লাইলাতুল কদর কোরআন ও হাদিসের আলোকে এবং এর ফজিলত

আসসালামু আলাইকুম/আদাব, আজকের আলোচ্য বিষয় হলো লাইলাতুল কদর কোরআন ও হাদিসের আলোকে এবং এর ফজিলত সম্পর্কে জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য। এই পোস্টে থাকছে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোরআনের ও হাদিস আলোচনা এবং এর ফজিলত সম্পর্কে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক।
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোরআনের ও হাদিস আলোচনা এবং এর ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন
পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ থাকলো, যাতে লাইলাতুল কদর কোরআন ও হাদিসের আলোকে এবং এর ফজিলতত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। আশা করছি, এতে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর এবং সঠিক নির্দেশনা পাবেন।

লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আলোচনা

লাইলাতুল কদর কি?

লাইলাতুল কদর হলো ইসলামের অন্যতম বরকতময় ও তাৎপর্যপূর্ণ রাত। এটি এমন একটি রাত যখন মহান আল্লাহ তাআলা মানবজাতির জন্য অফুরন্ত রহমত বর্ষণ করেন। এই রাতে আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক উত্তম।

লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোরআনের উল্লেখ
লাইলাতুল কদর কী সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোরআনের ও হাদিস আলোচনা এবং এর ফজিলত সম্পর্কে।
আল-কোরআনে লাইলাতুল কদরের বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:সূরা আল-কদর:


إِنّا أَنزَلناهُ في لَيلَةِ القَدرِ
وَما أَدراكَ ما لَيلَةُ القَدرِ
لَيلَةُ القَدرِ خَيرٌ مِن أَلفِ شَهرٍ
لَيلَةُ القَدرِ خَيرٌ مِن أَلفِ شَهرٍ
سَلامٌ هِيَ حَتّى مَطلَعِ الفَجرِ
  • "নিশ্চয়ই আমি একে (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর তুমি কি জানো, কদরের রাত কী? কদরের রাত হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ (জিবরাইল আ.) তাদের প্রতিপালকের নির্দেশে প্রত্যেক কাজে অবতরণ করেন। এটি শান্তি, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।"(সূরা আল-কদর: ১-৫) 
এছাড়াও, সূরা আদ-দুখানেও এই রাতের বিশেষত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে:

إِنّا أَنزَلناهُ في لَيلَةٍ مُبارَكَةٍ إِنّا كُنّا مُنذِرينَ
নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী।

أَمرًا مِن عِندِنا إِنّا كُنّا مُرسِلينَ
আমার নির্দেশে। নিশ্চয় আমি রাসূল প্রেরণকারী।
  • "আমরা একে (আল-কোরআন) এক বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিঃসন্দেহে আমিই সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্বান্ত নেয়া হয়।"(সূরা আদ-দুখান: ৩-৪)

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিস

লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোরআনের উল্লেখ সম্পর্কে কোরআনের সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন জানি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোরআনের ও হাদিস আলোচনা এবং এর ফজিলত সম্পর্কে।

  • রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিসে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন:
  • "যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমান ও ইখলাসের সাথে ইবাদত করে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।" (বুখারি, মুসলিম)
  • "কদরের রাতকে রমজানের শেষ দশ রাতের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে তালাশ করো।" (বুখারি, মুসলিম)
  • "যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরের সঠিক সময় পেয়ে ইবাদত করলো, সে যেন এক হাজার মাস ইবাদত করলো।" (তিরমিজি)

লাইলাতুল কদর কোন রাতে?

লাইলাতুল কদর কোরআন ও হাদিসের আলোকে এবং এর ফজিলত সম্পর্কে জানলাম চলুন লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিস এখন জানি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোরআনের ও হাদিস আলোচনা এবং এর ফজিলত সম্পর্কে।
সঠিকভাবে নির্দিষ্ট না করা হলেও, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন এটি রমজানের শেষ দশ রাতের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে খোঁজ করতে। বিশেষত ২১, ২৩, ২৫, ২৭, এবং ২৯তম রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে ইসলামী স্কলারগণ ২৭তম রাতকেই বেশি সম্ভাব্য মনে করেন।

লাইলাতুল কদরে আমল

লাইলাতুল কদর কোন রাতে সম্পর্কে জানলাম চলুন লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিস এখন জানি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোরআনের ও হাদিস আলোচনা এবং এর ফজিলত সম্পর্কে।
লাইলাতুল কদর ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া ও তওবা করা উচিত। কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো—

  • নফল নামাজ আদায় করা: বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া এই রাতের অন্যতম সেরা আমল।
  • কুরআন তিলাওয়াত করা: কুরআন নাজিলের রাত হওয়ায়, এই রাতে কুরআন তিলাওয়াত করা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ।
  • দোয়া ও ইস্তিগফার করা: আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দোয়া করা, এবং নিজের ও পরিবারের জন্য কল্যাণ কামনা করা উচিত।
  • দরুদ শরিফ পাঠ করা: নবী (সাঃ)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা অতীব ফজিলতপূর্ণ আমল।
  • সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ইত্যাদি জিকির করা: বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা উচিত।
  • দুঃস্থ ও অসহায়দের সাহায্য করা: এই রাতে দান-সদকা করা অশেষ সওয়াবের কাজ।
একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া: নবী (সাঃ) লাইলাতুল কদরের জন্য বিশেষ একটি দোয়া শিখিয়েছেন—
  • اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني
  • উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা'ফু আন্নি।”
  • অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসো, তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও।”
এই রাতের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান। তাই সময় নষ্ট না করে বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত
  • দোয়া ও ইস্তিগফার: রাসুল (সা.) এ রাতে দোয়া করতে বলতেন:"আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আননি"অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি)
  • জিকির ও তাসবিহ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার বেশি বেশি বলা উচিত।
  • দরুদ শরিফ পাঠ: রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা এই রাতে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
  • গুনাহ থেকে মুক্তির দোয়া: নিজের পাপ থেকে মুক্তি চাওয়ার জন্য কদরের রাত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

লাইলাতুল কদরের লক্ষণ

লাইলাতুল কদরে আমল সম্পর্কে জানলাম চলুন লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিস এখন জানি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোরআনের ও হাদিস আলোচনা এবং এর ফজিলত সম্পর্কে।
অনেক হাদিসে এই রাতের কিছু আলামত উল্লেখ আছে। যেমন:

  • আকাশ খুব শান্ত ও পরিষ্কার থাকবে।
  • বাতাস হবে প্রশান্তিদায়ক।
  • অতিরিক্ত গরম বা শীত অনুভূত হবে না।
  • পরদিন সকালে সূর্য বিনা কিরণেই উদিত হবে।

লাইলাতুল কদর কেন এত ফজিলতপূর্ণ?

লাইলাতুল কদরে আমল সম্পর্কে জানলাম চলুন লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিস এখন জানি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোরআনের ও হাদিস আলোচনা এবং এর ফজিলত সম্পর্কে।
লাইলাতুল কদর আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য এক মহা উপহার। এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এ রাতেই আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা ইসলামের সবচেয়ে বড় নিয়ামত।

লাইলাতুল কদর এর ফজিলত

লাইলাতুল কদর, ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রাত। আল্লাহ তাআলা এই রাতকে কুরআনে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। এই রাতকে হাজার মাসের থেকেও উত্তম বলা হয়েছে, অর্থাৎ, এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের সমান সাওয়াব এনে দেয়। 
আল-কুরআনের সূরা কদর (৯৭:৩) এ বলা হয়েছে:
لَيلَةُ القَدرِ خَيرٌ مِن أَلفِ شَهرٍ
"লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।"
এই রাতেই আল্লাহ প্রথম কুরআন নাজিল করেছেন, যা মানবজাতির জন্য পথনির্দেশিকা হিসেবে প্রেরিত। এই রাতের বিশেষ ফজিলত হলো, এতে ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হয়। যারা এই রাতে ইবাদত করেন, তাদের গুনাহ ক্ষমা করা হয়, যদি তারা সত্যিকারের তওবা করেন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।
হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সাঃ) বলেছেন: "যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে ও সওয়াবের নিয়তে লাইলাতুল কদরে দাঁড়িয়ে ইবাদত করবে, তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।" (বুখারি, হাদিস ২০১৪)
এই রাতের ফজিলত বোঝানোর জন্য আরও একটি বিশাল দিক হলো,

এই রাতে মানুষ নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দোয়া করতে পারে এবং আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ মাগফিরাতের আশা করতে পারে। এই রাত আল্লাহর অপার করুণা লাভের সুযোগ, এবং সেই সঙ্গে জীবনের গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ।

লাইলাতুল কদর সম্পর্কে সাধারণ (FAQ)

১.লাইলাতুল কদর কখন আসে?
  •   এটি রমজানের শেষ দশ রাতের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটিতে আসে।।
২.লাইলাতুল কদরের রাতে বিশেষ কোনো দোয়া আছে?
  • হ্যাঁ, রাসুল (সা.) শিখিয়েছেন: "আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আননি"।
৩.কদরের রাতে ঘুমানো কি ঠিক?
  • না, এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত। তবে ক্লান্ত হলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে।
৪.কদরের রাতে কি কাজ করা হারাম?
  • এই রাতে গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত, যেমন গান-বাজনা শোনা, গীবত করা ইত্যাদি।।
৫.যদি কেউ কদরের রাতের ইবাদত মিস করে, তবে কী করবে?
  • আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে এবং ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হবে।
লাইলাতুল কদর মুসলমানদের জন্য এক বিশাল নিয়ামত। এই রাতকে সঠিকভাবে পালন করলে আমাদের গুনাহ মাফ হতে পারে এবং জান্নাতের পথ সুগম হতে পারে। তাই, আমাদের উচিত এই রাতের ইবাদতকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করা, বেশি বেশি দোয়া করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই রাতের ফজিলত লাভ করার তৌফিক দিন, আমিন।

লেখক এর মন্তব্য- লাইলাতুল কদর কোরআন ও হাদিসের আলোকে এবং এর ফজিলত

রাইট বাটন আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনাদের লাইলাতুল কদর কোরআন ও হাদিসের আলোকে এবং এর ফজিলত ইত্যাদি ছাড়াও লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জানানোর জন্য শেয়ার করবেন।

এমন আরো তথ্য ও রেসিপি জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়ম ভিজিট করুন, সাবস্ক্রাইব করে রাখুন, ফলো করুন, বেশি বেশি শেয়ার করুন এবং কোন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বা রেসিপি জানতে চাইলে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন ও পোস্টটি কেমন লাগলো কমেন্ট জানাবেন আশা করি, আসসালামু আলাইকুম/আদাব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url