা রোজা" হিসেবে
পরিচিত।
কাফফারা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাঃ কাফফারা দেওয়া কেবল তখনই প্রয়োজন হয় যখন
রোজা ইচ্ছাকৃতভাবে ভঙ্গ করা হয় বা এর মূল শর্ত ভঙ্গ করা হয়। এটি কোনো ধরনের ভুল
বা ত্রুটির জন্য নয়। কাফফারা দেওয়ার মাধ্যমে, রোজাদার আল্লাহর সামনে নিজের ভুল
স্বীকার করে, এবং ভবিষ্যতে তার রোজা সঠিকভাবে পালনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।
লেখক এর মন্তব্য- ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম জেনে নিন
রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনাদের ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম এবং ভাংতি
রোজা রাখার নিয়ত ইত্যাদি ছাড়াও ভাংতি রোজা সম্পর্কে জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য
বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো
লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জানানোর জন্য শেয়ার করবেন।
আরো পড়ুনঃ
মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জেনে নিন
এমন আরো তথ্য ও রেসিপি জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়ম ভিজিট করুন,
সাবস্ক্রাইব করে রাখুন, ফলো করুন, বেশি বেশি শেয়ার করুন এবং কোন বিষয়ে
বিস্তারিত তথ্য বা রেসিপি জানতে চাইলে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন ও পোস্টটি কেমন
লাগলো কমেন্ট জানাবেন আশা করি, আসসালামু আলাইকুম/আদাব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url