রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ জেনে নিন
আসসালামু আলাইকুম/আদাব, আজকের আলোচ্য বিষয় হলো রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ এবং রোজা
ভঙ্গের কারণ কয়টি সম্পর্কে হাদিস ইত্যাদি ছাড়াও রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে
জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য। এই পোস্টে থাকছে মেয়েদের রোজা ভঙ্গের কারণ এবং
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক।
পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ থাকলো, যাতে আপনি রোজা ভঙ্গের কারণ
সমূহ এবং রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। আশা করছি, এতে
আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর এবং সঠিক নির্দেশনা পাবেন।
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ জেনে নিন
এখন আমি আপনাদের সাথে রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ সম্পর্কে শেয়ার করতে যাচ্ছি। রমজান
মাসে মুসলমানদের জন্য রোজা রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রোজা, যার অর্থ হলো
খাবার, পানীয়, এবং অন্যান্য কিছু বিষয় থেকে বিরত থাকা,
আরো পড়ুনঃ শাওয়াল মাসের ছয় রোজার ফজিলত জেনে নিন
ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি বিধান। তবে, কিছু কারণে রোজা ভেঙে যেতে পারে,
যেগুলি শর্তসাপেক্ষে গোনাহও হতে পারে। এখানে রোজা ভঙ্গের কারণগুলো আলোচনা করা
হলোঃ
খাবার ও পানীয় গ্রহণঃ রমজান মাসে রোজা ভঙ্গের সবচেয়ে সাধারণ কারণ
হলো ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করা। দিনের বেলায় সেহরি থেকে সূর্যাস্ত
পর্যন্ত কোনো কিছু খাওয়া বা পান করা রোজা ভেঙে দেয়।
এটি কীভাবে হয়?
খাবার বা পানীয় খাওয়া, পানের জন্য পানীয় (যেমন পানি, ফলের রস বা অন্য কিছু পান
করা), রোজা ভঙ্গ করে। যদি ব্যক্তি ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেলে, তবে তার রোজা ভেঙে যাবে
না, কিন্তু সে যেন পরে নিজের রোজা পূর্ণ করার চেষ্টা করে।
- যৌন সম্পর্কঃ রমজান মাসে রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা রোজা ভঙ্গের একটি প্রধান কারণ। ইসলামে এটি অত্যন্ত নিষিদ্ধ, এবং এমন কাজ করলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে, যদি কেউ ভুলবশত এমন কাজ করেন, তবে তাকে কাফফারা (অফারিং) দিতে হবে, যা সাধারণত দুটি মাসের রোজা রাখা বা ৬০ জন দরিদ্রকে খাদ্য দেওয়ার মাধ্যমে পূর্ণ হয়।
- বমি করাঃ যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, তবে তার রোজা ভেঙে যাবে। কিন্তু যদি এটি অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়, যেমন অসুস্থতার কারণে বা অন্য কোনো কারণে, তাহলে রোজা অক্ষুণ্ণ থাকবে।
- রক্তদানঃ যদিও সাধারণত রক্তদান রোজা ভঙ্গ করে না, তবে যদি রক্তদানকারী মনে করেন যে এটি তার রোজা ভঙ্গ করবে, সে সময় তার রোজা ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। তবে, সাধারণভাবে রক্তদান ইচ্ছাকৃত খাবার ও পানীয় গ্রহণের মতো কাজের মধ্যে পড়ে না এবং এটি রোজা ভঙ্গ করে না।
- মাসিক বা বৈবাহিক অবস্থাঃ মাসিক (পিরিয়ড) বা ইসতাহাজা (ভিন্ন ধরনের গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ) অবস্থায় থাকা নারীদের রোজা ভেঙে যায়। একইভাবে, যদি কোনো নারী গর্ভাবস্থায় থাকেন এবং তিনি রোজা রাখতে অসুবিধা অনুভব করেন, তবে তারা নির্দিষ্ট শর্তে রোজা ভঙ্গ করতে পারেন এবং পরে তা কাফফারা পরিমাণে পূর্ণ করতে হবে।
- অবৈধ কাজের মাধ্যমে (গোনাহ)ঃ রোজা ভঙ্গের জন্য শুধু খাওয়া-দাওয়া বা শারীরিক সম্পর্কই নয়, বরং অসত্য বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, গীবত করা বা অন্যান্য গোনাহের কাজ করা রোজার মান ও মর্যাদা নষ্ট করতে পারে। যদিও এসব কাজ সরাসরি রোজা ভাঙার মতো নয়, তবুও ইসলামে এসবকে হারাম বলে বিবেচনা করা হয় এবং রোজার পুণ্য কমিয়ে দেয়।
- দুর্ঘটনাজনিত কারণে রোজা ভঙ্গঃ কোনো ব্যক্তি যদি ভুলবশত খাবার বা পানীয় গ্রহণ করেন অথবা কোনো কারণে শারীরিক বা মানসিক অসুবিধার কারণে রোজা ভঙ্গ হয়, তবে তার রোজা ভাঙবে না, কিন্তু সে যেন তাড়াতাড়ি রোজা পূর্ণ করতে চেষ্টা করে।
- মাদকদ্রব্য বা ধূমপানঃ ধূমপান বা কোনো প্রকার মাদকদ্রব্য গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যায়। কারণ, এগুলোও খাবারের মতো শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে এবং রোজার বিধি লঙ্ঘন করে।
- রোগ বা শারীরিক অসুস্থতাঃ যদি কোনো ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ হন, যার জন্য খাবার বা পানীয় গ্রহণ প্রয়োজন হয়, তবে তার জন্য রোজা ভাঙা অনুমোদিত। তবে, এর পরবর্তী সময়ে পরবর্তী রোজা আদায় করতে হবে বা কাফফারা প্রদান করতে হবে।
- সূত্রের মাধ্যমে অন্য কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করাঃ কোনো ব্যক্তি যদি অন্যকে কোনো প্রকার ক্ষতিগ্রস্ত করে, যেমন তাকে মিথ্যা কথা বললে বা কাউকে অপমান করলে, এর কারণে রোজার পুণ্য নষ্ট হতে পারে। এটি রোজা ভঙ্গের একটি পরোক্ষ কারণ।
- রোজা ভঙ্গের শাস্তিঃ রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করলে, তা ইসলামে গোনাহ হিসেবে গণ্য হতে পারে, যদি তা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়। তবে, যদি কেউ ভুলবশত রোজা ভেঙে ফেলে, তাহলে তার জন্য কোনো শাস্তি নেই। তবে, যথাযথ কাফফারা (অফারিং) পূর্ণ করা এবং ভবিষ্যতে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
রোজা ভঙ্গের কারণে দুনিয়া ও আখিরাতে ব্যক্তির ধর্মীয় অবস্থান ও পুণ্য নষ্ট হতে
পারে। তাই রোজা রাখার সময় এসব বিষয়ের প্রতি সচেতনতা রাখা জরুরি। যে সব কারণে রোজা
ভঙ্গ হয়, সেগুলি থেকে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করা উচিত,
আরো পড়ুনঃ ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম জেনে নিন
এবং অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ইসলাম কখনোই কোনো কাজের জন্য কঠোর শাস্তি দেয়
না, বরং আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি রহমত প্রদর্শন করেন এবং ভুলের পর ক্ষমা
করেন, যদি তারা তওবা করে।
রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি
উপরোক্ত আলোচনায় রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ জানিয়েছি চলুন এখন রোজা ভঙ্গের কারণ
কয়টি সম্পর্কে হাদিস সম্পর্কে জানি। রমজান মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে মুসলমানরা
আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে চায়। তবে কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোর ফলে রোজা ভেঙে
যেতে পারে। রোজা ভঙ্গের প্রধান কারণগুলো নিম্নরূপঃ
- খাবার ও পানীয় গ্রহণঃ রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যাবে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কিছু খাওয়া বা পান করা রোজার শর্ত লঙ্ঘন করে। তবে ভুলবশত কিছু খেলে রোজা ভাঙে না, শুধু পরবর্তী সময়ে পূর্ণ করতে হয়।
- যৌন সম্পর্কঃ রোজা থাকা অবস্থায় দিনের বেলায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা রোজা ভেঙে দেয়। এটি শাস্তিযোগ্য, এবং এ জন্য কাফফারা (৬০ দিন রোজা রাখা বা ৬০ জন দরিদ্রকে খাওয়ানো) দিতে হয়।
- বমি করাঃ যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, তার রোজা ভেঙে যাবে। তবে, যদি বমি অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে, তাহলে রোজা ঠিক থাকে।
- মাসিক বা গর্ভাবস্থায় রক্তপাতঃ মাসিক বা গর্ভাবস্থার কারণে নারীদের রোজা ভেঙে যায়। এ সময় রোজা রাখা নিষিদ্ধ, এবং পরে ক্বাজা বা কাফফারা দিয়ে তা পূর্ণ করতে হয়।
- অবৈধ কাজ (গোনাহ)ঃ মিথ্যা বলা, গীবত করা, ঝগড়া করা বা অন্য কোনো গোনাহের কাজ রোজার আধ্যাত্মিক মূল্য কমিয়ে দেয়, যদিও এগুলো রোজা শারীরিকভাবে ভেঙে ফেলে না। তবে, এগুলো রোজার পুণ্য নষ্ট করে।
- ধূমপান বা মাদক গ্রহণঃ ধূমপান বা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যায়। কারণ, এগুলো শরীরে প্রবেশ করে এবং রোজার বিধি লঙ্ঘন করে।
- রক্তদানঃ রক্তদান সাধারণত রোজা ভেঙে ফেলে না, তবে কিছু মাযহাব এতে রোজা ভাঙার মতবাদ অনুসরণ করে। তবে, এটি শারীরিকভাবে রোজার বিধি লঙ্ঘন নয়।
- গুরুতর অসুস্থতাঃ কোনো ব্যক্তি যদি অসুস্থ হয়ে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করতে বাধ্য হন, তার জন্য রোজা ভঙ্গ করা গ্রহণযোগ্য। তবে, তার পরবর্তী সময়ে রোজা পূর্ণ করা বা কাফফারা দিতে হতে পারে।
- অন্যান্য কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করাঃ মিথ্যা কথা বলা, কাউকে অপমান করা বা গীবত করা রোজার আধ্যাত্মিক মূল্য কমিয়ে দেয়। যদিও এসব কাজ সরাসরি রোজা ভাঙে না, তবে রোজার উদ্দেশ্য এবং পুণ্য নষ্ট হয়।
- দুর্ঘটনাজনিত কারণে রোজা ভঙ্গঃ ভুলবশত খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে রোজা ভাঙে না। তবে, পরবর্তী সময়ে ওই দিনটির রোজা পূর্ণ করতে হবে।
রোজা ভঙ্গের কারণগুলো শারীরিক ও আধ্যাত্মিক দুই ধরনের। শারীরিকভাবে খাবার বা
পানীয় গ্রহণ, যৌন সম্পর্ক, ধূমপান বা মাদক গ্রহণ, বমি, রক্তদান ইত্যাদি কাজ রোজা
ভেঙে দেয়। আধ্যাত্মিকভাবে গোনাহের কাজ, যেমন মিথ্যা বলা বা গীবত করা, রোজার মূল্য
কমিয়ে দেয়। রোজা রাখার সময়ে এসব বিষয়ে সচেতন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে
রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য পূর্ণভাবে পালন করা যায়।
মেয়েদের রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ এবং রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি
মেয়েদের রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে। রমজান মাসে রোজা রাখা একটি মহান ইবাদত, যা
মুসলিম পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় বিধান। তবে, কিছু বিশেষ
পরিস্থিতিতে মেয়েদের রোজা ভেঙে যেতে পারে। এই লেখায় আমরা মেয়েদের রোজা ভঙ্গের
কারণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।
- মাসিক রক্তপাত (পিরিয়ড)ঃ মেয়েদের রোজা ভঙ্গের প্রধান কারণ হলো মাসিক রক্তপাত। যখন একটি নারী মাসিক অবস্থায় থাকে, তখন তার রোজা রাখা নিষিদ্ধ। এ সময় রোজা রাখা শারীরিকভাবে অসম্ভব এবং ইসলামী বিধানে এটি মেনে নেওয়া হয়নি। মাসিক চলাকালে রোজা ভেঙে যায় এবং পরবর্তীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ রোজা ক্বাজা (পূরণ) করতে হয়।
- গর্ভাবস্থায় রক্তপাত বা ইস্তেহাযাঃ গর্ভাবস্থায় বা অন্য কোনো কারণে যদি কোনো নারীর রক্তপাত ঘটে, তাকে "ইস্তেহাযা" বলা হয়। এটি গর্ভাবস্থা বা শারীরিক কোনো সমস্যার কারণে ঘটে, যা রোজার বিধি ভঙ্গ করে। এই অবস্থায় রোজা রাখা নিষিদ্ধ এবং পরবর্তীতে তা পূর্ণ করতে হবে।
- জন্মদান বা প্রসবের পর রক্তপাতঃ প্রসবের পর, যদি কোনো মা রক্তপাতের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তার জন্য রোজা ভঙ্গ করা বৈধ। প্রসব পরবর্তী রক্তপাতের কারণে রোজা রাখা সম্ভব নয়, এবং এটি শারীরিকভাবে নিরাপদও নয়। এই সময়েও পরবর্তীতে রোজা পূর্ণ করতে হবে।
- গুরুতর শারীরিক অসুস্থতাঃ কিছু নারীর গর্ভাবস্থা বা শারীরিক অসুস্থতা এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে যে, তারা খাবার বা পানীয় গ্রহণ করতে বাধ্য হন। এ ক্ষেত্রে তাদের রোজা ভেঙে যায়। তবে, পরবর্তী সময়ে ক্বাজা বা কাফফারা (যদি প্রযোজ্য হয়) করতে হবে। ইসলাম অসুস্থতার কারণে রোজা ভাঙার অনুমতি দেয়।
- অবৈধ শারীরিক সম্পর্কঃ রোজা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দিনের বেলা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে রোজা ভেঙে যায়। এটি রোজার বিধি লঙ্ঘন করে এবং কাফফারা (৬০ দিন রোজা রাখা অথবা ৬০ জন দরিদ্রকে খাওয়ানো) প্রদান করতে হয়। তবে, কোনো নারী যদি ভুলবশত এ ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করেন, তবে তাকে কাফফারা প্রদান করতে হবে।
- বমি করা (ইচ্ছাকৃত)ঃ যদি কোনো নারী ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, তবে তার রোজা ভেঙে যাবে। তবে, যদি বমি অপ্রত্যাশিতভাবে হয় (যেমন অসুস্থতার কারণে), তবে রোজা ঠিক থাকবে। বমি যদি ইচ্ছাকৃত না হয়, তবে রোজা ভাঙবে না।
- ধূমপান বা মাদকদ্রব্য গ্রহণঃ ধূমপান বা মাদকদ্রব্য গ্রহণ রোজা ভাঙার কারণ হতে পারে। কিছু নারী এই সময়ে ধূমপান বা মাদক গ্রহণ করে রোজা ভঙ্গ করতে পারেন, যা রোজার বিধি লঙ্ঘন করে এবং রোজা ভেঙে যায়।
- অবৈধ কথা বলা বা গোনাহ করাঃ মেয়েরা যখন মিথ্যা কথা বলেন, গীবত করেন, কাউকে অপমান করেন বা অন্য কোনো গোনাহের কাজ করেন, তখন রোজার আধ্যাত্মিক মূল্য কমে যায়। যদিও এসব কাজ সরাসরি রোজা ভেঙে ফেলে না, তবে এগুলো রোজার পুণ্য নষ্ট করে এবং রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় না।
নফল রোজা ভঙ্গের কারণ
উপরোক্ত আলোচনায় রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ এবং রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি জানিয়েছি
চলুন এখন নফল রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে জানি।
- খাবার ও পানীয় গ্রহণ - ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খাওয়া বা পান করা।
- যৌন সম্পর্ক - রোজা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা।
- ইচ্ছাকৃত বমি করা - নিজের ইচ্ছায় বমি করা।
- ধূমপান বা মাদক গ্রহণ - ধূমপান বা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা।
- অবৈধ কাজ (গোনাহ) - মিথ্যা বলা, গীবত করা বা অন্য গোনাহের কাজ করা।
- ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করা - সকাল থেকে রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকা এবং পরে তা ভঙ্গ করা।
- কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া খাওয়া-দাওয়া - যেকোনো উদ্দেশ্য ছাড়া রোজা ভেঙে ফেললে।
রোজা ভঙ্গের কারণ হাদিস
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ এবং রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি
রোজা ভঙ্গের কারণ হাদিস সম্পর্কে। রমজান মাসে রোজা রাখা মুসলিমদের জন্য একটি
গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের রোজার মাধ্যমে তাদের ত্যাগ,
আরো পড়ুনঃ আইয়ামে বীজের রোজার ফজিলত জেনে নিন
আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করতে চান। তবে, কিছু কাজ বা পরিস্থিতি
রয়েছে যা রোজা ভেঙে দেয়, এবং ইসলামী বিধান অনুযায়ী এসবের জন্য শাস্তিরও বিধান
রয়েছে। হাদিসে এসব বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
খাবার ও পানীয় গ্রহণঃ ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে
যায়। হাদিসে এসেছেঃ
"যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খায় বা পান করে, তার রোজা ভেঙে যাবে
এবং তাকে পরবর্তী সময়ে ওই রোজা ক্বাজা করতে হবে।"
- (সহীহ বুখারি, 6669)
যৌন সম্পর্কঃ রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক
সম্পর্ক স্থাপন করা রোজা ভেঙে দেয়। হাদিসে এসেছেঃ
"যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে, তার রোজা ভেঙে
যায় এবং তাকে কাফফারা দিতে হবে।"
- (সহীহ মুসলিম, 1111)
বমি করা (ইচ্ছাকৃত)ঃ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে রোজা ভেঙে যায়। হাদিসে বলা
হয়েছে:
"যদি কেউ রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, তার রোজা ভেঙে যাবে।"
- (সহীহ বুখারি, 6669)
মাসিক রক্তপাত (পিরিয়ড)ঃ মাসিক বা গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে নারীদের রোজা
ভেঙে যায়। হাদিসে এসেছেঃ
"মাসিক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে না। যখন মাসিক শেষ হবে, তখন তার রোজা পূর্ণ করতে
হবে।"
- (সহীহ মুসলিম, 748)
ইস্তেহাযা (গর্ভাবস্থায় রক্তপাত)ঃ গর্ভাবস্থায় অথবা অন্য কোনো শারীরিক
কারণে রক্তপাত হলে রোজা ভেঙে যায়। এটি "ইস্তেহাযা" হিসেবে পরিচিত এবং এই অবস্থায়
রোজা রাখা নিষিদ্ধ।
- (সহীহ মুসলিম, 749)
ধূমপান বা মাদক গ্রহণঃ ধূমপান বা মাদকদ্রব্য গ্রহণও রোজা ভাঙার কারণ।
ইসলামী আইন অনুযায়ী, যে কিছু গ্যাস বা তরল গ্রহণ করে, তার রোজা ভেঙে যাবে।
- (ফাতাওয়াস শায়খ ইবনে বায)
অবৈধ কাজ (গোনাহ)ঃ মিথ্যা বলা, গীবত করা, ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত হওয়া বা
অন্য কোনো গোনাহের কাজ রোজার আধ্যাত্মিক মূল্য কমিয়ে দেয়, যদিও এসব কাজ সরাসরি
রোজা ভাঙে না। হাদিসে এসেছে:
"যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় মিথ্যা কথা বলে বা গীবত করে, তার রোজা কিছু লাভ করবেই
না।"
- (সহীহ বুখারি, 6669)
রক্তদান (বিশেষ কিছু মতবাদ)ঃ রক্তদান সাধারণত রোজা ভেঙে ফেলে না, তবে কিছু
মাযহাব রক্তদানকে রোজা ভাঙার কারণ মনে করে।
দুর্ঘটনাজনিত কারণে রোজা ভঙ্গঃ যদি কেউ ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেলে বা পান করে,
তবে তার রোজা ভাঙবে না, কিন্তু সে যেন তাড়াতাড়ি পরবর্তী সময়ে রোজাটি পূর্ণ করে।
- (সহীহ বুখারি)
রোজা ভঙ্গের শাস্তি
রোজা ভেঙে ফেলা, বিশেষত ইচ্ছাকৃতভাবে, ইসলামিক বিধান অনুযায়ী গোনাহের কাজ হতে
পারে। যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙে ফেলে, তবে তাকে কাফফারা (৬০ দিন
রোজা রাখা অথবা ৬০ জন দরিদ্রকে খাওয়ানো) দিতে হবে। হাদিসে এসেছেঃ
"যে ব্যক্তি রোজা ভাঙে তার জন্য কাফফারা প্রদান করা আবশ্যক, যদি সে ইচ্ছাকৃতভাবে
কাজটি করে।"
- (সহীহ মুসলিম, 1111)
রোজা ভঙ্গের কাফফারা
উপরোক্ত আলোচনায় রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ এবং রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি জানিয়েছি
চলুন এখন রোজা ভঙ্গের কাফফারা সম্পর্কে জানি। রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করলে
মুসলিমদের জন্য কাফফারা (শাস্তি) প্রযোজ্য হতে পারে, বিশেষত যদি কোনো ব্যক্তি
ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙে থাকে। কাফফারার মূল উদ্দেশ্য হলো,
আরো পড়ুনঃ মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জেনে নিন
আল্লাহর বিধি লঙ্ঘন করার জন্য অনুশোচনা এবং তাওবা করা। ইসলাম রোজা ভাঙার জন্য
কাফফারা বা শাস্তির বিধান দিয়েছে যাতে রোজার গুরুত্ব এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি বজায়
থাকে। রোজা ভঙ্গের কাফফারা নির্ভর করে ঘটনার ধরন এবং পরিস্থিতির ওপর।
রোজা ভঙ্গের কাফফারার কারণ
যৌন সম্পর্ক স্থাপনঃ রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে যদি কোনো ব্যক্তি
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন, তবে তাকে কাফফারা প্রদান করতে
হবে। এর জন্য দুটি বিকল্প রয়েছেঃ
- ৬০ দিন রোজা রাখা
- ৬০ জন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করা (প্রতিটি দরিদ্রকে এক দিন খাবারের জন্য খাওয়ানো)
এটি হাদিসের ভিত্তিতে বিধান করা হয়েছেঃ "যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় যৌন সম্পর্ক
স্থাপন করে, তাকে কাফফারা দিতে হবে।"
- (সহীহ মুসলিম)
ইচ্ছাকৃত খাবার বা পানীয় গ্রহণঃ যদি কেউ রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার
বা পানীয় গ্রহণ করেন, তবে তারও কাফফারা দিতে হবে। এই অবস্থায় তার জন্য রয়েছে একই
শাস্তিঃ
- ৬০ দিন রোজা রাখা
- অথবা ৬০ জন দরিদ্রকে খাবার দেওয়া
এটি রোজা ভাঙার গুরুতর শাস্তি হিসেবে বিধান করা হয়েছে, যাতে ব্যক্তি আল্লাহর বিধি
লঙ্ঘন না করে।
অন্যান্য ইচ্ছাকৃত কাজঃ রোজা ভাঙার অন্যান্য কিছু কারণে কাফফারা
প্রযোজ্য হতে পারে, তবে সাধারণত এগুলি খাদ্য গ্রহণ বা যৌন সম্পর্কের মতো গুরুতর
নয়। তবে, কাফফারার বিষয়টি নির্ভর করে ঘটনার ওপর এবং আলেমদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী
আল্লাহর কাছে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
রোজা ভঙ্গের দোয়া
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ এবং রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি
রোজা ভঙ্গের দোয়া সম্পর্কে। যদি কেউ রোজা ভেঙে ফেলেন, বিশেষত ভুলবশত বা অন্য
কোনো কারণে, তখন তাকে আল্লাহর কাছে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। রোজা
ভঙ্গের জন্য বিশেষ কোনো নির্দিষ্ট দোয়া নেই, তবে কিছু সাধারণ দোয়া রয়েছে যা তাওবা
ও ক্ষমা চাওয়ার জন্য পড়া যেতে পারে।
দোয়া উদাহরণঃ
"اللّهُمّ إِنِّي أَسْتَغْفِرُكَ لِمَا فَعَلْتُ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ"
(অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই এবং তোমার দিকে তাওবা করি।)
এছাড়া,
"رَبِّ اغْفِرْ لِي"
"রাব্বিগফিরলী"
(অর্থঃ আমার পালনকর্তা, আমাকে ক্ষমা করো।)
এই দোয়াগুলি আল্লাহর কাছে দোয়া করার এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার উদ্দেশ্যে পাঠ
করা উচিত।
ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গের কাফফারা
উপরোক্ত আলোচনায় রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ এবং রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি জানিয়েছি
চলুন এখন ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গের কাফফারা সম্পর্কে জানি। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা
ভেঙে ফেলে, তবে তার জন্য কাফফারা প্রযোজ্য। ইচ্ছাকৃত রোজা ভাঙার জন্য কাফফারা হলো
একটি গুরুতর শাস্তি, যা দুটি বিকল্পের মধ্যে একটির পালন করতে হয়ঃ
- ৬০ দিন রোজা রাখা
- রোজা ভাঙা ব্যক্তি ৬০ দিনের নিরবচ্ছিন্ন রোজা রাখতে হবে।
- ৬০ জন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা
- প্রতিটি দরিদ্রকে এক দিনের খাবার প্রদান করতে হবে।
এই কাফফারা রোজা ভাঙার শাস্তি হিসেবে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভের উপায় হিসেবে
দেয়া হয়েছে, এবং এটি হাদিসে স্পষ্ট করা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম)
স্বপ্নদোষ কি রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ এবং রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি
স্বপ্নদোষ কি রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে। স্বপ্নদোষ (যা ইসলামী পরিভাষায়
‘অজ্ঞাতভাবে সহবাস’ হিসেবে পরিচিত) রোজা ভাঙার কারণ নয়। এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা,
যা ঘুমের সময় ঘটে এবং এতে ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তির কোনো সম্পর্ক নেই।
আরো পড়ুনঃ সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত জেনে নিন
সুতরাং, স্বপ্নদোষ হওয়ার কারণে রোজা ভাঙে না। তবে, স্বপ্নদোষের পর যদি কোনো
ব্যক্তি জ্ঞান ফিরেই গোসল না করেন এবং দিনের বেলা খাওয়া-দাওয়া করতে থাকেন, তবে
তার রোজা ভেঙে যাবে এবং তার জন্য কাফফারা দিতে হতে পারে।
লেখক এর মন্তব্য- রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ জেনে নিন
রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনাদের রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ এবং রোজা
ভঙ্গের কারণ কয়টি ইত্যাদি ছাড়াও রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে জানা-অজানা বিভিন্ন
তথ্য বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের
ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জানানোর জন্য শেয়ার
করবেন।
এমন আরো তথ্য ও রেসিপি জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়ম ভিজিট করুন,
সাবস্ক্রাইব করে রাখুন, ফলো করুন, বেশি বেশি শেয়ার করুন এবং কোন বিষয়ে
বিস্তারিত তথ্য বা রেসিপি জানতে চাইলে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন ও পোস্টটি কেমন
লাগলো কমেন্ট জানাবেন আশা করি, আসসালামু আলাইকুম/আদাব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url