জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি

আসসালাম আলাইকুম/আদাব, আজকের আলোচ্য বিষয় জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি এবং স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ইত্যাদি। এছাড়াও জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে আরো জানা-অজানা তথ্য জানতে চাইলে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি
পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ থাকলো, যাতে আপনি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি এবং স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। আশা করছি, এতে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর এবং সঠিক নির্দেশনা পাবেন যা আপনার জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি করতে সাহায্য করবে।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি

এখন আমি আপনাদের সাথে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি সম্পর্কে শেয়ার করতে যাচ্ছি।

প্রাকৃতিক জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিঃ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে, দম্পতিরা কোনো ধরণের কেমিক্যাল বা যান্ত্রিক উপকরণ ব্যবহার না করে শারীরিক ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন। এগুলি সাধারণত নিম্নলিখিত:

  • কালেন্ডার পদ্ধতিঃ মহিলার মাসিক চক্রের হিসাব করে সেই সময়ে যৌন সম্পর্ক এড়ানো হয়, যখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।
  • বডি তাপমাত্রা পদ্ধতিঃ মহিলার শরীরের তাপমাত্রা নিরীক্ষণ করে নির্দিষ্ট সময়ে যৌন সম্পর্ক এড়ানো হয়।
  • মিউকাস চিহ্ন পদ্ধতিঃ মহিলার গর্ভধারণ ক্ষমতা নির্ধারণের জন্য তার গর্ভাশয়ের মিউকাস পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা হয়।
  • ব্রেস্টফিডিং পদ্ধতিঃ মা যদি তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান, তবে কিছু সময়ের জন্য গর্ভধারণের সম্ভাবনা কম থাকে।
কৃত্রিম জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিঃ কৃত্রিম পদ্ধতিতে, শারীরিক অথবা কেমিক্যাল উপকরণ ব্যবহার করা হয় গর্ভধারণ প্রতিরোধে। এগুলি নিম্নলিখিতঃ

  • কনডমঃ পুরুষ বা মহিলার জন্য তৈরি বিশেষ উপকরণ, যা যৌন সম্পর্কের সময় প্রয়োগ করা হয় এবং স্পার্মের গর্ভাশয়ে প্রবাহকে বাধা দেয়।
  • পিলঃ মহিলাদের জন্য গর্ভধারণ রোধে হরমোনের মাধ্যমে কাজ করে এমন ট্যাবলেট।
  • আইইউডি (IUD): একটি ছোট যন্ত্র যা গর্ভাশয়ে স্থাপন করা হয় এবং গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে।
  • ইমপ্ল্যান্টঃ একটি ছোট, প্লাস্টিকের নল যা মহিলাদের ত্বকের নিচে স্থাপন করা হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে।
  • ইনজেকশনঃ হরমোনাল ইনজেকশন, যা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে।
  • স্ত্রীদের জন্য গর্ভনিরোধক রিংঃ এটি মহিলার যোনিতে স্থাপন করা হয় এবং ধীরে ধীরে হরমোন নিঃসরণ করে।
স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিঃ কিছু মানুষ স্থায়ীভাবে গর্ভধারণের প্রবণতা বন্ধ করতে চান। এ জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি রয়েছেঃ

  • স্ত্রীদের জন্য স্টেরিলাইজেশনঃ এটি একটি সার্জিক্যাল প্রক্রিয়া, যেখানে মহিলার ফ্যালোপিয়ান টিউব বন্ধ বা বাধা দেওয়া হয়, যাতে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর সংমিশ্রণ না হয়।
  • পুরুষদের জন্য ভাসেকটমিঃ পুরুষদের জন্য একটি সার্জিক্যাল প্রক্রিয়া, যেখানে শুক্রাণু নালির প্রবাহ বন্ধ করা হয়।
প্রত্যেকটি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তাই এটি ব্যবহার করার আগে একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

খাবার বড়ি


• খুবই কার্যকর (১৯.৭%)। প্রতিদিন একটি করে বড়ি খেতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ে নতুন প্যাকেট শুরু করতে হয়।
• খাওয়া বন্ধ করলে যে কোন সময় গর্ভবতী হওয়া যায়।
• প্রায় সব মহিলার জন্য নিরাপদ। মারাত্মক জটিলতা নেই বললেই চলে।
• যে কোন বয়সের প্রজননক্ষম বিবাহিত মহিলা ব্যবহার করতে পারে।
• মাসিকের মোচরানো ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তস্রাব, রক্তস্বল্পতা (রক্তে আয়রণের ঘাটতি) এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
• বড়ি খাওয়া শুরু করার প্রথম দিকে অপ্রত্যাশিত রক্তস্রাব বা ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব হতে পারে। এটা ক্ষতিকর নয়। কয়েক মাসের মধ্যে রক্তস্রাবের পরিমাণ কমে আসে এবং নিয়মিত হয়।
• কোন কোন মহিলার প্রথম কয়েক মাস সামান্য মাথাব্যথা, ওজন পরিবর্তন অথবা হজমে সমস্যা হতে পারে। এসব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চলে যায়।

মহিলা স্থায়ী পদ্ধতি (লাইগেশন)


• যে সব মহিলা নিশ্চিতভাবে আর সন্তান চায় না, তাদের জন্য স্থায়ী পদ্ধতি উপযোগী। তাই ভালোভাবে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
• খুবই (১৫.৫%) কার্যকর।
• সহজ ও নিরাপদ অপারেশন। সাধারণতঃ অজ্ঞান না করে করা হয়, তবে অপারেশনের স্থান অবশ করে নেয়ার ফলে ব্যথা লাগে না।
• অপারেশনের পর কিছুদিন ব্যথা এবং অপারেশনের জায়গা ফোলা থাকতে পারে। গুরুতর জটিলতার সম্ভাবনা খুবই কম।
• কোন দীর্ঘস্থায়ী পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই। যৌনক্ষমতা বা অনুভূতির উপর প্রভাব নেই।

পুরুষ স্থায়ী পদ্ধতি (এন.এস.ভি)


• যে সব পুরুষ নিশ্চিতভাবে আর সন্তান চায় না, তাদের জন্য স্থায়ী পদ্ধতি উপযোগী। তাই ভালোভাবে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
• কার্যকর হতে ৩ মাস লাগে। কাজেই এ সময় স্ত্রী/স্বামীকে অন্য কোন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়।
• ৩ মাস পর খুবই কার্যকর (৯৯.৯৯%)।
• নিরাপদ, সহজ ও সুবিধাজনক অপারেশন। কয়েক মিনিটের মধ্যে করা হয়। ব্যথানাশক দিয়ে নেয়া হয়।
• অপারেশনে কোন চুরি বা ব্লেডের প্রয়োজন হয় না, ফলে রক্ত পড়ে না এবং সেলাইও লাগে না।
• প্রথম কয়েকদিন অপারেশনের জায়গায় ফোলা, ব্যথা বা লালাভ থাকতে পারে।
• বীর্যপাত আগের মতোই হয়। যৌনক্ষমতা বা অনুভূতির উপর কোন প্রভাব নেই।

ডিএমপিএ ইনজেকশন


• কার্যকর এবং নিরাপদ (৯৯.৭%)।
• প্রতি ৩ মাস পর পর একটি ইনজেকশন নিতে হয়।
• কমপক্ষে একটি সন্তান থাকলে যে কোন বয়সের বিবাহিত মহিলা ইনজেকশন ব্যবহার করতে পারে।
• যে সব মায়েরা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, তাদের জন্যও নিরাপদ এবং সন্তান জন্মের ৬ সপ্তাহ পর থেকে ব্যবহার করা যায়।
• গোপনীয়তা বজায় থাকে।
• প্রথম কয়েক মাস ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব অথবা অপ্রত্যাশিত রক্তস্রাব হতে পারে এবং তারপর সাধারণত মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। ওজন বৃদ্ধি, সামান্য মাথাব্যথা হতে পারে, যা ক্ষতিকর নয়।
• ইনজেকশন বন্ধ করার পর মহিলা যে কোন সময় গর্ভধারণ করতে পারে। তবে গর্ভধারণ করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

বুকের দুধ খাওয়ানো নির্ভর পদ্ধতি (এল.এ.এম)


• সন্তান জন্মের পর ৬ মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানো নির্ভর পদ্ধতি একটি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি।
• বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে এমন মায়েরা বুকের দুধ খাওয়ানো নির্ভর পদ্ধতি তখনই ব্যবহার করতে পারে যখনঃ

  • বাচ্চাকে বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোন খাবার বা পানীয় খাওয়াবে না। দিনে ৪ ঘণ্টা এবং রাতে ৬ ঘণ্টার বেশি বিরতি দেওয়া যাবে না।
  • মায়ের মাসিক শুরু হয়নি।
  • বাচ্চার বয়স ৬ মাসের কম।
• মা যখন আর বুকের দুধ খাওয়ানো পদ্ধতির উপর নির্ভর করতে পারবে না, তখন তার পূর্বেই তাকে অন্য কোন পদ্ধতি নেওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে।

স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

উপরোক্ত আলোচনায় আমি আপনাদের মাঝে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি জানিয়েছি চলুন এখন স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি জানি। স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হলো সেই সমস্ত পদ্ধতি যা সাধারণত স্বল্প সময়ের জন্য কার্যকরী এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য। এই পদ্ধতিগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য হলো দ্রুত এবং অস্থায়ীভাবে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করা। নিচে কিছু সাধারণ স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া হলোঃ

  • কনডমঃ কনডম হলো একটি সবচেয়ে পরিচিত এবং সহজলভ্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এটি পুরুষ বা মহিলার জন্য তৈরি বিশেষ এক ধরনের শীর্ষস্থলী উপকরণ, যা যৌন সম্পর্কের সময় ব্যবহৃত হয়। এটি শুক্রাণুর গর্ভাশয়ে প্রবাহ রোধ করে এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমায়। কনডমের একটি বড় সুবিধা হল, এটি কেবল গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমায় না, বরং যৌন সংক্রামক রোগ (STDs) থেকে রক্ষা করতেও সাহায্য করে।
  • পিল (গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট)ঃ গর্ভনিরোধক পিল হলো একটি হরমোনাল পদ্ধতি যা মহিলা ব্যবহার করেন। এই পিলগুলি মহিলার শরীরে নির্দিষ্ট হরমোন সরবরাহ করে, যা ডিম্বাণু পরিপক্ব হতে বাধা দেয় এবং শুক্রাণুর সাথে মিলনের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। সাধারণত, এই পিলগুলি দৈনিক একবার সঠিক সময়ে গ্রহণ করতে হয়। এটি খুবই কার্যকরী পদ্ধতি হলেও, সময়মতো না নেওয়া বা ভুল ব্যবহারে এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
  • ইনজেকশনঃ গর্ভনিরোধক ইনজেকশন হল এক ধরনের হরমোনাল পদ্ধতি, যা সাধারণত মহিলাদের প্রতি তিন মাস পর পর নেওয়া হয়। ইনজেকশনটি শরীরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ হরমোন প্রদান করে, যা গর্ভধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ডিম্বাণুর মুক্তি বাধাগ্রস্ত করে এবং জরায়ুতে শুক্রাণু প্রবেশের উপযোগিতা কমিয়ে দেয়।
  • গর্ভনিরোধক রিংঃ এটি একটি ছোট রাবারের রিং যা মহিলার যোনিতে স্থাপন করা হয়। রিংটি ধীরে ধীরে হরমোন নিঃসরণ করে, যা মহিলার শরীরে গর্ভধারণ প্রতিরোধক প্রভাব তৈরি করে। এটি সাধারণত এক মাসে একবার পরিবর্তন করা হয়। রিংটির কার্যকারিতা অনেকটা পিলের মতোই এবং এটি বিশেষভাবে মহিলাদের জন্য উপকারী যাদের পিল খাওয়া ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • জরায়ু-গর্ভধারণ পদ্ধতি (IUD)ঃ আইইউডি (IUD) হল একটি ছোট যন্ত্র যা গর্ভাশয়ে স্থাপন করা হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে। এটি একটি অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি এবং একবার স্থাপন করার পর এটি কয়েক বছর ধরে কার্যকর থাকে। তবে, এটি একটি স্বল্পমেয়াদী পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা হয়, কারণ একে বিশেষজ্ঞ দ্বারা সরিয়ে নেওয়া সম্ভব।
  • পার্টনার রেট্র্যাকশন (Withdrawal Method)ঃ এই পদ্ধতিতে পুরুষ যৌন সম্পর্কের সময় তার শুক্রাণু বের করে দেওয়ার আগেই যৌনসঙ্গম শেষ করেন। এটি স্বল্পমেয়াদী পদ্ধতির মধ্যে একটি হলেও, এর কার্যকারিতা তুলনামূলকভাবে কম এবং এটি খুব নির্ভরযোগ্য নয়, কারণ কিছু শুক্রাণু প্রাকৃতিকভাবে স্খলনের পূর্বেই যোনিতে প্রবাহিত হতে পারে।
এই সকল পদ্ধতির মধ্যে বেশ কিছু সহজ এবং জনপ্রিয় পদ্ধতি রয়েছে, যা সাময়িকভাবে গর্ভধারণ রোধে কার্যকর। তবে, যে কোন পদ্ধতি ব্যবহারের আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা না হয়।

অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি এবং স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে। অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হলো এমন কিছু পদ্ধতি, যা সাময়িকভাবে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কার্যকরী থাকে।
এই পদ্ধতিগুলি বিশেষ করে যারা স্থায়ীভাবে গর্ভধারণ বন্ধ করতে চান না, তাদের জন্য উপযুক্ত। সাধারণত, এগুলির ব্যবহারে শারীরিক পরিবর্তন স্থায়ী হয় না এবং পদ্ধতি শেষ হলে সহজেই প্রজনন ক্ষমতা ফিরে আসে। নিচে কিছু অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া হলোঃ

  • কনডমঃ কনডম হলো এক ধরনের শারীরিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, যা সাধারণত পুরুষ বা মহিলার জন্য তৈরি করা হয়। পুরুষ কনডমটি যৌন সম্পর্কের সময় পুরুষের লিঙ্গে পরানো হয়, যা শুক্রাণু গর্ভাশয়ে প্রবাহিত হতে বাধা দেয়। মহিলাদের জন্যও কনডমের বিকল্প রয়েছে, যা যোনিতে স্থাপন করা হয়। কনডমের অন্যতম সুবিধা হল এটি শুধু গর্ভধারণ রোধ করে না, বরং যৌন সংক্রামক রোগ (STDs) থেকেও সুরক্ষা প্রদান করে।
  • গর্ভনিরোধক পিলঃ গর্ভনিরোধক পিল একটি হরমোনাল পদ্ধতি, যা মহিলারা ব্যবহার করেন। এই পিলগুলির মধ্যে সাধারণত দুটি ধরনের হরমোন থাকে-এস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টিন-যেগুলি ডিম্বাণু পরিপক্ব হওয়া বন্ধ করে দেয় এবং জরায়ুতে শুক্রাণু প্রবেশের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। পিলটি প্রতিদিন সঠিক সময়ে খেতে হয়। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি অত্যন্ত কার্যকরী, তবে ভুলভাবে খেলে এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
  • ইনজেকশনঃ গর্ভনিরোধক ইনজেকশন হলো একটি হরমোনাল পদ্ধতি, যা মহিলাদের শরীরে ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং এটি সাধারণত প্রতি তিন মাসে একবার নেওয়া হয়। ইনজেকশনটি শরীরে হরমোন নিঃসরণ করে, যা গর্ভধারণ রোধে সহায়ক। এই পদ্ধতি সাধারণত নিরাপদ এবং কার্যকরী, তবে কিছু মহিলা ইনজেকশন নেওয়ার পর শারীরিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারেন।
  • গর্ভনিরোধক রিংঃ গর্ভনিরোধক রিং একটি ছোট রাবারের রিং যা মহিলার যোনিতে স্থাপন করা হয়। এটি ধীরে ধীরে হরমোন নিঃসরণ করে, যা ডিম্বাণু মুক্তির প্রক্রিয়া রোধ করে এবং জরায়ুতে শুক্রাণুর প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। রিংটি সাধারণত এক মাস ব্যবহারের জন্য হয়, এবং প্রতি মাসে একবার এটি পরিবর্তন করতে হয়।
  • জরায়ু-গর্ভধারণ পদ্ধতি (IUD)ঃ আইইউডি (IUD) হলো একটি ছোট যন্ত্র, যা মহিলার জরায়ুতে স্থাপন করা হয় এবং এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে। এটি একটি অস্থায়ী, তবে দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি। IUD সাধারণত ৩ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে, এবং যদি কোনো সময় এটি অপসারণ করা হয়, তবে মহিলার প্রজনন ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
  • পার্টনার রেট্র্যাকশন (Withdrawal Method)ঃ এটি একটি খুব সাধারণ পদ্ধতি, যা পুরুষের উপর নির্ভরশীল। এই পদ্ধতিতে পুরুষ যৌনসঙ্গমের সময় তার শুক্রাণু বের করে দেওয়ার আগেই লিঙ্গ বের করে নেন। যদিও এটি খুব সহজ, তবে এর কার্যকারিতা তুলনামূলকভাবে কম এবং এতে গর্ভধারণের ঝুঁকি থাকে, কারণ কিছু শুক্রাণু স্খলনের পূর্বেই যোনিতে প্রবাহিত হতে পারে।
  • মাসিক চক্র পদ্ধতিঃ মাসিক চক্রের হিসাব করে এমন সময়ে যৌন সম্পর্ক এড়ানোর একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মহিলার মাসিক চক্রের নির্দিষ্ট সময়গুলো নির্ধারণ করা হয়, যখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা কম থাকে। এই পদ্ধতি ব্যবহারকারীকে অনেক সতর্ক থাকতে হয় এবং এটি ১০০% কার্যকরী নয়, তবে অনেক দম্পতি এটি চেষ্টা করে থাকেন।
অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলি বিভিন্ন মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা অনুযায়ী উপযুক্ত হতে পারে, তাই কোনো পদ্ধতি ব্যবহারের আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সব পদ্ধতিরই কিছু না কিছু সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এবং সেগুলি ব্যবহারের সময় সঠিক নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন।

পরিবার পরিকল্পনা আধুনিক পদ্ধতি

উপরোক্ত আলোচনায় আমি আপনাদের মাঝে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি এবং স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি4 জানিয়েছি চলুন এখন পরিবার পরিকল্পনা আধুনিক পদ্ধতি জানি। পরিবার পরিকল্পনা আধুনিক পদ্ধতি এমন সব পদ্ধতি, যা সাম্প্রতিক প্রযুক্তি এবং গবেষণার মাধ্যমে গর্ভধারণ রোধ করতে সাহায্য করে।
আধুনিক পদ্ধতিগুলি অনেক বেশি কার্যকর, নির্ভরযোগ্য এবং সহজে ব্যবহৃত হতে পারে। এসব পদ্ধতির মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা করা অনেক দম্পতির জন্য সুবিধাজনক এবং নিরাপদ বিকল্প। নিচে কিছু জনপ্রিয় আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলোঃ

  • গর্ভনিরোধক পিলঃ গর্ভনিরোধক পিল একটি হরমোনাল পদ্ধতি যা মহিলাদের জন্য উপলব্ধ। এই পিলগুলো প্রজেস্টিন এবং/অথবা এস্ট্রোজেন নামক হরমোনের সংমিশ্রণ দিয়ে তৈরি, যা ডিম্বাণুর পরিপক্বতা এবং মুক্তি রোধ করে। পিলটি প্রতিদিন একবার সঠিক সময়ে গ্রহণ করতে হয়, এবং এটি গর্ভধারণ প্রতিরোধে প্রায় ৯৯% কার্যকর। তবে, পিল ব্যবহারে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন মুড সুইং বা মাথাব্যথা। নিয়মিত ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকর।
  • ইনজেকশনঃ গর্ভনিরোধক ইনজেকশন হলো একটি হরমোনাল পদ্ধতি, যা সাধারণত মহিলাদের প্রতি তিন মাস পর পর দেওয়া হয়। এই ইনজেকশনটি শরীরে প্রজেস্টিন হরমোন নিঃসরণ করে, যা ডিম্বাণু মুক্তির প্রক্রিয়া বন্ধ করে এবং জরায়ুর মুখের লাইনিং পরিবর্তন করে, যাতে গর্ভধারণ সম্ভব না হয়। ইনজেকশনটি খুবই কার্যকর, তবে কিছু মহিলা ইনজেকশন গ্রহণের পর শারীরিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারেন।
  • জরায়ু গর্ভনিরোধক (IUD)ঃ আইইউডি (IUD) একটি ছোট যন্ত্র যা মহিলার জরায়ুতে স্থাপন করা হয়। এটি গর্ভধারণ প্রতিরোধে কার্যকরী, এবং একবার স্থাপন করার পর এটি কয়েক বছর ধরে কাজ করে (৩ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত)। এটি প্রধানত দুটি ধরনের হয়ঃ হরমোনাল IUD এবং কপার IUD। হরমোনাল IUD হরমোন ছেড়ে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে, যখন কপার IUD শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর সাথে মিলন বন্ধ করতে সাহায্য করে। এটি একটি অত্যন্ত কার্যকরী এবং দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি।
  • গর্ভনিরোধক রিংঃ গর্ভনিরোধক রিং হলো একটি ছোট, রাবারের রিং যা মহিলার যোনিতে স্থাপন করা হয়। এটি ধীরে ধীরে হরমোন নিঃসরণ করে, যা ডিম্বাণু মুক্তির প্রক্রিয়া বন্ধ করে এবং জরায়ুতে শুক্রাণু প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে। রিংটি সাধারণত এক মাসের জন্য স্থাপন করা হয় এবং প্রতি মাসে একবার এটি পরিবর্তন করতে হয়। এটি সহজে ব্যবহৃত হতে পারে এবং পিলের মতো সময়মতো ভুলে না খাওয়ার সুবিধা রয়েছে।
  • ইমপ্ল্যান্টঃ ইমপ্ল্যান্ট একটি ছোট, প্লাস্টিকের টিউব যা মহিলার ত্বকের নিচে স্থাপন করা হয়। এটি শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ হরমোন নিঃসরণ করে, যা ডিম্বাণু মুক্তির জন্য বাধা সৃষ্টি করে এবং জরায়ুতে শুক্রাণুর প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে। একবার স্থাপন করার পর এটি ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে এবং এটি গর্ভধারণের জন্য একটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।
  • কনডমঃ কনডম হলো একটি সাধারণ শারীরিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, যা পুরুষ বা মহিলার জন্য উপলব্ধ। পুরুষ কনডমটি যৌন সম্পর্কের সময় পুরুষের লিঙ্গে পরানো হয়, যাতে শুক্রাণু গর্ভাশয়ে প্রবাহিত হতে বাধা পায়। মহিলাদের জন্যও কনডমের বিকল্প রয়েছে, যা যোনিতে স্থাপন করা হয়। এটি কেবল গর্ভধারণ রোধ করে না, বরং যৌন সংক্রামক রোগ (STDs) থেকে সুরক্ষাও প্রদান করে।
  • পার্মানেন্ট পদ্ধতি (স্টেরিলাইজেশন)ঃ কিছু মানুষ স্থায়ীভাবে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করতে চান। এই জন্য পুরুষের ভাসেকটমি এবং মহিলাদের জন্য ফ্যালোপিয়ান টিউব বন্ধ করা হয় (স্টেরিলাইজেশন)। এটি একবার করা হলে, পরে প্রজনন ক্ষমতা ফিরে আসে না। এই পদ্ধতি স্থায়ী, কিন্তু যদি কেউ আর একটি সন্তান চাইতে চান তবে এই পদ্ধতির পরবর্তীকালে কোনো উপায় নেই।
  • অধিকার এবং নিরাপত্তাঃ যে কোনো আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করার আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। চিকিৎসক যেকোনো স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনা করে সঠিক পদ্ধতির পরামর্শ দেবেন, যাতে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা সমস্যা না হয়। পাশাপাশি, সকল পদ্ধতির ব্যবহারে শারীরিক ও মানসিক স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।
এছাড়া, প্রতিটি আধুনিক পদ্ধতির কিছু সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তাই সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন করার সময় এগুলির মধ্যে পার্থক্য বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি কয়টি ও কি কি

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি এবং স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি কয়টি ও কি কি সম্পর্কে। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়ঃ

প্রাকৃতিক পদ্ধতিঃ মহিলার মাসিক চক্র বা শরীরের অন্য প্রাকৃতিক লক্ষণ অনুসরণ করে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করা।

কৃত্রিম বা হরমোনাল পদ্ধতিঃ

  • গর্ভনিরোধক পিলঃ প্রতিদিন সঠিক সময়ে গ্রহণ করা হয়, যা গর্ভধারণ রোধ করে।
  • ইনজেকশনঃ প্রতি ৩ মাসে একবার হরমোনাল ইনজেকশন দেওয়া হয়।
  • গর্ভনিরোধক রিংঃ এক মাসের জন্য যোনিতে স্থাপন করা হয় এবং এটি ধীরে ধীরে হরমোন নিঃসরণ করে।
  • ইমপ্ল্যান্টঃ ত্বকের নিচে স্থাপন করা হয়, যা দীর্ঘমেয়াদী গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে।
স্থায়ী পদ্ধতিঃ

  • স্ত্রীদের স্টেরিলাইজেশনঃ মহিলার ফ্যালোপিয়ান টিউব বন্ধ করা হয়।
  • পুরুষদের ভাসেকটমিঃ পুরুষের শুক্রাণু নালী বন্ধ করা হয়।
এই পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে মানুষ তাদের পরিবার পরিকল্পনার চাহিদা অনুযায়ী নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ পদ্ধতি বেছে নিতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি

উপরোক্ত আলোচনায় আমি আপনাদের মাঝে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি এবং স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি জানিয়েছি চলুন এখন দীর্ঘমেয়াদী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি জানি। দীর্ঘমেয়াদী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি হলো সেই সমস্ত পদ্ধতি,
যা একবার ব্যবহার করার পর দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকর থাকে এবং গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে। এই পদ্ধতিগুলি সাধারণত এক বা একাধিক বছর ধরে কার্যকরী এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সৃষ্টি করে। নিম্নে কিছু জনপ্রিয় দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া হলো:

  • আইইউডি (IUD): এটি একটি ছোট যন্ত্র যা মহিলার জরায়ুতে স্থাপন করা হয়। এটি ৩ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত গর্ভধারণ প্রতিরোধে কার্যকর থাকে। এটি দুটি ধরনের হতে পারে: হরমোনাল IUD এবং কপার IUD।
  • ইমপ্ল্যান্টঃ এটি একটি ছোট, প্লাস্টিকের টিউব যা মহিলার ত্বকের নিচে স্থাপন করা হয়। এটি শরীরে হরমোন নিঃসরণ করে, যা ডিম্বাণু মুক্তির বাধা সৃষ্টি করে এবং ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে।
এই পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা দীর্ঘ সময়ের জন্য নিশ্চিত করা যায় এবং এতে প্রজননক্ষমতা দ্রুত ফিরে আসে যখন পদ্ধতি বাতিল করা হয়।

ইমপ্ল্যান্ট জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি এবং স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি ইমপ্ল্যান্ট জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে। ইমপ্ল্যান্ট জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি একটি অত্যন্ত কার্যকর এবং দীর্ঘমেয়াদী হরমোনাল জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, যা মহিলাদের জন্য নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য। এটি একটি ছোট প্লাস্টিকের টিউব যা মহিলার ত্বকের নিচে স্থাপন করা হয়।
টিউবটি হরমোন নিঃসরণ করে, যা ডিম্বাণু মুক্তির প্রক্রিয়া বন্ধ করে এবং জরায়ুতে শুক্রাণুর প্রবাহের ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত করে, ফলে গর্ভধারণ প্রতিরোধ হয়। ইমপ্ল্যান্ট সাধারণত ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে। একবার স্থাপন করার পর মহিলাকে আর কিছু করতে হয় না, এটি নিজের কাজ করে যায়। এটি একটি ব্যথাহীন প্রক্রিয়া এবং যেকোনো সময় বিশেষজ্ঞ দ্বারা অপসারণ করা যেতে পারে,

যার পর নারীর প্রজনন ক্ষমতা দ্রুত ফিরে আসে। এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি নিয়মিত কোনো কাজ করতে হয় না, যেমন পিল খাওয়া বা কনডম ব্যবহার। ইমপ্ল্যান্টটি স্থাপন করার পর দীর্ঘ সময় ধরে নিরাপদ এবং কার্যকরী থাকে, তবে এটি ব্যবহারের আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, যাতে কোনো শারীরিক সমস্যা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানো যায়।
অবশ্যই, ইমপ্ল্যান্টের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, যেমন ব্যথা, রক্তস্রাবের পরিবর্তন বা মুড সুইং। তবে অধিকাংশ মহিলার জন্য এটি একটি নিরাপদ এবং কার্যকর পদ্ধতি।

পরিবার পরিকল্পনা স্থায়ী পদ্ধতি

উপরোক্ত আলোচনায় আমি আপনাদের মাঝে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি এবং স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি জানিয়েছি চলুন এখন পরিবার পরিকল্পনা স্থায়ী পদ্ধতি জানি। পরিবার পরিকল্পনা স্থায়ী পদ্ধতি এমন পদ্ধতি, যা একবার কার্যকরী হলে তা দীর্ঘকাল ধরে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে এবং পরবর্তীতে প্রজননক্ষমতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এই পদ্ধতিগুলি সাধারণত স্থায়ী এবং কোন উল্টো ফলাফল সম্ভব নয়। দুটি প্রধান স্থায়ী পদ্ধতি রয়েছেঃ

  • পুরুষ ভাসেকটমিঃ এটি পুরুষদের জন্য একটি স্থায়ী পদ্ধতি, যেখানে পুরুষের শুক্রাণু নালী বন্ধ করা হয়। এর ফলে শুক্রাণু গর্ভাশয়ে প্রবাহিত হতে পারে না, ফলে গর্ভধারণ প্রতিরোধ হয়। এটি সাধারণত একটি সহজ ও নিরাপদ প্রক্রিয়া, যা দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং ব্যথাহীন।
  • মহিলাদের স্টেরিলাইজেশন (ফ্যালোপিয়ান টিউব বন্ধ করা): এই পদ্ধতিতে মহিলার ফ্যালোপিয়ান টিউব বন্ধ করা হয়, যাতে ডিম্বাণু জরায়ুর মধ্যে পৌঁছাতে না পারে। এটি একটি স্থায়ী পদ্ধতি, যা পুনরায় প্রজননক্ষমতা ফিরিয়ে আনার সুযোগ প্রদান করে না।

পুরুষের স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি এবং স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি পুরুষের স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে। পুরুষের স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং অপরিবর্তনীয় পদ্ধতি, যা একবার সম্পন্ন হলে পুনরায় প্রজননক্ষমতা ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। এটি সাধারণত পুরুষদের জন্য একটি নিরাপদ এবং কার্যকরী পদ্ধতি। প্রধান পদ্ধতিটি হলোঃ

ভাসেকটমি: এটি পুরুষদের জন্য একটি স্থায়ী পদ্ধতি, যেখানে পুরুষের শুক্রাণু নালী (ভাস ডেফারেন্স) কেটে ফেলা বা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে শুক্রাণু অন্ডকোষ থেকে বের হতে পারে না এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনা রোধ হয়। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত একটি ছোট সার্জারির মাধ্যমে করা হয় এবং এটি ব্যথাহীন ও দ্রুত সম্পন্ন হয়।
ভাসেকটমি সম্পন্ন করার পর, পুরুষের প্রজননক্ষমতা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়, তাই এটি শুধুমাত্র তাদের জন্য উপযুক্ত যারা ভবিষ্যতে সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা রাখেন না। পদ্ধতিটি একবার সম্পন্ন হলে এটি দীর্ঘকাল ধরে কার্যকর থাকে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরাপদ।

লেখকের মন্তব্য- জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি

রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কত প্রকার এবং স্বল্পমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ইত্যাদি ছাড়াও জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জানানোর জন্য শেয়ার করবেন।

এমন আরো তথ্য ও রেসিপি জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়ম ভিজিট করুন, সাবস্ক্রাইব করে রাখুন, ফলো করুন, বেশি বেশি শেয়ার করুন এবং কোন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বা রেসিপি জানতে চাইলে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন ও পোস্টটি কেমন লাগলো কমেন্ট জানাবেন আশা করি, আসসালামু আলাইকুম/আদাব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url