তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম/আদাব, আজকের আলোচ্য বিষয় হলো তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল এবং তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের দলিল ইত্যাদি ছাড়াও তারাবির নামাজ সম্পর্কে জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য। এই পোস্টে থাকছে তারাবির নামাজের নিয়ম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক।
তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল জেনে নিন
পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ থাকলো, যাতে আপনি তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল এবং তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের দলিল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। আশা করছি, এতে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর এবং সঠিক নির্দেশনা পাবেন।

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল জেনে নিন

এখন আমি আপনাদের সাথে তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল সম্পর্কে শেয়ার করতে যাচ্ছি। তারাবির নামাজ সম্পর্কে অনেক আলেমের মতামত রয়েছে। সাধারণত, তারাবি নামাজকে সুন্নত বলা হয়। তবে, কিছু আলেমের মতে, এটি নফলও হতে পারে।
ইসলামী ঐতিহ্যে, তারাবি নামাজকে প্রাথমিকভাবে সুন্নত মোআক্কাদা (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত) হিসেবে ধরা হয়। এটি রমজান মাসে নফল নামাজের একটি বিশেষ রূপ, যা মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

  • তারাবির নামাজ সুন্নত মোআক্কাদাঃ রাসুলুল্লাহ (সঃ) রমজান মাসে তারাবি নামাজ আদায় করেছেন এবং মুসলিম উম্মাহকে তা আদায় করতে উৎসাহিত করেছেন। যদিও রাসুল (সঃ) একাধিকবার তা মসজিদে জামাতে পড়েছেন, তবে তিনি একদিন তা আদায় না করে বাসায় নামাজ পড়েছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি বুঝিয়েছেন যে, এটি এমন একটি আমল যা জামাতের সাথে আদায় করা উত্তম, তবে একা বা পরিবারের সাথে পড়া যাবে।
  • মতামতের পার্থক্যঃ তবে কিছু আলেম, বিশেষত শাফে'ei ও হাম্বলি মাযহাবের অনুসারীরা তারাবিকে নফল নামাজ হিসেবে গণ্য করেছেন, কারণ তারা মনে করেন যে, তারাবি নামাজ কোনো নির্দিষ্ট ফরজ বা ওয়াজিব আমল নয়। তাদের মতে, এটা নফল নামাজ হিসেবে পড়া যেতে পারে, তবে এর গুরুত্বের কারণে এটি অনেকটা সুন্নতের মতো।
সংক্ষেপে বলা যায়, তারাবি নামাজ সাধারণভাবে সুন্নত মোআক্কাদা, অর্থাৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত নামাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি রমজান মাসে রাতে ইবাদত করার একটি বিশেষ সুযোগ, যা মুসলমানদেরকে মহান আল্লাহর কাছে আরও বেশি নেকি কামনা করার সুযোগ প্রদান করে। এটি জামাতে পড়া উত্তম, তবে একা বা পরিবারসহও আদায় করা যায়।

তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের দলিল

উপরোক্ত আলোচনায় তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল জানিয়েছি চলুন এখন তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের দলিল সম্পর্কে জানি। তারাবি নামাজ রমজান মাসে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত নামাজ, যা মুসলিমরা রাতে আদায় করেন। সাধারণভাবে এটি ২০ রাকাত পড়া হয় বলে প্রচলিত থাকলেও, ৮ রাকাতও আদায় করা যায় এবং এ সম্পর্কে যথেষ্ট দলিল রয়েছে।

হাদীসের দলিলঃ রাসুলুল্লাহ (সঃ) নিজে ৮ রাকাত তারাবি নামাজ পড়েছেন। একটি হাদীসে বর্ণিত আছে, "রাসুল (সঃ) রমজান মাসে ৮ রাকাত তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং তার পেছনে সাহাবীরা জামাতে তা আদায় করেছেন" (সহীহ মুসলিম)। এই হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ৮ রাকাত তারাবি পড়া একটি স্বীকৃত প্রচলন।

ইমাম শাফেয়ি ও অন্যান্য আলেমদের মতামতঃ শাফেয়ি মাযহাবের কিছু আলেম ও অন্যান্য কয়েকটি মাযহাব ৮ রাকাত তারাবি নামাজের সমর্থক। তারা বলেন, "রমজানে মসজিদে জামাতে তারাবি নামাজ ৮ রাকাত হওয়া যথেষ্ট"। এর দ্বারা তারা ৮ রাকাতের সীমাবদ্ধতা প্রতিষ্ঠা করেন।

মসজিদে জামাতের সংখ্যাঃ এছাড়া, বহু ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ৮ রাকাত তারাবি নামাজ আদায়ের উদাহরণ দেখা গেছে। রাসুল (সঃ) নিজে ৮ রাকাত তারাবি নামাজ পড়েছেন বলে একাধিক হাদীসে উল্লেখ আছে, এবং সাহাবীরা তাকে অনুসরণ করতেন। তাছাড়া, প্রথম দিকে ৮ রাকাত পড়াই প্রচলিত ছিল। পরবর্তীতে কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ২০ রাকাত পড়া শুরু হয়, তবে এটি সুন্নতের বিরোধী নয়, বরং একটি অতিরিক্ত আমল হিসেবে ধরা হয়।

পৃথক পৃথক আলেমদের বিশ্লেষণঃ কিছু আলেমের মতে, তারাবি নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্ধারণের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট বিধান নেই, বরং তা ব্যক্তির ইচ্ছা ও সামর্থ্যের উপর নির্ভর করে। ৮ রাকাত থেকে ২০ রাকাতের মধ্যে কোনটা পড়া হবে তা তাদের ব্যক্তিগত মতামতের ওপর নির্ভরশীল। তবে, ৮ রাকাত আদায় করাটা প্রচলিত সুন্নত, যা রাসুল (সঃ) নিজে করেছেন।

এবং সবশেষে, বলা যায় যে, তারাবি নামাজের সংখ্যা ৮ রাকাত হতে পারে এবং এর দলিলগুলো অত্যন্ত সুস্পষ্ট। যদিও ২০ রাকাত তারাবি নামাজের প্রচলন আছে, তবে ৮ রাকাতের ভিত্তিতেও তারাবি নামাজ আদায় করা যেতে পারে এবং এটি সুন্নতের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই নামাজে মনোযোগী হওয়া এবং আল্লাহর কাছে গভীরভাবে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা।

তারাবির নামাজের ইতিহাস

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল এবং তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের দলিল সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি তারাবির নামাজের ইতিহাস সম্পর্কে। তারাবির নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ নামাজ, যা মুসলিমরা রমজান মাসে রাতের সময়ে আদায় করেন।
এটি একটি সুন্নত নামাজ হিসেবে পরিচিত, যা রমজান মাসের প্রতি রাতে ইবাদতের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়। তারাবির নামাজের ইতিহাস বেশ পুরনো এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে ফিরে যায়।

প্রাথমিক যুগে তারাবির নামাজঃ রাসুলুল্লাহ (সঃ) প্রথমবারের মতো তারাবির নামাজ আদায় শুরু করেন রমজান মাসে। তবে তিনি তারাবি নামাজটি প্রতিদিন মসজিদে জামাতে পড়েননি। এক রাতে জামাতে আদায় করার পর পরবর্তী রাতে মসজিদে নামাজ আদায় না করে, তিনি সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, "আমি ভয় পেয়েছি যে,

এটা তোমাদের উপর ফরজ হয়ে যাবে" (সহীহ মুসলিম)। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, নামাজটি যদি প্রতিদিন জামাতে পড়ানো হতো, তবে তা মুসলমানদের জন্য ফরজ হয়ে যেত। তার এই সিদ্ধান্তের পর থেকে সাহাবীরা তারাবি নামাজ ব্যক্তিগতভাবে বা ছোট গ্রুপে পড়তে থাকেন।

সাহাবীদের যুগে তারাবির নামাজঃ রাসুল (সঃ) যেহেতু এই নামাজটি নিয়মিত জামাতে পড়েননি, তাই সাহাবীরা নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী তারাবি নামাজ পড়তেন। তবে হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি দেখেন, সাহাবীরা একে একে ছোট ছোট গ্রুপে তারাবি নামাজ আদায় করছেন,

ফলে মসজিদে জামাতের সঠিক ব্যবস্থা ছিল না। তাই তিনি একজন ইমাম নিযুক্ত করে সবাইকে একত্রে জামাতে তারাবি নামাজ পড়াতে শুরু করেন। এই সিদ্ধান্তটি ইসলামিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে গণ্য করা হয়।

তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যাঃ তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। রাসুল (সঃ) প্রথম দিকে ৮ রাকাত তারাবি নামাজ পড়েছেন। তবে পরবর্তীতে কিছু মুসলিম সম্প্রদায় ২০ রাকাত তারাবি নামাজের প্রচলন করে। এটি কখনও ইসলামিক ধর্মীয় আদেশ নয়,

বরং তা একটি অতিরিক্ত আমল হিসেবে বিবেচিত হয়। ৮ রাকাত এবং ২০ রাকাতের মধ্যে কোনটি আদায় করা উচিত, তা নিয়ে আলেমদের মাঝে কিছু পার্থক্য রয়েছে, তবে দুই ধরনের নামাজই সুন্নত হিসেবে গ্রহণযোগ্য।

বর্তমান যুগে তারাবির নামাজঃ বর্তমানে, তারাবির নামাজটি রমজান মাসে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় মুসলিমরা জামাতে আদায় করে থাকেন। কোথাও ৮ রাকাত, কোথাও ২০ রাকাত, আবার কোথাও আরো বেশি রাকাত পড়ার প্রচলন রয়েছে। তবে এটি মূলত একটি নফল নামাজ, যা আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা বাড়াতে, দোয়া-প্রার্থনা ও ইবাদতের মাধ্যমে রমজান মাসকে পূর্ণভাবে শ্রেষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে পালন করা হয়।

তারাবির নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল, যা রমজান মাসের সৌন্দর্য ও গুরুত্বকে আরো বৃদ্ধি করে। যদিও রাসুল (সঃ) নিজে এর কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ করেননি, তবে তার প্রতি রাতে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মুসলমানদের জন্য এটি একটি বিশেষ আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা হিসেবে স্থাপিত হয়েছে।  এর ইতিহাস থেকে আমরা শিখতে পারি যে, এই নামাজের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর কাছে আরও বেশি নেকি কামনা করা এবং রমজান মাসে আমাদের সকল গুনাহ মাফ করার জন্য প্রার্থনা করা।

কাবা শরীফের তারাবির নামাজ কত রাকাত

উপরোক্ত আলোচনায় তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল এবং তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের দলিল জানিয়েছি চলুন এখন কাবা শরীফের তারাবির নামাজ কত রাকাত সম্পর্কে জানি। কাবা শরীফে, মক্কা শহরে অবস্থিত পবিত্র মসজিদ আল-হারামে,
তারাবির নামাজের প্রতি রমজান মাসে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানকার তারাবি নামাজের আয়োজন একটি ঐতিহ্য হিসেবে বহু বছর ধরে চলে আসছে এবং এটি মুসলিমদের জন্য রমজান মাসে এক মহত্তম সুযোগ হিসেবে গণ্য হয়।

রাকাত সংখ্যাঃ কাবা শরীফে সাধারণত তারাবি নামাজ ২০ রাকাত আদায় করা হয়। এই ২০ রাকাতের মধ্যে প্রতি দুই রাকাতে একটি সালাম দিয়ে নামাজ শেষ করা হয়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ও প্রচলিত নিয়ম, যা মক্কার মুসলিমরা দীর্ঘকাল ধরে পালন করে আসছেন।

কিন্তু, কাবা শরীফে ৮ রাকাত তারাবি নামাজও কিছু কিছু সময় বা কিছু বিশেষ জামাতে আদায় হতে দেখা যায়। তবে ২০ রাকাতই এখানে সাধারণভাবে আদায় করা হয় এবং এটি মসজিদ আল-হারামের ইমামদের দ্বারা প্রচলিত।

বিভিন্ন মাযহাবের মতামতঃ কিছু আলেম এবং মাযহাব অনুযায়ী, তারাবি নামাজের রাকাত সংখ্যা বিষয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। যেমন, শাফেয়ি মাযহাবের অনুসারীরা ২০ রাকাতকে সুন্নত হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন, যেখানে অন্যান্য মাযহাবের অনুসারীরা ৮ রাকাত বা তার চেয়ে কম সংখ্যক রাকাত পড়তে পারেন। তবে কাবা শরীফে প্রচলিত রীতি হলো ২০ রাকাত আদায় করা।

কাবা শরীফের বিশেষ বৈশিষ্ট্যঃ এখানে তারাবি নামাজে হাজার হাজার মুসলিম জামাতে অংশগ্রহণ করেন। প্রতি রাতে মসজিদ আল-হারামের বিশাল মাঠে তারাবি নামাজের জন্য মুসলিমদের আগমন ঘটে, যা এক একত্রীকৃত দোয়া ও ইবাদতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সৃষ্টি করে। আল্লাহর রহমত ও দয়া কামনায় মুসলিমরা একত্রিত হয়ে তারাবি নামাজ আদায় করেন, যা রমজান মাসের এই বিশেষ সময়ে তাদের একতা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
তাহলে, কাবা শরীফে তারাবির নামাজ সাধারণত ২০ রাকাত আদায় করা হয়। মুসলিমরা একসঙ্গে জামাতে নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যদিও কিছু সময় ৮ রাকাতের নামাজও আদায় হতে পারে, তবে মক্কায় ২০ রাকাতের ঐতিহ্য অনুসরণ করা হয় যা মুসলিমদের আধ্যাত্মিক জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তারাবির নামাজের নিয়ত

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল এবং তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের দলিল সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি তারাবির নামাজের নিয়ত সম্পর্কে।

বাংলা নিয়তঃ
"আমি আল্লাহর জন্য এই তারাবির নামাজ আদায় করার নিয়ত করছি।"

আরবি নিয়তঃ
"نويت أن أصلي صلاة التراويح لله تعالى"

(নাওয়াইতু আন আসল্লী সালাতাত-তারাবীহি লিল্লাহি তাআলা)

এই নিয়তটি সাধারণত মনে মনে করা হয়, তবে কিছু মুসলিম মুখেও এই নিয়ত উচ্চারণ করেন, যা একটি প্রচলিত অভ্যাস।

তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে

উপরোক্ত আলোচনায় তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল এবং তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের দলিল জানিয়েছি চলুন এখন তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে সম্পর্কে জানি। তারাবির নামাজ একটি বিশেষ সুন্নত নামাজ, যা রমজান মাসে রাতে আদায় করা হয়। এটি রাসুলুল্লাহ (সঃ) দ্বারা প্রমাণিত এবং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে প্রচলিত একটি আমল।
তবে, এটি ফরজ বা ওয়াজিব নামাজ নয়, বরং একটি সুন্নত মোআক্কাদা (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত) হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ, তারাবি নামাজ ছেড়ে দিলে তা গুনাহ হিসেবে ধরা হবে না, তবে একে ত্যাগ করা অত্যন্ত অবহেলার শামিল হতে পারে এবং আল্লাহর কাছে পুরস্কৃত হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে।

নির্দিষ্টভাবে গুনাহ হওয়ার সম্ভাবনাঃ

  • অবহেলাঃ যদিও তারাবি নামাজ ফরজ নয়, তবে এটি এমন একটি ইবাদত যা রমজান মাসে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ছুটে গেলে, একজন মুসলিম যদি নিয়মিত তারাবি নামাজ পড়তে অবহেলা করেন, তবে তিনি আল্লাহর হুকুমের প্রতি অবহেলা করেছেন, যা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় নয়।
  • পুরস্কৃত হওয়ার সুযোগ হারানোঃ তারাবি নামাজে রমজান মাসের রাতে আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ রহমত ও ক্ষমা পাওয়া যায়। তাই যদি কেউ এটি না পড়ে, তাহলে সে এই বিশেষ পুরস্কৃত হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবে। এই দয়া ও রহমত মিস করাটা মুসলিমের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
  • অতএব, সিদ্ধান্তঃ তারাবির নামাজ না পড়লে গুনাহ হবে না, তবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত নামাজ হওয়ায়, এটি না পড়া এক ধরনের ত্যাগ এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত থেকে বঞ্চিত হওয়া হতে পারে। তাই চেষ্টা করা উচিত, যেন রমজান মাসে এই মহৎ আমলটি আদায় করা হয় এবং আল্লাহর কাছে আরও নেকি কামনা করা যায়।

তারাবির নামাজ কত রাকাত সহীহ হাদিস

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল এবং তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের দলিল সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি তারাবির নামাজ কত রাকাত সহীহ হাদিস সম্পর্কে। তারাবির নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ সুন্নত নামাজ, যা রমজান মাসের রাতে আদায় করা হয়। এটি মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, এবং এর রাকাতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তবে, সহীহ হাদিসের আলোকে তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে কিছু নির্দেশনা পাওয়া যায়।

রাসুল (সঃ) এর উপর ভিত্তি করে তারাবির নামাজের রাকাত

রাসুলুল্লাহ (সঃ) নিজে ৮ রাকাত তারাবি নামাজ পড়েছেন, এবং এটি প্রথম দিকে মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। একটি হাদিসে বর্ণিত আছেঃ

“রাসুলুল্লাহ (সঃ) রমজান মাসে ৮ রাকাত তারাবি নামাজ পড়েছেন।” (সহীহ মুসলিম)

এটি থেকে বোঝা যায় যে, ৮ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করা রাসুল (সঃ) এর সুন্নত ছিল।

পরবর্তীতে ২০ রাকাতের প্রচলনঃ তবে, পরবর্তী সময়ে, হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) মসজিদে একজন ইমাম নিযুক্ত করে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়ানোর ব্যবস্থা করেন। হযরত উমর (রাঃ) এর এই উদ্যোগকে বিভিন্ন আলেমরা সমর্থন করেছেন। এই সিদ্ধান্তটি ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য, কারণ এর মাধ্যমে তারাবির নামাজে জামাতে ২০ রাকাত পড়ার প্রচলন শুরু হয়।

সহীহ হাদিসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তঃ রাসুল (সঃ) নিজে ৮ রাকাত তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবীরা এটি অনুসরণ করেছেন। তবে, এটি নিশ্চিত যে, ৮ রাকাত বা ২০ রাকাত, কোনটাই সুন্নতের বিরুদ্ধে নয়। ২০ রাকাত আদায় করা মুসলিমদের জন্য অতিরিক্ত সুযোগ হতে পারে, যা আল্লাহর রহমত ও বরকতের দিকে পরিচালিত করে।

নিষ্কর্ষঃ তবে, হাদিসের আলোকে বলা যায়, ৮ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করা সুন্নত, এবং ২০ রাকাত নামাজ পড়াও একটি গ্রহণযোগ্য প্রচলন যা মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে যে কোনো সংখ্যা পড়া হোক, তা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হওয়া উচিত এবং ইবাদতের সঠিক মানসিকতা রাখতে হবে।

২০ রাকাত তারাবীর হাদীস সহীহ

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল এবং তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের দলিল সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি ২০ রাকাত তারাবীর হাদীস সহীহ সম্পর্কে। তারাবির নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ সুন্নত নামাজ, যা রাতে আদায় করা হয়।
এই নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ইসলামের প্রাথমিক যুগে কিছু মতভেদ ছিল। সাধারণত, ৮ রাকাত তারাবির নামাজের বিষয়টি সুন্নত হিসেবে বেশি প্রচলিত, তবে কিছু ইসলামী ঐতিহাসিক দলিল ও আলেমদের মতামতের ভিত্তিতে ২০ রাকাতও আদায় করা হয়।

২০ রাকাত তারাবির ব্যাপারে সহীহ হাদিসঃ রাসুল (সঃ) নিজে কখনো ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়েননি, তবে এটি মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত একটি আমল। যদিও ২০ রাকাতের বিষয়ে সরাসরি রাসুল (সঃ) থেকে কোনো হাদিস পাওয়া যায় না, কিন্তু সাহাবীদের মধ্যে এটি প্রচলিত ছিল। বিশেষত, হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এর সময়ে এটি শুরু হয়।

এছাড়া, কিছু সহীহ হাদিস থেকে জানা যায় যে, রাসুল (সঃ) ৮ রাকাত তারাবি নামাজ পড়েছেন, এবং ২০ রাকাতের ব্যাপারে হযরত উমরের (রাঃ) সময়কার চর্চা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা। সাহাবীরা তখন জামাতে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়া শুরু করেন, এবং তাদের এই উদ্যোগকে পরে মুসলিম উম্মাহ গ্রহণ করেছে।

হযরত উমরের (রাঃ) উদ্যোগঃ হযরত উমর (রাঃ) যখন দেখলেন যে, সাহাবীরা তারাবি নামাজকে ছোট ছোট গ্রুপে পড়ছেন, তখন তিনি একজন ইমাম নিযুক্ত করেন এবং ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়ানোর ব্যবস্থা করেন। সাহাবীরা তার এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছিলেন।

একটি বর্ণনা এসেছেঃ “হযরত উমর (রাঃ) মসজিদে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়ানোর জন্য একজন ইমাম নিযুক্ত করেছিলেন এবং তারাবি নামাজকে জামাতে পড়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন।” (সহীহ বুখারি)

এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ২০ রাকাত তারাবি নামাজের প্রচলন শুরু হয়, যা এখন অনেক মুসলিম সম্প্রদায়ে প্রচলিত।

হাদিসের আলোকে, ২০ রাকাত তারাবি নামাজ একটি গ্রহণযোগ্য প্রচলন, তবে এটি রাসুল (সঃ) এর সুন্নত নয়। ৮ রাকাত তারাবি নামাজও সুন্নত হিসেবে স্থাপিত এবং এটি রাসুল (সঃ) এর সময়ে প্রচলিত ছিল। ২০ রাকাতের কোনো নির্দিষ্ট হাদিস নেই, তবে তা পরবর্তী সময়ে সাহাবী ও মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একটি উত্তম ঐতিহ্য হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
অতএব, ৮ রাকাত বা ২০ রাকাত তারাবি নামাজই হোক, উভয়ই সুন্নত হিসেবে গ্রহণযোগ্য এবং মুসলমানদের জন্য এটি আল্লাহর প্রতি ইবাদত ও দোয়া করার একটি বিশেষ সুযোগ।

তারাবির নামাজ সর্বনিম্ন কয় রাকাত

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল এবং তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের দলিল সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি তারাবির নামাজ সর্বনিম্ন কয় রাকাত সম্পর্কে। তারাবির নামাজ রমজান মাসে একটি বিশেষ সুন্নত নামাজ, যা মুসলমানরা রাতে আদায় করে থাকেন।
এই নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ইসলামের প্রাথমিক যুগে কিছু মতভেদ ছিল, তবে এটি একটি ঐতিহ্যবাহী এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে কিছু ঐতিহাসিক দলিল ও হাদিস পাওয়া যায় যা তারাবির নামাজের পরিমাণ নির্ধারণে সহায়তা করে।

  • সর্বনিম্ন রাকাতঃ রাসুলুল্লাহ (সঃ) নিজে তারাবির নামাজ ৮ রাকাত পড়েছেন। এটি সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে এবং অনেক মুসলিম সমাজে ৮ রাকাত তারাবি নামাজ প্রচলিত। তবে, এটি একটি সুন্নত নামাজ হওয়ায়, এর সংখ্যা নিয়ে কিছু ভিন্ন মতামত রয়েছে।
  • এটি ফরজ নয়, সুন্নত নামাজঃ তারাবির নামাজ ফরজ নয়, বরং এটি সুন্নত মোআক্কাদা (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত) হিসেবে গণ্য হয়। অর্থাৎ, এটি না পড়লেও গুনাহ হবে না, কিন্তু এটি ত্যাগ করলে মহান আল্লাহর রহমত ও বরকত থেকে বঞ্চিত হওয়া সম্ভব।
  • বিভিন্ন মতামতঃ হযরত উমর (রাঃ) ২০ রাকাত তারাবি নামাজ জামাতে আদায়ের ব্যবস্থা করেন, যা পরবর্তীতে মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়। তবে, ৮ রাকাতও গ্রহণযোগ্য এবং এটি রাসুল (সঃ) এর সুন্নত ছিল।
তারাবির নামাজের সর্বনিম্ন রাকাত হলো ৮ রাকাত, যা রাসুল (সঃ) এর সুন্নত ছিল। তবে, পরবর্তীতে ২০ রাকাত তারাবি নামাজের প্রচলনও হয়েছে এবং তা মুসলিম সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যেই মুসলমানরা এই নামাজ আদায় করে থাকেন।

লেখক এর মন্তব্য- তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল জেনে নিন

রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনাদের তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে এবং তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল ইত্যাদি ছাড়াও তারাবির নামাজ সম্পর্কে জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জানানোর জন্য শেয়ার করবেন।

এমন আরো তথ্য ও রেসিপি জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়ম ভিজিট করুন, সাবস্ক্রাইব করে রাখুন, ফলো করুন, বেশি বেশি শেয়ার করুন এবং কোন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বা রেসিপি জানতে চাইলে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন ও পোস্টটি কেমন লাগলো কমেন্ট জানাবেন আশা করি, আসসালামু আলাইকুম/আদাব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url