শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z

আসসালামু আলাইকুম/আদাব, আজকের আলোচ্য বিষয় হলো শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z এবং নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার ইত্যাদি ছাড়াও শেয়ার বাজার সম্পর্কে জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য। এই পোস্টে থাকছে শেয়ার বাজার থেকে আয় এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক।
শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z
আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z এবং নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার ছাড়াও শেয়ার বাজার সম্পর্কে আপনার যত প্রশ্ন ও সমস্যা রয়েছে তার অবশ্যই সঠিক সমাধান ও উত্তর পাবেন।

শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z

এখন আমি আপনাদের সাথে শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z সম্পর্কে শেয়ার করতে যাচ্ছি। শেয়ার বাজার (Stock Market) এমন একটি বাজার, যেখানে কোম্পানির শেয়ার বা স্টক কেনাবেচা করা হয়। এটি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে ব্যক্তিগত, কর্পোরেট এবং সরকারি সংস্থা শেয়ার ইস্যু করে এবং বিনিয়োগকারীরা এগুলো কেনে ও বিক্রি করে।
শেয়ার বাজার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে অর্থ সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং লাভ অর্জনের সুযোগ থাকে। শেয়ার বাজারের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে পারেন, তবে এর সাথে কিছু ঝুঁকিও থাকে। শেয়ার বাজারের প্রধান উপাদানসমূহঃ

স্টক এক্সচেঞ্জঃ শেয়ার বাজারের প্রধান ভিত্তি হলো স্টক এক্সচেঞ্জ, যেখানে শেয়ার লেনদেন হয়। বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েকটি প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ রয়েছে, যেমনঃ

  • নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ (NYSE)
  • নাসডাক (NASDAQ)
  • ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE)
  • চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE) (বাংলাদেশ)
শেয়ারঃ শেয়ার হলো একটি কোম্পানির মালিকানার অংশ, যা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কেনা হয়। শেয়ার কেনার মাধ্যমে, আপনি সেই কোম্পানির অংশীদার হয়ে ওঠেন।

বিনিয়োগকারীঃ শেয়ার বাজারে যাঁরা শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয় করেন, তাঁদেরকে বিনিয়োগকারী বলা হয়। বিনিয়োগকারীরা সাধারণত দু'ধরনের হয়ে থাকেনঃ

  • বিনিয়োগকারীঃ যারা দীর্ঘমেয়াদে শেয়ার কিনে লাভের জন্য ধরে রাখেন।
  • ট্রেডারঃ যারা শেয়ার স্বল্পমেয়াদে ক্রয়-বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করেন।
বাজার নির্দেশক (Market Index)ঃ বাজারের পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করার জন্য কিছু নির্দেশক ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য ডিএসইএক্স (DSEX) একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক, যা শেয়ার বাজারের সামগ্রিক অবস্থা নির্দেশ করে।

শেয়ার বাজারে কীভাবে বিনিয়োগ করবেন?

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করার জন্য কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হয়ঃ

  • ব্রোকারেজ ফার্মের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলুনঃ শেয়ার কেনা-বেচার জন্য একটি স্টক ব্রোকারের মাধ্যমে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়।
  • বাজার বিশ্লেষণ করুনঃ কোন শেয়ার কেনা উচিত, তা নির্ধারণ করতে বাজারের চলতি অবস্থা, কোম্পানির পারফরম্যান্স, আর্থিক প্রতিবেদন এবং অন্যান্য সূচক বিশ্লেষণ করতে হয়।
  • নির্দিষ্ট শেয়ার নির্বাচন করুনঃ বাজার বিশ্লেষণ করার পর নির্দিষ্ট শেয়ার নির্বাচন করে তাতে বিনিয়োগ করা হয়।
  • বিনিয়োগের কৌশল প্রণয়ন করুনঃ শেয়ার কেনার আগে বাজির সীমা নির্ধারণ করা এবং মুনাফা ও ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্টপ লস বা টার্গেট প্রাইস সেট করা জরুরি।
শেয়ার বাজারের সুবিধাঃ

  • লাভের সম্ভাবনাঃ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্রুত লাভ অর্জন করা সম্ভব, বিশেষ করে যদি আপনি সঠিক সময়ে সঠিক শেয়ার কিনে থাকেন।
  • বিনিয়োগের বৈচিত্র্যঃ শেয়ার বাজারে বিভিন্ন ধরনের শেয়ার ও সেক্টর রয়েছে, যেখানে বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে পারেন।
  • অধিকারঃ শেয়ারধারীরা কোম্পানির অংশীদার হয়ে থাকেন, যার ফলে তাদের কিছু অধিকার থাকে, যেমনঃ ভোটাধিকার, লাভের অংশগ্রহণ ইত্যাদি।
শেয়ার বাজারের ঝুঁকিঃ

  • বাজারের উত্থান-পতনঃ শেয়ার বাজারে শেয়ার মূল্য প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে, যা শেয়ারধারীদের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
  • অপ্রত্যাশিত ঘটনাঃ রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বাজারে পতন হতে পারে।
  • সঠিক কৌশলের অভাবঃ যদি সঠিক গবেষণা বা কৌশল না থাকে, তবে বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
শেয়ার বাজারে সফলতা অর্জনের কিছু টিপসঃ

  • বাজার গবেষণা করুনঃ শেয়ার কেনার আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি এবং বাজারের সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
  • দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণঃ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে লাভ অর্জন করতে হয়, তাই ধৈর্য ধরুন।
  • বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করুনঃ নিজের আর্থিক সীমা জানুন এবং তার চেয়ে বেশি বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকুন।
  • বাজারের ওঠানামা থেকে ভীত হবেন নাঃ বাজার কখনও কখনও ওঠানামা করতে পারে, তাই অস্থিরতা দেখা দিলে মুনাফা অর্জনের জন্য ধৈর্য ধরুন।
শেয়ার বাজার হলো একটি বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা, যেখানে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাদের অর্থ বিনিয়োগ করে লাভ বা ক্ষতি অর্জন করতে পারে। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্রুত মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হলেও এর সাথে কিছু ঝুঁকিও থাকে। শেয়ার বাজারে সফল হতে হলে একটি সঠিক কৌশল, বাজার বিশ্লেষণ এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। তাই, বিনিয়োগের আগে সতর্কভাবে গবেষণা এবং পরিকল্পনা করা উচিত।

নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার

উপরোক্ত আলোচনায় আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z জানিয়েছি চলুন এখন নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার জানি। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ নতুনদের জন্য একটি উত্তেজনাপূর্ণ কিন্তু চ্যালেঞ্জিং অভিজ্ঞতা হতে পারে। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের শেয়ার কিনে এবং বিক্রি করে লাভ বা ক্ষতি অর্জন করতে পারে।

শেয়ার বাজারের মূল লক্ষ্য হলো বিনিয়োগকারীদের অর্থ বৃদ্ধির সুযোগ দেওয়া, তবে এর সাথে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। নতুনদের জন্য শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই প্রয়োজন সতর্কতা ও সঠিক কৌশল। প্রথমে, শেয়ার বাজারের মৌলিক ধারণাগুলো যেমন শেয়ার, স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাজার সূচক সম্পর্কে ভালোভাবে জানা প্রয়োজন।

এরপর, একটি ব্রোকারেজ ফার্মের মাধ্যমে একটি ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে, যার মাধ্যমে শেয়ার কেনা-বেচা করা সম্ভব। নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বাজারের চলতি পরিস্থিতি এবং কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে গবেষণা করা। প্রাথমিকভাবে, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের দিকে নজর দেওয়া উচিত,

কারণ শেয়ার বাজারে ছোট ছোট ওঠানামা অনেক সময় অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করা, যাতে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন না হতে হয়। এছাড়া, বিনিয়োগের আগে একটি ভালো পরিকল্পনা এবং কৌশল থাকা জরুরি।
এতে করে অপ্রত্যাশিত ঝুঁকি মোকাবেলা করা সহজ হয় এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়। সুতরাং, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করার আগে বাজার বিশ্লেষণ, কৌশল নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় গবেষণা করা অত্যন্ত জরুরি।

শেয়ার কত প্রকার ও কি কি?

শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z এবং নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি শেয়ার কত প্রকার ও কি কি? সম্পর্কে। শেয়ার বাজারে সাধারণত দুটি প্রধান প্রকারের শেয়ার পাওয়া যায়ঃ অধিকাংশ শেয়ার (Common Shares) এবং প্রথম শ্রেণীর শেয়ার (Preferred Shares)। অধিকাংশ শেয়ারধারীরা কোম্পানির মালিকানা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে অংশীদার হন এবং কোম্পানির লাভের মধ্যে লভ্যাংশ পাওয়ার অধিকারী হন,

তবে তাদের লভ্যাংশের পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকে না এবং কোম্পানির ক্ষতির সময় তাদের ক্ষতি সহ্য করতে হয়। অন্যদিকে, প্রথম শ্রেণীর শেয়ারধারীরা নির্দিষ্ট লভ্যাংশ পেয়ে থাকেন, যেটি অধিকাংশ শেয়ারধারীদের চেয়ে বেশি হতে পারে। তবে, তাদের কোম্পানির পরিচালনায় অংশগ্রহণের অধিকার সীমিত থাকে। এছাড়া, শেয়ারগুলো বাজারে বিভিন্ন সময় ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে শেয়ারধারীরা তাদের লাভ বা ক্ষতি নির্ধারণ করে থাকেন।

শেয়ার বাজার একাউন্ট খোলার নিয়ম

উপরোক্ত আলোচনায় শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z এবং নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার জানিয়েছি চলুন এখন শেয়ার বাজার একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে জানি। শেয়ার বাজারে একাউন্ট খোলার নিয়ম নতুনদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
একাউন্ট খোলার মাধ্যমে আপনি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করতে পারবেন এবং শেয়ার কেনা-বেচা করতে পারবেন। শেয়ার বাজারে একাউন্ট খোলার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং তথ্য অনুসরণ করতে হয়।

ব্রোকারেজ ফার্ম নির্বাচনঃ শেয়ার বাজারে একাউন্ট খুলতে হলে প্রথমে আপনাকে একটি ব্রোকারেজ ফার্ম নির্বাচন করতে হবে। ব্রোকারেজ ফার্ম হলো এমন প্রতিষ্ঠান যা শেয়ার কেনা-বেচা সেবা প্রদান করে। বাংলাদেশে কয়েকটি প্রধান ব্রোকারেজ ফার্ম রয়েছে, যেমন— বিআইএসএল, ইউনাইটেড ফিন্যান্স, এসএমসি, ইত্যাদি।

ডিম্যাট একাউন্ট এবং ট্রেডিং একাউন্ট খুলুনঃ শেয়ার কেনার জন্য একটি ডিম্যাট একাউন্ট এবং ট্রেডিং একাউন্ট খোলা প্রয়োজন।

  • ডিম্যাট একাউন্টঃ এটি একটি ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট যা শেয়ারের মালিকানা সঞ্চয় করে। এটি শেয়ারগুলো ডিজিটাল ফর্মে রাখার সুযোগ দেয়।
  • ট্রেডিং একাউন্টঃ এটি সেই একাউন্ট যেখানে আপনি শেয়ার কেনাবেচা করতে পারবেন। এটি আপনার শেয়ার কেনা-বেচা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুতঃ একাউন্ট খোলার জন্য সাধারণত কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়ঃ

  • ন্যাশনাল আইডি কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) বা পাসপোর্ট
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি (অনেক ব্রোকারেজ ফার্ম ছবি চায়)
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা চেক বই (ব্যাংক একাউন্ট যাচাইয়ের জন্য)
  • TIN নম্বর (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) (যদি প্রযোজ্য হয়)
একাউন্ট ফর্ম পূরণঃ ব্রোকারেজ ফার্মের মাধ্যমে একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করতে হবে। এই ফর্মে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা ইত্যাদি দিতে হবে।

পরিচয় যাচাই (KYC প্রক্রিয়া)ঃ KYC (Know Your Customer) হলো একটি পরিচয় যাচাই প্রক্রিয়া, যা শেয়ার বাজারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ব্রোকারেজ ফার্ম আপনাকে KYC প্রক্রিয়া পূরণ করতে বলবে, যা আপনার পরিচয় যাচাই করবে।

একাউন্ট ফি ও চার্জঃ একাউন্ট খোলার জন্য কিছু ব্রোকারেজ ফার্মের নির্দিষ্ট ফি বা চার্জ থাকতে পারে। এই চার্জ সাধারণত একাউন্ট খোলার প্রাথমিক খরচ হিসেবে নেওয়া হয়। এছাড়া, শেয়ার কেনা-বেচা করার সময়ও কিছু ট্রেডিং ফি বা কমিশন প্রযোজ্য হতে পারে।

ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে লগইন এবং শেয়ার কেনাঃ একাউন্ট খোলার পর, আপনাকে ব্রোকারেজ ফার্মের ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে লগইন করতে হবে। এখন আপনি শেয়ার বাজারে ট্রেড করতে প্রস্তুত। আপনি এখানে বিভিন্ন শেয়ার নির্বাচন করতে পারবেন এবং আপনার বিনিয়োগের উদ্দেশ্য অনুযায়ী ট্রেড শুরু করতে পারবেন।

নিয়মিত নজরদারি এবং সঠিক পরিকল্পনাঃ একবার একাউন্ট খোলার পর, শেয়ার বাজারের পরিস্থিতি ও আপনার বিনিয়োগের ফলাফল নিয়মিত মনিটর করা গুরুত্বপূর্ণ। শেয়ার বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা হয়, তাই ধৈর্য ধরে বাজারের প্রবণতা বুঝে বিনিয়োগ করা উচিত। এছাড়া, আপনার লক্ষ্য ও বাজির সীমা নির্ধারণ করে বিনিয়োগ করতে হবে যাতে কোনো অপ্রত্যাশিত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন না হন।

শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কে?

শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z এবং নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কে? সম্পর্কে। শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রণ সাধারণত একটি নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্বারা করা হয়, যা বাজারের স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে কাজ করে। বাংলাদেশে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলো বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (BSEC)।
BSEC শেয়ার বাজারের আইনগত কাঠামো তৈরি করে, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা প্রদান করে এবং বাজারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে। এছাড়া, শেয়ার বাজারের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জ যেমন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE) কাজ করে। এই সংস্থাগুলি শেয়ার লেনদেনের নিয়ম, সুরক্ষা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখে।

শেয়ার বাজারের সূচক কি?

উপরোক্ত আলোচনায় শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z এবং নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার জানিয়েছি চলুন এখন শেয়ার বাজারের সূচক কি? সম্পর্কে জানি। শেয়ার বাজারের সূচক (Stock Market Index) হলো একটি পরিমাপের যন্ত্র, যা একটি নির্দিষ্ট বাজার বা কোম্পানির শেয়ারের গড় মূল্য বা পারফরম্যান্স নির্দেশ করে।

এটি শেয়ার বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি জানাতে ব্যবহৃত হয় এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হিসেবে কাজ করে। সূচকগুলি সাধারণত একাধিক শেয়ারের মানের গড় বা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তৈরি হয়। যেমন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (DSE) DSEX সূচক বা নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের Dow Jones Industrial Average সূচক। সূচক থেকে শেয়ার বাজারের উত্থান বা পতনের প্রবণতা বুঝা যায়।

শেয়ার বাজারে সূচক কিভাবে বের করতে হয়?

শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z এবং নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি শেয়ার বাজারে সূচক কিভাবে বের করতে হয়? সম্পর্কে। শেয়ার বাজারে সূচক বের করার প্রক্রিয়া একটি গাণিতিক গণনা। শেয়ার বাজারের সূচক (Stock Market Index) মূলত কিছু নির্দিষ্ট শেয়ারের গড় মান বা তাদের মূল্যগত পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।
একটি সূচক বাজারের সামগ্রিক অবস্থার প্রতিফলন করে এবং এটি বিনিয়োগকারীদের বাজারের ট্রেন্ড ও সম্ভাবনা বুঝতে সাহায্য করে। সূচক হিসাব করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, তবে সাধারণত দুটি প্রধান পদ্ধতি ব্যবহার হয়ঃ মূল্যভিত্তিক সূচক এবং বাজারমূল্যভিত্তিক সূচক। সূচক বের করার পদ্ধতিঃ

মূল্যভিত্তিক সূচকঃ

  • এই পদ্ধতিতে শেয়ার বাজারের নির্দিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের মূল্য গড়ে নিয়ে সূচক তৈরি করা হয়।
  • প্রাথমিকভাবে, সূচকের মান হিসাব করতে প্রথমে নির্বাচিত শেয়ারের মূল্য যোগ করা হয় এবং তারপর তার সমষ্টি নিয়ে গড় করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি সূচকের জন্য নির্বাচিত শেয়ারগুলোর মূল্য যোগ করা হয় এবং তা মোট শেয়ারের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয়।
  • সূচক পরিবর্তিত হওয়ার সাথে সাথে, বাজারের চলতি পরিস্থিতি এবং কোম্পানির শেয়ার মূল্যের ওঠানামা সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়।
বাজারমূল্যভিত্তিক সূচকঃ

  • এই পদ্ধতিতে একটি শেয়ার বাজারের সূচক গণনা করার জন্য শেয়ারের বাজারমূল্য (Market Capitalization) ব্যবহার করা হয়। এখানে প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য (মূল্য × শেয়ারের সংখ্যা) নির্ণয় করা হয়, এবং তা অনুযায়ী সূচকের মান বের করা হয়।
  • উদাহরণস্বরূপ, কোনো একটি শেয়ারের মূল্য যদি বাড়ে, তবে তার বাজারমূল্যও বাড়বে এবং ফলস্বরূপ সূচকও বাড়বে।
  • বাজারমূল্যভিত্তিক সূচক বেশি জনপ্রিয় কারণ এটি শেয়ার বাজারের বড় কোম্পানিগুলোর পারফরম্যান্সকে বেশি গুরুত্ব দেয়।
সূচক বের করার উদাহরণঃ ধরা যাক, একটি সূচকের জন্য ৫টি কোম্পানির শেয়ার নেয়া হয়েছে। এই কোম্পানির শেয়ারগুলোর দাম হলঃ

  • A কোম্পানি – 100 টাকা
  • B কোম্পানি – 200 টাকা
  • C কোম্পানি – 150 টাকা
  • D কোম্পানি – 50 টাকা
  • E কোম্পানি – 250 টাকা
এই শেয়ারগুলোর গড় মূল্য বের করার জন্যঃ (100 + 200 + 150 + 50 + 250) / 5 = 150 টাকা

এখানে, 150 টাকা হল গড় মূল্য। সূচক বের করার জন্য আরো কিছু নির্দিষ্ট তথ্য, যেমন শেয়ারের বাজারমূল্য বা ওই সময়কার সূচকের মান, ইত্যাদি ব্যবহার করা হবে।

সূচক মূল্য গণনার জন্য ফর্মুলাঃ

  • মোট সূচক = (মোট বাজারমূল্য / মোট বেস বাজারমূল্য) × বেস সূচক
যেখানে,

  • মোট বাজারমূল্য = শেয়ারের সংখ্যা × শেয়ারের বর্তমান মূল্য
  • বেস বাজারমূল্য = পূর্ববর্তী সময়কালে শেয়ারের বাজারমূল্য

শেয়ার ও স্টকের মধ্যে পার্থক্য কি?

উপরোক্ত আলোচনায় শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z এবং নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার জানিয়েছি চলুন এখন শেয়ার ও স্টকের মধ্যে পার্থক্য কি? সম্পর্কে জানি। শেয়ার এবং স্টক উভয়ই একটি কোম্পানির মালিকানা প্রতিনিধিত্ব করে, তবে তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। শেয়ার সাধারণত একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির মালিকানা প্রতিনিধিত্ব করে,

যা নির্দিষ্ট শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। অপরদিকে, স্টক হলো একটি সাধারণ শব্দ যা একাধিক কোম্পানির শেয়ার বা মোট শেয়ারের প্রতিনিধিত্ব করে। অর্থাৎ, স্টক একটি বৃহত্তর ধারণা, যা একাধিক কোম্পানির শেয়ারের সম্মিলিত পরিমাণকে নির্দেশ করে। শেয়ার সাধারণত নির্দিষ্ট কোম্পানির শেয়ারকেই বোঝায়, যখন স্টক বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের সমষ্টি।

শেয়ার বাজার থেকে আয়

শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z এবং নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি শেয়ার বাজার থেকে আয় সম্পর্কে। শেয়ার বাজার থেকে আয় করার প্রধান দুটি উপায় হলো লভ্যাংশ (dividends) এবং মূলধন লাভ (capital gains)। লভ্যাংশ হলো কোম্পানির লাভের একটি অংশ যা শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

সাধারণত, যেসব কোম্পানি লাভজনক হয় এবং নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করে, তারা শেয়ারধারীদের জন্য একটি স্থির আয়ের উৎস সৃষ্টি করে। অপরদিকে, মূলধন লাভ হলো শেয়ারের ক্রয়মূল্য এবং বিক্রয়মূল্যের মধ্যে পার্থক্য। অর্থাৎ, শেয়ার যখন কম দামে কেনা হয় এবং পরবর্তীতে উচ্চ দামে বিক্রি করা হয়,
তখন সেই পার্থক্য থেকে লাভ পাওয়া যায়। তবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকি থেকে যায়, কারণ বাজারের ওঠানামা এবং কোম্পানির পারফরম্যান্সের উপর লাভ নির্ভর করে। সঠিক গবেষণা, বাজার বিশ্লেষণ, এবং সময়মতো বিনিয়োগের মাধ্যমে শেয়ার বাজার থেকে আয় করা সম্ভব।

শেয়ার বাজার কি হালাল

উপরোক্ত আলোচনায় শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z এবং নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার জানিয়েছি চলুন এখন শেয়ার বাজার কি হালাল সম্পর্কে জানি। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে হালাল কি না, তা নির্ভর করে কোম্পানির কার্যক্রম এবং বিনিয়োগের পদ্ধতির ওপর। ইসলামে যেসব কর্মকাণ্ড হারাম,

যেমন সুদ (রিবা), মদ, জুয়া, বাজি, এবং পতিতালয়, সেইসব কার্যক্রমে জড়িত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা নিষিদ্ধ। তবে, যদি কোনো কোম্পানি ইসলামী শরিয়াহ আইন অনুযায়ী বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে এবং সুদ বা অন্য কোনো হারাম কার্যক্রমে জড়িত না থাকে, তাহলে তার শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা হালাল হতে পারে।

এছাড়া, ইসলামিক বিনিয়োগের জন্য বিশেষভাবে সুদমুক্ত ও শরিয়াহ সম্মত শেয়ার বাজার রয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র বৈধ কোম্পানির শেয়ার অন্তর্ভুক্ত থাকে। তাই, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে চাইলে, ব্যবসার বৈধতা ও লেনদেনের প্রক্রিয়া ভালভাবে যাচাই করা প্রয়োজন, যাতে হারাম কার্যক্রম থেকে দূরে থাকা যায় এবং হালাল আয় নিশ্চিত করা যায়।

শেয়ার বাজার টিপস

শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z এবং নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি শেয়ার বাজার টিপস সম্পর্কে।

  • বাজার বিশ্লেষণ করুনঃ শেয়ার কেনার আগে বাজারের পরিস্থিতি ও ট্রেন্ড ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।
  • দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করুনঃ শেয়ার বাজারে স্থিতিশীল লাভ পেতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের কৌশল অনুসরণ করুন।
  • বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করুনঃ বিনিয়োগের উদ্দেশ্য পরিষ্কার থাকলে লাভ বা ক্ষতির সিদ্ধান্ত সহজ হয়।
  • ডাইভার্সিফিকেশনঃ বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কম থাকে।
  • কোম্পানির মৌলিকতা যাচাই করুনঃ শেয়ার কেনার আগে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ও ব্যবসার ভিত্তি যাচাই করুন।
  • ঝুঁকি সহ্য করার ক্ষমতা নির্ধারণ করুনঃ আপনি কতটা ঝুঁকি নিতে পারেন, তা বুঝে বিনিয়োগ করুন।
  • ট্রেডিংয়ের বদলে লং টার্ম পরিকল্পনা করুনঃ দ্রুত লাভের জন্য ট্রেডিং এড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে মনোযোগ দিন।
  • শেয়ার বিক্রির সময় বিবেচনা করুনঃ মুনাফা পেয়েও প্রয়োজনে শেয়ার বিক্রি করুন।
  • ইসলামিক বিনিয়োগে মনোযোগ দিনঃ ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী বিনিয়োগ করে সুদ বা হারাম ব্যবসা থেকে দূরে থাকুন।
  • শরিয়াহ পরামর্শক ব্যবহার করুনঃ শরিয়াহ পরামর্শক থেকে তথ্য নিয়ে হালাল শেয়ার নির্বাচন করুন।

লেখকের মন্তব্য- শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z

রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনাদের শেয়ার বাজার কি - শেয়ার বাজার A to Z এবং নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার ইত্যাদি ছাড়াও শেয়ার বাজার সম্পর্কে জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জানানোর জন্য শেয়ার করবেন।
এমন আরো তথ্য ও রেসিপি জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়ম ভিজিট করুন, সাবস্ক্রাইব করে রাখুন, ফলো করুন, বেশি বেশি শেয়ার করুন এবং কোন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বা রেসিপি জানতে চাইলে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন ও পোস্টটি কেমন লাগলো কমেন্ট জানাবেন আশা করি, আসসালামু আলাইকুম/আদাব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url