তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে জেনে নিন
আসসালামু আলাইকুম/আদাব, আজকের আলোচ্য বিষয় হলো তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত
আরবিতে এবং তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল ইত্যাদি ছাড়াও তারাবির নামাজ সম্পর্কে
জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য। এই পোস্টে থাকছে তারাবির নামাজের নিয়ম এবং অন্যান্য
গুরুত্বপূর্ণ দিক।
পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ থাকলো, যাতে আপনি তারাবির নামাজের
দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে এবং তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল সম্পর্কে বিস্তারিত
জানতে পারেন। আশা করছি, এতে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর এবং সঠিক নির্দেশনা পাবেন।
তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে জেনে নিন
এখন আমি আপনাদের সাথে তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে সম্পর্কে শেয়ার
করতে যাচ্ছি।
তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত (আরবি):
اللّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ رَحْمَتَكَ وَمَغْفِرَتَكَ فِي هَذَا الشَّهْرِ
الْمُبَارَكِ.
اللّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنْ عُتَقَائِكَ مِنَ النَّارِ فِي هَذَا الشَّهْرِ.
اللّهُمَّ تَقَبَّلْ صِيَامَنَا وَقِيَامَنَا وَدُعَاءَنَا فِي هَذَا الشَّهْرِ.
اللّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا شَفِيعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمُغْفِرَةً
لِذُنُوبِنَا وَمَحْوًا لِخَطَايَانَا.
اللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَمَضَانَ وَاجْعَلْهُ خَيْرًا لَنَا فِي دِينِنَا
وَدُنْيَانَا.
اللّهُمَّ فَكِّ قُرُوبَنَا وَقَلْبَنَا وَاجْعَلْنَا مِنَ الَّذِينَ
يَجْتَنِبُونَ الْفَحْشَاءَ وَالْمُنْكَرَ.
اللّهُمَّ ارحمْنَا بِرَحْمَتِكَ الْوَاسِعَةِ وَتَقَبَّلْ مِنَّا صَلَاتَنَا
وَدُعَاءَنَا.
اللّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنْ أَهْلِ الْقُرْآنِ الَّذِينَ هُمْ أَهْلُكَ
وَخَاصَّتُكَ.
অনুবাদ (বাংলায়):
হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে এই পবিত্র মাসে তোমার রহমত ও মাগফিরাত কামনা করছি।
হে আল্লাহ! এই মাসে আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন।
হে আল্লাহ! আমাদের
রোজা, নামাজ ও দোয়া
কবুল করুন এই মাসে।
হে আল্লাহ! এই মাসকে আমাদের জন্য কিয়ামতের দিন শাফা'আতকারী ও গুনাহ মাফকারী
বানিয়ে দিন।
হে আল্লাহ! রমজান মাসে আমাদের জন্য বরকত দিন এবং তা আমাদের ধর্ম ও দুনিয়ার জন্য
কল্যাণকর করে দিন।
হে আল্লাহ! আমাদের হৃদয়কে পরিষ্কার করে দিন, এবং আমাদেরকে সকল অশ্লীলতা ও মন্দ
কাজ থেকে দূরে রাখুন।
হে আল্লাহ! তোমার অসীম রহমতের মাধ্যমে আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের নামাজ ও
দোয়া কবুল করুন।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে কুরআনের আয়াতগুলো বুঝে পড়ার এবং তার অনুসরণকারী বানিয়ে দিন।
এই দোয়াটি এবং মোনাজাতটি তারাবির নামাজের শেষে অথবা অন্য যে কোনো সময় শুদ্ধ ও দৃঢ়
বিশ্বাসের সঙ্গে পাঠ করা যেতে পারে।
তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
উপরোক্ত আলোচনায় তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে জানিয়েছি চলুন এখন
তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল সম্পর্কে জানি। তারাবির নামাজ হলো রমজান মাসে
রাতের নামাজ, যা বিশেষ করে মুসলিমরা রমজান মাসে মসজিদে জামাতে পড়েন। এই নামাজের
বিষয়ে ইসলামী শরিয়া অনুসারে অনেক মতামত রয়েছে,
আরো পড়ুনঃ ফজরের নামাজের শেষ সময় জেনে নিন
তবে সাধারণভাবে এই নামাজকে সুন্নত মোয়াক্কাদা (অর্থাৎ শক্তভাবে পরামর্শিত সুন্নত)
হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে, ইমাম নবী, ইমাম শাফি, এবং ইমাম মালিকসহ অনেক
উলামা তারাবি নামাজকে সুন্নত মোয়াক্কাদা বলে আখ্যায়িত করেছেন। এর মানে হলো, এটি
অবশ্যই এক ধরনের সুন্নত যা মুসলিমদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি প্রতি রাতে
রমজানে জামাতে পড়া উত্তম।
তবে, যদি কেউ এই নামাজ না পড়েন, তাহলে তার উপর কোনো শাস্তি নেই, কিন্তু যারা তা
পড়েন, তাদের জন্য অনেক বড় পুরস্কার রয়েছে। এছাড়া, ইমাম আবু হানিফা রমজান মাসে
তারাবি নামাজের জন্য নফল হিসেবে বিবেচনা করেছেন, অর্থাৎ এটি স্বেচ্ছিক কাজ, যা
পড়া একটি অতিরিক্ত ইবাদত হিসেবে উপকারী, কিন্তু তার উপর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
তারাবির নামাজের গুরুত্বঃ
- তারাবি নামাজ একটি খুবই বরকতপূর্ণ ইবাদত, এবং এটি রমজান মাসের বিশেষ এক দানে পরিণত হয়।
- এটি রাসূল (সা.)-এর সুন্নত, এবং মুসলিমদের রমজান মাসে ইবাদতের পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য এটি একটি উপযুক্ত সুযোগ।
- জামাতে তারাবি নামাজ পড়লে একে ঈমান ও আমলের ওপর সম্মান ও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
নিষ্কর্ষঃ মোটের ওপর, তারাবি নামাজ সুন্নত মোয়াক্কাদা হিসেবে পড়া
অত্যন্ত পুরস্কৃত এবং গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি নফল নামাজও হতে পারে, যেহেতু কারো
জন্য এটি স্বেচ্ছিক এবং বাধ্যতামূলক নয়, তবে এতে পালনকারী মুসলিমদের জন্য অনেক
বেশি বরকত ও সাওয়াব রয়েছে।
তারাবির নামাজের নিয়ম
তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে এবং তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে। তারাবি নামাজ
রমজান মাসে প্রতি রাতে বিশেষভাবে আদায় করা হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা
মুসলিমরা রমজান মাসে আল্লাহর প্রতি একাগ্রতা, আত্মশুদ্ধি এবং তার রহমত কামনা করতে
পড়েন। তারাবি নামাজের নিয়ম এবং পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিচে
আলোচনা করা হলোঃ
- তারাবি নামাজের গুরুত্বঃ তারাবি নামাজ রমজান মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এটি সুন্নত মোয়াক্কাদা, অর্থাৎ রাসূল (সা.) এটি পড়েছেন এবং মুসলিমদের জন্য এটি পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জামাতে পড়ার ক্ষেত্রে অধিক সাওয়াব রয়েছে।
- কত রাকাতঃ তারাবি নামাজের মোট রাকাতের সংখ্যা সাধারণভাবে ২০টি। তবে, বিভিন্ন মাজহাবের মধ্যে রাকাতের সংখ্যা নিয়ে কিছু পার্থক্য রয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞরা ৮ রাকাতও পড়ার কথা বলেছেন, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ২০ রাকাত পড়া হয়।
- নামাজের সময়ঃ তারাবি নামাজটি ঈশা নামাজের পর পড়তে হয়। অর্থাৎ, ঈশার নামাজ আদায়ের পর কিছু সময় বিরতি দিয়ে তারাবি নামাজ শুরু করা হয়। জামাতে পড়লে এটি আরো বেশি বরকতপূর্ণ হয়।
- জামাতে পড়াঃ যদিও তারাবি নামাজ নফল (স্বেচ্ছিক) নামাজ, তবে জামাতে পড়ার মধ্যে বিশেষ পুরস্কার রয়েছে। মসজিদে ইমামসহ জামাতে আদায় করলে এক রাকাতের জন্য পুরো রমজান মাসের রোজার সাওয়াব পাওয়া যায় বলে হাদিসে এসেছে। এটি আল্লাহর কাছ থেকে দয়া ও ক্ষমার জন্য একটি বড় সুযোগ।
- ইমামের নেতৃত্বে নামাজঃ তারাবি নামাজ ইমাম দ্বারা নেতৃত্বাধীন জামাতে পড়া উচিত। ইমাম কুরআন থেকে আয়াত পাঠ করেন এবং মুসল্লিরা তার পেছনে নামাজ পড়েন। তবে, যদি কেউ একা একা তারাবি নামাজ পড়েন, তাও বৈধ। তবে জামাতে পড়া বেশি উত্তম।
- দোয়া পড়াঃ তারাবি নামাজের মধ্যে দীর্ঘ রুকু ও সিজদা করা হয় এবং কুরআনের আয়াতগুলো পাঠ করা হয়, যার মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর কাছে নিজেদের কামনা ও আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন। বিশেষত, রমজান মাসে আল্লাহর কাছে দোয়া এবং ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব রয়েছে।
- নিয়তঃ তারাবি নামাজের জন্য প্রতিটি নামাজের আগে নিয়ত করা জরুরি। এমনভাবে নিয়ত করতে হবে যে, আপনি রমজান মাসের তারাবি নামাজের জন্য দাঁড়াচ্ছেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করছেন।
- সামান্য বিরতিঃ এটি একটি দীর্ঘ নামাজ হওয়ায়, মাঝে মাঝে ছোট বিরতি নিতে পারে। তবে, অনেক জায়গায় জামাতের মধ্যে বিরতি দেওয়া হয় না এবং একটানা তারাবি নামাজ পড়া হয়।
- এতেকাফের সাথে সম্পর্কঃ রমজান মাসে অনেক মুসলিম তারাবি নামাজের পাশাপাশি এতেকাফ করেন, অর্থাৎ মসজিদে অবস্থান করে আল্লাহর ইবাদত ও ধ্যানে নিমগ্ন হন। এতেকাফের মাধ্যমে তারা তারাবি নামাজের বিশেষ বরকত লাভ করেন।
- তারাবি নামাজে বিশেষ দোয়াঃ তারাবি নামাজের শেষ রাকাতে বা শেষে দোয়া করা হয়। এটি ব্যক্তিগত দোয়া হতে পারে যেখানে আপনি আল্লাহর কাছে সব ধরনের সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এছাড়া, অনেক সময় মসজিদে ইমাম সাধারণ দোয়া পড়েন, যা মুসল্লিরা আমিন বলে সমর্থন করেন।
- কুরআন তিলাওয়াতঃ তারাবি নামাজে কুরআনের আয়াতগুলো দীর্ঘভাবে তিলাওয়াত করা হয়। সাধারণভাবে, এক রাকাতে প্রায় এক পৃষ্ঠা কুরআন পড়া হয়, যা তারাবি নামাজকে দীর্ঘ ও গভীর ইবাদত হিসেবে পরিণত করে।
- আল্লাহর প্রতি একাগ্রতাঃ যেহেতু তারাবি নামাজ মূলত আল্লাহর প্রতি একাগ্রতার জন্য পড়া হয়, এটি শুধু একটি ধর্মীয় কার্য নয়, বরং এক ধরনের আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া। প্রতিটি রাকাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা, বরকত, সাহায্য এবং দয়া কামনা করা হয়।
তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া
উপরোক্ত আলোচনায় তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে এবং তারাবির নামাজ
সুন্নত নাকি নফল জানিয়েছি চলুন এখন তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া
সম্পর্কে জানি। তারাবি নামাজের প্রতি ৪ রাকাত পর পর দোয়া বা মোনাজাত করতে পারে
একজন মুসলিম। নিচে আমি চার রাকাত পর পর কিছু দোয়া উপস্থাপন করছি, যা মুসলিমরা
তারাবি নামাজের মধ্যে করতে পারেনঃ
১ম দোয়া (৪ রাকাত পর):
اللّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنَ الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ
أَحْسَنَهُ
আল্লাহুম্মা জাল্লানা মিনাল লাযীনা ইয়াসতামিউনাল কাওলা ফায়াত্তাবিউনাহু আহসানাহু
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের অন্তরকে এমন বান্দা বানাও যারা উপদেশ শোনে এবং
তার মধ্যে উত্তমতম অনুসরণ করে।
২য় দোয়া (৮ রাকাত পর):
اللّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَسَتِّرْ عَوْرَاتِنَا وَآمِنْ
رَوْعَاتِنَا
আল্লাহুম্মা গফির লানা ওয়ারহামনা ওয়া সত্তির আওরাতিনা ওয়া আমিন রাওয়া'আতিনা
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের মাফ করুন, আমাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, আমাদের
অশ্লীলতা ঢেকে দিন এবং আমাদের দুশ্চিন্তা দূর করুন।
৩য় দোয়া (১২ রাকাত পর):
اللّهُمَّ اجْعَلْ قُرْآنَ رَبِّي فِي قَلْبِي وَجْهَ قَصْدِي وَنُورَ قَلْبِي
وَدَفْعَ هَمِّي
আল্লাহুম্মা জামাল কুরআন রাব্বি ফি কালবী ওয়া জাহ কাসদী ওয়া নূর কালবী ওয়া
দাফ'হাম্মি
অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার কুরআনকে আমার হৃদয়ে স্থান দিন, আমার লক্ষ্য বানান,
আমার অন্তরকে আলোকিত করুন এবং আমার দুশ্চিন্তা দূর করুন।
৪র্থ দোয়া (১৬ রাকাত পর):
اللّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَمَنْ يَسْلُكُونَ سَبِيلَهَا
আল্লাহুম্মা জামালানা মিন আহলিল জান্না ওয়া মাঞ্জ সাল্লুকুনাস সাবীলাহা
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদেরকে জান্নাতের অধিকারী বানান এবং সে পথে চলার সুযোগ
দিন।
৫ম দোয়া (২০ রাকাত পর):
اللّهُمَّ تَقَبَّلْ صَلَاتَنَا وَدُعَاءَنَا وَصِيامَنَا وَقِيَامَنَا
আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল সালাতানা ওয়া দু'আ'আনা ওয়া সিয়ামানা ওয়া কিয়ামানা
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের নামাজ, দোয়া,
রোজা ও তারাবি
নামাজ কবুল করুন।
তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের
তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে এবং তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের সম্পর্কে।
তারাবি নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ ইবাদত, যা রাত্রিকালে আদায় করা হয়।
আরো পড়ুনঃ রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ জেনে নিন
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নামাজ, যা জামাতে পড়লে বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়। মহিলাদের
জন্য তারাবি নামাজের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, যা জানতে গুরুত্বপূর্ণ। নিচে
মহিলাদের জন্য তারাবি নামাজের নিয়ম-কানুন উপস্থাপন করা হলোঃ
- মহিলাদের জন্য জামাতে নামাজঃ মহিলারা মসজিদে গিয়ে জামাতে তারাবি নামাজ পড়তে পারেন, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। মহিলাদের জন্য বাড়িতে একাকী বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নামাজ পড়া যেতে পারে। তবে জামাতে নামাজ পড়লে সাওয়াব বেশি হবে।
- নামাজের সংখ্যাঃ তারাবি নামাজের সাধারণ রাকাতের সংখ্যা ২০টি, কিন্তু অনেক সময় ৮ রাকাতও পড়া হয়। মহিলাদের জন্য, জামাতে যেহেতু সাধারণত ২০ রাকাত পড়া হয়, বাড়িতে একা পড়ার ক্ষেত্রে ৮ বা ২০, যেকোনো সংখ্যা গ্রহণ করা যেতে পারে।
- পর্দা এবং পোশাকঃ মহিলাদের জন্য পর্দা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারাবি নামাজ পড়ার সময় তাদের শালীন পোশাক পরা উচিত, যা শরীরকে আবৃত রাখে। যদি মহিলারা মসজিদে নামাজ পড়তে যান, তবে মসজিদে প্রবেশের আগে পর্দা বজায় রাখতে হবে। তারা মসজিদে অথবা ঘরে নামাজের জন্য সম্পূর্ণ শালীন পোশাক পরতে পারেন।
- নামাজের অবস্থানঃ মহিলারা তারাবি নামাজের জন্য মসজিদে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারেন, তবে মসজিদে তাদের স্থান পিছনের দিকে থাকে, যাতে তাদের সামনে পুরুষদের স্থান না হয়। এর মাধ্যমে শালীনতা ও পর্দার পরিপালন নিশ্চিত হয়। বাড়িতে নামাজ পড়লে মহিলারা নির্দিষ্ট কোনো স্থানে নামাজ পড়তে পারেন যা তাদের জন্য আরামদায়ক হয়।
- ইমামের পিছনে নামাজঃ যদি মহিলারা জামাতে নামাজ পড়েন, তবে তাদের জন্য ইমামের পিছনে দাঁড়ানো উচিত। তবে, বাড়িতে একাকী পড়ার সময়ে, মহিলাদের ইমামের সঙ্গে নামাজে অংশগ্রহণ করার প্রয়োজন নেই। একাকী নামাজ পড়লেও নামাজ ঠিকভাবে হবে।
- দোয়া এবং মোনাজাতঃ তারাবি নামাজের মধ্যে, মহিলাদের জন্য একাধিক দোয়া ও মোনাজাত করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, ৪ রাকাত পর পর দোয়া করা হয়, যা আল্লাহর কাছে ক্ষমা, রহমত এবং জান্নাতের জন্য দোয়া করে থাকে। মহিলারা এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য ও রহমত প্রার্থনা করেন।
- মেহেদি, শঙ্খ ও অলংকারঃ মহিলাদের জন্য তারাবি নামাজে নামাজ পড়ার সময় মেহেদি, শঙ্খ, অলংকার বা অপ্রয়োজনীয় সাজগোজ পরা থেকে বিরত থাকতে হবে। নামাজে একাগ্রতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, তাই এসব বিষয় থেকে দূরে থাকা ভালো।
- স্বাস্থ্য এবং আরামঃ যেহেতু তারাবি নামাজ একটি দীর্ঘ সময়ের ইবাদত, মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্য ও আরামের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। তাদের যদি শারীরিক সমস্যা থাকে, তবে তারা নামাজে সামান্য বিরতি নিতে পারেন অথবা অজু করার পর আবার নামাজে যোগ দিতে পারেন।
- শিশুদের সঙ্গঃ মহিলারা যদি তারাবি নামাজ পড়তে গিয়ে শিশুদের সঙ্গে থাকেন, তবে তাদের জন্য এটি কিছুটা কঠিন হতে পারে। এক্ষেত্রে, যদি শিশুরা খুব ছোট হয়, তবে তাদের সঙ্গে নামাজ পড়া কঠিন হতে পারে। তবে, মহিলারা যদি সন্তানদের নিয়ে নামাজ পড়েন, তবে তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
- মসজিদে উপস্থিতিঃ মহিলাদের মসজিদে উপস্থিতি একটি সম্মানজনক বিষয়। তবে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে গেলে তারা যদি গর্ভবতী হন বা অন্য কোনো শারীরিক অবস্থায় থাকেন, তাহলে তারা বাড়িতে নামাজ পড়তে পারেন। রমজান মাসে নামাজের প্রতি একাগ্রতা ও চেষ্টা বৃদ্ধি করা উচিত।
তারাবির নামাজের নিয়ত
উপরোক্ত আলোচনায় তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে এবং তারাবির নামাজ
সুন্নত নাকি নফল জানিয়েছি চলুন এখন তারাবির নামাজের নিয়ত সম্পর্কে জানি। তারাবি
নামাজ রমজান মাসে বিশেষভাবে আদায় করা হয়, এবং এটি সুন্নত মুয়াক্কাদা (বিশেষভাবে
প্রস্তাবিত সুন্নত)।
আরো পড়ুনঃ শাওয়াল মাসের ছয় রোজার ফজিলত জেনে নিন
নামাজের প্রথম বিষয় হল নিয়ত। নিয়ত হল আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ এবং নির্দিষ্ট
ইবাদতকে বিশেষ উদ্দেশ্যে আঞ্জাম দেওয়ার দৃঢ় সংকল্প। তারাবি নামাজের জন্যও নিয়ত
করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ত ছাড়াও নামাজ সম্পূর্ণ হবে না।
নিয়তের তাৎপর্যঃ নিয়ত আল্লাহর প্রতি একাগ্রতা ও উদ্দেশ্য প্রকাশের মাধ্যম।
এই নিয়তের মাধ্যমে একজন মুসলিম নিজের ইবাদতকে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন
করতে নির্ধারণ করেন। তারাবি নামাজের জন্যও নিয়ত করা অপরিহার্য, কারণ এটি রাতের
নামাজের মধ্যে একটি বিশেষ ইবাদত।
নিয়ত করার সঠিক পদ্ধতিঃ নিয়ত করার সময় হৃদয়ে এবং জিহ্বায় ইবাদতের উদ্দেশ্য
পরিষ্কারভাবে থাকতে হবে। তারাবি নামাজের নিয়ত করার সময় মুখে এইভাবে বলা যায়ঃ
"নাওয়াইতু আন উসাল্লি লি আল্লাহি তাআলা, রাকাতেই তারাবীহ লীফারজিল-রমাযানী
মুকাব্বালা ফিল-মসজিদে"
অথবা আপনি নিজ ভাষায়ও নিয়ত করতে পারেন, যেমনঃ
"আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রমজান মাসের তারাবি নামাজ পড়তে নিয়ত করছি।"
নিয়ত ও একাগ্রতাঃ নিয়ত করার সময় পূর্ণ একাগ্রতা থাকতে হবে, যাতে নামাজের
উদ্দেশ্য এবং পরবর্তী ইবাদত নিয়ে কোনো সন্দেহ না থাকে। মূলত, নিয়তের মাধ্যমে
নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিশ্চিত হয় এবং আল্লাহর কাছে নিজেদের কামনা প্রকাশ করার
মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হয়।
নিয়ত ও শরীরের প্রস্তুতিঃ নামাজের নিয়ত শুধু অন্তরে করা হয় না, বরং শরীরের
প্রস্তুতিও গুরুত্বপূর্ণ। নামাজ পড়ার আগে অজু করা এবং শরীরিকভাবে শুদ্ধ থাকতে
হবে। একইভাবে, ঠিকভাবে পোশাক পরিধান করে, শান্ত মনোভাব নিয়ে নামাজের জন্য
দাঁড়ানোও নিয়তের অংশ।
নিয়ত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণঃ তারাবি নামাজের জন্য নিয়ত করতে হবে
রমজান মাসে রাতের সময় একসঙ্গে (আলাদাভাবে) আদায় করার জন্য। অবশ্যই, নিয়ত আল্লাহর
উদ্দেশ্যে হবে। এক্ষেত্রে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকা উচিত নয়।
তারাবির নামাজ কত রাকাত
তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে এবং তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি তারাবির নামাজ কত রাকাত সম্পর্কে। তারাবি নামাজ
রমজান মাসে রাত্রিকালে আদায় করা হয় এবং এটি একটি সুন্নত নামাজ। এই নামাজের মূল
উদ্দেশ্য হল আল্লাহর কাছে দোয়া, ক্ষমা, রহমত ও জান্নাতের জন্য প্রার্থনা করা।
তারাবি নামাজের রাকাতের সংখ্যা নিয়ে কিছু ভিন্নমত রয়েছে, তবে সাধারণত দুটি সংখ্যা
প্রচলিত রয়েছেঃ
- ২০ রাকাতঃ ধারণা করা হয় যে, রাসূল (সা.) তার জীবদ্দশায় রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ জামাতে পড়িয়েছিলেন। এটি সারা বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত। অনেক মসজিদে এবং ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলো ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করে থাকে।
- ৮ রাকাতঃ কিছু মাজহাব বা মতবাদ অনুসারে, তারাবি নামাজের সংখ্যা ৮ রাকাতও হতে পারে। এই সংখ্যাটি বেশ কিছু স্থানে দেখা যায়, যেখানে মুসলিমরা ৮ রাকাত নামাজ পড়ে থাকে। এটি একটি পুরানো মতামত এবং কিছু এলাকায় জনপ্রিয়।
- রাকাতের সংখ্যা নির্ধারণঃ তারাবি নামাজের রাকাতের সংখ্যা একেক স্থানে একেকরকম হতে পারে, তবে সব জায়গায় সংখ্যাটি ২০ বা ৮ রাকাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এটি পুরোপুরি মুসলিম সমাজের ঐতিহ্য এবং জামাতের পরিস্থিতি ও স্থান অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
- নামাজের সময়ে বিরতিঃ এটি একটি দীর্ঘ নামাজ হওয়ায়, কিছু জায়গায় মাঝে মাঝে বিরতি দেওয়া হয়। ২০ রাকাতের জন্য সাধারণত ১০-১৫ মিনিট বিরতি দিয়ে আরও ১০ রাকাত পড়া হয়।
তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ
উপরোক্ত আলোচনায় তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে এবং তারাবির নামাজ
সুন্নত নাকি নফল জানিয়েছি চলুন এখন তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ
সম্পর্কে জানি। তারাবি নামাজের মধ্যে, বিশেষত প্রতি চার রাকাত পর,
আরো পড়ুনঃ ভাংতি রোজা রাখার নিয়ম জেনে নিন
মুসলিমরা আল্লাহর কাছে দোয়া ও মোনাজাত করেন। এই মোনাজাত আল্লাহর রহমত, ক্ষমা,
হিদায়াত এবং জান্নাতের জন্য প্রার্থনা করতে সাহায্য করে। নিচে একটি মোনাজাত দেওয়া
হলো, যা তারাবি নামাজের সময় পড়া যায়, এবং এর বাংলা অর্থও দেওয়া হলোঃ
মোনাজাত (দোয়া):
اللّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَمَنْ يَسْلُكُونَ سَبِيلَهَا
اللّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَسَتِّرْ عَوْرَاتِنَا وَآمِنْ
رَوْعَاتِنَا
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদেরকে জান্নাতের অধিকারী করো এবং সে পথে চলার
সুযোগ দাও।
হে আল্লাহ! আমাদের মাফ করো, আমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করো, আমাদের অশ্লীলতা ঢেকে
দাও এবং আমাদের দুশ্চিন্তা দূর করো।
এই মোনাজাতটি তারাবি নামাজের মধ্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা, শান্তি, এবং রহমত
প্রার্থনা করতে ব্যবহৃত হয়। মোনাজাতের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর কাছে নিজেদের
সমস্যা, উদ্বেগ, এবং আশা প্রকাশ করেন। এর মাধ্যমে তারা নিজের এবং সারা বিশ্বের
মুসলিমদের কল্যাণ কামনা করেন।
তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের দলিল
তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে এবং তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের দলিল সম্পর্কে। তারাবি
নামাজের রাকাতের সংখ্যা নিয়ে ইসলামী স্কলারদের মধ্যে কিছু ভিন্নমত রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজের নিয়ম - শবে কদরের ফজিলত
সাধারণত ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায়ের প্রচলন রয়েছে, তবে ৮ রাকাত তারাবি নামাজের
বিষয়েও ইসলামী শাস্ত্রের মধ্যে যথেষ্ট দলিল রয়েছে। ৮ রাকাত তারাবি নামাজের
ভিত্তিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল নিম্নরূপঃ
- ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল (রহ.)-এর মতঃ ইমাম আহমদ (রহ.)-এর মতে, তারাবি নামাজের রাকাত সংখ্যা ৮টি হতে পারে। তিনি বলেন, রাসূল (সা.)-এর সময় ৮ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করা হতো, এবং এটি ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রতিষ্ঠিত ছিল। এমনকি সাহাবী এবং তাবিয়ীনরা ৮ রাকাত নামাজ পড়তেন। এটি একদম পুরানো প্রচলন এবং যথার্থভাবে অনুসরণ করা যেতে পারে।
- ইমাম মালীকের (রহ.) মতঃ ইমাম মালিক (রহ.)-এর মতে, তারাবি নামাজের রাকাতের সংখ্যা কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা অনুসারে নির্ধারণ করা হয়নি। তিনি বলেন, প্রাথমিক যুগে সাধারণত ৮ রাকাত তারাবি নামাজ পড়া হতো। এমনকি মদিনার মসজিদে ৮ রাকাত নামাজ আদায় করা হত। এটি সুন্নাহর একটি অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল।
- হাদীসঃ এছাড়া, হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) একবারে ৮ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করেছেন। আনাস ইবনু মালিক (রা.) বলেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে আমাদের সাথে ৮ রাকাত তারাবি নামাজ পড়তেন, তারপর দুই রাকাত বিশ্রাম নিতেন এবং তারপর আবার ৮ রাকাত পড়তেন।’’ (সহীহ মুসলিম)
- সাহাবীদের কার্যঃ ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: ‘‘রাসূলুল্লাহ (সা.) এক রমজান রাতে তারাবি নামাজে ৮ রাকাত পড়েন।’’ (বুখারি) এটি তারাবি নামাজের রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে।
- তাবি'ঈনদের কার্যঃ এছাড়াও তাবি'ঈনরা ৮ রাকাত নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে সমর্থন প্রদান করেছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ৮ রাকাত নামাজই পড়তেন এবং তাদের মধ্যেও এটি একটি প্রচলিত রীতি ছিল। এটি তাদের কর্মের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
তারাবির নামাজ কত রাকাত সহীহ হাদিস
উপরোক্ত আলোচনায় তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে এবং তারাবির নামাজ
সুন্নত নাকি নফল জানিয়েছি চলুন এখন তারাবির নামাজ কত রাকাত সহীহ হাদিস সম্পর্কে
জানি। তারাবি নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ সুন্নত নামাজ, যা রাত্রিকালে আদায় করা
হয়। তারাবি নামাজের রাকাতের সংখ্যা নিয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে, তবে সহীহ হাদিসের
আলোকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা যায়।
৮ রাকাতের দলিলঃ রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সময়ে তারাবি নামাজের সংখ্যা
সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস পাওয়া যায়, যার মধ্যে অনেকগুলো ৮ রাকাতের পক্ষে কথা বলে।
আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে তিনি বলেন, "রাসূলুল্লাহ (সা.)
আমাদের সাথে ৮ রাকাত তারাবি নামাজ পড়তেন।" (সহীহ মুসলিম)
এছাড়া, ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যেখানে তিনি বলেন,
"রাসূলুল্লাহ (সা.) এক রমজান রাতে আমাদের সাথে ৮ রাকাত তারাবি নামাজ পড়েছেন।"
(বুখারি)
এই হাদিসগুলো প্রমাণিত করে যে, রাসূল (সা.) তারাবি নামাজে ৮ রাকাত আদায় করেছেন,
এবং এটি একটি সুন্নত প্রচলন ছিল।
২০ রাকাতের দলিলঃ যদিও কিছু জায়গায় ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করা
হয়ে থাকে, তবে এটিরও ভিত্তি সহীহ হাদিসের মধ্যে পাওয়া যায়। এক হাদিসে বলা হয়েছেঃ
রাসূল (সা.) একাধিকবার তারাবি নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং
জামাতে নামাজ পড়তে উৎসাহিত করেছেন, তবে ২০ রাকাত নামাজের প্রচলন পরে মুসলিম সমাজে
প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্কলারদের মতঃ ইসলামী স্কলারদের মধ্যে বেশিরভাগই ২০ রাকাত নামাজ
পড়াকে সমর্থন করেন, কিন্তু কিছু স্কলার ৮ রাকাত নামাজের পক্ষেও মত প্রকাশ করেছেন।
ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল (রহ.) এবং ইমাম মালিক (রহ.)-এর মত অনুযায়ী, ৮ রাকাত নামাজ
আদায় করার নিয়ম ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল এবং সেটি সুন্নাহর একটি অংশ ছিল।
তারাবি নামাজের দোয়া সুবহানা জিল মুলকি
তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে এবং তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি তারাবি নামাজের দোয়া সুবহানা জিল মুলকি সম্পর্কে।
তারাবি নামাজের মধ্যে, বিশেষত প্রতি ৪ রাকাতের পর মুসলিমরা আল্লাহর কাছে দোয়া ও
মোনাজাত করেন।
আরো পড়ুনঃ আইয়ামে বীজের রোজার ফজিলত জেনে নিন
এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হল "সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মুলকুত", যা নামাজে
বিশেষভাবে পড়া হয়ে থাকে। এই দোয়া আল্লাহর গুণগান করার এবং তাঁর মহিমা প্রকাশের
জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দোয়াঃ
سُبْحَانَ ذِى ٱلْمُلْكِ وَسُبْحَٰنَ ٱلْوَحْدَٰنِ وَسُبْحَٰنَ الْخَلْقِ
وَسُبْحَٰنَ رَبِّي الْجَلِيلِ
অর্থঃ
"আল্লাহ তাআলা যিনি সমস্ত রাজত্বের অধিকারী, তিনি পবিত্র। তিনি একক, একমাত্র
সার্বভৌম মালিক, তিনি পবিত্র। তিনি সৃষ্টির মালিক, তিনি পবিত্র। তিনি
পরাক্রমশালী, তিনি পবিত্র।"
এই দোয়া দিয়ে মুসলিমরা আল্লাহর অপার মহিমা ও সর্বাধিক ক্ষমতার প্রতি সম্মান
জ্ঞাপন করেন এবং তাঁর অশেষ রহমত ও ক্ষমার প্রার্থনা করেন। এটি তারাবি নামাজের
মধ্যে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গভীর করার জন্য একটি পবিত্র মুহূর্ত হয়ে থাকে।
দোয়া পড়ার সময় মুসলিমরা সঠিক মনোভাব ও একাগ্রতা রাখার চেষ্টা করেন, যাতে আল্লাহর
নৈকট্য লাভ করা যায় এবং তাদের দোয়া কবুল হয়।
লেখক এর মন্তব্য- তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে জেনে নিন
রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনাদের তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত
আরবিতে এবং তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল ইত্যাদি ছাড়াও তারাবির নামাজ সম্পর্কে
জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের
আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের
জানানোর জন্য শেয়ার করবেন।
এমন আরো তথ্য ও রেসিপি জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়ম ভিজিট করুন,
সাবস্ক্রাইব করে রাখুন, ফলো করুন, বেশি বেশি শেয়ার করুন এবং কোন বিষয়ে
বিস্তারিত তথ্য বা রেসিপি জানতে চাইলে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন ও পোস্টটি কেমন
লাগলো কমেন্ট জানাবেন আশা করি, আসসালামু আলাইকুম/আদাব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url